ভালোবাসার রংবদল পর্ব ৪

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ৪
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“তোমার নাম কি শুভ্রতা??”

প্রশ্নটা কানে আসতেই পাশ ফিরে মানুষটার দিকে তাকাতেই যেন আমার পুরো পৃথিবী থমকে গেল। এই মানুষটাকে কখনো দেখবো বলে তো আমি আশা করিনি।

আজ দীপ্ত আসেনি তাই একা একা দাঁড়িয়ে আদ্র ভাইয়ের জন্য অপেক্ষা করছি। সকালে আব্বু নিয়ে আসে আর ক্লাস শেষে আদ্র ভাই বাসায় পৌঁছে দেয় এটা প্রতিদিনের রুটিন। পৃথিবী উল্টে গেলেও এই রুটিনে কখনো কোনো ব্যাঘাত ঘটবে বলে মনে হয় না। আজ একটা ক্লাস কম হয়েছে তাই দাঁড়িয়ে আছি আদ্র ভাইয়ের অপেক্ষায়। এমন সময় এই অপ্রত্যাশিত মানুষটাকে দেখতে পাবো আমি কখনো কল্পনাও করিনি। বিস্মিত হয়ে তাকিয়ে আছি মানুষটার দিকে। আমার কাছে থেকে কোনো প্রতিত্তোরে না পেয়ে আমার দিকে খানিকটা এগিয়ে এসে আবারও বললেন-

—”তোমার নাম কি শুভ্রতা?? আর সকালে যার সাথে এসেছিলে উনি কি তোমার বাবা হয়?”

ওনার কথায় মনে মনে একটা তাচ্ছিল্যের হাসি দিলাম। কেমন মা উনি নিজের মেয়েকেই চিনতে পারছে না। তার মানে কি উনি এতো বছরে একবারও আমার খোঁজ নেয় নি!! ওনাকে নিজের মা ভাবতেও আমার বিবেকে বাধছে। আমি নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম-

—”জ্বি উনি আমার আব্বু। আপনার কি কোনো দরকার ছিল?”

উনি কিছুটা আমতা-আমতা করে বললেন-

—”না মানে.. তুমি কি আমাকে চিনতে পেরেছো শুভ্রতা?”

—”হ্যাঁ চিনতে পেরেছি। আপনার অনেক ছবি দেখেছি আব্বুর কাছে।”

এই কথা বলার সাথে সাথে উনি আমাকে জড়িয়ে ধরলেন। ওনার এভাবে জড়িয়ে ধরাতে আমার খুব অস্বস্তি লাগছে। ওনার প্রতি কোনো টান অনুভব করতে পারছি না আমি। ওনার থেকে আমি নিজেকে ছাড়িয়ে নিয়ে বললাম-

—”কিছু মনে করবেন না এভাবে অপরিচিত কাউকে জড়িয়ে ধরা আমার জন্য খুবই অস্বস্তিকর।”

উনি হয়তো আমার কাছ থেকে এমন কথা আশা করেনি। আহত দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়ে বললেন-

—”নিজের মেয়েকে কি আমি একটু জড়িয়ে ধরতে পারিনি না!!”

ওনার মুখে ‘নিজের মেয়ে’ কথাটা শুনে আমার প্রচন্ড রাগ হলো। যেই মেয়ে ফেলে রেখে চলে গেছে। এতো বছরে একটি বারও দেখতে আসেনি আর কি না আমি ওনার মেয়ে হয়ে গেলাম!! শক্ত গলায় ওনাকে বললাম-

—”কে আপনার মেয়ে?? আপনি কি আমার কথা বলছেন? কিন্তু আমার মা তো ওই দিনই মারা গেছে যেদিন আমাকে রেখে চলে গেছে ওনার বিলাসবহুল জীবনযাপনের জন্য।”

উনি আমার হাত নিজের হাতের মুঠোয় নিয়ে অনুনয়ের সাথে বললেন-

—”এভাবে বলিস না শুভ্রতা। আমাকে মাফ করে…”

ওনাকে কথা বলতে না দিয়েই আমি বললাম-

—”আমি এসব নিয়ে কথা বলতে চাচ্ছি না। আর একটা কথা আমার বাবা আর মা দুজনেই হলেন আমার আব্বু। তাই দয়া করে কখনো মায়ের দাবি নিয়ে আমার কাছে আসবেন না। আমাকে এখন যেতে হবে ভালো থাকবেন।”

কথা গুলো বলেই সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলাম। এতোক্ষন নিজেকে শক্ত রাখতে পারলেও এখন খুব কষ্ট হচ্ছে। এই এক সপ্তাহে আমি সত্যিটা মেনে নিয়ে নিজেকে সামলিয়ে তুলেছিলাম। কিন্তু আজ আবারও পুরনো ক্ষত গুলো নতুন করে আমার মনে দাগ কাটছে।
আচমকা আকাশ ভেঙে ঝুম বৃষ্টি নেমে এলো। বৃষ্টির পানিতে পুরো শরীর ভিজে একাকার হয়ে যাচ্ছে। আর তার সাথে বাধ ভেঙেছে আমার চোখেরজল। নিঃশব্দে কাঁদতে কাঁদতে বসে পরলাম রাস্তার পাশের একটা বেঞ্চিতে। রাস্তাটা এমনিতেই বেশ নির্জন থাকে তারপর আবার এমন ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে একটা মানুষও নেই। এখানে কেউ দেখবে না আমার চোখেরজল এখন আর কারও সামনে নিজেকে শক্ত রাখার চেষ্টা করতে হবে না। কতক্ষণ ধরে এখানে বৃষ্টির মধ্যে বসে কান্না করছি নিজেও জানি না। হঠাৎ করেই আদ্র ভাই আমার সামনে দৌড়ে আসলেন। আমাকে হেচকা টান দিয়ে বসা থেকে দাঁড় করিয়ে দু’বাহু চেপে ধরে প্রচন্ড রাগে চিৎকার দিয়ে বললেন-

—”কতক্ষণ ধরে তোকে পাগলের মতো খুঁজে বেড়াচ্ছি আর তুই এখানে বৃষ্টিতে বসে আছিস!! কয়বার ফোন দিয়েছি আমি হিসেব আছে কোনো?? ফোনটা ও অফ করে রেখেছিস। পাগল বানিয়ে ছাড়বি তুই আমাকে। কথা বলছিস না কেন!! তাকা আমার দিকে নিচে তাকিয়ে আছিস কেন?”

আমি মাথা তুলে ওনার দিকে তাকাতেই উনি থেমে গেলেন। আমার দু বাহু ছেড়ে দিয়ে ওনার দু-হাত দিয়ে আমার গাল আলতো করে ধরেলেন সাথে সাথে আমি কেপে উঠলাম। বৃষ্টিতে ভেজার ফলে ওনার হাত গুলো বরফের মতো ঠান্ডা হয়ে আছে। উনি আমার দিকে এক দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থেকে আমার চুল গুলো ঠিক করে দু গালে হাত রেখে নরম গলায় বললেন-

—”শুভি কি হয়েছে তোমার কান্না করছো কেন? কেউ কিছু বলেছে তোমাকে? এখানে এভাবে বসে ছিলে কেন তুমি?? প্লিজ শুভ্রতা চুপ করে থেকো না, আমাকে বলো কি হয়েছে। প্রমিজ করছি আমি তোমাকে বকা দিবো না।”

এবার আমি আর নিজেকে সামলাতে পারলাম না। শব্দ করেই কান্নায় ভেঙে পরলাম হিচকি তুলতে তুলতে বললাম-

—”আমার মা কে দেখেছি আজ প্রথম। কথা বলেছি আমি ওনার সাথে এই প্রথম বার।”

আদ্র ভাই আমাকে এভাবে কান্না করতে দেখে আমাকে জড়িয়ে ধরে মাথায় হাত বুলিয়ে বললেন-

—”এখন আর কিছু বলতে হবে না তোমাকে। প্লিজ কান্না থামাও শুভ্রতা। গাড়িতে চলো অনেক ভিজেছো বৃষ্টিতে অসুস্থ হয়ে পরবে তুমি।”

আদ্র ভাই আমাকে এক হাত দিয়ে আঁকড়ে ধরে গাড়িতে এনে বসিয়ে দিলেন। শীতে আমার পুরো শরীর অবশ হয়ে আসছে। মাথাটা প্রচন্ড ব্যথা করছে, চোখ গুলোও জ্বালা পোড়া করছে। আদ্র ভাই গাড়ি ড্রাইভ করতে করতে বললেন-

—”এই অবস্থায় তোর বাসায় যাওয়া ঠিক হবে না। তোকে এভাবে দেখলে আংকেল খুব রেগে যাবে আর চিন্তাও করবে। তুই বরং আমাদের বাসায় চল আব্বু আম্মু বাসায় নেই তেমন কোনো ঝামেলা হবে না। আর দীপ্তি… ”

আর কিছু শুনতে পারলাম না আমি। চোখ বন্ধ হয়ে আসছে আমার। কপালে কারও ঠান্ডা হাতের স্পর্শ পেয়ে চোখ মেলে তাকিয়েই এক চিৎকার দিলাম।

চলবে…

(গল্পটা কেমন হচ্ছে জানাবেন আর ভালো লাগলে অবশ্যই রেসপন্স করবেন। ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here