সুপ্ত ভালোবাসা পর্ব ২২

#সুপ্ত_ভালোবাসা

#পর্ব_২২

#Tahmina_Akther

-হিয়া পাখি?

ডাক অনুসরণ করে তাকালাম ঠিকই মূহুর্তের মাঝে আমি আমার শ্বাস নিতে ভুলে গেলাম। এ কি করে সম্ভব? মরা মানুষ কি কখনো জীবিত হয়ে ফিরে আসতে পারে?

আমার মুখ দিয়ে অস্ফুটস্বরে বেরিয়ে এলো একটি নাম,

-আহান!!

হ্যা, স্বয়ং আহান আমার থেকে ঠিক চার ফুট দূরত্বে দাঁড়িয়ে আছে। কিন্তু, ও এখানে কিভাবে? ও একটু একটু করে আমার দিকে এগিয়ে আসছে। আর আমি শুধু চেয়ে চেয়ে দেখছি। আমি জানি না এই মূহর্ত্বে অভিকের ঠিক কেমন ফিল হচ্ছে আহানকে স্ব-শরীর উপস্থিত দেখে!

আহান আমার সামনে এসে দাঁড়াতেই আমিও ওকে দেখে উঠে দাড়ালাম। ও কি যেন দেখছে আমার মুখশ্রীতে? আমার হাতে টান অনুভব করলাম পিছু তাকাতেই দেখলাম অভিক আমার দিকে করুন দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে। আমি ওর থেকে চোখ ফিরিয়ে আহানের দিকে তাকালাম ও কথা বলে উঠলো,

-কেমন আছো হিয়া পাখি?

-ভা’ভালো। আপনি কেমন আছেন?

-আমাকে আপনি করে বলছো কেন? তুমি কি ভয় পাচ্ছো? এখন আর ভয় পাওয়ার কিছু নেই আমি চলে এসেছি তোমার কাছে।

বলেই আমাকে জরিয়ে ধরতে চাইলো। কিন্তু, আমি সরে গেলাম আর এই কাজটা সম্ভবত আহানের পছন্দ হয়নি? এতে আমার কিছু যায় আসে না। ঠিক ছ’বছর পর সে কোত্থেকে এলো আমিও না জানা পর্যন্ত শান্তি পাচ্ছি না।

-তুমি না মরে গেছো? তাহলে ফিরে এলে কিভাবে? মরা মানুষ নিশ্চয়ই কখনো ফিরে আসে না?

-আমি মরে নি। মরে গিয়েছিলো আমার জমজ ভাই আয়ুশ আর তোমরা এতদিন ভুল জেনে এসেছো। আমি তোমার আহান বিশ্বাস করো। চিকিৎসার জন্য এতদিন দেশের বাইরে ছিলাম কিন্তু এখানে আসার পর তোমার খোঁজ নিয়ে জানতে পারলাম তুমি বিয়ে করছো তাও আবার এই পিচ্চু অভিককে।

বলেই ক্ষোভের দৃষ্টিতে তাকালো অভিকের দিকে।
আমি আহানকে ডাক দিলাম ও চোখ ফিরিয়ে আমার দিকে তাকালো। আমি জোরে শ্বাস নিয়ে আহানকে বললাম,

-আহান তুমি বেঁচে আছো আমি অনেক খুশি হয়েছি। কিন্তু, তুমি চলে যাও আমি চাই না তোমার জন্য আমার বিয়েতে কোনোপ্রকার সমস্যা সৃষ্টি হোক?তুমি বুঝতে পারছো আমি কি বলছি?

-এই তুমি আমাকে কি বুঝাতে চাইছো? আমি তোমাকে পাওয়ার জন্য কতকিছু করলাম আর এখন তুমি বলছো আমি তোমার বিয়েতে থাকলে সমস্যা হবে? তুমি এই আহানকে ছাড়া আর কাউকে বিয়ে করতে পারবে না। তুমি আসো আমার সাথে।

বলেই হিয়ার হাতে ধরে টেনে নিয়ে যেতে লাগলো। অভিক এসে বাঁধা দিতেই রক্তচক্ষু নিয়ে তাকালো আহান। হিয়া ওর হাত ছাড়িয়ে অভিককে জড়িয়ে ধরলো। অভিকও তার ফুলকে অনেক জোড়ে বুকে চেপে রেখেছে যেন একটু ছাড় দিলেই কেউ নিয়ে যাবে।

কেউ এসে আয়ুশ বলেই জোড়ে ডাক দিলো। আমি, অভিক এবং সেন্টারের উপস্থিত সকলে ডাক অনুসরণ করে তাকাতেই দেখতে পেলো এক মধ্যে বয়সী নারীকে। এই নারী কে আমি জানি এবং চিনতেও পেরেছি?ইনি হচ্ছেন আহানের মা।
আহান যেন ওর মা’কে এখানে দেখে মোটেও খুশি হতে পারেনি। রেগেমেগে ওর মায়ের দিকে এগিয়ে গেলো। ওর দু’জন কি যেন বলছে আমরা কেউ শুনতে পাচ্ছি না?
কিন্তু, আন্টি আহানের কথার পাত্তা না দিয়ে আমার কাছে দৌড়ে এসে বলতে লাগলেন,

-মা, তুৃমি এখান থেকে পালিয়ে যাও। ও তোমাকে শান্তিতে বাঁচতে দিবে না। ও একটা সাইকো। ও তোমার আঙ্কেলকে, তোমার আহানকে মেরে ফেলেছে। ও আহান নয় ও আহানের জমজ ভাই আয়ুশ। ও তোমার সঙ্গে মিথ্যে বলছে

কে যেন বাতাসের গতিতে এসে আন্টির গলা থেকে উনার মাথাটা মূহুর্তের মাঝে আলাদা করে ফেললো। আমি সহ উপস্থিত সকলে এই দৃশ্য দেখে চিৎকার করে উঠলাম। কিভাবে নিজের সন্তান তার মা’কে নির্মম ভাবে হত্যা পারে!

আমি অভিকের হাত শক্ত করে ধরে রেখেছি। পুরো ফ্লোর জুড়ে যেন রক্তের বন্যা বইছে। আয়ুশ তার রক্তমাখা মুখ মুছে আমার দিকে এগিয়ে এসে দাড়ালো।

অভিকের হাত থেকে আমার হাত ছাড়িয়ে নেয়ার চেষ্টা করলো কিন্তু ও সক্ষম হয়নি। তাই আমাকে বললো,

– তুমি কি চাইছো মা’র মতো অভিকের অবস্থা হোক।

এই কথাটি যথেষ্ট ছিলো আমার জন্য। আমি অভিকের হাত ছেড়ে দিলাম। আয়ুশ আমার হাত ধরে নিয়ে বসিয়ে দিলো স্টেইজের সোফায় এরপর সে নিজেও বসে পড়লো আমার সাথে। আমার কপালের ছোট চুলগুলো কানের পাশে গুঁজে দিয়ে বললো,

-আমাকে ভয় পাচ্ছো তুমি তাও কার জন্য মায়ের জন্য? তাই তো উনাকে মেরে ফেললাম। জানো না তুমি?
উনি সব কিছুতে আমার থেকেও ওই আহানকে প্রাধান্য দিতো। স্কুল, কলেজ, ইউনিভার্সিটি এমনকি যখন আমি তোমায় পছন্দ করলাম। আহানের সাথে আমার সম্পর্ক ছিলো বন্ধুত্বসূলভ। সে তোমাকে কোথায় যেন দেখে এরপর আমাকে বলে সে তোমাকে পছন্দ করে ফেলেছে। আমার থেকে সাহায্যে চাইলো তোমাকে প্রপোজ করার জন্য আমিও ওকে বলে দিলাম ঠিক এভাবে প্রপোজ করলে তুমি মানা করতে পারবে না। আমি ঠিক তখনো জানতাম না তোমাকেই আমি ভালোবেসে ফেলবো। তো একদিন গাড়িতে করে কোথাও যাবার সময় রোডে জ্যামে পড়লাম বিরক্তি নিয়ে বাইরে তাকাতেই আহানকে দেখলাম একটি মেয়ের সাথে রিকশায় বসে আছে। মেয়েটির দিকে তাকাতেই আমি যেন আমার হুশজ্ঞান সব হারিয়ে ফেললাম, কি মায়াময় আদুরে মুখ!কি সুন্দর তার হাসি!জানো সেদিন থেকে তোমাকে দেখার পর আমি যেন আমার আমিতে ছিলাম না।তোমাদের বিয়ের তারিখ ঠিক হবার আগের দিন রাতে মা’কে অনেক অনুরোধ করেছিলাম যেন এই বিয়ে না হয় তোমাকে আমি ভালোবাসি। কিন্তু মা রাজি হয়নি মায়ের একটাই কথা হিয়া আর আহান একে অপরকে ভালোবাসে সেখানে আমার এইসব কথা বলা নাকি অবান্তর!

ঠিক তখন থেকেই মাথায় জেদ চেপে গেলো। তোমাকে পাবার আশায় আমি কি করলাম জানো,
তোমাদের বিয়ের দিন বরযাত্রীর বহর টিকে ট্রাক দিয়ে এক্সিডেন্ট করিয়ে দিলাম। ব্যস ঘটনাস্থলে বাবা আর আহান মরে যায়। আর যারা ছিলো তারা ভাগ্যক্রমে বেঁচে যায়।

এর পরের দিনগুলোতে আমি তোমার সামনে আসিনি ঠিকই কিন্তু চোখে চোখে রাখতাম। একদিন মা কিভাবে যেন বুঝে যায় যে আমিই আহান আর বাবাকে মেরে ফেলেছি। এই নিয়ে তুমুল ঝগড়া হয় মায়ের সাথে। কিন্তু আমার মমতাময়ী মা কি করেছে জানো কাউকে কিছুটি জানায় নি? সে বিষয়টকে ধাপাচাপা করে রাখে। একদিন সকালে ঘুম থেকে জেগে দেখতে পেলাম আমার হাত পা খাটের সাথে বাঁধা। মা’কে বেশ কয়েকবার জোর করে ডাক দিতেই মা আসলেন।

-আমাকে এভাবে বেধে রাখার মানে কি?

-কারণ, আজ হিয়া আমেরিকা চলে যাবে। আর তুই যাতে বাঁধা দিতে না পারিস তাই এই ব্যবস্থা। ও যদি কখনো ফিরে আসে তবেই ওর সামনে যাস এর আগে না।

তোমার অপেক্ষায় আমি দু’টো বছর কাটালাম। তুমি যেদিন এলে জানো সেদিন আমি বেশ খুশি হয়েছিলাম। এরপর, থেকে তুমি যেখানে যেতে আমি সেখানে তোমার পিছু পিছু যেতাম। তোমাকে মেসেজ দেয়া, রেস্টুরেন্টে তোমাকে উক্ত্যক্ত করা ছেলে গুলোকে আমি আমার এই হাতে দিয়ে চোখ গুলো নষ্ট করে দিয়েছিলাম। তোমার দিকে বাজে নজরে তাকিয়েছিলো সাহস কত ওদের! তোমাদের ছাঁদেও আমি গিয়েছিলাম। তোমাকে মেসেজে হুমকি দেয়া এভরিথিং এমনকি বোরকা পরার জন্য।
কিন্তু, আমি একটি জায়গায় ভুল করেছি আর তা হলো এই অভিককে তোমার পাশে ঘেঁষতে দেয়া। আমি যদি জানতাম ওই হবে আমার শত্রু, আমার হিয়াকে কেঁড়ে নেয়া একমাত্র।ব্যক্তি।
তাহলে ওকে আমি জ্যন্ত মাটিতে পুঁতে ফেলতাম৷ আফসোস, কেন যে করলাম না।

আয়ুশের এই কথা শুনে আমার অন্তর আত্মা কেঁপে উঠলো। ও কি সতি অভিককে মেরে ফেলবে? ওর বিশ্বাস নেই যে তার মা’কে মারতে গিয়ে হাত কাঁপে নি তার অন্য কে মারতে একটু টুৃঁ শব্দ করবে না।

ওর কথায় আমার ধ্যান ভগ্ন হলো ঠিকই কিন্তু আমি ভিতরে ভিতরে ভয়ে শেষ হয়ে যাচ্ছিলাম।

-আমার এতসব দেখে মা বাঁধা দিতে চাইতো কিন্তু আমি এইসব গায়ে মাখি নি। এরপর, মায়ের করা একটি কাজে আমি ভীষণ ভাবে ফেঁসে গিয়েছিলাম। যার জন্য এই চারটি বছর আমি তোমার থেকে দূরে ছিলাম।

#চলবে

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here