সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ২১

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২১

#Tahmina_Akther

পুরো দু’হাত ভর্তি মেহেদি দিয়ে দিলো অভিক আর আমি তো পুরো অবাক। মানে কি ভাবে সম্ভব? এত সুন্দর ডিজাইন আর দেখে মনে হচ্ছে যেন পাকা হাতের শিল্প।একে একে সবাই আমার হাতের মেহেদি দেখছে আর অভিকের প্রশংসা করছে।

নানু এসে আমার কপালে চুপু খেয়ে বললেন,

-দেখলি তো আমার নাতির পাগলামি একটু লজ্জাও পেলো না সবার সামনে কি ভাবে এসে তোর হাত ধরে মেহেদী পরিয়ে দিলো।

– নানু আমার বদনাম করছো আমারই পিঠ পিছে তাও আবার আমার বৌয়ের সঙ্গে!এটা ঠিক না বুঝলে।

-হুম, বুঝলাম। তোর বন্ধুরা কই দেখলাম না যে

-নানু ও কি আর আমাদের সাথে নিয়ে আসবে ওর বৌকে মেহেদী পরিয়ে দিতে।

-দেখো না কি সুন্দর করে মেহেদী পরিয়ে দিয়েছে বলেই নানু আমার হাত টেনে নিয়ে দেখালো আবির আর সাঈদ ভাইয়াকে।

উনারা বেশ প্রশংসা করলেন অভিকের। নানু চলে গেলেন। এর একটু পর আমাদের সঙ্গে যোগ হলো মিরা আর তিয়ানা। ওরা আসতেই আবির বলে উঠলো,

-হিয়া ভাবি, দেখতে চান আমাদের অভিক কিভাবে এত সুন্দর মেহেদি দেয়া শিখলো?

-হ্যা হ্যা বলুন না ও কিভাবে এত সুন্দরভাবে মেহেদী দেয়া শিখলো?

আবির আর সাঈদ ভাইয়া উনাদের হাত মেলে ধরলেন আমাদের সমুখে। তিয়ানা,মিরা আর আমি ব্যাপারটা বুঝতে পেরে অট্টহাসিতে মেতে উঠলাম। কারন, আবির, সাঈদ ভাইয়ের পুরো হাতেই মেহেদির আলপনা। তার মানে ওনাদের হাতে মেহেদি পরিয়ে প্র্যাকটিস করেছে আমাদের অভিক সাহেব।

এদিকে অভিক তাকিয়ে আছে হিয়ার মুক্তোঝরানো হাসির দিকে।ঠিক কতকাল পর এই নির্মল হাসি দেখা গেলো হিয়ার মুখে।

আমি হাসি থামাতেই পারছি না। তবুও অভিককে বহু কষ্টে জিজ্ঞেস করলাম,

-উনাদের হাত এভাবে নষ্ট করেছো কেন?

-তো আমি কি তোমাকে এভাবেই মেহেদি পরিয়ে দিবো নাকি? তাই গতকাল রাতে ওদের দুজনের হাত একটু ধার করেছিলাম। প্র্যাকটিস করেছি বলেই এত সুন্দর মেহেদী দিতে পেরেছি।

-আচ্ছা, এখন হিয়ার সাথে কথা শেষ হলে আমাদের সাথে চল। তুই না বলেছিস আমাদের ট্রিট দিবি?

-আচ্ছা চল। আমি আসি ফুল। কাল দেখা হচ্ছে তাহলে?

-হুম

ওরা চলে গেলো। আর আমি, তিয়ানা এবং মিরা বসে আছি আর গল্প করছি। আপনারা হয়তো ভাবছেন? বিয়েতে নাচ গান হচ্ছে না কেন? আসলে আমাদের পরিবারের কেউ এইসব পছন্দ করে না তাই?

—————-

বিয়ের দিন সকাল

চার দিকে বেশ হৈচৈ হচ্ছে। বিয়ে হবে দুপরে তাই সকলে সাজের জন্য একপ্রকার তাড়াহুড়ো করছে। আমাকে সাজিয়ে দিতে গতকালের দুটো মেয়ে এসেছে। আমার সাজ শেষ এবার তিয়ানা আর মিরাকে সাজিয়ে দিচ্ছে।

আমার পরনে অভিকের পছন্দ করা লাল বেনারসি,কানে গোল্ডের ইয়ার রিং, গলায় গোল্ডের নেকলেস, মাথায় গোল্ডের টায়রা, হাতে গোল্ডের বালা। নাকে কিছুই পরতে পারিনি ব্যাথা হয়ে আছে। যদি কিছুদিন আগেই নাক ফুঁড়াতাম তাহলে হয়তো আজ নাক খালি থাকতো না।

ছেলেপক্ষের সবাই আগেই চলে গেছে কনভেনশন সেন্টারে। শুধু আমরা হাতেগোনা কয়জন মেয়েপক্ষ বাড়িতে আছি।

তিয়ানা, মিরার সাজ শেষ এরই মাঝে আম্মু বেশ কয়েকবার এসে দেখে গেলেন আমাদের হয়েছে কি না? এবার আমার মোবাইলে আব্বু কল করলেন। রিসিভ করতেই বললেন,

-কি রে আর কতক্ষণ লাগবে মা? এখানকার সবাই জিজ্ঞেস করছে তোর কথা। তাড়াতাড়ি চলে আয়।

– এইতো আব্বু বের হচ্ছি। চিন্তা করো না।

বাড়ির বাহিরে আগে থেকেই গাড়ি দাড় করানো ছিলো। আমি, তিয়ানা আর মিরা এক গাড়িতে রওনা হলাম। আর আম্মু সহ যারা বাকি ছিলো তারা অন্য গাড়িতে রওনা হয়েছে।

মিনিট বিশেক লাগলো সেন্টারে পৌঁছাতে। আমাদের গাড়ি প্রবেশ করতেই অনেকেই গেটের কাছে এসে দাড়ালো। আমি কারের দরজা খুলতেই কে যেন সাহায্যের হাত আমার দিকে বাড়িয়ে দিলো। উপরে তাকাতেই দেখতে পেলাম অভিক আমার দিকে হাত বাড়িয়ে আছে। আমি ওর বাড়িয়ে দেয়া হাতে নিজের হাত রাখলাম। আমার হাত আলতো করে মুঠোয় নিলো অভিক।ফটোশুটার ছবি তুলছেন, আরেকজন ভিডিও করছে। গাড়ি থেকে নামতেই আমাদের দুজনের উপর ফুলের বর্ষন হতে লাগলো।আজ যেন নিজেকে রুপকথার রাজকন্যা হিসেবে অনুভব করছি। ধীরে ধীরে হেঁটে আমরা চললাম ভিতরের দিকে।

সবার সাথে বেশ ছবি তুললাম। এরপর শুরু হলো আমার আর অভিকের ফটোশুট। একেকবার একেক ভঙ্গিতে, একবার একপাশে জরিয়ে, তো একবার চোখে চোখ রেখে, তে একবার অভিকের বুকে মাথা রেখে, তে একবার অভিক আমার কোমড় জরিয়ে কপালে চুমু দিচ্ছে আর আমি চোখ বন্ধ করে রেখেছি। আমি তো লজ্জায় পুরো শেষ অভিকের দিতে তাকাতে অবধি পারছি না এই ফটোশুটের প্যারায়।

এরইমাঝে চাচ্চু দৌড়ে এলেন আমাদের দিকে বললেন,

-যা কিছু ঘটুক তোরা সাহস হারাবি না। কারণ, আল্লাহ চেয়েছেন বলেই তোরা দু’জন এক হবি। আমি চললাম তোরা নিজেদের খেয়াল রাখিস।

আমি আর অভিক একে অপরের দিকে তাকিয়ে বুঝতে চেষ্টা করলাম। কি হয়েছে যে চাচ্চুসহ ভয় পেয়ে গেলেন? ঠিক তখনি মনে পড়লো মেসেজটির কথা। আমি অভিকের হাত ধরে বসে রইলাম। আসলেই কি সেই আগুন্তক অভিকের ক্ষতি করবে?

এরইমাঝে কে যেন আমার নাম ধরে ডাকলো তবে ভিন্ন ভাবে,

-হিয়া পাখি?

ডাক অনুসরণ করে তাকালাম ঠিকই মূহুর্তের মাঝে আমি আমার শ্বাস নিতে ভুলে গেলাম। এ কি করে সম্ভব? মরা মানুষ কি কখনো জীবিত হয়ে ফিরে আসতে পারে?

আমার মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো একটি নাম,

-আহান!!

#চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here