–#ওগো_বধু_সুন্দরী__পর্ব….১
—আম্মা,তোমার জামাই আমায় খুব ব্যাথা দেয়…!!😲
নিজের সদ্য বিবাহিতা স্ত্রীরে মুখে এমন একটা কথা শুনে যেন আকাশ থেকে পতিত হলাম আমি।এটা কি বলছে শ্রেষ্ঠা…??🙄
নিজের মাকে এগুলো বলে কেউ,মানুষ বোকা হয়,তাই বলে এতোটা বোকা।শ্রেষ্ঠার সমস্ত বিষয় যেন আমার কল্পনার বাইরে।
বয়স নেহাত খুব একটা কম নয়,বিশ পেরিয়েছে।কিন্তু ওর চেহারা আর ব্যবহার দেখে সেটা বোঝার উপায় নেই।
শ্রেষ্ঠার সাথে বিয়ে হয়েছে মাত্র এক সপ্তাহ।একটা বাসা বাড়িতে ওকে নিয়ে থাকি আমি।
আমার নাম সৌহার্দ্য।মাকে হারিয়েছি এক বছর আগে।আপন বলতে বাবা আর একটা ছোট ভাই আছে।ওরা অবশ্য শহরের বাইরে থাকে।
আমি শ্রেষ্ঠার হাত থেকে ফোনটা কেড়ে নিলাম!
—-পাগল হয়ে গেছো নাকি, এগুলো কি বলছো মাকে?
—কেন কি বলছি, যা সত্যি তাই বলেছি।
—তুমি কি কিছুই বোঝা না,মানে এতো ন্যাকামি কোথা থেকে আসে তোমার ..??
—কি আপনি আমায় ন্যাকা বললেন…??
(রেগে দাঁত কটমট করে বলে উঠলো।কথায় আছে না, বোকারা রেগে গেলে ভয়ংকর রুপ ধারণ করে। আমার বৌএর হয়েছে সেই অবস্থা)
—কেন ভুল কিছু বললাম বুঝি,
—অবশ্যই ভুল বলেছেন।
—দেখো শ্রেষ্ঠা।তুমি তো জান আমরা সম্পর্কে স্বামী স্ত্রী হই।আমাদের ভেতরে যাই হোক না, বিশেষ করে রাতে।সেগুলো একান্তই ব্যক্তিগত ব্যাপার।বাবা মাকে কি বলতে আছে!?
—বাহহহ!আপনি আমাকে ব্যাথা দিবেন আর আমি কাউকে বলবো না।
(শ্রেষ্ঠাকে কিকরে বুঝাই ও যেটা বলছে চূড়ান্ত মূখার্মী ছাড়া কিছু নয়।কিন্তু সে বোঝবার পাত্রী নয়,খুব ভালো করেই জানি আমি।ওকে অন্যভাবে শান্ত করতে হবে!)
—আচ্ছা, ঠিক আছে। আর ব্যাথা দেবো না।কথা দিলাম।অনেক অনেক চকলেট দেবো তোমায়। তুমি যা যা খেতে চাও সব কিনে আনবো।
—সত্যি বলছেন….??
(উচ্ছ্বাসের স্বরে )
—হ্যাঁ,সত্যি বলছি।তুমি না চাইলে আমি ছোবোও না তোমায়।শুধু নেক্সট টাইম এই ধরনের উল্টোপাল্টা কথা কারো সাথে বলো না।
—না বলবো না,তবে চকলেট আনতে হবে কিন্তু।
–হ্যাঁ বাবা আনবো।
শ্রেষ্ঠাকে কোনোমতে বুঝিয়ে নিজের অফিসে চলে গেলাম।যতোই শিশুসুলভ হোক না কেন,রান্নাটা মোটামুটি ভালোই করতে পারে শ্রেষ্ঠা।যদিও আমায় প্রচুর সাহায্য করতে হয়। সকাল সকাল রান্নাটা সেরে রেখেছি,তাই বিশেষ কোনো চিন্তা নেই।
–
–
–
–
–
যদিও বাসায় দুপুরের পরে ফেরবার কথা ছিলো, কিন্তু কাজের চাপে বড্ড দেরি করে ফেলেছি।বাসায় ঢুকে দেখি সাতটা বেজে গেছে।চারদিকে কোথাও কোনো সাড়াশব্দ নেই।
বেডরুমে গিয়ে দেখলাম শ্রেষ্ঠা অঘোরে ঘুমুচ্ছে।না জানি কখন শুয়ে পড়েছে।ভাবলাম জাগিয়ে তুলবো,পরে নিজের সিধান্ত পরিবর্তন করি।
নিজের জন্য কেনা কতোগুলো গুরুত্বপূর্ণ ওষুধ রাখার জন্য ড্রয়ারটা খুললাম।কিন্তু একি! ড্রয়ারের ভেতরে তিল ঠাঁই পরিমান জায়গা নেই। পুরোটা শ্রেষ্ঠার গয়নাগাটিতে ভরপুর।কতগুলো কাঁচের চুড়ি,নেকলেস,কানের দুল ইত্যাদি ইত্যাদি…..
মেয়েটা আসলেই পাগল,নয়তো এতো অযথা গয়নাগাটি কেউ এভাবে সাথে নিয়ে আসে।ড্রয়ারের ভেতরে হাত দিতেই একটা অদ্ভুত ব্যাপার লক্ষ্য করলাম আমি।
এক কোনায় একটা কানের দুল পড়ে আছে, খুঁজে দেখলাম এর অন্য পিসটা কোথাও নেই। কানের দুলটা দেখে রীতিমত হাত পা কাঁপতে শুরু করলো আমার!!
দুলটা হাতে নিয়ে দৌড়ে পাশের রুমে ছুটে গেলাম।আলমারিটা খুলে তার ভেতর থেকে একটা বক্স বের করি।বক্সের ভেতরে একটা কানের দুল,এক বছর আগে আমিই এখানে রেখেছিলাম এটা।
দুটো দুল পাশাপাশি রেখে দেখলাম,একদম সেম কালেকশন।সেম ডিজাইন,সবকিছু সেম!!
হায় আল্লাহ!!!এটা কি দেখছি আমি। পায়ের তলা থেকে যেন মাটি সরে যেতে লাগলো আমার।
—-আজ থেকে এক বছর আগে আমার মায়ের খুন হয়েছিলো।আর সেই খুনি একটা মেয়ে ছিলো।অন্ধকারে ধস্তাধস্তির সময়ে যার কান থেকে একটা দুল ছিড়ে নিয়েছিলাম আমি।এরপর সেই অজ্ঞাতনামা খুনি আমায় ধোকা দিয়ে পালিয়ে যায়। নিজের মায়ের খুনিকে আর খুঁজে পাইনি আমি।আজ দীর্ঘ এক বছর পরে এ কোন পরীক্ষার মুখোমুখি হলাম আমি,,
এই কানের দুলটা শ্রেষ্ঠার কাছে এলো কিকরে…. তবে কি…..??????
চলবে,,,
#ওগো_বধু_সুন্দরী
পর্ব—-০১
কাহিনী ও লেখা : প্রদীপ চন্দ্র তিয়াশ।