#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ৬
#Saiyara_Hossain_Kayanat
“প্রিয় মায়াবিনী শুভ্রতা,
প্রথম দেখাতেই তোমার মায়ায় জড়িয়ে গেলাম। তোমাকে দেখার খুব ইচ্ছে ছিল তবে তুমি যে দেখিতে একদমই পিচ্চি একটা মায়াবী পরি হবে ভাবিনি। তোমার সামনে আসার সাহস পাইনি তাই আজ দূর থেকে দেখেই চলে গেলাম। তবে খুব জলদি দেখা হবে অবশ্যই। ভালো থেকো মায়াবিনী।
ইতি,
শুভ্রতার কেউ একজন”
চিরকুটটা পড়ে মাথার মধ্যে হাজার খানেক প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে। কে এই লোক?? আমি এমন কাওকে চিনি বলে তো মনে পরছে না। আর এভাবে লুকিয়ে লুকিয়ে চিরকুট দেওয়ারই বা কি মানে!!
—”দোস্ত এই কাব্যিক লোকটা কে? তুই চিনিস না-কি!!”
দীপ্ত বিস্ময়ের সাথে কথাটা আমাকে জিজ্ঞেস করলো। আমি চিরকুট থেকে দৃষ্টি সরিয়ে দীপ্তর দিকে দৃষ্টি দিয়ে গম্ভীর গলায় বললাম-
—”আমি এই লোকটাকে চিনি না দীপ্ত। আর লোকটার চেহারাও তো দেখতে পেলাম না।”
দীপ্ত কিছুটা ভেবে বললো-
—”তোর চেনার কথাও না চিরকুট পড়েই বোঝা যাচ্ছে উনি আজ তোকে প্রথম দেখেছে। আচ্ছা যাইহোক এইটা এখন লুকিয়ে রাখ না হলে ভাইয়া দেখলে তোর অবস্থা কি হবে ভাবতে পারছিস তুই!!”
আসলেই তো আদ্র ভাই এটা দেখলে আমাকে আস্ত গিলে খাবে। আমি দীপ্তকে জড়িয়ে ধরে বললাম-
—”এই প্রথম তুই একটা ভালো কথা বললি দীপ্ত। তোর ওই রাক্ষস ভাই যদি এটা দেখে তাহলে আজই আমার খেল খাতাম।”
দীপ্তকে ছেড়ে চিরকুটটা মুচড়িয়ে পিছন ঘুরে ফেলতে যাবো তখনই দেখলাম আদ্র ভাই এসে হাজির। চিরকুট অন্য কোথাও না একদম আদ্র ভাইয়ের শরীরের উপরই পরেছে। “যেখানে বাঘের ভয় সেখানেই সন্ধ্যে হয়” এই প্রবাদটার সত্যতা এই মুহূর্তে প্রমাণিত হলো আমার কাছে। চিরকুটটা এভাবে আমার সাথে বেইমানি করবে বুঝতে পারিনি। চলেই তো যাচ্ছিলি অন্যদিকে যেতি এই রাক্ষসের গায়ের উপরেই কেন তোকে যেতে হলো!! অসহ্যকর বেইমান চিরকুট আমার বিপদ ডেকে নিয়ে এসেছে।
আদ্র ভাইয়া ঝুঁকে নিচ থেকে চিরকুটটা উঠিয়ে হাতে নিলেন। আমাদের দিকে একপলক তাকয়ে চিরকুটটা খুলে স্থির দৃষ্টিতে কিছুটা সময় তাকিয়ে পুনরায় ভাজ করে নিজের পকেটে রেখে দিলেন। আমাদের দিকে তাকিয়ে স্বাভাবিক ভাবে বললেন-
—”রোদে দাঁড়িয়ে না থেকে তাড়াতাড়ি চল গাড়িতে উঠে বস।”
আমি আর দীপ্ত একে অপরের দিকে তাকিয়ে একটা শুকনো ঢোক গিলে গাড়িতে উঠে বসলাম। আজ আর আমরা কেউ সামনে বসি নি দুজন একসাথেই পেছনে সিটে বসেছি। আদ্র ভাইও আজ কিছু বলেনি। ওনার মুখ দেখে বোঝার কোনো উপায় নেই উনি রেগে আছেন নাকি স্বাভাবিক। পুরো গাড়িতে পিনপতন নীরবতা কারো মুখেই কোনো শব্দ নেই।
আদ্র ভাইয়ের বাসার সামনে আসতেই দীপ্ত চুপচাপ নেমে গেল। কয়েক সেকেন্ড বাধেই ফোনের মেসেজের টুং টাং শব্দ বেজে উঠলো। ইসস আজ ফোনটাও সাইলেন্ট করতে ভুলে গেছি। ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে দেখলাম দীপ্ত মেসেজ দিয়েছে-
—”শুভ্রা তুই চিন্তা করিস না ভাইয়া বাসায় আসলে আমি বুঝিয়ে বলবো। ভয় পাওয়ার কিছু নেই।”
মেসেজটা দেখে একটু স্বস্তি পেলেও পরক্ষণেই আদ্র ভাইয়ের কথায় তা মিয়িয়ে গেল।
—”সামনে এসে বস শুভ্রতা।”
আমি কিছু না বলে ওনার কথা মতো সামনে এসে বসতেই উনি গাড়ি স্টার্ট দিলেন। কিছুটা পথ যেতেই ফাঁকা রাস্তার এক পাশে গাড়ি থামিয়ে দিলেন। সামনের দিকে তাকিয়েই বেশ শান্ত গলায় জিগ্যেস করলেন-
—”ছেলেটা কে শুভ্রতা?”
আমি আমতা-আমতা করে বললাম-
—”আসলে আদ্র ভাই আমি জানি না চিঠিটা কে দিয়েছে। আমি শুধু…. ”
আর কিছু বলার আগেই আদ্র ভাই বাঘের মতো আমার উপর হামলা করলেন। ওনার শান্ত রূপটা মুহুর্তের মধ্যেই প্রচন্ড রাগে রণমুর্তিতে পরিনত হলো। রাগে জ্বলজ্বল চোখে আমার দিকে তাকিয়ে আমার দুই গাল চেপে ধরে ধরে হুংকার দিয়ে বলে উঠলো-
—”বার বার তোকে নিষেধ করেছি আমাকে ভাই বলতে। তবুও কেন আমার কথা শুনিস না!! আর তুই যদি ছেলেটাকে না-ই চিনে থাকিস তাহলে কেন এই চিঠিটা আমার কাছ থেকে লুকাতে চেয়েছিলি??? পছন্দ হয়েছে না-কি ছেলেটাকে?? এই ছেলের জন্যই কি আমার থেকে পালিয়ে বেড়াচ্ছিস??”
আমি ওনার হাত ছুটানো চেষ্টা করতে করতে বললাম-
—”আদ্র৷ প্লিজ ছাড়ুন ব্যথা পাচ্ছি আর আপনি যা ভাবছেন তা একদমই ভুল। আপনি শুধু শুধু রেগে যাচ্ছেন।”
আমার এমন কথায় যেন উনি ওনার সর্বশক্তি দিয়ে আমার গাল আরও জোরে চেপে ধরলেন। মনে হচ্ছে এখনই চোয়াল ভেঙে যাবে আর দাঁত গুলো হয়তো অবশ হয়ে গেছে। চোখের কোণে পানি জমে ঝাপসা হয়ে এলো আমার দৃষ্টি। দু হাত দিয়ে ব্যর্থ চেষ্টা করছি ওনার হাত সরানোর জন্য। উনি আবারও অগ্নিগিরির মতো জ্বলে উঠে বললেন-
—”একটা কথা শুনে রাখ শুভ্রতা তুই অন্য সবার জন্য নিষিদ্ধ। আর আমি ছাড়া তোর পাশে বাকি সব ছেলে নিষিদ্ধ। মনে রাখিস নিষিদ্ধ জিনিসের দিকে এগিয়ে গেলে নিশ্চয়ই তোর জন্য ভালো হবে না!!”
ওনার এভাবে গাল চেপে ধরায় ব্যথা সহ্য করতে না পেরে গাল বেয়ে চোখ থেকে কয়েক ফোটা নোনাজল গড়িয়ে পরলো। আদ্র ভাই আমার গাল ছেড়ে দিয়ে আমার মাথার পেছনের চুল শক্ত করে খামচে ধরে আমাকে ওনার মুখোমুখি নিয়ে শক্ত গলায় বললেন-
—”খবরদার শুভ্রতা চোখ দিয়ে যেন পানি না পরে। আরেক ফোটাও যদি চোখ দিয়ে পানি পরছে তাহলে আমার থেকে খারাপ কেউ হবে না।”
উনি আমার চুল ছেড়ে দিয়ে চোখের পানি মুছে দিয়ে আবারও গাছের স্টার্ট দিলেন। আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে বসে আছি ওনার দিকে তাকাতে ইচ্ছে করছে না। গাল গুলো অসহনীয় ব্যথা করছে। আর তার থেকে বেশি কষ্ট লাগছে ওনার এমন ব্যবহারে। এই লোকটার জন্য কান্না করতে ইচ্ছে করলেও পারছি না। ঠোঁট কামড়ে ব্যথা সহ্য করছি।
বাসার সামনে এসে গাড়ি থামতেই কিছু না বলে গাড়ি থেকে নেমে বাসায় চলে আসলাম৷ একবারের জন্যেও আদ্রর দিকে ফিরে তাকাইনি। ওনার প্রতি রাগ আর অভিমান জমেছে পাহাড় সমান। এই কয়দিনে ওনার প্রতি যেই অনুভূতি গুলো সৃষ্টি হয়েছিলো সে গুলো এখন এই অভিমানের নিচে চাপা পরে গেছে। সামান্য একটা চিরকুটের জন্য উনি আমার সাথে এমন ব্যবহার করবেন আমি আশা করিনি। ভেবেছিলাম হয়তো সব সময়ের মতোই ধমক দিয়ে শাসন করবেন।
———————
ঘড়িতে প্রায় একটার কাঁটা ছুই ছুই। আজ সারাদিন নিজের রুম থেকে বের হইনি। আব্বুকে এটা ওটা বলে এড়িয়ে গেছি। আদ্র ভাই আর দীপ্ত ফোন করেছিল অনেক বার তবে আমি কথা বলিনি। ফোন বন্ধ করে রেখেছি। আমার সাথে এমন করার পরেও উনি ভাবলেন কিভাবে আমি ওনার ফোন রিসিভ করবো!! মেসেজের রিপ্লাই দিবো!! আজ উনি যা করেছে এরপর ওনার সাথে কথা বলা তো দূরের থাক ওনার সামনেও আমি যাবো না। উনি থাকুক ওনার বদমেজাজ আর ভুল ধারণা নিয়ে।
এইসব কিছু হয়েছে ওই ছেলেটার জন্য। তার দেওয়া চিরকুট আমার জন্য বিপদ ছাড়া কিছুই না।
ঘুম ঘুম অবস্থায় বিছানায় শুয়ে আছি এমন সময় বারান্দা থেকে কিছু একটার শব্দ হলো। এতো রাতে কিসের শব্দ হলো!! খানিকটা সময় পর আবারও শব্দ হলো। কেন যেন আজ প্রচন্ড ভয় লাগছে। অন্য দিন হলে হয়তো এতটা ভয় পেতাম না তবে আজ একটার পর একটা আশ্চর্যজনক ঘটনা ঘটে যাচ্ছে আমার সাথে তাই ভয় পাচ্ছি। ভয়কে মাটি চাপা দিয়ে মনে সাহস জুগিয়ে বারান্দার দরজার দিকে পা বাড়ালাম।
চলবে…..
(সবাই কেমন যেন নিরব পাঠক হয়ে গেছে ব্যাপারটা খুবই দুঃখজনক। যাইহোক হ্যাপি রিডিং। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবার জন্য।❤️)