#তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৯
#Writer_Liza_moni
সারাদিন না খেয়ে অনুর পিছনে ঘুরলে কী শরীর ভালো থাকবে?
খাবার টেবিলে সবার সামনে মায়ের মুখে এই কথা শুনে লজ্জা পেল তূর্য। তার পাশেই বাবা বসে খাবার খাচ্ছেন।
মা! সবার সামনেই কথা টা বলার কী দরকার ছিল?
হি হি হি,, ছোট ভাইয়া লজ্জা পাইছে। থাক আম্মু ভাইয়া কে আর লজ্জা দিও না।মেঘ আপু কে তাড়াতাড়ি বিয়ে করিয়ে আমাদের বাড়িতে নিয়ে আসো।
আচ্ছা আমি একটা কথা বলতাম।
বাবার কথা শুনে সবাই বাবার দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করলো।
তিয়াস এর বিয়ের দিনই তূর্যর ও বিয়ে হয়ে গেলে ভালো হবে না?
বাবার কথা শুনেই জুঁই লাফিয়ে উঠে বলতে লাগলো গুড আইডিয়া।খরচ ও কম হবে। আনন্দ ও বেশি হবে।আর একসাথে দুই ভাইয়ের বিয়ে খাওয়ার সৌভাগ্য হয় কয় জনের?
দারুন একটা আইডিয়া কিন্তু।
বাবার কথা শুনে তূর্যর গলায় খাবার আটকে গেল।কী বলে না বলে?এখনো বুঝলোই না তার পরমাণু তাকে ভালোবাসে কিনা আর এখানে বাবা মা বিয়ের চিন্তা ভাবনা শুরু করে দিছে?বাহ বাহ।
.
.
মাহিরদের বাড়িতে আজ বিয়ের আমেজ। খুব সুন্দর করে সাজানো হয়েছে সব কিছু। হ্যাঁ আজ মাহিরের বিয়ে।আর কত দিন বেচারা সিঙ্গেল থাকবে?
মাহির তার মায়ের পছন্দের মেয়ে রূপসা কে বিয়ে করতে রাজি হয়ে যায়।সে মন থেকে তনু কে ভুলে যাওয়ার চেষ্টা করছে।
অনু তনু এবং তাদের পরিবারের সবাই কে দাওয়াত দেওয়া হয় মাহিরের বিয়েতে।
অনুর আর দুই দিন পর থেকেই পরীক্ষা।তাই সে এখন পরীক্ষা নিয়ে চিন্তায় আছে।মাহিরের বিয়ের দাওয়াত খাওয়ার এত সময় নেই তার। রাত দিন এক করে বইয়ের মাঝে ডুবে আছে সে। তূর্য কে ও মন, মস্তিষ্কের আশেপাশে ও আসতে দিচ্ছে না।
তনু কে অনেক করে বলেছে মাহির।তার বিয়েতে এসে যেনো বউ দেখে যায়।বড় মামার কথায় আসতে রাজি হলো তনু। কিন্তু আরাফাত তাকে আসতে দিতে চায়নি। বিয়ের পর আর খাগড়াছড়িতে আসা হয় নি দেখে আরাফাত আর তনু আরাফাত এর অফিসের ছুটিতে চলে আসে।এসেই দাওয়াত পেল মাহির এর বিয়ের।
সব কাজিনরা মিলে মাহির কে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে যাচ্ছে।এক কোনায় মায়ের পাশে দাঁড়িয়ে তা উপভোগ করছে তনু। তনুর থেকে কিছুটা দূরে আরাফাত ফোনে কারো সাথে কথা বলছে।
মাহির কে দেখে বেশ খুশিই মনে হচ্ছে।এক এক করে সবাই হলুদ ছোঁয়ানো শেষ হলে তনু আর আরাফাত যায় মাহির কে হলুদের ছোঁয়া দিতে।
তনু মাহিরের গালে হলুদের ছোঁয়া দিয়ে বললো,
দাম্পত্য জীবন সুখের হোক মাহির ভাই। এখন আর নিশ্চই আমাদের ভাবীর সাথে কোনো চিটারি বাটপারি করবেন না।
আরাফাত ও শুভ কামনা জানালো মাহিরের নতুন জীবনের জন্য।তনু আর আরাফাত কে দেখেই যে কেউ বলে দিবে হ্যাপি কাঁপল।
.
.
রাত ১০টা বাজে।অনুর ম্যাসের রুমের জানলা টা খোলা।অনু বিছানায় শুয়ে ঝিমিয়ে ঝিমিয়ে মুখে পড়া আওড়াচ্ছে। সামনে যেনো পরীক্ষা না আস্ত একটা বাঁশ বাগান অপেক্ষা করছে বাঁশ দেওয়ার জন্য।
অনু বিছানা থেকে উঠে ওয়াস রুমে গিয়ে চোখে মুখে পানি দিলো। ঘুম তাড়ানোর সামান্য একটু চেষ্টা আরকি।
ওয়াস রুম থেকে মুখ ধুয়ে বের হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে তোয়ালে রাখতে যাবার সময় অনুর চোখ পড়লো জানালার বাইরে।
বাইকের আলো জ্বলছে। এবং ল্যাম্প পোস্টের আলোয় মানুষ টাকে চিনতে একটু ও অসুবিধা হলো না অনুর।
এই লোক তো মহা পাগল।এত রাতে এখানে কী করছে?
এত রাতে ম্যাস থেকে বের হওয়ার কোনো উপায় নেই।
অনু বিছানার উপর থেকে মোবাইল টা নিয়ে তূর্য কে কল করলো।
রাস্তায় দাঁড়িয়ে থেকে এত সময় তূর্য জানালার দিকে তাকিয়ে ছিল।অনু কে জানলার পাশে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো।অনুর কল কেটে দিয়ে সে নিজে কল ব্যাক করলো।
আরেএএএ আপনি কি পাগল?এত রাতে এখানে কী করছেন?
আমি তো পাগলই। আপনার জন্য পাগল।
মেয়েদের হোস্টেলের সামনে এত রাতে দাঁড়িয়ে থাকলে পাবলিক এ কেলানি দিবে।তাই এত রাতে এখানে দাঁড়িয়ে আবেগি কথা বলে আমাকে ইম্প্রেস করার চেষ্টা না করাই ভালো।
চার দিন পর দেখছি আপনাকে।এই চার দিন কে চারটা বছরের মতোই মনে হয়েছে।
ঢং কইরেন না তো। দুই দিন পর আমার পরীক্ষা আর আপনি আসছেন ঢং করতে।
ওম্মা।আগে বলবেন না। আমি তো এই সব এর খবর রাখি না।তাই জানতাম ও না। পড়তে বসুন।মন প্রাণ দিয়ে পড়ুন। পরীক্ষার এই সময়টায় আমাকে মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলবেন একদম। বুঝলেন?মন দিয়ে পড়তে থাকুন।
বাপরে।কত জ্ঞান দিচ্ছে আমাকে। আচ্ছা একটা কথা বলি?
হুম বলুন।
কেমন আছেন?
ধুর ছাই। আমি ভাবলাম বলবেন যে ভালোবাসেন তা না জিজ্ঞেস করছেন কেমন আছি?
এত সময় একটুও ভালো ছিলাম না। এখন অনেক বেশি ভালো আছি।
ন্যাকামি পছন্দ না আমার। এই সব কথা আমাকে না বললেই খুশি হবো।
আচ্ছা ম্যাম আর বলবো না।সরি। আপনি কেমন আছেন?
পড়ার ঠেলায় হেব্বি খারাপ আছি। আপনি এখনি বাড়িতে যাবেন।
আচ্ছা ঠিক আছে।যাচ্ছি এই ভাবে তাড়িয়ে দেওয়ার কি আছে?
আমি রাখছি। তূর্য কে কিছু বলতে দেওয়ার আগেই অনু কল কেটে দিল।
আস্ত একটা পাগল এই লোক। মুচকি হেসে জানালা দিয়ে হাত বাড়িয়ে বিদায় জানালো অনু।তা দেখে তূর্য মুচকি হেসে হেলমেট পরে বাইক স্টার্ট দিলো। তূর্য চলে গেলে অনু জানলা বন্ধ করে বিছানায় এসে বই গুছিয়ে ফেললো। এখন আর এক বিন্দু পরিমাণ ও পড়া মাথায় ঢুকবে না।তা অনু ভালো করেই জানে।
.
.
জেমির সাথেই তিয়াসের বিয়েটা ফাইনাল হয়ে গেল। জেমি তেমন রান্না করতে জানে না।তাই সে মায়ের সাথে রান্না শিখতে ব্যাস্ত।তিয়াস আর জেমির মধ্যেকার সম্পর্ক কিছুটা স্বাভাবিক হয়েছে। প্রথম প্রথম জেমির সাথে কথা বলতে কিছু টা সংকোচ বোধ করতো।
জেমি ও লজ্জা পেতো।আজ জেমি তিয়াস কে জানিয়েছে তার জন্য নিজের হাতে রান্না করে নিয়ে আসবে। বিয়ের আগেই এত আয়োজন। না জানি বিয়ে পর কী করবে? ভাবতেই খুশিতে আত্মহারা হয়ে গেছে তিয়াস।
তিয়াস কে এত খুশি হতে দেখে তূর্য বলে উঠলো,
এত খুশি হবার কিছু নেই। বিয়ের পর তোমার জীবন টাই রান্না করে খেয়ে ফেলবে। তখন আর এত আদর যত্ন থাকবে না।
সমস্যা কি রে ভাই তোর? বিয়ের আগেই তুই ভয় দেখাচ্ছিস? অবশ্য দেখালে ও আমার কিছু যায় আসে না। তোর ভাবী অনেক ভালো।
সেটা না হয় বিয়ের পরই দেখবো আমরা।
বলেই তিয়াসের চুল এলোমেলো করে দিয়ে রুমে চলে গেল তূর্য।
তিয়াস হ্যাবলার মতো তূর্যর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল।
.
মাহির আর রুপসার বিয়ের দিন আজ। বেশ জাঁকজমকপূর্ণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে কমিউনিটি সেন্টারে।
তনুর আজ মাহির কে দেখলেই কেন জানি হাসি পাচ্ছে।আজ যে মাহির এর বিয়ে তা ভাবতেই পারছে না তনু।
রুপসা কে খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখলো তনু।
না মেয়েটা দেখতে খুবই সুন্দরী। শুধু একটু মোটা মাহির থেকে। সমস্যা না মটু আর পাতলুর এই জোরা টা বেশ মানাবে।
তনু রুপসার দুই গাল টেনে দিয়ে বাচ্চাদের মতো করে বললো আমার গুলুমুলু ভাবি টা। নতুন জীবনের জন্য অনেক অনেক শুভেচ্ছা।
মাহির রুপসার পাশে দাঁড়িয়ে তনুর কারবার দেখে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো। কিছু কিছু সময় বড় একটা দীর্ঘশ্বাস অনেক কথা বলে।
তনু, তোমার ঔষধ এর সময় হয়ে গেছে।আসো আমার সাথে।
আরাফাত তনু কে নিয়ে চলে গেল। ঔষধ খাইতে ভাল্লাগে না তো।
ভালো না লাগলে ও খেতে হবে। মাত্র দুই দিন এর জন্য আছে ঔষধ।এর পর আর খেতে হবে না।
তনু মুচকি হেসে আরাফাত এর হাত থেকে ঔষধ গুলো নিয়ে খেয়ে নিল।
অনু কে খুব মিস করছে তনু। বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে ছাদে চলে গেল সে।অনুর সেই দোলনায় বসে অনু কে কল করলো।একটা নিউজ অনু কে জানানো হয়নি।জানলে না জানি কতটা খুশি হবে পুচকি বোনটা।
তিন বার রিং হতেই অনু কল রিসিভ করে বললো,
কীরে কেমনে কেমনে মনে পড়লো আমাকে?
আমার তোকে সব সময়ই মনে পড়ে। তোরই পড়ে না।
আমি এখন পড়াশোনা নিয়ে কত্ত ব্যাস্ত। তোর থেকে ভালো রেজাল্ট করতে হবে না।
তুই যে খালামনি হবি সে খবর কী রাখিস?
#তার_শহরের_মায়া ২
পার্ট_৩০
#Writer_Liza_moni
তনুর কথা শুনে অনু তো খুশিতে আত্মহারা।
সত্যি, সত্যি আমি খালামনি হবো?
তনু মুচকি হাসলো। ছোট্ট করে উত্তর দিল হুম।
আপুনি তুই যে কী দারুন একটা খবর দিলি কী বলবো। আমার যে এত্ত আনন্দ লাগতেছে।ইশশ ছোট একটা প্রান আসবে দুনিয়ায়। মিষ্টি করে খালামনি বলে ডাকবে।এর থেকে খুশির খবর আর কী হতে পারে? আমার যে কত্ত আনন্দ লাগতেছে তোকে বলে বোঝাতে পারবো না।
হইছে আর কিছু বলতে হবে না। তোর পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন?
আবার পরীক্ষা ধুর ভাল্লাগে না। রেজাল্ট দেখার পর নিজেই দেখে নিস পরীক্ষার প্রস্তুতি কেমন।
সোজা সাপ্টা উত্তর তোর কাছ থেকে আর পাওয়া হবে না। বুঝতে পারছি। তুই সেই আগের মতই রয়ে গেলি।
উঁহু একদমই না। আমি আগের চেয়ে অনেক বেশি বদলে গেছি। শুধু তা সবার ক্ষেত্রে প্রকাশ করি না।যাই হোক, মাহির ভাই এবং তার বউয়ের খবর কী? বিয়েতে গেছিলি?
আর বলিস না।বড় মামা নিজেই বাড়িতে চলে আসছিল আমাদের নিয়ে যেতে। মামাকে তো আর বারন করা যায় না।তাই যেতে হলো।
ওহ আচ্ছা।বউ কেমন?
বউ সুন্দর।যার ভাগ্যে যে ছিল আর কি।
সুখে থাকুক।
হুম। আচ্ছা মা ডাকছে।রাখি কেমন? তুই পড়ায় মন দে। রাতে ফ্রী হলে ফোন দিয়ে সবার সাথে কথা বলে নিস।
আচ্ছা ঠিক আছে। এখন রাখছি।টা টা।ঐ শুন,,,
হ্যাঁ বল।
সাবধানে থাকিস। নিজের যত্ন নিস।রাখছি। আল্লাহ হাফেজ।
অনু কল কেটে দিল। মোবাইল এর সব ফোন নাম্বার দেখতে গিয়ে হঠাৎ অনুর চোখ পড়লো তূর্যর মোবাইল নাম্বার এর উপর।অনু কি মনে করে যেনো তূর্যকে কল দিল।
তূর্য তখন রেস্টুরেন্টে বসে ফ্রেন্ডদের সাথে আড্ডা এবং খাওয়া দাওয়া করছিল। হঠাৎ এই সময় অনুর কল পেয়ে খুশিতে লাফিয়ে উঠলো তূর্য।
তূর্য কল কেটে দিয়ে নিজেই আবার কল ব্যাক করলো।
আরেএএ আপনি এমন কেন বলুন তো? আমার ফোনে কী টাকা নেই যে কল কেটে আবার ব্যাক করছেন?
আমি এমনি। হঠাৎ কী মনে করে?
এমনিতেই।কী করেন?
এই তো বন্ধুদের সাথে আড্ডা দিচ্ছি। আপনি?
বইয়ের সামনে বসে আছি। আপনাকে বিরক্ত করলাম তাই না?আড্ডার মাঝে ঝামেলা পাকিয়ে দিলাম। অবশ্য এর জন্য আমি সরি কিছুতেই বলবো না।কারন এমন হুট হাট বিরক্ত করা ছাড়ছি না আমি।
অনুর কথা শুনে হাসলো তূর্য।
বাব্বাহ।আজ দেখি আপনি অন্য মুডে আছেন।
আজ আমি অনেক খুশি।
হঠাৎ এত খুশি কেন জানতে পারি? না মানে আমি ও আপনার সাথে খুশি হতাম আর কী।
আপনি জানেন আমি খালামনি হতে চলেছি।
বাহ তাহলে তো আমি আঙ্কেল হতে চলছি।
ভালো হয়ে যান মিস্টার তাওহীদ তূর্য।বলেই অনু কল কেটে দিল। তূর্য হেসে উঠলো অনুর কান্ডে। তূর্য কে হাসতে দেখে অর্ক বলে উঠলো,
কীরে ভাই?এত হাসি কেন তোর মুখে?
নতুন নতুন প্রেমে পড়লে হাসি খুশি একটু বেশিই থাকে।আর এটাই হলো ওর হাসির রহস্য।
তোর কল্লা। সবুজ তুই সব সময় এক চামচ বেশিই বুঝিস।
হ্যাঁ তা আমি জানি। কিন্তু আজ আমি যা বলেছি তা একদমই ঠিক বলেছি।
মাফ কর ভাই।আর কিছু বলিস না।
.
.
প্রতিদিন এর তুলনায় আজ অনুর ঘুম একটু বেশিই তাড়াতাড়ি ভেঙে গেল। বাইরে এখনো আলো ফুটে নি।ব্যাস্ত নগরী এখনো ঘুমিয়ে আছে। তবে হালকা পাতলা গাড়ির শব্দ শোনা যাচ্ছে।অনু অনেক চেষ্টা করেও আর ঘুমাতে পারলো না। তার পাশেই শান্ত হয়ে ঘুমিয়ে আছে রিয়ানা।অনু বিছানা থেকে উঠে ওয়াস রুমে চলে গেল ফ্রেশ হওয়ার জন্য।ফ্রেশ হয়ে এসে তোয়ালে দিয়ে মুখ মুছে মোবাইলে সময় দেখে নিলো।৪টা ১৫ বাজে।
এই সময়ে ঘুম টা ভেঙে যাওয়ার কোনো মানেই হয় না।আজ থেকেই ১০টায় তার পরীক্ষা শুরু।অনু্র মাথায় কিছু আসলো না এত সময় সে কী করবে এটা একা। কিছুক্ষণ বিছানায় থ মেরে বসে থেকে ভাবলো,
একটু লম্বা সময় নিয়ে পড়া গুলো রিভিশন করলে সময়টা চলে যাবে।
যেই ভাবা সেই কাজ। সময়টা কে নষ্ট না করে কাজে লাগানোটাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারন সময় টা চলে গেলে সময় টা আর ফিরে আসবে না।একটা সময়ে গিয়ে আবার এই সময়ের জন্য আফসোস করে বলতে যেনো না হয়,ইশ ঐ আগের সেই সময়টা যদি আবার ও ফিরে পেতাম।
ফজরের আযানের ধ্বনি কানে যেতেই ঘুম ভেঙ্গে যায় তূর্যর।সব সময় এই সময় তার ঘুম ভেঙ্গে যায়। কিন্তু সবাই জানে এবং দেখে বেলা ১০টা অব্দি পড়ে পড়ে ঘুমায় সে।আসলে ব্যাপারটা হলো,
ফজরের নামাজ আদায় করে বারান্দায় বসে বসে দিনের আলো ফুটতে দেখে সে।দিনের আলো ফুটতে দেখার অনুভূতি টা একদমই ভিন্ন। অদ্ভুত এক সুন্দর অনুভূতি কাজ করে মনে।
চার পাশে আলোয় আলোকিত হয়ে গেলে বিছানায় গা এলিয়ে দিয়ে আবারো ঘুমের রাজ্যে পাড়ি জমায়।
বিছানা থেকে নেমে ওয়াস রুমে গিয়ে ফ্রেশ হয়ে আজ সে মসজিদে চলে গেল নামাজ পড়তে। নামাজ পড়ে মসজিদ থেকে বের হলো না তূর্য। আজ আর সে বাড়ি ফিরবে না। কেন জানি মন চাইছে না।তাই সে মসজিদ এর বারান্দায় বসেই আলো ফোটার জন্য অপেক্ষা করতে লাগলো।
অনু নামাজের অযু করতে যাওয়ার আগে রিয়ানা কে বেশ কয়েক বার ডাকলো।রিয়ানা উঠছি বলে এখনো উঠার নাম নেই।
অনু একাই নামাজ আদায় করে নিলো। নামাজ পড়া শেষ হলে রিয়ানা কে মেরে মেরে ঘুম থেকে উঠিয়ে বললো,
আজ থেকে পরীক্ষা শুরু। আমার চোখে ঘুম নাই।আর তুমি কত শান্তিতে ঘুমিয়ে আছো। চিন্তা হয় না তোমার?
রিয়ানা চোখ ডলতে ডলতে বিরক্ত নিয়ে বললো,
ওভার থিংকিং ভালো না। পরীক্ষা তো কী হয়েছে? বিষয়টা কে প্যারা হিসেবে না নিয়ে চিল করো।দেখবা পরীক্ষায় না লিখেই ফার্স্ট ক্লাস হয়ে গেছো।
হ্যাঁ বলছে তোমারে।স্যার রা তো মনে হয় আমার মুখ দেখেই নাম্বার দিয়ে দিবে?
দিলে ও দিতে পারে।স্যাররা ও আপডেট হইছে না।
বেশি কথা বলতেছো ঘুম থেকে উঠে।যাও মুখ ধুয়ে অযু করে নামাজ পড়ে নাও। ফজরের নামাজ পড়লে সারা দিনটাই ভালো কাটবে।
রিয়ানা ওয়াস রুমে চলে গেলে অনু সকালের জন্য নাস্তা বানাতে ব্যস্ত হয়ে পড়ে। এই এক সপ্তাহ ধরে রিয়ানা একাই সব কিছু করছে।অনু একটা কাজ ও করেনি। অথচ অনুর প্রতি মেয়েটার কোনো অভিযোগ নেই।
আজ নিজে কিছু না করলে নিজের কাছে ও খারাপ লাগবে।
.
.
ভোরের আলো ফুটেছে অনেক সময় হয়ে গেছে। চার দিকে পাখিদের কিচিরমিচির শব্দ। তূর্য মসজিদ থেকে বের হয়ে রাস্তায় হাঁটতে লাগলো।গলির রাস্তা এখন ফাঁকা। গতকাল অনুকে এক বারের জন্যও দেখতে পায়নি।আজ ভাবলো সকাল সকাল যদি একটু দেখা যায় তাহলে দিনটাই ভালো কাটবে।
তূর্য খুব ভালো করেই জানে অনুর রাতে আর ভালো ঘুম হয় নি।অল্প চিন্তাতেই ঘুম আসে না মেয়েটার। সেখানে আজ আরো তার ফাইনাল এক্সামের প্রথম দিন।আজ তো আরো বেশি ঘুম না আসার কথা।
অদ্ভুত ভাবে এই মেয়ের শহরের মায়ায় পড়ে গেছি। না জানি তার শহরের মায়ায় সারাজীবন আটকে থাকতে পারবো কিনা। আমি তো তার শহরের মায়ায় আটকে থাকতে চাই সারাজীবন।এমনকি মৃত্যুর পর ও।
দুই জনের জন্য নাস্তা বানিয়ে ফেললো অনু।রিয়ানাকে কিছুই করতে দেয়নি সে। নাস্তা বানানো শেষ হলে দুই জনেই এক সাথে খেয়ে নিল।
সময় এখন আর দাঁড়িয়ে নেই।বেলা প্রায় আটটা বাজছে। বেশ অনেকক্ষণ ধরে অনু কে এক নজর দেখার জন্য দাঁড়িয়ে আছে তূর্য। অথচ একটা বারের জন্য হলেও অনু জানলার কাছে যায়নি এবং বারান্দায় ও যায়নি।
কোথায় তূর্য ভাবলো অনুকে দেখে দিন শুরু করবে তা আর হলো কই?এই পর্যন্ত কত জন কে যে দেখা হয়ে গেছে শুধু মাত্র অনু কেই দেখা হলো না।
অনু আর রিয়ানা একে অপরকে পড়া জিজ্ঞেস করা নিয়ে ব্যস্ত। তূর্য যে বাইরে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছে সেই কথা জানেই না অনু।জানলে হয়তো অনেক আগেই সোজা তূর্যর সামনে গিয়ে বলতো,,
আমার পরীক্ষায় ফেল করার কারণ হতে আসছেন আপনি?
চলবে,,,,,
চলবে,,,,