ভালোবাসার রংবদল পর্ব ৩

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ৩
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আদ্র ভাই প্লিজ আমার হাতটা ছেড়ে দিবেন না প্লিজ। এখান থেকে পরে গেলে আমি নিশ্চিত মরে যাবো।”

আদ্র ভাইয়ের ডান হাত আঁকড়ে ধরে কথাটা বললাম আর উনি আমার হাত ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বললেন-

—”কেন তোর না খুব ইচ্ছে ছিলো নৌকায় উঠবি!! আমাকে তো বাধ্য করেই নিয়ে এসেছিলি নৌকায় ঘুরবি বলে তাহলে এখন এতো ভয় পাচ্ছিস কেন? আমার হাত ছেড়ে দূরে সরে দাঁড়া শুভ্রতা।”

আমি ভয়ে ওনার হাত আরও শক্ত করে ধরে ভয়াতুর কন্ঠে বললাম-

—”ভাইয়া প্লিজ এমন নির্দয়ের মতো কথা বলবেন না। প্রমিজ করছি আপনি যা বলবেন তা-ই করবো তবুও হাত ছেড়ে দিয়েন না। আমি এমনিতেও সাঁতার জানি না আর নৌকা যেভাবে দোলনার মতো দুলছে হাত ছাড়লেই প্রথমে পানিতে তারপর ডিরেক্ট উপরে চলে যেতে হবে।”

—”আচ্ছা কথা দিলাম আমি কখনো তোর হাত ছাড়বো না। তবে তার আগে আমাকে ভাই ডাকা বন্ধ কর তা নাহলে এখনই ফেলে দিব।”

—”এই না না এমন করবেন আদ্র ভাই প্লিজ। আর আমি ভাই না ডাকলে কি ডাকবো আপনাকে??”

—”তোর যা ইচ্ছে হয় ডাক তবে ভাই না।”

—”তাহলে কি চাচা,মামা ডাকবো নাকি!!”

আমার কথায় ওনার মুখ রক্তিম বর্নের হয়ে উঠলো। সিংহের মতো গর্জে উঠে বললেন-

—”এক থাপ্পড় দিয়ে সব দাঁত ফেলে দিবো শুভ্রতা। বেশি কথা বলা শিখে গেছিস তাইনা!! আজ থেকে আমাকে নাম ধরেই ডাকবি।”

ওনার কথা আমি ভয়ে চুপসে গেলাম। আমতা-আমতা করে বললাম-

—”আপনি তো আমার থেকে অনেক বড় নাম ধরে ডাকা কি ঠিক হবে!!”

—”দেখ শুভ্রতা বেশি জ্ঞান দিতে আসবি না যা বলেছি তা করবি আর না হলে এই নদীর মাঝখানেই তোকে ফেলে রেখে যাবো।”

—”আচ্ছা আচ্ছা ঠিক আছে।”

কিছুক্ষণের মধ্যেই নৌকা নদীর পাড়ে চলে এসেছে। আমি নৌকা থেকে নেমেই একটা স্বস্তির নিঃশ্বাস নিলাম। ভয়ে আমার আত্মা যায় যায় অবস্থা হয়ে গেছিলো। ভেবেছিলাম নৌকায় যেহেতু কখনো উঠিনি আজ একবার নৌকায় উঠে মনের ইচ্ছাটা পূরন করবো। তাই আদ্র ভাইকে জোর করেই রাজি করিয়েছিলাম। কিন্তু নৌকায় উঠা যে এত বিপদজনক হবে ভাবিনি। এখনো আমার মাথা ঘুরাচ্ছে আল্লাহ।

————————

আইসক্রিম খেতে খেতে নদীর পাড়ে হাটছি। আদ্র ভাইয়া নাকি বাচ্চাদের মতো আইসক্রিম খান না তাই আমার পাশেই চুপচাপ ফোন টিপছে আর হাটছে। মেঘলা আকাশ হওয়ায় বোঝা যাচ্ছে না এখন দুপুর আর আশেপাশে তেমন কোনো মানুষও নেই। মেঘের গর্জন শোনা যাচ্ছে হয়তো কিছুক্ষণ পরেই আকাশ ভেঙে বৃষ্টি নেমে আসবে। আচমকাই আদ্র ভাই আমার সামনে এসে দাড়ালেন। আমি কিছু জিজ্ঞেস করবো তার আগেই উনি আমার অনেকটা কাছে এসে পরলেন। খানিকটা ঝুঁকে আমার মুখোমুখি হয়ে আমার দুই গালে হাত রেখে নরম গলায় বললেন-

—”আমি যেহেতু একবার কথা দিয়েছি তার মানে আর কখনো তোমার হাত ছাড়বো না। এমনকি তুমি নিজেও ছাড়াতে পারবে না। এই আদ্র খুব ভালো করেই নিজের কথা রাখতে জানে শুভি।”

কথাটা শেষ করে আমার গাল থেকে হাত সরিয়ে আমার আইসক্রিমের হাতটা উঁচু করে উনি এক বাইট খেয়ে আবারও সামনের দিকে হাঁটা শুরু করলেন। আমি এখনো আগের জায়গাতেই থমকে দাঁড়িয়ে আছি। নিজেকে জ্ঞানশূন্য মানুষ মনে হচ্ছে। আজ ওনার এমন অদ্ভুত আচরণে বার বার চমকে যাচ্ছি কিন্তু এখন তো বিস্ময়ের শীর্ষস্থানে পৌঁছে গেছি আমি। হঠাৎ করেই আদ্র ভাই দৌড়ে এসে আমার হাত ধরে সামনের দিকে দৌড়াতে লাগলেন। হঠাৎ করে দৌড়ানোর কারন বুঝতে পারছি না। শরীরে বৃষ্টির ফোটা পরতে আমার হুশ আসে তখন বুঝলাম বৃষ্টি শুরু হয়ে গেছে। ঝিরিঝিরি বৃষ্টির আর ঝোড়ো হাওয়ায় পুরো শরীর যেন বরফের ন্যায়ে হয়ে উঠেছে। স্থির নয়নে তাকিয়ে আছি ওনার হাতের মুঠোয় বন্দী থাকা আমার হাতটার দিকে। আমার মনের ভিতর কেমন যেন এক আলাদা অনুভূতির সৃষ্টি হলো এই মুহূর্তে, আগে কখনো তো এমন অনুভব করি নি!!

আমাকে গাড়িতে বসিয়ে দিয়ে উনি নিজেও গাড়িতে এসে বসলেন। একটা রুমাল নিয়ে আমার মাথা, মুখ, হাত মুছে দিতে দিতে শাসনের সুরে বললেন-

—”বৃষ্টি শুরু হয়েছে দেখেও কেন মূর্তি ন্যায় দাঁড়িয়ে ছিলি ওখানে। দেখ তো কতটা ভিজে গেলি! এখন যদি জ্বর আসে তখন কেমন লাগবে!! আর কবে বড় হবি তুই!! সব সময় শুধু অবুঝের মতো কাজ করিস কেন বল তো শুভি!”

উনি কথা বলছেন আর আমি অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি তার দিকে। এই মুহূর্তে ওনার এমন শাসন বানী গুলো শুনে আমার মনে অদ্ভুত রকমের ভালো লাগা কাজ করছে। কিন্তু কেন??

—”কিরে এভাবে ড্যাবড্যাব করে তাকিয়ে আছিস কেন?”

ওনার কথায় আমার ঘোর কাটলো। মনে মনে নিজেকেই বকছি -“ছিঃ শুভ্রতা ছিঃ কি সব আজে বাজে কথা ভাবছিস এই রাক্ষস অসভ্য লোকটাকে নিয়ে ছিঃ ছিঃ”

সাথে সাথেই আমি অন্য দিকে মুখ ঘুরিয়ে নিলাম। নিজেকে স্বাভাবিক করে বললাম-

—”তাড়াতাড়ি চলুন আদ্র তা না হলে বৃষ্টি বেড়ে গেলে ড্রাইভ করতে প্রব্লেম হবে।”

উনি কিছু না বলে গাড়ি ড্রাইভ করা শুরু করলেন। পুরো রাস্তা আমরা আর একটা কথাও বলিনি। গাড়িতে পুরো নিস্তব্ধতা বিরাজ করছে। বাসার কাছে এসে গাড়ি থামার সাথে সাথে আমি নেমে যাওয়ার জন্য দরজা খুলতে নিলেই আদ্র ভাই আমার হাত ধরে হেচকা টান মেরে ওনার কিছুটা কাছে নিয়ে গেলেন। আমার সামনের চুল গুলোতে হাত বুলিয়ে দিতে দিতে বললেন-

—”যা চলে গেছে শুধু শুধু সেটা নিয়ে ভেবে একদমই মন খারাপ করবি না পিচ্চি। এখন আমরা সবাই আছি তোর কাছে আর আমরা সবাই তোকে প্রচন্ড ভালোবাসি। তাই কখনো নিজেকে কোনো কারনে দোষারোপ করবি না। ঠিক মতো খাওয়া দাওয়া করবি আর ভুলেও কান্না করবি বুঝলি!”

আমি কিছু না বলে শুধু মাথা নাড়িয়ে চলে আসলাম বাসায়। আজ আমি ওনার সাথে কথা বলার মতো কোনো ভাষা খুজে পাচ্ছি না। ওনার কথার প্রতিত্তোরে কি বলা উচিত আর কেমন রিয়েক্ট করা উচিত সেটাও বুঝতে উঠতে পারছি না।

———————

রাতে ডাইনিং টেবিলে বসে চুপচাপ করে খাবার খাচ্ছি। আমি চুপচাপ হলেও আমার মাথায় চলছে নানান রকম চিন্তা আর তার কারন হলো আদ্র ভাইয়ের আজকের এমন ব্যবহার গুলো। হঠাৎ করেই এতো ভালো ব্যবহার করছে আমার সাথে আর কেমন সব উদ্ভট কাজকর্ম করছেন। আবার হুটহাট করেই হাত ধরছে, আমার দুই গাল ওনার হাতের মাঝে আগলে নিয়ে অপলকভাবে তাকিয়ে কথা বললেন…. এমন তো আগে কখনো করেন নি।

—”কিরে শুভ্রা আজ কিছু বললি না যে!!”

আমাকে চুপ থাকতে দেখেই আব্বু প্রশ্ন টা করলেন। আমি ভাবলেশহীন ভাবে জিজ্ঞেস করলাম-

—”কি বলার কথা বলছো তুমি?”

—”কি আবার প্রতি দিন যে আদ্র আর দীপ্তির নামে হাজার খানেক অভিযোগ করিস। আজ কি হলো!!”

—”কিছু হয়নি আর আমি কি প্রতি দিনই অভিযোগ করি না-কি!! যা সত্যি তা-ই তো এসে বলি তোমাকে।”

শক্ত গলায় বললাম কথাটা।

—”হ্যাঁ বুঝেছি এখন রেগে যেতে হবে না খাবার শেষ কর চুপচাপ করে।”

————————

—”দীপ্ত তুই আমাকে ফোন কেন দিয়েছিস?”

—”কেন আবার আমি কি তোকে ফোন দিয়ে পারি না না-কি আজব! আচ্ছা যাইহোক ভাইয়া কি আজও তোকে বেশি বকাঝকা করেছে নাকি??”

আমি রেগে দাঁতে দাঁত চেপে বললাম-

—”তা জেনে তুই কি করবি?? আমার সামনে তো ভালোই মুখে বুলি থাকে তাহলে তোর ভাইয়ের সামনে বোবা হয়ে থাকিস কেন?”

দীপ্ত মলিন কন্ঠে বললেন-

—”তুই তো জানিস আমি ভাইয়ার সাথে তেমন ফ্রী না। ভাইয়া তো আমাদের সাথে অনেক কম সময় থাকতো তাই অন্যসব ভাইবোনের মতো আমাদের সম্পর্ক হয়ে ওঠেনি। আর ভাইয়ার যে পরিমাণ রাগ তার জন্যই তো আমি বেশি ভয় পাই।”

—”হয়েছে হয়েছে বুঝতে পেরেছি তুই একটা ভীতু।”

—”শুভ্রা তুই কিন্তু বেশি বেশি করছিস।”

—”আমি এমনই করি। অনেক রাত হয়েছে ফোন রেখে ঘুমা আর আমাকে শান্তি দে ।”

—”তোর সাথে কথা বলাই বেকার।”

—”তাহলে চাকরি নিয়ে নে।”

—”শুভ্রা তুই খুব বিরক্তিকর একটা মেয়ে।”

—”আর তুই হলি একটা ভীতু।”
দীপ্ত আর কথা বাড়ালো না রেগেমেগে ফোন কেটে দিল। আমি হাসলাম এই মেয়েটাকে রাগাতে খুব ভালো লাগে আমার।

চলবে…

(কি যে একটা অবস্থা বার বার আদ্র না লিখে শুভ্র লিখে ফেলছি।🤦‍♀️ প্রতিবারই নামটা নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। শুভ্র আমার মাথাটা পুরোই নষ্ট করে ফেলছে।🥴
ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে।❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here