তার শহরের মায়া ২ পর্ব ২৭+২৮

##তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৭
#Writer_Liza_moni

বেশ কিছুক্ষণ ধরে অনু একটা কাশফুল ছেঁড়ার চেষ্টা করে যাচ্ছে। কিন্তু পারছে না। তূর্য বুকে দুই হাত গুজে অনুর কান্ড দেখে মুচকি মুচকি হাসছে। সামান্য কাশফুল ছেঁড়ার শক্তি নেই এই মেয়ের।

সামান্য একটা কাশফুল ছেঁড়ার শক্তি নেই তার আবার কত ভাব।

তূর্যর কথা শুনে অনু ভ্রু কুঁচকে তাকালো।
খোঁচা মেরে কথা বলবেন না একদম। দেখতেই তো পাচ্ছেন যে ছিঁড়তে পারছি না। আপনি এসে ছিঁড়ে দিয়ে যাবেন তা না খোঁচা মেরে যাচ্ছেন। অসভ্য লোক একটা।

তূর্য কয়েক টা কাশফুল ছিঁড়ে এনে অনুর হাতে দিলো। কাশফুলের কোমল শুভ্রতার ছোঁয়া পেয়ে আনন্দে আত্মহারা অনু।কী নরম তুলতুলে।

তূর্য আর অনু পাশাপাশি হাঁটছে। তূর্যর যে ক্ষুধা ছিল তা যেনো নিমিষেই হারিয়ে গেছে।
তূর্যের হাইটের তুলনায় অনু অনেক ছোট।
তাই সে তূর্যর আগে আগে হাঁটছে।
খাম্বা একটা।

কিছু খাবেন?

আমার ক্ষিদা নাই। আপনি খেয়ে নিন।

আপনি না খেলে আমি বাড়িতে গিয়ে খেয়ে নিবো।

তূর্যর বলা কথা টা শুনে হা করে তাকিয়ে রইল অনু। এমন ভাবে কথা টা বলতে ছিল মনে হচ্ছিল, আপনি না খেলে আমি ও খাবো না। কিন্তু না পুরো বিপরীত একটা কথা বললো। লোকটার কথা বার্তা শুনে বুঝা যায় যে এই লোক ন্যাকামি করতে পছন্দ করে না।

আমি ম্যাসে ফিরবো। অনেক সময় হয়ে গেছে। কিছুক্ষণ পর সন্ধ্যা হয়ে যাবে।

হয়ে যাক সন্ধ্যা। আপনার সাথে আজ রাতের শহরটা ঘুরে বেড়ানোর নিষিদ্ধ ইচ্ছে জাগছে মনে।

আমার এত শখ নাই। আপনার সাথে ঘুরতে যাবো কেন? বিয়ের পর আমার জামাই এর সাথে ঘুরবো।

ধরে নিন, বিয়ের আগেই হবু জামাইয়ের চেয়ে সাথে রাতের শহর দেখতে বিকেলেই বের হয়ে গেছেন।

এটা কি অজানা কোনো রাশি যে ধরে নিবো? আপনি যে আমার হাসব্যান্ড হবেন তার গেরান্টি কী শুনি?

আমি যে আপনার হাসব্যান্ড হতেও পারি এটা কি ভেবে দেখেছেন?

আমার এত ভেবে কাজ নেই। সামনে আমার পরীক্ষা।তাই পরীক্ষার আগে আমাকে এমন হুট হাট ডেকে নিয়ে আসবেন না।

আমি তো আপনাকে ডাক দিবোই আমার যখন ইচ্ছে করবে ঠিক তখনই।ওটা মাঝ রাতে ও হতে পারে। আপনি না এসে থাকতে পারবেন তো অনুমেঘা?

তূর্যর মুখে এই প্রথম নিজের নাম টা এত সুন্দর করে শুনলো অনু। কেন জানি বেশ ভালো লাগা কাজ করছে বুকের বাঁ পাশে। সাধারণের তুলনায় হার্ট বিট যেন আরও বেড়ে গেলো। কেমন একটা অনুভুতি। তবে যাই হোক, অনুভূতি টা সুন্দর।অন্য রকম সুন্দর।

অনু কে নিজের দিকে ফ্যাল ফ্যাল করে তাকিয়ে থাকতে দেখে মুচকি হাসলো তূর্য।অনু ঘোরের মাঝেই বলে উঠলো,
আপনার হাসিটা অনেক সুন্দর।

আপনার কাছ থেকে এই প্রশংসা পেয়ে আমি ধন্য।

কেন আমি ছাড়া কী অন্য কেউ কখনো প্রশংসা করেনি?

অনেক জন করেছে। আমি তেমন কিছু বলিনি।

আপনার হাসিটা আসলেই সুন্দর। হাসলেই গালে টোল পড়ে বিধায় এত কিউট লাগে দেখতে।

তূর্য প্রতি উত্তরে কিছু না বলে বিনিময়ে আবারও সেই হাসিটা দিলো।

এই ভাবে হাসবেন না। বুকের মাঝে ধক করে উঠে।

প্রেমে পড়ে গেছেন।বলে দিলেই তো পারেন।

আপনার মতো পাগলের প্রেমে আমি পড়তে যাবো কোন দুঃখে? আমার জন্য কী ছেলের অভাব হইছে? আমি তো অন্য মেয়েদের কথা বলছি।

অন্য কাউকে নিয়ে আপনাকে এত ভাবতে হবে না। আপনার জন্য ছেলের অভাব হয় নাই। কিন্তু আমার মতো ছেলের অভাব হইছে। বুঝলেন মিস পরমানু? না বুঝলে বলেন আবার বুঝিয়ে দিবো।

আপনি কি আমাকে কোনো অঙ্কের সমাধান বুঝাচ্ছেন যে বুঝবো না? আমাকে দেখে কী আপনার বোকা মনে হয়?

শুধু বোকা না,আস্ত একটা গাঁধী মনে হয়।
তূর্যর কথা শুনে অনু রেগে গিয়ে ওর পিঠে ইচ্ছে মতো কিল মারলো।

উফফ বিয়ের আগেই এত অত্যাচার? বিয়ের পর না জানি কি করবে আমার অবস্থা? সেই চিন্তায় চিন্তায় শুকিয়ে যাচ্ছি।

আপনাকে বিয়ে করতে যাবে কোন পাগলে?

ওমা পাগলে কেন বিয়ে করবে? আপনি থাকতে আমি পাগল কে বিয়ে করবো এমন ছেলে আমি না।

আপনার সাথে কথা বলাটাই বৃথা।
.
.
জেমি কে তোমাদের কেমন পছন্দ হয়েছে বললে না তো তৃণা?বিয়েটা কী হবে?নাকি হবেনা। কিছুই তো জানালে না।

সব দিক দিয়ে ঠিক আছে কিন্তু সমস্যা হলো মেয়ের ড্রেসাপ। শাড়িটা ও শালীন ভাবে পড়তে পারে না। অতিরিক্ত আধুনিকতার ছোঁয়া সব কিছুতেই।এত আধুনিক মেয়ে ঠিক মতো সংসার করতে পারবে কিনা তা নিয়ে একটু চিন্তা হচ্ছে আমার।

এই বিষয় নিয়ে এত চিন্তার কী আছে? বিয়ের পর সব কিছু তুমি নিজের হাতে ওকে শিখিয়ে পড়িয়ে নিবে আম্মু।

তার মানে তুই মেয়েটাকে বিয়ে করতে চাস?

আম্মু তুমি আমার এক্সের কথা ভুলে গেছো?সে অনেক আধুনিক মেয়ে ছিল।সে কী বলে ছিল আমি নাকি গ্রাম্ম খেত কোনো একটা মেয়ে কে বিয়ে করে নিবো। এখন ঐ মেয়েরে দেখাতে হবে না আমার বউ ওর চেয়ে ও বেশি স্মার্ট। সুন্দরী সব দিক থেকেই ওর থেকে পারফেক্ট।

শ্রেয়া আপু তোকে কী ছ্যাকা টাই না দিয়ে ছিলো ভাইয়া।ছ্যাকা খেয়ে তুই পুরো দেব দাস হয়ে গিয়েছিলি। এখন অবশ্য অনেক টা ঠিক আছিস আগের তুলনায়।

তূর্য তো দেখতে গেলো না জেমি কে।

তূর্য তো আমার থেকে সুন্দর দেখতে।যদি জেমি তূর্য কে পছন্দ করে ফেলতো তাহলে তো ওর সাথে আমার বিয়ে টা হতো না।তাই আমি ওকে যেতে বারন করে ছিলাম।

আম্মু দেখেছো বড় ভাইয়া কেমন বিয়ে পাগলা হয়ে গেছে? ছোট ভাইয়া কে ও দেখতে যেতে দেয়নি।

তাহলে এখন কী জেমির আব্বু আম্মু কে আমাদের মতামত জানিয়ে দিবো যে মেয়ে আমাদের পছন্দ হয়েছে। এবং তাদের মতামত ও শুনে নিবো। দু’পক্ষের যদি পছন্দ হয়ে যায় তাহলে খুব শীঘ্রই শুভ কাজটা শেষ করে ফেলবো।কী বলো তৃণা?

মিসেস তৃনা বসা থেকে উঠে রুমে যেতে যেতে উত্তর দিলেন,যা ভালো মনে করছো তাই করো। আমি আর আলাদা করে কিছুই বলবো না।যার সাথে সারাটা জীবন সংসার করবে তার পছন্দ হলেই হলো।

মায়ের কথা টা ঠিক হজম হলো না তিয়াসের।সে বাবার দিকে তাকিয়ে বললো,
মা কী রাগ করেছে আব্বু? আম্মুর কী জেমি কে পছন্দ হয়নি? কিছুই তো ক্লিয়ার করে বললো না।

তোর মাকে চিনিস না?হয়তো পছন্দ হয়েছে আবার নয়তো। আমি পরে জেনে তোকে বলবো।

বড় ভাইয়া তুই তাড়াতাড়ি বিয়ে করে ছোট ভাইয়ার রাস্তা ক্লিয়ার কর।তোরা দুজনে বিয়ে করে ফেললেন আমি দুইটা কিউট কিউট ভাবি পাবো।

আমরা বিয়ে করে ফেলার পর তোকে ও বিয়ে দিয়ে আমাদের বাড়ি থেকে বের করে বাড়ি ফাঁকা করবো।

আব্বু দেখছো তোমার ছেলে কী বলে? বাবার গলা জড়িয়ে ধরে অভিমানী কন্ঠে বলে উঠে জুঁই।
বাবা এক হাত দিয়ে জুঁই এর মাথায় হাত বুলিয়ে কপালে চুমু দিয়ে বললেন আমার রাজকন্যা কে আমি এত তাড়াতাড়ি বিয়ে দিবো না। আমার রাজকন্যার এখনো বিয়ের বয়স হয়নি।

বাবার কাছে তার মেয়েরা রাজকন্যাই হয়। হোক না সেই বাবা গরীব কিংবা ধনী। তাদের কাছে তাদের মেয়েরা একটু বেশিই আদরের।
.
.
চার দিকে মাগরিবের আজানের ধ্বনি ভেসে আসছে। মিনিট পাঁচেক আগেই তূর্য অনু কে ম্যাসের সামনে নামিয়ে দিয়ে যায়।অনু কে ম্যাসের সামনে নামিয়ে দিয়ে সে সোজা বাড়িতে চলে আসে।ক্ষিদার জ্বালায় আর টেকা যাচ্ছে না। সেই কখন থেকে খাবে খাবে করে আর খাওয়া হয়নি। বাড়িতে এসে ফ্রেশ হয়ে মাকে ডাকতে লাগলো।
মিসেস তৃনা তখন সবে মাত্র নামাজ পড়ে হাতে তসবিহ নিয়ে রুম থেকে বের হয়ে আসেন।ডাইনিং টেবিলে আগে থেকেই তূর্য বসে ছিল। তূর্যর মুখ দেখেই তিনি বুঝে গেলেন সারা দিনে এই ছেলে কিচ্ছু খায়নি।না খেয়ে টই টই করে ঘুরে বেড়াচ্ছে নবাব পুত্র।

চলবে,,,,তার_শহরের_মায়া ২
#পার্ট_২৮
#Writer_Liza_moni

শুনো গো দখিনো হাওয়া প্রেম করেছি আমি
লেগেছে চোখেতে নেশা দিক ভুলেছি আমি।

বারান্দায় বসে আকাশের দিকে তাকিয়ে আনমনে গিটারে সুর তুলে গান গাইছে তূর্য। বেশ ভালো একটা মুডে আছে সে।
জুঁই তূর্যর কাছে এসে বললো,
হ্যাঁ ভাইয়া আমরা জানি। তুই প্রেমে পড়ে ডুবে গেছিস। কিন্তু তুই যে মেঘ আপুর সাথে প্রেম করছিস তা তো জানিনা।মেঘ আপু কে কী প্রপোজ করেছিস?কী রিয়েকশন করেছে?

তোর এই সব শুনে কী কাজ? ছোট ছোটোর মতো থাক।

ধুর ছাই। আমার ফ্রেন্ডরা তাদের ভাইদের সাথে কত্ত ফ্রী।কত কথা শেয়ার করে তারা।আর তুই?বড় ভাইয়া যেমন ছোট ভাইয়া ও তেমন।আজ আমার একটা বোন থাকলে তার সাথে মন খুলে কথা বলতে পারতাম।
জুঁই এর মনটা খারাপ হয়ে গেল। অন্যান্য সময় সে বোনের জন্য কখনো মন খারাপ করে না। কিন্তু তূর্য আর তিয়াস যখন এমন করে কিংবা বকা দেয় তখন সে খুব করে একটা বোনের অভাব ফিল করে।

জুঁই মন খারাপ করে রুমে চলে গেল। তূর্য ভ্রু কুঁচকে জুঁই এর চলে যাওয়ার দিকে তাকিয়ে রইল। তারপর বিড় বিড় করে বললো,

বেশি বেশি করে ফেলি হয় তো।পুঁচকি টা রাগ করছে।রাগ ভাঙাতে হবে। তূর্য গিটার টা রেখে জুঁই এর রুমে চলে গেল।যেয়ে দেখে,

জুঁই পড়ার টেবিলের উপর হাত ভাঁজ করে তার উপর মাথা রেখে বসে আছে।
তূর্য ধীর পায়ে জুঁই এর দিকে এগিয়ে গেল। জুঁই এর মাথায় আলতো করে হাত বুলিয়ে জুঁই কে নরম গলায় ডাক দিলো।

জুঁই ফুল।সরি পুঁচকি বনু আমার।
জুঁই রাগ দেখিয়ে তূর্যর হাত মাথার উপর থেকে সরিয়ে দিলো।কষ্ট দিয়ে এখন আবার সরি বলতে আসছে।ঢং করতে আসছে আমার সাথে ঢং।
মনে মনে বললো জুঁই।

তূর্য জুঁই এর এমন ব্যবহার দেখে বুঝতে পেরে গেছে জুঁই তার এমন ইগনোরে খুব কষ্ট পায়। আসলেই দোষ টা আমারই।বড় ভাইয়া না হয় চুপ চাপ স্বভাবের। কিন্তু আমি তো কথা একটু বেশিই বলি। ছোট্ট বোনটার সাথে টুকিটাকি কিছু কথা শেয়ার করলে কী এমন ক্ষতি হতো?বোন তো অনেক বড় হয়ে গেছে।ইন্টারে পড়ছে পিচ্চি বনু টা। নিজের কাজের জন্য নিজেই নিজের উপর রেগে গেলো তূর্য। দুই হাত দিয়ে মাথার চুল গুলো টেনে দিয়ে আবারো জুঁই কে ডাকতে লাগলো।
কিন্তু জুঁই কোনো রিয়েকশন না করে আগের মতই বসে আছে।

বেশ কিছুক্ষণ ডাকার পর সরি বলার পর ও জুঁই তূর্যর দিকে তাকালো না। অভিমান করেছে খুব। তূর্যর কিছু একটা মনে পড়তেই রুমে চলে গেল।
তূর্য চলে গেলে জুঁই বসা থেকে উঠে বারান্দায় চলে যায়। চোখ থেকে নিজের অজান্তেই জল গড়িয়ে পড়ছিল। দুই হাত দিয়ে চোখের পানি মুছে রাতের ঝিকিমিকি শহরটা দেখায় মন দিলো। কিছুক্ষণ পর চোখের সামনে এক জোড়া পায়েল ঝুলতে দেখে পেছনে ফিরে তাকায় জুঁই।

পায়েল দুটো দেখেই সব রাগ অভিমান হাওয়া হয়ে গেল। তূর্যর হাত থেকে ছোঁ মেরে পায়েল দুটো নিয়ে দেখতে লাগলো জুঁই।
চট্টগ্রাম থেকে আসার সময় নিয়ে এসেছিল পায়েল দুটো। জুঁই কে পরে দিবে দিবে করে আর দেওয়া হয়ে উঠেনি।আজ যেহেতু সুযোগ এসেছে সেই পায়েল দুটো দিয়েই না হয় অভিমানী বোনটার অভিমান ভাঙালো।

জুঁই তূর্যর পিঠে কয়েক টা কিল মেরে দিয়ে বললো,
আমাকে মিথ্যা কথা বলার কী দরকার ছিল?যখন আমি চেয়েছিলাম তখন তুই কী বলে ছিলি?
“নিজের জন্যই কিছু কিনি নাই আবার তোর জন্য পায়েল কিনবো।”

সারপ্রাইজ দিয়ে দিলাম আর কী।

কচুর সারপ্রাইজ। বলেই জুঁই আরো দুই টা কিল বসিয়ে দিল তূর্যর পিঠে।
তূর্য হাত দিয়ে পিঠ ঘষে বললো,
তুই আর অনুমেঘা আমার পিঠটা কে কী পেয়েছিস বল তো?যখন তখন কিল মেরে দিস।রোবট না তো আমি।এত জোরে কিল মারলে ব্যাথা পাই।

হিহিহি। তোর চওড়া পিঠে মারতে মজা লাগে।মেঘ আপু ও দেখি আমার দলের।বাহ বেশ ভালোই হলো। আমি আর মেঘ আপু মিলে তোকে ইচ্ছে মতো কিল মারতে পারবো।

দুটোকে আমি দুই চড় মারলে আর খুঁজে পাওয়া যাবে না।

আইছে আমাদের দেশের শক্তিশালী নাগরিক।
আচ্ছা এখন বলতো মেঘ আপুর সাথে কী প্রেম করছিস?

আর প্রেম। সরাসরি প্রপোজ করলাম না এখন ও।
মেয়েটার মন বুঝতে পারছি না।এই মনে হয় আমাকে পছন্দ করে আবার এই মনে হয় আমাকে দুই চোখে ও দেখতে পারে না।

জুঁই হেসে বললো,
আমি দেখি তোর জন্য কী করতে পারি।

তুই আবার কী করবি?

আগে তো মেঘ আপুর সাথে দেখা হোক। তার পর না হয় দেখিস কী করি? অপেক্ষা করতে থাক।

আচ্ছা। অপেক্ষায় রইলাম আমার পিচ্চি বোনটা কী করবে তা দেখার জন্য।

🖤
সামনে পরীক্ষা আর এই লোক এসে আমার সব কিছু উলোট পালোট করে দিলো গো।হায় এই বার আমার কী হবে?বইয়ের দিকে তাকালেই খালি ঐ বান্দরের মুখটা চোখের সামনে ভেসে বেড়ায়।

পড়ার টেবিলে বসে দাঁত দিয়ে কলম কামড়ে ধরে এই সব বিড় বিড় করছে অনু।
খাতায় এই পর্যন্ত প্রায় ১০বার ভুল করে তূর্যর নাম লিখে বসে আছে। পড়ার একটা লাইন লিখছে আর তার মাঝেই মনের ভুলে তূর্যর নাম লিখে ফেলছে।

তার পাশেই বসে এই সব কাহিনী দেখে হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খাচ্ছে রিয়ানা।
পড়ার টেবিল থেকে উঠে চলে আসো।আজ আর তোমার পড়া হবে না।প্রেম রোগে ধরেছে তোমায়।

রিয়ানার মুখের দিকে তাকালো অনু। মেয়েটা একদম ঠিক কথাই বলেছে।আজ আর আমার পড়া হবে না। একদমই না।যে আকারে বইয়ের পাতায় ঐ লোকের নজর কাড়া হাসি মুখটা ভেসে উঠছে বাপরে। অনু বই বন্ধ করে গুছিয়ে রেখে বিছানায় এসে শুয়ে পড়লো। মাথায় শুধু তূর্যর বলা একটা কথাই ঘুরপাক খাচ্ছে,

এই যে পরমানু,,?

কী চাই?

আপনাকে।

কী সুন্দর সোজা সাপ্টা উত্তর দিয়ে দিয়েছে। তার নাকি আমাকে চাই।ইশ কত্ত শখ।

রিয়ানা সেই কখন থেকে অনুকে ডাকছে খাবার খেয়ে নেওয়ার জন্য।অনুর কান অব্দি যেনো সেই ডাক পৌঁছালো না।

রিয়ানা অনুর চুল টেনে দিয়ে বললো,
ও আমার বোন,
কল্পনার জগৎ থেকে বের হয়ে এই বার বাস্তবে আসো।যেই হারে তুমি অন্য চিন্তায় ডুবে আছো পুরো ম্যাসের সবাই এসে তোমাকে ডাকলে ও তুমি শুনতে পাবে না।মন মস্তিষ্কে সব কিছুতেই দেখছি আমাদের তূর্য ভাই বেশ গাঢ় করে প্রভাব ফেলেছে।

থাক ভাই আর কিছু বলে লজ্জা দিও না। এমনিতেই বহুত প্যারায় আছি ঐ লোকরে নিয়ে।আজ কত বড় ভয়ংকর একটা কথা বলেছে যানো?
তার নাকি আমাকে চাই।ভাবতে পারছো যে ছেলের জন্য তার অফিসের বসের মেয়ে এনি না কী যেনো একটা নাম সেই বড় লোকের মেয়ে পাগল সেই ছেলে নাকি আমাকে চায়।

এত বড় লোকের মেয়ে কে যখন পাত্তা দেয়নি তখন তোমাকে চায় মানে সত্যি ভালোবাসে। তোমাকে যেহেতু চায় তুমি ও তার হয়ে যাও।

না না বাবা। পরীক্ষার আগে আমি আর ঐ লোকের সামনে ও যাবো না। উনাকে দেখলেই আমার সব কিছু উলোট পালোট হয়ে যায়। আপাতত এই সব কথা বাদ দিয়ে উপায় বলো, উনাকে কী ভাবে এখন মন এবং মস্তিষ্ক থেকে বিদায় করবো।যে হারে জ্বালাচ্ছে আমাকে। শেষ পর্যায়ে এসে ডাব্বা মারার ইচ্ছে নেই আমার। আব্বু জানলে এই সব সোজা উপরে পাঠাই দিবে।
তনু আপু যা করছে তার পর ও ওর রেজাল্ট খুব ভালো ছিল।

উমম তুমি এখন উনাকে দেখলেই ইগনোর করবা। এবং উনাকে নিয়ে যত চিন্তা করো কল্পনার জগৎ এ ডুবে থাকো তা বাদ দিয়ে দাও।আর নিজেকে পড়ার মাঝে ডুবিয়ে রাখো তাহলেই হবে।

বলছো? সত্যি এমন করলে সাময়িক ভাবে উনাকে ভুলে থাকা যাবে?

তুমি দেখছি মেয়ে তূর্য ভাইয়ার প্রতি অনেক বেশি দূর্বল হয়ে গেছো।

হবো না?এই টা কি বলো?এত সুন্দর করে হাসলে এত কিউট কিউট কথা বললে এমনিতেই খুন হয়ে যাচ্ছি আমি।

বুঝেছি গো।প্রেম রোগে ভুগছেন আপনি। তূর্য নামক হোমিওপ্যাথির ডোজ আপনার সব সময় লাগবে।

চলবে,,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here