আমি কাউকে বলিনি সে নাম
তামান্না জেনিফার
পর্ব : ৩১+৩২+৩৩+শেষপর্ব
—————————————————
৩১.
রূপা আর নয়নকে বাড়িতে আনা হয়েছে ৷ আলেয়া বেগম শুধু কেঁদেই চলেছেন , কোন কথাই বলছেন না ৷ খবর পেয়ে নিপাও চলে এসেছে স্বামীসহ ৷ সবাই মিলে আলেয়া বেগমকে বোঝাতে চেষ্টা করছেন ৷
সবাই ভাবছে আলেয়া হয়তো ছেলের বউ হিসেবে রূপাকে মানতে পারছে না ৷ আসলেও তাই ৷ তিনি রূপাকে মেয়ের মত করেই বড় করেছেন , রূপাকে আগলে রেখেছেন ৷ তার মনে হচ্ছে এক বাড়িতে বড় হওয়া রূপা আর নয়নের যখন বিয়ে হলো এখন গ্রামের সবাই ভাববে হয়তো বাড়ির মধ্যে লীলা চলেছে , নোংরামো চলেছে আলেয়া বেগমের চোখের আড়ালে বা প্রশ্রয়ে ৷ হয়তো ভাববে রূপার বাবার সম্পত্তিগুলো হাত ছাড়া যাতে না হয় তাই ছেলেকে লেলিয়ে দিয়েছেন ! আলেয়া বেগমের নিজেকে খুব অপরাধী লাগছে ৷ তার চোখের তলায় এত কিছু হয়ে গেলো আর তিনি টেরও পেলেন না !
লাকী এগিয়ে যায় আলেয়া বেগমের কাছে ৷ সবাইকে সরে যেতে বলে ৷ তারপর তার হাত ধরে বলে
—চাচী , মাইয়্যাডারে তুমি ফালাইও না ৷ আর কেউ ওরে যতটা না চেনে তুমি তার চেয়ে বেশি চেনো ৷ ওর মনডা সাদা , তোমারে ভালোবাসে চাচী ৷
—আমি জানি রে বউ ! লোকে কী কইবো ক ! ওর বাপের জমি মাইরা খাওনের জন্য এগলা করছি ভাববো !
—লোকের কামই তো আড়ালে কথা কওয়া ! আমারে দেখো , বিয়ার পর বছরের পর বছর স্বামীর সংসার ফালায়া বাপের বাড়িত থাকছি ৷ ক্যান থাকছি ? ঐ লোকের কথায় … আমি কোনদিনও এই সংসারটা আপন করতে পারি নাই ৷ লোকে মন্দ কথা কইতো , আমিও মানতাম ৷ পরে যখন বুঝলাম তখন নিজেরে মাফ করতে পারি নাই ৷ লোকের কথা ভাইবা নিজের জীবন নষ্ট করছি আমি ৷ এখন কারও কথা কানে তুলি না , কেউ আর কিছু কওয়ারও সাহস পায় না ৷ আড়ালে যে কথা বলে সে আড়ালেই বলবে বুচ্ছো ৷ জীবনে সামনে আইসা বলতে পারবে না ৷ নয়নের লাইগা রূপার চাইতে ভালো আর কেউই হইতে পারে না ৷ মাইয়্যাডা মুখ শুকনা কইরা বইসা আছে বারান্দায় … ঘরে ঢোকার সাহস পাইতাছে না ৷ যাও চাচী তুমি তারে ঘরে তোলো ৷ তুমি শক্ত থাকলে কারও বাপের ক্ষমতা নাই কথা কইবো ৷ আর চাচী সম্পত্তির কথা কই , ইসলামী আইন অনুযায়ী এমনেই ছোট চাচার সম্পত্তি নয়ন , নাসির ভাই আর উনি এমনেই কিছু কিছু পাইবো ৷ মাইয়্যা বিয়া করাইলেই সেই সম্পত্তি জামাইয়ের হইবো না ৷ আর এদের কারোই সম্পত্তি নিয়া চিন্তা নাই ৷ তুমি কইলা তাই কইলাম ৷ এগুলান ফাও চিন্তা বাদ দিয়া মাইয়্যাডারে ঘরে তোলো চাচী ৷
আলেয়া বেগম কতক্ষন চুপ করে থেকে উঠে দাঁড়ালেন ৷ তারপর আগের মত গলা উঁচু করে বললেন “ও নিপা , ও বউ তোগো আক্কেল কী জীবনেও হইবো না ! ঘরে নয়া বউ আসছে , দুধ শরবত কিছুই ব্যবস্থা করলি না !”
আলেয়া বেগমের কথা শুনে নিপা আর লাকী হুরোহুরি করে দুধ আর শরবতের গ্লাস নিয়ে আসলো ৷ আলেয়া বেগম দুধের গ্লাস রূপার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললেন ” আইজ থেইকা আমারে মা ডাকবি ৷ চাচী যেন আর শুনি ”
রূপা আলেয়া বেগমকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে শুরু করলো ৷
এতসব ঘটনার মধ্যে নয়ন কোথাও নেই ৷ সারাদিন সে বাড়ি ফিরলো না , রাত গভীর হবার পর বাড়ি ফিরলো ৷ ধীরে ধীরে নিজের ঘরে ঢুকে দরজা লাগিয়ে বাতি জ্বালাতেই দেখলো তার বিছানায় রূপা ঘুমে কাদা হয়ে আছে ৷ কী যে নিষ্পাপ আর শুভ্র লাগছে মেয়েটাকে ৷ নয়ন এগিয়ে গিয়ে খাটে বসতেই রূপা ধরমরিয়ে উঠে বসে ৷ তারপর অপরাধীর মত মুখ করে বলে
—আমি এই ঘরে থাকতে চাই নাই , জহুরা ভাবী আর লাকী ভাবী জোর কইরা রাইখা গেছে আমারে ৷ আপনে ঘুমান , আমি চইলা যাইতেছি ৷
—কোথাও যেতে হবে না , এখানেই ঘুমাও ৷ আমার সমস্যা নেই ৷
মাঝখানে কোলবালিশের বর্ডার দিয়ে নয়ন শুয়ে পড়ে ৷ রূপা ভেতরে ভেতরে মন খারাপের মেঘলা আকাশ বুকে চাপা দিয়ে ঘুমিয়ে পড়ে ৷ একরাশ অভিমানে তার বুক ভারী হয়ে আছে ৷
সকালে ঘুম থেকে উঠে রূপা দেখে নয়ন পাশে নেই ৷ বালিশের কাছে একটা চিঠি পড়ে আছে চার লাইনের ৷
“আমি ঢাকা চলে যাচ্ছি , তুমি আজ দিন থেকে কাল চলে যেও ৷ সামনে পরীক্ষা , পড়ায় ফাঁকি দিও না ৷ আমার কারণে তোমার রেজাল্ট যদি খারাপ হয় নিজেকে ক্ষমা করতে পারবো না আমি ৷ ভালো থেকো ৷ ”
রূপা চিঠি পড়ে কুটি কুটি করে ছিঁড়ে ফেলে ৷ পরের দিনের অপেক্ষা না করে সেদিনই মেসে চলে যায় ৷ সব কিছু ভুলে মন দিয়ে পড়ার চেষ্টা করে ৷ কিন্তু মন বারবার সেইসব স্মৃতিতেই আটকে যায় ৷
মাস পার হয়ে যায় , ঘুরে ফিরে আবার সেই তারিখ আসে ৷ গত এক মাসে নয়নের সাথে রূপার কথা হয়েছে আগের মতই ৷ নয়ন এমনভাবে কথা বলে যেন ওদের জীবনে বিয়ে নামের ঘটনাটা ঘটেইনি ৷ অথচ রূপা মনে প্রাণে ওর বউ হবার স্বীকৃতিটুকু চায় , পায় না … হতাশ হয় , দুঃখ পায় ! ঐ প্রসঙ্গে কোন কথা উঠলেই নয়ন চুপ হয়ে যায় ৷ পরের দুই তিন দিন আর কল করে না ৷ আবার কল করে স্বাভাবিকভাবে কথা বলে !
রূপা প্রচণ্ড দ্বিধায় ভুগছে ! এদিকে পরীক্ষা চলে এসেছে ৷ সব ভুলে রূপা পড়ায় মন দিতে চায় বারবার , হয় না ! কিছুতেই হয় না ৷
সব পরীক্ষা কোন রকম হলেও ফিজিক্স পরীক্ষা খুবই খারাপ হলো ৷ অথচ ফিজিক্স আর ম্যাথ ওর প্রিয় সাবজেক্ট ছিল …
সময়ের ফেরে প্রিয় সবকিছুই তাকে একসাথে ধোকা দিচ্ছে !
৩২.
জহুরা আস্তে আস্তে গ্রামের জীবনে অভ্যস্ত হতে শুরু করেছে ৷ জীবনটা হঠাৎই এমন একটা জায়গায় এসে দাঁড়ালো , সেখান থেকে পেছনে ফেরার বুদ্ধি নেই ৷ জুনিকে নিয়ে তার বড্ড আশা ছিল ৷ এখন অবশ্য রূপা আর নয়নকে দেখে মনে হয় ওরা যদি এই গ্রামে থেকে এত ভালো রেজাল্ট করতে পারে , তাহলে জুনিও পারবে ৷ তবুও মাঝে মাঝে মনটা ভীষণ ভার ভার লাগে ৷
গ্রামের বাড়িতে অনেক কাজ ৷ শহরের দু কামরার বাড়িতে যতটুকু কাজ ছিল , এখানে তার চেয়ে দশগুণ বেশি কাজ ৷ সব সে করতে পারেও না ৷ চোখের সামনে লাকী ভাবী দুনয়ার সব কাজ করছে আর সে বসে থাকছে এই ব্যাপারটাও ভালো লাগে না ৷ এই কাজ কাজ ব্যাপার নিয়ে তার জা যে তার উপর মনঃক্ষুন্ন এটাও সে বোঝে ৷ কিন্তু সে চেষ্টাও করেও গরুকে খাবার দিতে পারে না , দুধ দোয়াতে পারে না , ঘর লেপতে পারে না …অবশ্য কাজের মহিলা আছে ,কিন্তু গ্রামেরূ বাড়িতে বুয়া দিয়ে কাজ চলে না ৷ বুয়া একটা কাজ করলে গৃহিনীকে দশটা কাজ করতে হয় ৷ জহুরা আস্তে আস্তে নিজের খোলস ছাড়ছে , আস্তে আস্তে মাটির সাথে বন্ধন তৈরি করছে ৷
নাসির মিয়া দোকান দিয়েছে গঞ্জে ৷ মোবাইল , ইলেকট্রনিক্স জিনিসপত্রের দোকান ৷ গ্রামের বাজারে এই জিনিসের দোকান ছিল না ৷ বেশ ভালোই চলছে তাই ৷ কিছুদিন হলো একটা লোক জোগার করে ফেলেছে , যে ইলেকট্রিক জিনিসপত্র ভালো সারাতে পারে ৷ তার দোকানে তাই সবসময়ই কাস্টমার থাকছে ৷ আজকাল তার মন ভালো থাকে ৷ রাতে ফেরার সময় বউ বাচ্চার জন্য এটা সেটা কিনে নিয়ে যায় ৷ জহুরার সেটাও খারাপ লাগে ৷ একা থেকে ওদের স্বভাব আলাদা হয়ে গেছে ৷ এ বাড়িতে জুনি ছাড়াও আরো দুটো বাচ্চা আছে , শুধু জুনির জন্য কিছু আনাটা এখন আর শোভনীয় নয় ৷ নাসির মিয়া এখনও সেটা বোঝেনি , তবে জহুরা তাকে সময় নিয়ে ব্যাপারগুলো বোঝাচ্ছে ৷
সম্পর্কের সমীকরণ সময় লাগলেও উন্নতির দিকেই যাচ্ছে ৷ অনেক সময় সংসার টেকানোর জন্য বড় বড় ছাড় দেওয়া লাগে , বিশেষকরে মেয়েদের ৷ জহুরাও দিয়েছে ৷ সন্তানের জন্য সংসার ভাঙার সাহস সে পায়নি ৷ মেনে নিয়েছে গ্রামের জীবন , মানিয়ে নিচ্ছে নিজেকে ….
**********
নিপার শ্বশুরটা হঠাৎ করেই মারা গেলেন ৷ অথচ নিপার শাশুড়ি দীর্ঘদিন হলো শয্যাশায়ী ৷ অসুস্থ মানুষটা দিব্বি রয়ে গেলো আর সুস্থ মানুষটা আল্লাহর কাছে চলে গেলো , সবই করুণাময়ের লীলা ৷
আজকাল নিপার দায়িত্ব অনেক বেড়েছে ৷ পুরো সংসার একা হাতে সামলাতে হয় ৷ ইমরান বাবার ব্যবসাগুলোর হাল ধরেছে ৷ অসৎসঙ্গ সে অনেক আগেই ছেড়েছিল , ইদানীং গৃহী হয়ে গেছে বেশি ৷ এর মধ্যেই নিপা আবার সন্তান সম্ভবা ৷ বাচ্চাটাও ছোট , আজকাল এত কষ্ট হয় তার !
প্রথমবার এত কষ্টের মধ্যেও সুমাইয়া ছিল সবদিক সামলে নেবার জন্য ৷ এবার কেউ নেই ৷ শাশুড়ি বিছানায় , স্বামী সকাল বেলা বের হয়ে রাতের বেলা ফেরে ৷ আজকাল নিপার সুমাইয়ার কথা খুব মনে পড়ে ৷ নিজে নিজে অনুতপ্তও হয় ৷ সুমাইয়া কোথায় আছে সে জানে , তার মোবাইল নম্বরও জানে ৷ মনটা খুব চায় একবার ফোন দিয়ে কথা বলতে , কিন্তু পারে না ! সময়ের সাথে সাথে ওর উপর জমা কঠিন রাগটা কমে গেছে , তার উপর ইমরান নিজে ওকে বুঝিয়েছে সুমাইয়া আসলে কেন সেদিন ঐ কথা বলেছিল ৷ এখন তার কাছে মনে হয় সে অন্যায় করেছে সুমাইয়ার সাথে ৷ অকৃতজ্ঞের মতো কাজ করেছে ৷ রোজ নিপা মনে মনে ঠিক করে আজ ইমরান ফিরলে তাকে বলবে সে সুমাইয়ার সাথে কথা বলতে চায় … বলতে পারে না ৷ ভেতরে ভেতরে ভয়ও লাগে , আবার যদি সুমাইয়া তার জীবনে চলে আসে ! এই পুরো সংসারটা তার আপন হয়ে গেছে , এখন আর সে কাউকে এ সংসারের ভাগ দিতে পারবে না কিছুতেই !
৩৩.
সুমাইয়ার দিনকাল বেশ ভালোই চলছে ৷ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে গেছে সে ৷ পড়াশোনাটা অবশ্য এখনও চলছে ৷ তবে ইদানীং তার জীবনে একজন নতুন মানুষ এসেছে ৷ মানুষটির নাম আমিন ৷ তাদের কলেজের লাইব্রেরীয়ান ৷ বই আনা নেওয়া করতে করতেই বন্ধুত্ব গড়ে উঠেছে ৷ তিন মাসের এক মেয়েকে রেখে তার স্ত্রী মারা গিয়েছিলো আরও বছর পাঁচেক আগে ৷ সেই শিশুটিকে একাই বড় করেছে আমিন ৷ মাঝে মধ্যে সাথে করে কলেজেও আনে ৷ সুমাইয়ার সাথে সেই কন্যাটির ভীষণ ভাব ৷
বন্ধুত্ব পর্যন্ত সব ঠিকই ছিল , গতকাল আমিন তাকে সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ৷ মাতৃহীন শিশুটিকে একটা মা দিতে চায় সে …. সুমাইয়ার অতীত আমিনের অজানা নয় , তবুও সব জেনে শুনেই তাকে বিয়ের প্রস্তাব দিয়েছে ৷
সুমাইয়া বড্ড দ্বিধায় ভুগছে ৷ আমিন তার খুব ভালো বন্ধু , বলা যায় একমাত্র বন্ধু ৷ কিন্তু সেই বন্ধুত্বের অন্য নাম যদি সম্পর্কটাকে নষ্ট করে দেয় ! সে যদি দেবশিশুটির ভালো মা হতে না পারে ! মানসিক টানাপোড়েনে ভীষণ ছটফট করছে সে ৷ খুব চিন্তা ভাবনা করে সে আমিনের সাথে সরাসরি সব খোলাখুলি আলাপ করবে ঠিক করে ৷
শহরের একটা মাত্র চাইনিজ রেস্টুরেন্টে আজ সে এসেছে আমিনের সাথে দেখা করতে ৷ যার সাথে প্রতিনিয়তই দেখা হয় , তার সাথে আলাদা করে দেখা করতে আসাটা একটা অন্যরকম অনুভূতির ৷ সুমাইয়ার মাথা ঝিমঝিম করছে ! এসির মধ্যে বসেও তার কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমছে …
—বেশিক্ষন অপেক্ষা করালাম না তো !
—না , সমস্যা নেই ৷
—তারপর বলো , হঠাৎ ডাকলে যে ! কাল কলেজেই তো দেখা হতো !
—সব কথা কী কলেজে বলা যায় ?
—আমি আবার এসব একটু কম বুঝি ৷ ব্যাপার না , তুমি বলো ৷ খাবার অর্ডার করেছো ?
—না এখনও করিনি ৷ কী খাবেন ?
—ভাত পাওয়া যাবে ? দুপুরেও ভাত খাইনি ৷ আমি আসলে এখানে আজকে প্রথম আসলাম এখানে ৷
—ভাত না , তবে ভাতের মত খাবার পাওয়া যাবে , ফ্রায়েড রাইস নাম ৷ আমি আগে একবার এসেছিলাম , আমার ছাত্রীর জন্মদিনের দাওয়াত খেতে এখানে এসেছিলাম ৷
—আচ্ছা তাহলে আগে খাবার অর্ডার করো ৷
সুমাইয়া খাবার অর্ডার করে ৷ ওয়েটার চলে যেতেই আমিন বলে
—মুনিয়াকে তো স্কুলে ভর্তি করাতে হবে ৷ তুমি খোঁজ খবর নাও কোথায় ভর্তি করাবা ৷
—আমি খোঁজ খবর নিবো ?
—হুম , পাঁচ বছর তো আমিই সব দায়িত্ব সামলালাম , এবার মেয়ের দায়িত্ব বুঝে নিয়ে আমাকে একটু ছুটি দাও ৷ কতদিন বন্ধুদের সাথে কার্ড খেলি না !
—আচ্ছা ! তাহলে বন্ধুদের সাথে কার্ড খেলার জন্য অামাকে বিয়ে করতে চাচ্ছেন ৷
—হা হা হা ! তা বলতে পারো ৷ সুমাইয়া , আমি একা সব সামলাতে সামলাতে ক্লান্ত হয়ে গেছি ৷ আমার একটা সঙ্গী দরকার ৷ আমি আর পারছি না …
—কিন্তু আমি যদি মুনিয়ার ভালো মা হতে না পারি ?
—তোমাকে তো বদলাতে হবে না , যেমন আছো তেমনই থাকবে ৷ মুনিয়াকে তুমি এখন যেমন ভালোবাসো তখনও তেমন বাসবে ৷
—এর আগের সংসারটা আমি টেকাতে পারিনি , আমার খুব ভয় হয় !
—আগের সংসারটা তো আমারও টেকেনি ! মুনিয়ার মা তো আমাকে রেখে চলেই গেলো ৷ আটকাতে পেরেছি কই ?
—আপনার আর আমার ব্যাপারটা আলাদা !
—এক ভাবলে এক , আলাদা ভাবলে আলাদা ৷ দেখো সুমাইয়া আমি তোমাকে জোর করবো না ৷ তবে এটা ঠিক , তুমি রাজী না হলে আমি অন্য কাউকে সঙ্গী হিসেবেও ভাববো না ৷ পুরো ব্যাপারটাই তোমার ইচ্ছে ৷ চাইলে তুমি এই ক্লান্ত মানুষটার সঙ্গী হতে পারো , না চাইলে হবে না ৷ তবে আমি তোমার বন্ধুই থাকবো সবসময় ৷
—আমি যদি না পারি ..,
আমিন সুমাইয়ার হাতটা হঠাৎ ধরে বলে
—শুধু তুমিই পারবে …
সুমাইয়া লজ্জা পেয়ে মাথাটা নিচু করে ফেলে ৷ তারপর খুব ধীরে বলে “মুনিয়ার বাবা , আমি মুনিয়ার মা হতে চাই ৷ আর দেরী করতে চাই না …”
ওয়েটার খাবার দিয়ে টেবিল ভরিয়ে দিয়ে যায় ৷ সুমাইয়া সেই খাবার তুলে দেয় আমিনের প্লেটে ৷ আমিন খেয়ে দেয়ে বলে “চাইনিজ ভাতটা তো খেতে খারাপ না ! এরপর আবার মুনিয়াকে নিয়ে আসবো আমরা , ঠিক আছে ?”
সুমাইয়া হেসে বলে “ঠিক আছে ”
শেষ পর্ব
———–
রূপার এ প্লাস মিস হয়ে গেলো ৷ ফিজিক্সে পেয়েছে এ মাইনাস ! রেজাল্ট দেখে কাঁদতে কাঁদতে চোখ মুখ ফুলিয়ে ফেলেছে সে ৷
সারাদিন কিছু খায়নি ৷ আলেয়া বেগমের সাধাসাধিও কাজে দেয়নি ৷
সন্ধ্যের দিকে হঠাৎই নয়ন আসে , কোন খবর না দিয়ে ৷ সেই যে নয়ন গিয়েছিল , এরপর আর একবারও দেখা হয়নি তাদের ৷
রাতের খাবার দাবার শেষে নয়ন ঘরে বসে অপেক্ষা করতে থাকে রূপার জন্য ৷ রূপা আসে না ৷ শেষমেষ বের হয়ে দেখে লিচু গাছের নিচে বসে আছে সে ৷ নয়ন কোন কথা না বলে হাত ধরে ঘরে নিয়ে আসে তাকে ! ঘরে ঢুকে দরজাটা বন্ধ করে দেয় !
—আমারে এখানে আনলা ক্যান !
—আমার বউরে আমি আনছি ৷ তোর সমস্যা কী ?
—তুই করে বলবা না ৷ বউ মানে ? আমাদের বিয়া তো তুমি স্বীকারই করো না !
নয়ন জড়িয়ে ধরে রূপাকে ৷ ঠোঁটে ঠোঁট ঠেকিয়ে চুমু দিয়ে ওর সব অভিযোগ বন্ধ করে দেয় ৷ রূপা কিছুক্ষন নিজেকে ছাড়াবার চেষ্টা করলেও একটা সময় আত্মসমর্পন করে ৷ ওর চোখ গড়িয়ে জল পড়ছে , সেই জল স্পর্শ করছে নয়নকে ৷
নয়ন ওর চোখের জল মুছিয়ে দিয়ে বলে ” তোকে আমি পাগলের মত ভালোবাসি রূপা ৷ তোকে ছাড়া জীবনে কাউকে আমি চিন্তাও করতে পারি না ৷ ভেবেছিলাম চাকরি পেয়েই তোকে ঘরের বউ করে ফেলবো ৷ কিন্তু মাথায় বন্দুক ঠেকিয়ে ওরা যা আমাদের সাথে করেছে ওটা আমার কাছে দুঃস্বপ্ন ! রূপা , আমি ছোট্ট একটা চাকরি পেয়েছি ৷ একটা এক কামরার বাসাও ভাড়া করে ফেলেছি ৷ এবার মা কে বলে তোকে ঢাকায় নিয়ে যাবো ৷ এই পরীক্ষায় এ প্লাস পাসনি , ব্যাপার না ! তবে ভালো কোথাও চান্স তোকে পেতেই হবে ৷ নাহলে কিন্তু তোর কপালে দুঃখ আছে ….”
রূপা নয়নকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে ! তারপর বলে “তুই করে বললে তোমার কপালেও দুঃখ আছে !”
দুটো শরীর প্রথমবারের মতো একে অন্যের গভীরে মিশে যায় ৷ মান অভিমানের শেষ হয় দীর্ঘ চুম্বনের নোনা স্বাদে …..
সমাপ্ত