ভালোবাসার রংবদল পর্ব ২

#ভালোবাসার_রংবদল
#পর্বঃ২
#Saiyara_Hossain_Kayanat

“আচ্ছা দীপ্ত তোর কাছে ভালোবাসার রঙ কেমন মনে হয়?”

কাল রাত থেকে আব্বুর বলা কথা গুলো মাথা ঘুরছে সর্বক্ষণ। ভালোবাসা রংবদলায়!! এই নিয়ে ভাবতে ভাবতেই দীপ্তকে কথাটা জিজ্ঞেস করলাম। খুব জানতে ইচ্ছে করছে আসলেই কি ভালোবাসার রঙ হয় না-কি!!

“ভালোবাসা নিয়ে জানার খুব ইচ্ছে হয়েছে দেখছি তোর। তা কারও প্রেমে পরেছিস না-কি পিচ্চি??”

এরকম গা জ্বালানো কথা শুনতেই আমি আর দীপ্ত ঘাড় বাকিয়ে পেছনে তাকালাম। এইরকম লেইম কথা যার কাছ থেকে আশা কিরেছিলাম ঠিক সেই মানুষটাই দাঁড়িয়ে আছে। কালো শার্ট, কালো প্যান্ট পরা পুরো ফরমাল ড্রেসআপে পকেটে এক হাত গুজে বেশ ভাব নিয়েই দাঁড়িয়ে আছে আদ্র নামক অসভ্য লোকটা।
কপালে আছড়ে পরা সিল্কি চুল গুলো এক হাতে পিছনে ঢেলে দিয়ে এগিয়ে আসছেন। আমাদের টেবিলের কাছে এসে আমার বরাবর সামনের চেয়ারটায় গা এলিয়ে বসে পরলেন। দীপ্ত ভয়ে আমতা-আমতা করে বললো-

—”ভাইয়া তুমি এখানে কখন আসলে??”

আমি বুঝি না এই মেয়েটা ওর ভাইকে এতো ভয় পায় কেন!! নিজের ভাইকে কেউ এতটা ভয় পায় না-কি আজব!! আদ্র সাহেব সোজা হয়ে পায়ের উপর পা তুলে নায়কদের মতো ভাব নিয়ে বসে বললেন-

—”তোরা যখন ক্লাস ফাঁকি দিয়ে ক্যান্টিনে বসে ভালোবাসা নিয়ে গবেষণা করছিলি তখনই আসলাম।”

ওনার কথা শুনে রাগে আমার পিত্তি জ্বলে উঠলো। আমি রেগেমেগে কিছু একটা বলতে যাবো তখনই দীপ্ত টেবিলের নিচ দিয়ে আমার হাত চেপে ধরলো। চোখ দিয়ে আমাকে চুপ করে থাকতে ইশারা করলো। দীপ্ত আদ্র ভাইয়ের দিকে তাকিয়ে নিম্ন স্বরে বললো-

—”আসলে ভাইয়া শুভতার আজ ভালো লাগছিলো না তাই একটা ক্লাস মিস দিয়ে এখানে একটু সময় কাটাতে এসেছিলাম।”

আদ্র ভাই কিছুটা উত্তেজিত হয়ে বললেন-

—”কেন কি হয়েছে? শরীর খারাপ করেছে না-কি?”

ওনার এমন উত্তেজনা দেখে আমরা অবাক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছি ওনার দিকে। আমাদেরকে এভাবে তাকিয়ে থাকতে দেখে উনি মুহূর্তেই নিজেকে স্বাভাবিক করে বললেন-

—”কার কি হয়েছে বল.. মানে বেশি খারাপ লাগলে বল হসপিটালে নিয়ে যাই।”

দীপ্ত আমার কাধে হাত রেখে বললো-

—”আসলে ভাইয়া ওর কিছু হয়নি সুস্থই তবে সকাল থেকেই কেন যেন মন খারাপ করে আছে এই আরকি…”

—”ওর মন খারাপ তাহলে তুই কেন ক্লাস ফাঁকি দিচ্ছিস!! এক্ষুনি ক্লাসে যা। আমি দেখছি ওর ব্যাপারটা।”

আদ্র ভাই ধমকের স্বরে বললেন কথাটা। আর কথাটা বলতে দেরি দীপ্তর উঠে দাড়াতে দেরি হলো না। আমার দিকে তাকিয়ে মলিন কন্ঠে বললো-

—”দোস্ত আমি যাই তোর বরং আজ ক্লাস করতে হবে না।”

আমি আড়চোখে আদ্র ভাইয়ের দিকে একবার তাকিয়ে দীপ্তিকে চোখ দিয়ে ইশারা করতেই ও চলে গেল। প্রচন্ড রাগ হচ্ছে ওনার উপর কি এমন হতো দীপ্ত যদি আজ একটা ক্লাস না করতো!! সব সময় দীপ্তকে ভয় দেখিয়ে দমিয়ে রাখে লোকটা।

আদ্র ভাই সামনের চেয়ার থেকে উঠে আমার পাশের চেয়ারে এসে বসলেন। আমার দিকে তাকিয়ে নরম গলায় বললেন-

—”কি হয়েছে তোর? মন খারাপ করে আছিস কেন আমাকে বল শুভ্রতা।”

—”কিছু হয়নি। ”

উনি এবার রেগে উঠলেন হুংকার দিয়ে বললেন-

—”মিথ্যা বলছিস কেন শুভ্রতা?? কিছু হয়নি তাহলে তোর চোখ মুখের এমন অবস্থা কেন!!”

ওনার এমন হুংকার শুনে ক্যান্টিনের কয়েকজন মানুষ বিস্ময়ের দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে আমাদের দিকে। খুব অস্বস্তি লাগছে এই মুহূর্তে। উনি আমার অস্বস্তিবোধ বুঝতে পেরে আমার হাত ধরে ক্যান্টিনের বাহিরে নিয়ে আসলেন। আমি হাত ছাড়ানো চেষ্টা করতে করতে বললাম-

—”আদ্র ভাই হাত ছাড়ুন আপনি সব সময় আমার সাথে এমন রাগারাগি করেন কেন?”

উনি কিছু না বললেন না। এই লোকটা সবার সাথেই সুন্দর করে কথা বলে কিন্তু আমার সাথে এমন ভাবে কথা বলে যে প্রতিটি কথায় আমার গা জ্বলে যায়। দীপ্তি আমার বেস্টি আর ওর গুনধর ভাই হলো আদ্রিয়ান আদ্র। দেখতে পুরো বিদেশিদের মতো ফর্সা। উনি দেখতে যতটা সুন্দর মাশাল্লাহ রাগটা তার থেকে ও দিগুণ দিয়েছে আল্লাহ। রাগ সব সময় ওনার নাকের ডগায় ঝুলেই থাকে। ওনার সাথে আমার পরিচয় মাসখানেকের হবে। এর আগে অবশ্য দুএকবার দেখা হয়েছে তবে আমার খেয়াল নেই। উনি সিলেটেই পড়াশোনা শেষ করে জব করতেন তবে হঠাৎ করে ঢাকা এসে পরলেন আর তখন থেকেই আমার পিছনে একদম শত্রুর মতো লেগে আছেন। দীপ্তর সাথে আমাকেও কড়া শাসনে রেখেছে। আর আমি কিছু বললেই ওনার একটা উত্তর “আমার একমাত্র বোন কেমন মেয়ের সাথে চলছে তার উপর তো আরও বেশি নজর রাখাই উচিত।”

উনি আমাকে টেনে নিয়ে গাড়িতে বসিয়ে দিলেন আর নিজেও ড্রাইভিং সিটে বসলেন। কোথায় নিয়ে যাচ্ছেন জানি না তবে কেন যেন কিছু বলতে পারছি না আজ। ওনার সাথে ঝগড়াঝাটি করতেও ইচ্ছে করছে না। কিছুটা পথ যেতে উনি গাড়ি থামিয়ে আমার দিকে ফিরে আমার এক হাত ধরে শান্ত গলায় বললেন-

—”সরি তখনকার জন্য প্লিজ রাগ করিস না পিচ্চি। তোর কি হয়েছে বল আমাকে তোর চোখ মুখ দেখেই বোঝা যাচ্ছে তুই কান্নাকাটি করেছিস। চুপ করে থাকিস না বল আমাকে।”

ওনার এমন ব্যবহার দেখে আমি অবাক হয়ে গেলাম। উনি তো সব সময় আমাকে ধমকের উপরেই রাখেন আর আজ কি না এত সুন্দর করে রিকুয়েষ্ট করছেন!!!

—”কিছু হয়নি আমার এমনিতেই আম্মু আব্বুর কথা মনে পারছিল তাই মন খারাপ।”

আমার উত্তর হয়তো ওনার কাছে যথেষ্ট মনে হয়নি। তাই আবারও অনুনয়ের সাথে বললেন-

—”কথা লুকিয়ে রাখিস না শুভ্রতা। আমি জানি কিছু একটা হয়েছে তা না হলে তুই কান্নাকাটি করে মন খারাপ হয়ে বসে থাকার মেয়ে না। আমাকে ভরসা করিস তো শুভি??”

আমি মাথা উপর নিচ ঝাকালাম। হ্যাঁ আমি ওনাকে ভরসা করি। আসলে উনি এমন একজন মানুষ যাকে সবাই ভরসা করতে বাধ্য। হয়তো খুব রাগারাগি করে, শাসন করে তবে আমাকে আগলে রাখেন খুব যত্ন করে সেটা আমি অনুভব করতে পারি।

—”ভরসা যেহেতু করিস তাহলে বল কি হয়েছে।”

ওনার জোরাজোরিতে ওনাকে সব বলে দিলাম। আমার সব কথা শুনে উনি স্তব্ধ হয়ে আছে হয়তোবা কিছু বলার ভাষা খুজে পাচ্ছে না। আর আমি নিঃশব্দে কাঁদছি নিজের মায়ের এমন নিষ্ঠুরতার কথা বলে। উনি আমার চোখের পানি মুছে দিয়ে বললেন-

—”শুভি তুই সব নিয়ে কষ্ট পাস না। তুই আগের মতোই ভেবে নে উনি জীবিত নেই মারা গেছে।”

আমি কান্নারত অবস্থায় বললাম-

—”উনি মারা যায়নি এটাই সত্যি। এতটা বছর উনি জীবিত থেকেও আমার কোনো খোঁজ খবর নেয় নি, একটি বারের জন্য আমাকে দেখিতে আসেনি এর থেকে নিষ্ঠুরতম সত্য আর কি হতে পারে!! আমি কি এতটাই অবহেলিত যে নিজের মায়ের কাছে এসব আমার প্রাপ্য ছিল!!”

—”তুই ভুল ভাবছিস শুভি। তুই কেন অবহেলিত হবি আমরা সবাই তো আছি। আর আংকেল কি তোকে কম ভালোবাসে!! এসব কথা আর কখনো বলবি না।”

আমি কিছু বললাম না চুপ করে বসে আছি। আদ্র ভাই আমার চোখের পানি মুছে দিতে দিতে বললেন-

—”তোকে শুধু শুধু পিচ্চি বলি না দেখ কিভাবে কান্না করিস। চল এখন গাড়ি থেকে নাম আজ তুই যা যা চাইবি সব করবো, যেখানে যেতে চাইবি নিয়ে যাবো, যা যা খেতে চাইবি সব খাওয়াবো।”

আমি সন্দেহের দৃষ্টিতে ওনার দিকে তাকালাম। আজ ওনার কথা বলার ধরন দেখে আমি প্রচুর অবাক হচ্ছি। এতো ভালো করে কথা বলছে যা আমার অবিশ্বাস্য মনে হচ্ছে এই মুহূর্তে।

—”এভাবে তাকিয়ে আছিস কেন?”

—”আজ এতো সুন্দর করে কথা বলছেন আমার সাথে তাই বিশ্বাস হচ্ছে না। আপনি ধমকানো ছাড়াও কথা বলতে পারেন আগে জানতাম না।”

—”কুকুরের পেটে যেমন ঘি হজম হয় না তেমনি তোরও ভালো কথা হজম হয় না।”

ওনার কথায় রাগে জ্বলন্ত চোখে ওনার দিকে তাকিয়ে বললাম-

—”আপনি কিন্তু খুব বাড়াবাড়ি করছেন আদ্র ভাই।”

উনি ডোন্ট কেয়ার ভাব নিয়ে নিজের চুল গুলো পিছন দিকে ঢেলে দিয়ে ভাব নিয়ে বললেন-

—”বেশি কথা বললে তোকে দেওয়া অফারটা মিস করবি তখন হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে কান্নাকাটি করিস রাস্তায় বসে বসে।”

এই কথা বলেই উনি গাড়ি থেকে নেমে গেলেন। আমিও তাড়াতাড়ি করে গাড়ি থেকে নেমে গিয়ে বললাম-

—”না না তা হবে কেন!! আমি আসছি। আচ্ছা আপনি কিন্তু কথা দিয়েছেন আমার সব কথা রাখবেন মনে থাকে যেন।”

—”আদ্র একবার যা বলে তা-ই করে।”

চলবে….

(রিচেক করা হয়নি ভুল-ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ভালো লাগলে রেসপন্স করবেন। ধন্যবাদ আর ভালোবাসা সবাইকে। ❤️)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here