ভালোবাসার রংবদল পর্ব ৫

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ৫
#Saiyara_Hossain_Kayanat

চোখ মেলে তাকাতেই ভয়ে আঁতকে উঠে চিৎকার দিলাম। আমি চিৎকার দেওয়ার সাথে সাথে দীপ্তও চিৎকার দিলো। আমি তাড়াতাড়ি করে শোয়া থেকে উঠে বসে পরলাম। জ্বলন্ত চোখে ওর দিকে তাকিয়ে রাগী কন্ঠে বললাম-

—”তুই চিৎকার দিলি কেন?? আর এভাবে এতো কাছে এসে গরুর মতো চোখ বড় বড় করে তাকিয়ে আছিস কেন?? একটুর জন্যই ভয়ে আমার জান বেরিয়ে আসতো।”

—”তুই নাড়াচাড়া করছিলি তাই দেখছিলাম তোর জ্ঞান ফিরেছে কিনা।”

আমি ঘড়ির দিকে তাকিয়ে দেখলাম ঘড়ির কাঁটা প্রায় চারটা ছুই ছুই। আমি উত্তেজিত হয়ে দীপ্তকে জিজ্ঞেস করলাম-

—”দোস্ত এখন কি ভোর চারটা বাজে??? আমি এখানে কি করছি?? আব্বু তো চিন্তা করছে হয়তো!! আর আমি কি এতোক্ষন ঘুমিয়ে কাটিয়েছি??”

দীপ্ত আমার কাধে হাত রেখে বললো-

—”আরে থাম,, এতো ভয় পাস না আমি আংকেল কে দুপুরেই ফোন করে বলেছি তুই আজ আমার কাছে থাকবি। জানিস আমরা কতটা ভয় পেয়ে গেছিলাম তোর জ্ঞান ফিরছিলো না বলে।”

—”মানে!! কি বলছিস সব কিছু খুলে বল তো।”

—”তুই অতিরিক্ত বৃষ্টিতে ভেজার ফলে গাড়িতেই জ্বর এসে জ্ঞান হারিয়েছিলি। ভাইয়া তোকে কোলে করে বাসায় নিয়ে আসেছে দেখেই আমি প্রচুর ভয় পেয়েছিলাম। তারপর ডক্টর আসার পর বলল তোর শরীরর দূর্বল হয়ে গেছে তাই জ্ঞান ফিরতে সময় লাগবে। জানিস দোস্ত ভাইয়া কতটা ভয় পাচ্ছিল তোকে এভাবে দেখে। বার বার আমার আর ডক্টরের হাত ধরে বাচ্চাদের মতো রিকুয়েষ্ট করছিলো তোকে তাড়াতাড়ি ঠিক করে দেওয়ার জন্য। এই প্রথম ভাইয়া আমার সাথে এমন করে কথা বলেছে। আমি কখনো ভাইকে এতটা অস্থির হতে দেখিনি। উনি নিজও সারারাত ঘুমায় নি আর আমাকেও ঘুমাতে দেয় নি। তোর কাছেই ছিলাম আমরা। ভাইয়া তো ভিজা শরীর নিয়েই ছিল। এই মাত্র ভাইয়া ওর রুমে গেল ফ্রেশ হতে।”

দীপ্তর কথায় আমি অবাক হয়ে জিজ্ঞেস করলাম-

—”কি সব যা-তা কথা বলছিস তুই? পাগল হয়ে গেছিস না-কি!!”

দীপ্ত কিছুটা রাগী গলায় বললো-

—”আমি জানতাম তুই আমার কথায় বিশ্বাস করবি না তাই তো আমি বুদ্ধি খাটিয়ে প্রমাণ রেখে দিছি।”

আমি সন্দেহের দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ওকে জিজ্ঞেস করলাম-

—”কিসের প্রমাণ?”

দীপ্ত আমার দিকে ওর ফোনটা এগিয়ে দিলো। ইশারা ফোনের দিকে তাকাতে বললেই আমি ফোনের স্ক্রিনে তাকিয়ে চমকে উঠলাম। ছবিতে স্পষ্ট ফুটে উঠেছে আদ্র ভাই বিছানার পাশেই ভেজা শরীরেই বসে আমার হাত ধরে আছে মাথা নিচু করে। আমি চোখ বড় বড় করে বিস্ফোরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ফোনের স্ক্রিনে। দীপ্ত ফোনটা নিয়ে বলল-

—”লুকিয়ে লুকিয়ে তুলেছি ভাই দেখলে আবার বকাও দিতে পারে। আচ্ছা যাইহোক শুভ্রতা আমার কি মনে হয় জানিস?”

—”কি?”

—”আমার মনে হয় ভাইয়া তোকে পছন্দ করে। তা না হলে তোর জন্য এমন পাগলের মতো উত্তেজিত হবে কেন!!”

দীপ্তর কথাটা শুনে আমার বুক ধক করে উঠলো। নিজের মনকেই প্রশ্ন করছি আসলেই দীপ্তর কথা সত্যিই!! আদ্র ভাই আমাকে পছন্দ করে?? নাহ নাহ কি ভাবছি আমি ছিঃ ছিঃ। আমি মাথা থেকে এসব চিন্তা ভাবনা দূর করে বিছানা থেকে উঠে দাড়িয়ে রাগী কন্ঠে বললাম-

—”দীপ্ত তুই বড্ড বেশি ভাবছিস। উনি কি তোকে কখনো এসব বলেছে!! তুই কেন নিজের থেকে কথা বানাচ্ছিস বল তো।”

—”কখনো বলিনি তো কি হয়েছে আজ বলবো।”

আদ্র ভাইয়ের কন্ঠ শুনে আমি আর দীপ্ত দরজার দিকে তাকাতেই দেখলাম উনি কালো রঙের একটা টিশার্ট পরে পকেটে হাত গুজে বেশ ভাব নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। কথাটা বলে দীপ্তর দিকে এগিয়ে এসে ওর কাধে হাত রেখে বললেন-

—”শোন দীপ্তি আমি তোর বেস্ট ফ্রেন্ড শুভ্রতাকে ভালোবাসি। তুই কিন্তু হেল্প করবি তোর ভাইয়ের সাথে যেন তার ভালোবাসার বিয়ে হয়। তা না হলে তুই ফুপি হবি কিভাবে বল তো?”

ওনার এমন নির্লজ্জের মতো কথা শুনে বেচারি দীপ্তর চোখ বেরিয়ে আসার উপক্রম আর আমি চমকে উঠে বিষম খেয়ে কাশতে লাগলাম। আদ্র ভাই তাড়াতাড়ি আমার কাছে এসে মাথায় আর পিঠে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন-

—”উফফ শুভি তুমি এতো বেখেয়ালি কেন বল তো। অল্পতেই এতো রিয়েক্ট কিরার কি আছে!!”

আদ্র ভাইয়ের মুখে এমন আহ্লাদী কথা শুনে আমি বাকরুদ্ধ হয়ে গেছি কিছুই বলতে পারছি না আমি। চোখ গুলো রসগোল্লার মতো বড় বড় করে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। উনি আমার কপালে হাত দিয়ে জ্বর মেপে বললেন-

—”এখন জ্বর অনেকটাই কমে গেছে। কালকের মতো এমন ভুল যেন আর কখনো না হয় বলে দিলাম। নেক্সট টাইম যদি কখনো দেখেছি এভাবে নিজের ক্ষতি করতে তাহলে আমার থেকে খারাপ আর কেউ হবে না শুভ্রতা, কথাটা মাথায় ঢুকিয়ে রেখো। যাও এখন ফ্রেশ হয়ে আসো মাথা হাল্কা লাগবে।”

কথা গুলো বলে উনি আমার কপালের চুল গুলো ঠিক করে। আমার হাত ধরে উঁচু করে আলতো করে ওনার ঠোঁটের স্পর্শ দিয়ে রুম থেকে বেরিয়ে গেলেন। ওনার লাস্টের কাজটা দেখে আমি স্তব্ধ হয়ে গেলাম। অবাকের চরম পর্যায়ে পৌঁছে গেছি আমি হিতাহিতজ্ঞানশূন্য হয়ে গেছি মনে হচ্ছে। এই অল্প সময়ে আমি এতো ধাক্কা আর নিতে পারছি না। আমি ধপাস করে বিছানায় বসে পরলাম। হঠাৎ করে দীপ্ত এসে আমার হাত একটা চিমটি কাটলো। আমি ভাবলেশহীন ভাবে ওর দিকে তাকালাম। দীপ্ত বিস্ফোরণের মতো ফুটে উঠে বললো-

—”শুভ্রতা আমি কি সপ্ন দেখছি?? কি হয়ে গেল এই মাত্র??”

দীপ্তর কথা শুনে মুহুর্তেই জোড়ে এক চিৎকার দিয়ে হাত ঘষতে ঘষতে বললাম-

—”তোর ভাই পাগল হয়ে গেছে রে দীপ্ত। নিজের বোনের সামনে নির্লজ্জের মতো এসব কি করে গেলেন উনি ছিঃ ছিঃ।”

—”আজব…. পাগল তো তুই হয়ে গেছিস শুভ্রতা!! চিমটি দেওয়ার এতক্ষন পর কেন চিৎকার দিলি!!”

—”বাদ দে তোর চিমটি…. তোর এই নির্লজ্জ ভাই এইসব কি করে গেলো সেটা বল আগে।”

দীপ্ত আমার পাশে বসে চিন্তিত সুরে বললো-

—”দোস্ত আমিও কিছু বুঝতে পারছি না ভাইয়া একদিনে এতটা চেঞ্জ হয়ে গেল কিভাবে??? তবে একটা জিনিস খুব ভালো লাগছে ভাইয়া আমার সাথে ফ্রেন্ডলি কথা বলেছে।”

—”রাখ তোর ভালো লাগা। আমাকে তোরা দুই ভাইবোন পাগল বানিয়ে তারপর শান্তি হবি।”

—”চিন্তা করিস না তো শুভ্রতা। আমার তো আগেই কেমন যেন সন্দেহ হতো ভাইয়ার তোকে এতটা শাসন করা দেখে। তবে সেটা যে এভাবে ভালোবাসা হয়ে বিস্ফোরিত হবে তা কখনো ভাবিনি। এবার তুই নিজেই বুঝে নে ভালোবাসার রঙ কেমন হয়।”

আমি কিছু বললাম না চুপ করে বসে বসে আছি আমার হাতটার দিকে তাকিয়ে। কানে এখনো আদ্র ভাইয়ের কথা গুলো বেজে উঠছে বার বার। বিস্ময়, লজ্জা, অস্বস্তি সকল অনুভূতি মিশে এখন নিজের মন আর মাথাটা প্রচন্ড এলোমেলো মনে হচ্ছে।

———————

আজ দুইদিন পর একপ্রকার বাধ্য হয়ে ভার্সিটি আসলাম দীপ্তর জন্য। অসুস্থতার বাহানা দিয়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছি আদ্র ভাইয়ের কাছ থেকে। ওনার মুখোমুখি হতে হবে ভেবেই খুব লজ্জা লাগছে। ওইদিন প্রায় পালিয়ে এসেছিলাম দীপ্তদের বাসা থেকে।

ক্লাস শেষে দীপ্ত আর আমি অপেক্ষা করছিলাম আদ্র ভাইয়ের জন্য। এমন সময় একটা বাচ্চা ছেলে এসে আমার হাতে একটা নীল রঙের চিরকুট দিয়ে বললো-

—”আপু এটা তোমাকে দিয়েছে ওই ভাইয়াটা।”

ছেলেটার হাতের ইশারা অনুসরণ করে তাকাতেই খানিকটা দূরে একটা লোকের পেছন সাইড দেখতে পেলাম। কালো জেকেট পরা লোকটার লম্বা প্রায় আদ্র ভাইয়ের মতোই হবে। বাইকে বসে মুহুর্তের মধ্যে চলে গেলো লোকটার চেহারা দেখতে পারলাম না।

চলবে…

(ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। গঠনমূলক মন্তব্যের অপেক্ষায় রইলাম। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here