#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব১৫
ফেব্রুয়ারি মাস জুড়েই বই মেলা।গল্পের, ভালবাসার, উপন্যাস, সাহিত্যিক বইয়ের ছড়াছড়ি। বছরে একবার হলেও ভাই বা বাবার সাথে বই মেলায় আসে স্পর্শ। পহেলা ফাল্গুন এসে গেলো কিন্তু এখনো আসা হয়নি।বাসা থেকে বেড় হতেই জেরিন মৃদু আবদার করে বলল” চলুন না রিকশায় ঘুরি।বই মেলা হচ্ছে আমি না এখনো যেতে পারি নি।যাবেন আমার সাথে?”ব্যস দুজনে হুট খোলা রিকশায় বসে পরে।রাস্তায় অনেক ছেলে মেয়ের দল নেমেছে।জেরিন এদিক ওদিক দেখতে দেখতে খেয়াল করল,স্পর্শ বাম হাতটা জেরিনের সামনে দিয়ে রিকশা ধরে আছে।কিছুটা একটা বাচ্চা পরে যাওয়ার সম্ভবনা থাকলে যেভাবে ধরে।জেরিন স্পর্শের দিকে তাকিয়ে হাসল কেবল।মেলার কাছা কাছি আসতেই ভিড়ের দেখা মিলে।কিছুটা দূরে রিকশা থামিয়ে দুজন নেমে গেলো।ভাড়া মিটিয়ে মৃদু অনুমতি চাইল স্পরে,
—-“এখানে বাজে ছেলের ও অভাব হবে না।আমি কী আপনার হাতট ধরতে পারি?”
জেরিন মুগ্ধ নয়নে চেয়ে উপর নিচ মাথা নেড়ে সম্মতি দিলো।স্পর্শ পরম যত্নে জেরিনের ডান হাতটা শক্ত করে ধরল।মেলার ভিতর প্রবেশ করতেই হুরোহুরি।অন্য সময় এলে বন্ধুদের সাথে ইচ্ছে মতো ধাক্কা খেতো।ধরে নিতো বন্ধুরা এলেই দু-একটা ধাক্কা না খেলে মজা নেই।কিন্তু আজ স্পর্শ এমন সচেতন ভাবে জেরিন কে আগলে রেখে যে কেউ স্পর্শ করা দূর, পায়ে পা ও লাগছে না।দুই একটা স্টোল পেড়িয়ে একটা উপন্যাসে হাত দিলো জেরিন।হৃদয় গহীনে উপন্যাসের নাম পড়েই ভ্রু উঁচিয়ে খুশি খুশি চোখে তাকালো জেরিন।দুই একটা পাতা উল্টে ঠোঁট টিপে হেসে দিলো।স্পর্শ তা দেখে সন্দিহান কন্ঠে বলল,
—-“বইটায় কী এমন আছে যে আপনি হাসছেন?”
জেরিন হাসি মুখেই স্পর্শ কে বইয়ের কাছে এনে বলল,
—-“থিওরি টা অনেকটা আমাদের জীবনের মতো।এক বৃষ্টি বিলাস রাতে ভাগ্য বেধে দিয়েছে দুটো মনকে।”
স্পর্শ স্তির চোখে জেরিনের এই মৃদু আনন্দ দেখে বইটা কিনে দিলো।এতেই জেরিন অনেক খুশি।দুপুরের শেষ প্রহরে এসে স্পর্শ বলল,
—-“অনেক তো ঘুরলেন এবার কিছু খাওয়া প্রয়োজন।”
জেরিন হেসে বলল,
—-“চলুন তাহলে!আচ্ছা,আপনাকে অনেক ঝামেলায় ফেলে দিলাম তাই না?”
স্পর্শ রিকশা দেখতে দেখতে প্রশ্ন করল,
—-“কী ঝামেলা? ”
—-“বাড়িতে সবাই অদ্ভুত ভাবে দেখছে আমাদের।আমার দম বন্ধ জীবনের সাথে আপনার গুরুত্বপুর্ণ সময় গুলোও দম বন্ধ করে দিচ্ছি।”
স্পর্শ রিকশা ঠিক করে ভ্রু কুঁচকে গম্ভীর চোখে তাকিয়ে বলল,
—-“তবে কী ধরে নিবো আমার সাথে কাটানো এই সময়টা আপনি দম বন্ধের খাতায় তুলেছেন?”
জেরিন অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
—-“আমি একদম সেটা বলিনি।সত্যি বলতে এর আগে এতো নিরাপদ ও মনে হয়নি নিজেকে আমার।”
স্পর্শ কয়েক সেকেন্ড তাকিয়ে বলল,
—-“উঠে বসুন।”
.
.
.
.
রেস্টুরেন্ট নির্দিষ্ট একটি টেবিলে বসে আছে স্পর্শ। ঠিক তার বরাবর বসে আছে জেরিন।গরমে কিছুটা কপালে ঘাম জমেছে।এসির বাতাসে তা মিলিয়ে যাচ্ছে।স্পর্শ দুহাত টেবিলের উপর ভাজ করে মৃদু কন্ঠে বলল,
—-“কী খাবেন?”
জেরিন এক বাক্যে উত্তর দিলো,
—-“আপনার যা ইচ্ছে।”
স্পর্শ ভ্রু কুঁচকে প্রশ্ন করল,
—-“এমনটা কেনো?”
জেরিন পাল্টা প্রশ্ন করল,
—-“আপনার ইচ্ছেতে খেতে পারবো না? ”
স্পর্শ চোখ ছোট ছোট করে তাকিয়ে মৃদু হাসল।ওয়েটার কে ডাক দিয়ে স্পেশাল ভুনা খিচুড়ি দিতে বলে।জেরিনের দিকে তাকিয়ে স্পর্শ বলল,
—-“ঠিক আছে তো?”
জেরিন ঝলঝল চোখে হেসে বলল,
—-“একদম!”
নিশ্চুপ রেস্টুরেন্টে ধিরে ধিরে লোক বাড়তে লাগে।স্পর্শ সবার দিকে তাকিয়ে দেখলো প্রায় সবাই বেলি ফুলে সজ্জিত।স্পর্শ উঠে দাঁড়িয়ে বলল,
—-“আপনি একটু বসুন, আমি আসছি।”
জেরিন প্রশ্ন করার আগেই স্পর্শ চলে গেলো।মিনিট পাচ পর কিছুটা হাপিয়ে এসে বসলো স্পর্শ। জেরিন কিছুটা ব্যস্ত এবং বিস্ময় নিয়ে বলল,
—-“আরে কোথায় থেকে এলেন হাপিয়ে?নিন পানি খান।”
স্পর্শ ডান হাতে পানি খেয়ে নিশ্বাস ফেলল।পিছন থেকে হাত এনে জেরিনের সামনে টেবিলে হাত রেখতেই অবাক হলো জেরিন।অবাক চোখে স্পর্শের হাত দেখে বলল,
—-“বেলিফুল? ”
—-“হ্যা!”
জেরিন ফুলটা হাত থেকে নিয়ে কিছুটা সুপ্ত অনুভূতি নিয়ে প্রশ্ন করল,
—-“আপনি এই জন্য বাইরে গিয়েছেন?”
স্পর্শ বেশ সচ্ছল কন্ঠে বলল,
—-“এখানে সবাই বেলিফুলে সজ্জিত তবে আপনার সুন্দর্য্যের সাথে পাল্ল দিতে পারেনি।ভাবলাম আপনাকে ও ফুলে সজ্জিত করে তাদের পাল্লা বাড়িয়ে দেই।”
জেরিন স্তম্ভিত চোখে তাকিয়ে বলল,
—-“বিশ্বাস করুন আমার জন্য ফুল আনবেন বিষয়টা অনেক বড় আমার কাছে।”
স্পর্শ মৃদু হেসে বলল,
—-“আপনার জন্য আনাই আমার ভাগ্যে লেখা এবং এটাই উচিত। ”
কথার মাঝেই খাবার এলো।দুজনে কথার মাঝেই খাওয়া শেষ করল।আশে পাশে ঘুরে সন্ধ্যায় বাসার কাছা কাছি এসে স্পর্শ শান্ত গলায় বলল,
—-“আপনার একটা কাজ আছে এখন।”
জেরিন জিজ্ঞাসু দৃষ্টি নিক্ষেপ করল।পকেট থেকে একটা কার্ড বেড় করে জেরিনের হাতে দিলো।উদ্বেগি কন্ঠে বলল,
—-“আমি হসপিটাল যাচ্ছি। আপনি বাবা কে নিয়ে এই ঠিকানায় চলে আসুন।ডাক্তারের appointment নেওয়া আছে।আপনি শুধু উনাকে নিয়ে আসুন।”
জেরিন স্তির চোখে তাকিয়ে বলল,
—-“বাবার জন্য এতো ভাবছেন?”
স্পর্শ উত্তর না দিয়ে বলল,
—-“দ্রুত নিয়ে আসুন।”
স্পর্শ হসপিটালে চলে গেলো।জেরিন কয়েক সেকেন্ড সেদিকে তাকিয়ে স্বস্তির নিশ্বাস নিলো।বাসার ভিতর এসে বাবাকে শুধু বলল,
—-“আব্বু দ্রুত রেডি হও। আমার সাথে যেতে হবে। ”
__________________________
নামকরা হসপিটালে জসীম সাহেব কে এনেছে জেরিন।বিশাল আয়োজন দেখে কিছুটা অবাক হলেন।স্পর্শের বলা কথা মেনে ছয় তলা ডাক্তার আশরাফ মেহরাবের কেবিনে চলে এলো।আশরাফ মেহরাব জেরিন কে ভালো করে দেখে বলেন,
—-“ভিতরে এসো।”
জসীম সাহেব সালাম দিয়ে চেয়ারে বসলেন।নিজের বিস্তারিত সমস্যা খুলে বলেন।আশরাফ মেহরাব বার কয়েক জেরিন কে দেখে গম্ভীর গলায় বলেন,
—-“উনি আপনার কী হয়?”
জেরিন নম্রভাবে বলে,
—-“আমার বাবা স্যার।”
আশরাফ মেহরাব কিছু টেস্ট এবং ওষুধ লিখে দিলেন।আগের মতোই বলেন,
—-“বাইরে আমার এস্যাসটেন্ট আছে, ফাইলটা তাকে দিলেই হবে।”
জেরিন সম্মতি দিলো।জসীম সাহেব কে নিয়ে কেবিন থেকে বেড় হতেই আশরাফ মেহরাব বেড়িয়ে গেলেন।জেরিন ওষুধ বুঝে নেওয়ার সময় জসীম সাহেবের চোখ গেলো আশরাফ মেহরাবের সাথে হাস্যউজ্জ্বল মুখে কথা বলা ছেলেটির উপর।স্পর্শ মৃদু হেসে বলে,
—-“বাবা তোমাকে আজ একটু প্যারা দিলাম।আমি জানি সোমবার ছাড়া তুমি প্যাসেন্ট দেখো না তবুও এই সন্ধায় কষ্ট দিলাম।”
আশরাফ মেহরাব স্পর্শের কাধে হাত রেখে হেসে বলেন,
—-“আমার নাম করা ছেলে কারো জন্য আসতে বলেছে আমাকে তো আসতেই হবে।ভালোই করেছিস স্পর্শ। ভদ্রলোকের হার্টের চিকিৎসা এখন থেকেই করা প্রয়োজন।”
স্পর্শ ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে বলল,
—-“আচ্ছা মা আর ভাইয়া কেমন আছে?”
—-“সবাই ভালো আছে। সবাই অপেক্ষায় আছে তুই বাড়ি ফিরবি কবে?আচ্ছা,মেয়েটা কে? ”
স্পর্শ কিছুটা লজ্জা মুখে হেসে বলল,
—-“পরিচিত বাবা। আর কাজ শেষ হলেই বাড়ি ফিরবো।”
আশরাফ মেহরাব ছেলের হাসির পিঠে হেসে দিলেন।শান্ত গলায় বলেন,
—-“বেশ মানলাম আমি।আচ্ছা, অফিসের কাজ শেষ করেই চলে এসেছি এখন বাড়ি ফিরবো।তুই নিজের খেয়াল রাখিস।”
—-“সাবধানে যাবে কেমন।আই মিস ইউ বাবা।”
স্পর্শ বাবাকে জড়িয়ে ধরে।আশরাফ মেহরাব ছেলের মাথায় হাত বুলিয়ে বিদায় নিলেন।এমন দৃশ্য দেখে জসীম সাহেব বিস্মিত হয়ে এস্যাসটেন্ট বাবলুকে প্রশ্ন করএন,
—-“ডাক্তার আশরাফ যার সাথে এতো সময় কথা বললেন কী হয় উনি?”
বাবলু স্পর্শ কে দেখেই হাস্য মুখে বলে,
—-“আরে উনি হলেনে স্যার এর ছোট ছেলে স্পর্শ মেহরাব।স্যার শুধু প্রতি সোমবার প্যাসেন্ট দেখেন তবে আজ স্পর্শ স্যার বলেছেন বলেই ডিরেক্ট অফিস থেকে এখানে এলেন।বাবা ছেলেদের বন্ডিং ভালো তবে, স্পর্শ স্যার সবার থেকে নাম করা।”
জসীম সাহেবের চোখে এবার কপালে।জেরিন ওষুধ আনতেই জসীম সাহেব অবাক চোখে ছোট্ট করে বলেন,
—-“এমন নামকরা স্বামী পেলি কোথায়?”
জেরিন বুঝতে না পেরে বলে,
—-“কী আব্বু?”
—-“না কিছু না।”
জেরিন জসীম সাহেব কে গাড়িতে বসতে বলে ওয়েটিং সিটে বসে থাকা স্পর্শের কাছে গেলো।ছেলেটা মৃদু ক্লান্ত লাগছে।অদ্ভুত ভাবে স্পর্শ জেরিন কে দেখে বলে,
—-“ক্লান্ত লাগছে আপনার?”
জেরিন হকচকিয়ে বলে,
—-“না তো!আপনাকে কষ্ট দিলাম তাই না?”
স্পর্শ জেরিন কে নিজের পাশে হাত ধরে বসালো।ক্লান্ত তবে শান্ত কন্ঠে বলে,
—-“আপনার জন্য এখনো কিছুই করতে পারলাম না।আচ্ছা দ্রুত বাসায় ফিরুন আর আমার জন্য গরম গরম ভাত এবং মুরগির ঝোল করুন।আমি আধ ঘন্টার মধ্যে আসছি।”
জেরিন মৃদু হেসে বলে,
—-“আদেশ করুন শুধু।”
#ভালবাসার_প্রহর
#লেখনীতে_মায়া_মনি
#পর্ব১৬
জসীম সাহেব বেশ অন্যমনস্ক হয়ে বসে আছেন রুমে।কারো সাথে তেমন কথা বলছেন না।নাজমুন বেগম উনার এমন নিরবতা দেখে কিছুটা জোর দেখিয়ে বলেন,
—-“কী হয়েছে আপনার?ডাক্তার কী খারাপ কিছু বলেছে?হাসান কে বলবো ভালো ডাক্তার দেখাতে।”
জসীম সাহেব হাসানের নামটা শুনেই চটে গেলেন।বেশ বিরক্তি নিয়েই বলেন,
—-“এই এক নাম ছাড়া কিছু জানো না তুমি?আজ যেই ডাক্তার আমাকে দেখেছেন তার থেকে ভালো ডাক্তার হতেই পারে না।আর একবার ও হাসানের নাম নিবে না বুঝলে?”
জসীম সাহেব কথাটা বলে রুম থেকে বেড়িয়ে গেলেন।খাবার টেবিলে জেরিন খাবার সাজাচ্ছে।জসীম সাহেব সেদিকে একবার তাকিয়ে শুধু জিজ্ঞেস করলেন,
—-“স্পর্শ এসেছে মা?”
জেরিন বাবার দিকে না তাকিয়েই শান্ত গলায় বলে,
—-“এখনি চলে আসবে আব্বু।”
জসীম সাহেব মাথা হেলিয়ে বসার ঘরে গেলেন।দরজায় বেল হতেই জেরিন কিছুটা ব্যস্ত পায়ে দরজা খুলে দিলো।অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবে নাজমুল ইসলাম দাঁড়িয়ে আছে।জেরিনকে দেখেই দুর্লভ হাসি দিয়ে শুধালেন,
—-“কেমন আছো?”
জেরিন মৃদু হেসে বলে,
—-“ভালো মামা, তুমি?”
নাজমুল মুখটা গম্ভীর করে নিলো।মাত্র হেসে কথা বলা মানুষটা গম্ভীর মুখ করায় কপাল কুঁচকে এলো জেরিনের।নাজমুল ভিতরে পা রেখে বলেন,
—-“তুমি আমাকে না জানিয়েই বিয়ে করে নিয়েছো আশা করিনি।শাওনের কাছ থেকে আমাকে জানতে হলো সেটা?”
জেরিন মাথা নিচু করে নিলো।বিষণ্ণ মনে বলে,
—-“পুরোটাই ছিল অপ্রস্তুত কাহিনী।”
নাজমুল ফিক করে হেসে বলেন,
—-“শাওন আমাকে সব বলেছে।ব্যস্ততা বেশি ছিল তাই যোগাযোগ করতে পারিনি।কাল ডুবাই থেকে এসেছি।তা সে কোথায়?”
জেরিন হেসে বলে,
—-“বাইরে আছে মামা।”
নাজমুল কে শরবত দিয়ে দাঁড়ালে আবার বেল বেজে উঠে।জেরিন সচেতন পায়ে দরজা খুলে দিতেই স্পর্শ ক্লান্ত তবে শান্ত কন্ঠে বলে,
—-“একটু বেশি লেট করে ফেললাম আজ।”
জেরিন হাসার চেষ্টা করে বলে,
—-“সমস্যা নেই। ”
স্পর্শ ক্লান্ত মুখে হেসে জুতো খুলে ভিতরে প্রবেশ করে।সোফা থেকেই স্পর্শ কে দেখে নাজমুল এগিয়ে এলো।নাজমুল কিছু বলার আগেই জেরিন বলে,
—-“মামা উনি স্পর্শ। ”
স্পর্শ নাজমুলের দিকে হাত বাড়িয়ে সালাম দিয়ে বলে,
—-“আপনার কথা অনেক শুনেছি।”
নাজমুল হেসে বলে,
—-“ধন্যবাদ, মেয়েটাকে বাচানোর জন্য।”
স্পর্শ জেরিনের দিকে তাকালে সে লজ্জিত মুখে সেখান থেকে চলে যায়।স্পর্শ মাথা নুইয়ে মৃদু হেসে বলে,
—-“ভাগ্য চেয়েছে বলেই এমন হয়েছে।আচ্ছা,আমি ফ্রেশ হয়ে আসছি।”
নাজমুল স্পর্শের কাধে হাত ছুঁয়ে বলেন,
—-“যাও পরে কথা হবে।”
.
.
.
রুমের আলো বন্ধ। দক্ষিণের জানালা দিয়ে বয়ে আসছে শিতল হাওয়া।বিছানায় পা ভাজ করে বসে আছে জেরিন।স্পর্শ কপালে আড়া আড়ি দিয়ে বাম হাত রেখে আছে।জেরিন বাইরে তাকিয়ে অন্ধকার তারাময় আকাশ দেখছে।হঠাৎ কারো গরম নিশ্বাস ঘাড়ে অনুভব হতেই কেপে উঠে।স্পর্শ মৃদু কন্ঠে বলে,
—-“তারা দেখছেন?”
জেরিন কম্পিত কন্ঠে বলে,
—-“ঘুম আসছে না।”
স্পর্শ হাল্কা হেসে বলে,
—-“আপনি ভালো রান্না করতে জানেন।আমার বেশ পছন্দ হয়েছে।”
জেরিন মৃদু উত্তেজনা নিয়ে ঘাড় ফেরাতেই স্পর্শের গালে ঠোঁট ছুঁয়ে যায়।দুজনেই বেশ স্তব্ধ!আকস্মিক কান্ডে জেরিন বেশ লজ্জিত হয়েছে।দ্রুত চোখ নামিয়ে অন্যদিক ফিরে বলে,
—-“দুঃক্ষিত আমি!”
স্পর্শ মোহিত কন্ঠে বলে,
—-“ঠিক আছে!”
দুজনের মাঝে আরো কিছুটা নিরবতা অতিক্রম হলো।স্পর্শ গলা ঝেরে অস্থিরতা চেপে বলে,
—-“আসুন আপনাকে ঘুম পারিয়ে দিচ্ছি।”
জেরিন কিছুটা নিচুস্বরে বলে,
—-“কীভাবে?”
স্পর্শ কথা ছাড়াই জেরিনের মাথাটা নিজের কোলে নিলো।বাম হাত মাথায় বুলাতে বুলাতে শিতল কন্ঠে বলে,
—-“চোখটা বন্ধ করুন, ঘুম চলে আসবে।”
_______________________________
সকাল থেকে নাজমুন বেগম বেশ চেঁচিয়ে যাচ্ছেন।বিশেষ করে জেরিনকে বকে যাচ্ছেন।হাসানের পরিবার আজ দাওয়াতে আসবে এবাড়িতে।জেরিনকে অন্য ছেলের সাথে দেখলে মান-সম্মান কিছুই থাকবে না।জসীম সাহেব ধমকেও থামাতে পারছেন না তাকে।রান্নাঘরে নাস্তা বানাতে বানাতে চেঁচিয়ে বলছেন,
—-“সব ঝামেলা আমার কপালে।কোথায় থেকে একটা ছেলে এনে স্বামী দাবি করছে।আসলেও কী চাল চুলো আছে?লজ্জায় আমার মাথা কাটা যাচ্ছে।আশে পাশের সবাই জিজ্ঞেস করছে এই ছেলেটা কে নতুন?লজ্জায় তো কথাই বলতে পারছি না।কী চায় কী ছেলেটা?অন্যের বউ নিয়ে রাত কাটাচ্ছে। জাত ধর্ম আছে নাকি?”
কথা গুলো বেশ শুনতে পাচ্ছে রুমে বসেই স্পর্শ। জেরিন মাথা নিচু করে চোখ থেকে পানি ফেলছে।একটা সময় নাজমুন বেগম থেমে গেলেন।স্পর্শ ছোট্ট নিশ্বাস ফেলে জেরিন কে এক হাতে জড়িয়ে ধরে বলে,
—-“বেহুদা কথায় কান দিতে নেই।আপনাকে শক্ত হতে হবে।চোখের পানিটা মুছুন।”
জেরিন স্তম্ভিত চোখে স্পর্শের দিকে চেয়ে বলে,
—-“আমার জন্য অনেক কথা শুনতে হচ্ছে আপনাকে।কত বড় পরিবারের ছেলে আপনি।আমি আপনার সব মান-সম্মান নষ্ট করে দিচ্ছি।”
স্পর্শ জেরিনকে মৃদু ধমক দিয়ে বলে,
—-“একদম বাজে কথা বলবেন না।না চাইতেও আমাদের মাঝে সম্পর্ক হয়েছে।আমাদের দায়িত্ব সেটা পালন করা।”
.
.
.
.
বাড়ি ভর্তি লোকজন।হাসানের ভাই বোন ভাবিরা বসার ঘরে কথা বলছে।নাজমুন বেগম হেসে হেসে সবাইকে আপ্যায়ন করছেন।জসীম সাহেব বেশ গম্ভীর মুখে বসে আছে সোফায়।পাশেই দাড়িয়ে আছে নাজমুল ইসলাম।লতিফ সাহেবের স্ত্রী কাজের মেয়ের সাথে খাবার সাজাতে ব্যস্ত।কথার মাঝে হাসানের মেঝো ভাই মাসুদ ফোড়ন কেটে বলে,
—-“কই মহারানী? আমার ভাইয়ের সাথে এতো ঝামেলা করে কোন হিরো পাইছে?”
কথাটা শুনেই নাজমুল বেশ রেগে গেলো।বেশ উত্তেজিত গলায় বলে,
—-“আগে ভাষার সঠিক ব্যবহার করতে জানুন।জেরিন তার রুমেই আছে এবং সাথে স্বামী ও আছে।”
মাসুদের বউ বাকা হাসি দিয়ে বলে,
—-“আমার দেবর তো এখানেই তাহলে আবার কোন স্বামী?এক মেয়েরে কয়বার বিয়ে দিবেন?”
নাজমুল নাক লাল করে কিছু বলার প্রস্তুতি নিতেই জসীম সাহেব শক্ত গলায় বলেন,
—-“মেয়ে আমার আমি বুঝবো।দাওয়াত পেয়ে খেতে এসছেন ভালো কথা।খেয়ে চলে যাবেন।”
জসীম সাহেবের কথায় নাজমুন বেগম বলেন,
—-“ভুল তো কিছু বলেনি।হাসানের মতো ছেলে রেখে কোন ছেলে এনেছে।”
লতিফ সাহেবের স্ত্রী রান্নাঘর থেকেই হাসি মুখে উত্তর দিলেন,
—-“স্পর্শ দেখতে যেমন, কথায় ও মাশাল্লাহ। ”
সেলিনার কথায় নাজমুন বেগম কেশে উঠেন।হাসান পাশ থেকে মুখ বাকিয়ে বলে,
—-“দেখলাম তো কজাল মার্কা ছেলে।”
নাজমুল হাল্কা হেসে বলে,
—-“এটা ঠিক বলেছো।স্পর্শের কথায় এবং চলা ফেরায় তীরের মতো চুম্বন আছে।”
চলবে
He who marries a real beauty is seeking trouble. Accra proverb Ghana