#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ২০
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)
স্রুতি ফোনের ম্যাসেজ চেক করে দেখলো ও ব্যাংকের চাকরির জন্য সিলেক্টেড। এরুপ একটা এসএসএস এসেছে। দেখেই ওর মনটা খুশিতে ভরে ওঠে। জান্নাতকে ডেকেই বলল, ‘আমি সিলেক্টেড হয়ে গিয়েছি। সামনের সপ্তাহেই জয়েন করছি।’
জান্নাত শোনা মাত্র ফোন ছেড়ে স্রুতির দিকে তাকালো। তারপর হাসি দিয়ে বলল, ‘গ্রেট আপু। এখন তাহলে তুমি এ বাড়িতেই থাকছো।’
‘হুম, নানু তো থাকতে বলেছে।’
‘তাহলে তো আর কোনো সমস্যা থাকার কথা না।’
‘এখন শুধু আহসান আমাকে পছন্দ করলেই হয়।’
স্রুতি কথাটা শেষ করতেই দরজায় ঠকঠক শব্দ হলো। বাড়ির কাজের লোক বাহির থেকে গলা ছেড়ে বললেন,
‘আপামণি, আপনাগো বড় সাহেবা ডাকছে।’
জান্নাত ভেতর থেকে বলল, ‘আচ্ছা, মুন্নু চাচা তুমি যাও আমরা আসছি।’
‘জ্বি আপামণি।’ বলে চলে গেল মুন্নু।
স্রুতি মুখশ্রী বিকৃত করে জিজ্ঞেস করল,’নানু হঠাৎ কেন ডাকলো রে জান্নাত?’
‘জানি না। চলো, গিয়ে দেখা যাবে।’
‘হুম চল।’
ড্রইং রুমে সবাই একসাথে সোফায় বসে আছে। মুনতাহার আসার অপেক্ষা করছে। মুনতাহা আসামাত্র সবার উদ্দেশ্যে বলে ওঠে,
‘সবাই এসেছো তো?’
অপা উত্তর দিল, ‘না মা। আহসান এখনো আসেনি।’
মুনতাহা ক্ষীণ গলায় বলল, ‘যাকে নিয়ে কথা সেই আসেনি? মুন্নু তুমি আরও একবার যাও। গিয়ে দেখ কি করছে আহসান।’
‘এইতো এসে পড়েছি দাদিয়া।’ আহসান সিড়ি বেয়ে নামতে নামতে বলল।
সাথে সাথে রঞ্জিত মুনতাহার উদ্দেশ্যে জিজ্ঞেস করল, ‘আহসানকে নিয়ে কি এমন কথা বলবে মা? সবাইকে জরুরি তলব দেওয়ার কারণ কি?’
মুনতাহা কর্কশ শব্দে বললেন, ‘আমি বলছি সবাইকে। এতো উত্তেজিত হওয়ার দরকার নেই।’
রঞ্জিত চুপ হয়ে গেল। মুনতাহা আবারও বলল, ‘তো যে জন্যে ডাকা। তবে আমি আগে থেকে বলে রাখি। আমার কথা শেষ না হওয়া অবধি কেউ একটা রা শব্দও করবে না বলে দিলাম।’
সবাই মাথা নাড়িয়ে সম্মতি জানালো। মুনতাহা সোফায় বসতে বসতে বললেন, ‘তোমরা সকলে চেয়েছিলে আহসান আর স্রুতির বিয়ে হোক। তবে আহসান না চাওয়াতে সেটা আর হয়ে ওঠা সম্ভব হয়নি। তাই বলে যে আহসান বা স্রুতির বিয়ে হবে না তা কিন্তু নয়।’
কথাটা শুনে সকলের মুখে হাসি ফুটে ওঠে। বিশেষ করে স্রুতির। ও ভেবেছে ওর সাথে আহসানের বিয়ের কথা বলতেই ডেকেছে সবাইকে। সকলে মনে মনে ভাবছে আহসান হয়তো মেনে নিয়েছে স্রুতিকে। কিন্তু সকলের ভাবনা পাল্টে দিয়ে মুনতাহা আরও একবার বলে ওঠে,
‘আমি আহসান আর স্রুতির বিয়ের কথা বলিনি। তাই খুশি হয়ে লাভ নেই। আমার কথার মানে,ওদের দুজনের বিয়ে না হলেও অন্য কারো সাথে তো হবেই। অর্থাৎ আহসান অন্য একটি মেয়েকে পছন্দ করে। তাকেই বিয়ে করতে চায়।’
কথাটা শুনে সকলের মুখের রঙ বদলে গেল। বিশেষ করে স্রুতির তো মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ার উপক্রম। স্রুতি ভয় ভয় চোখে মুনতাহার দিকে চেয়ে পরে আহসানের দিকে তাকালো। স্রুতি দেখলো আহসান মিটিমিটি হাসছে।
‘মা আহসান কাকে পছন্দ করে?’ রঞ্জিত জিজ্ঞেস করল।
‘মেয়েটির নাম রিমি। খুব সুন্দর দেখতে। আর আমি যে আজ আহসানের সাথে বেড়িয়েছিলাম হাসপাতালে যাওয়ার কথা বলে,সেটা মিথ্যে ছিল।’
রঞ্জিত বলল, ‘সেটা জানি তবে মিথ্যে কেন বলেছো তাতো এখনো বললে না!’
‘বলছি। আমি রিমিকে নিজের চোখে দেখতে চেয়েছিলাম। তাই আহসানকে বলি মেয়েটির বাসায় আমাকে নিয়ে যাওয়ার জন্য। কাউকে আগে থেকে জানাতে চাইনি বলে মিথ্যে বলি।’
‘তো মা মেয়েটিকে কি আপনার পছন্দ হয়েছে?’ অপা জিজ্ঞেস করল।
‘হুম খুব। প্রথমে ভেবেছিলাম পছন্দ না হলে আহসানকে মানা করে দেব ওই মেয়ের সাথে কথা বলতে। তাই আহসানকে বলি আমাকে তাদের বাসায় নিয়ে যাওয়ার জন্য। রিমিকে দেখে বুঝেছি আহসান যা বর্ণনা দিয়েছিল, কমই দিয়েছিল। মেয়েটি সত্যিই খুব সুন্দরী।’
‘কিন্ত দাদিয়া, মেয়েটির ফ্যামিলি কেমন দেখেছো কি?’ জান্নাত জিজ্ঞেস করল।
‘সেটা দেখে কি হবে? মেয়েটি সুন্দর,শিক্ষিত। এসব হলেই হলো। এর থেকে বেশি কিছু লাগবে না আমার। আর তুই বড়দের কথার মাঝে নাক কেন গলিয়েছিস?’ মুনতাহা শেষের কথাটা বেশ ধমকের সুরে বলায় জান্নাত চুপ হয়ে গেল।
‘জান্নাতকে চুপ করাচ্ছো কেন মা? ওতো ঠিকই বলেছে। দেখো,আমরা যেমন ফ্যামিলি থেকে বিলং করি। আমাদের বাচ্চাদের সম্পর্ক তেমন ফ্যামিলির সাথে করাই মার্জনীয়।’
‘তোর বউ কেমন ফ্যামিল থেকে এসেছে রঞ্জিত?’
রঞ্জিত কি বলবে ভেবে পাচ্ছে না। তা দেখে মুনতাহা আবার জিজ্ঞেস করল, ‘কিরে কিছু বলছিস না কেন? বল অপা কোন ফ্যামিলির মেয়ে? অপা ওতো সাধারণ পরিবারেরই মেয়ে। তুই জেদ করে তোর বাবার বিরুদ্ধে গিয়ে অপাকেই বিয়ে করেছিলি। বলেছিলি ভালবাসার মানুষ টা গুরুত্বপূর্ণ। তার কি আছে না আছে বা ফ্যামিলি স্ট্যাটাস নয়। এখন ছেলের বেলায় উল্টো সুর ধরছিস কেন?’
‘মা তুমি যা করবে তাই হবে। তবে একটা কথা বলে রাখি, অপা তো ওর কাজ কর্ম দ্বারা তোমাদের মন জয় করে নিয়েছিল। ফলে সবাই ওকে মেনে নিতে বাধ্য হয়েছে। সেভাবে যদি ওই মেয়েটাও পারে,তাহলে আমার কোনো সমস্যা নেই।’
‘সুন্দর একটা কথা বলেছিস৷ আমিও একমত হলাম তোর সাথে। তবে রিমি যদি ওর কাজ কর্ম দ্বারা তোদের মন জয় করতে পারে,তাহলে কিন্তু তুই কখনো কাউকে ছোট করে দেখবি না।’
‘মা আমি কাউকে ছোট করছি না। ঠিক আছে বিয়ের আয়োজন করো। তারিখ ফেলো।’ রঞ্জিত নারাজ হয়ে কথাটি বললেন।
‘সামনের শুক্রবারই বিয়ে। সব কিছুর বন্দবস্ত কর। সব কিছুর দায়িত্ব তোর বুঝলি।’ মুনতাহা রঞ্জিতের উদ্দেশ্যে বললেন কথাটা।
রঞ্জিত মুনতাহার কথায় সম্মতি জানিয়ে নিজের রুমে চলে যায়।
মুনতাহা সকলের উদ্দেশ্যে বলে,’বাকিদের কোনো সমস্যা আছে?’
কেউই দ্বিমত জানালো না। তবে কেউ মন থেকে মেনেও নিল না। স্রুতি অনেক কষ্টে নিজের মুখের হাসি বজায় রেখেছে। তবে ভেতরে ভেতরে দম বন্ধ লাগছে তার। চোখের পানি অনেক চেষ্টায় আটকে রেখেছে সে। অপেক্ষা করছে কখন ছাড়বে।
আহসান রিমিদের বাসা থেকে আসা অবধি রিমির ফোনে কল দিয়ে যাচ্ছে তবে বন্ধ পাচ্ছে। বিষয় টা খুব বিরক্তিকর লাগলো আহসানের কাছে। প্রায় ঘন্টা খানেক পর আবারও কল দিল। এবার রিং হতে দেখে স্বস্তি পেল আহসান। সাথে রাগও হলো। বিরক্তির ছাপটা স্পষ্ট ফুটিয়ে ফোন কানে ধরলো আহসান। ধরা মাত্র বলে ওঠে,
‘ফোন বন্ধ কেন হুম?’
ওপাশে নিশ্চুপ।
আহসান আবারও বলল,’আমি কতগুলো কল দিলাম। ফোনে কি হয়েছিল?’
একই অবস্থা। নিশ্চুপ।
আহসান এবার বেশ কঠোর হয়ে বলল, ‘কি সমস্যা? আমি জানি আপনি আমার কথা শুনছেন। সো আন্সার মি ডেম ইট।’
রিমি এবার মুখ খুলল, ‘ধমকা ধামকি কিসের হুম? আমার রোল আপনি প্লে করছেন কেন?’
আহসানের টনক নড়ে রিমির কথায়। ও শান্ত গলায় বলল, ‘আপনি কোথায় খুশি হবেন তা না রাগ দেখাচ্ছেন?’
‘আপনি এতো বড় মিথ্যেটা কেন বলেছেন আমার সাথে আগে তাই বলুন?’………
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ২১
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না কেউ)
‘কি মিথ্যে বলেছি শুনি?’
আহসান এমন ভাবে বলল যে সে কিছু জানেই না। এদিকে রিমির গাঁ জ্বলে যাচ্ছে আহসানের কথা শুনে।
রিমি দাঁত কিরমির করে বলল, ‘আপনি আমাকে মিথ্যে কথা বলেননি তাহলে?’
‘নাতো।’
‘এত বড় মিথ্যুক লোক আমি জীবনেও দেখিনি। আপনি গতকাল আমাকে বলেননি আপনি স্রুতিকে বিয়ে করছেন?’
‘ও আচ্ছা,আচ্ছা।’
‘মনে পড়েছে তাহলে?’
‘আসলে আমি বুঝতে পারিনি আপনি মন থেকে চান স্রুতি আর আমার বিয়ে হোক।’
‘আরেহ! এটা আমি কখন বললাম?’ রিমি যেন আকাশ থেকে পড়ল।
‘আপনি যেভাবে বলছেন তাতে তো তাই মনে হচ্ছে। আচ্ছা আমি দাদিয়াকে গিয়ে বলি আমি রিমিকে নয়,স্রুতিকে বিয়ে করতে চাই। কারণ রিমি সেটাই চায়।’
‘কে বলেছে? আমি তো বলিনি আমি এটা চাই।’
‘তো কি চান?’
‘আমি,,,,,।’
‘হুম আপনি? থেমে গেলেন কেন?’
‘আমি কি চাইবো? আজব!’
‘আপনি স্রুতির সাথে আমার বিয়ে হোক সেটা চান না। আপনার সাথে হোক সেটা কি চান?’
‘না সেটাও চাইনা।’ রিমি না চাইতেও না বলে দিল।
‘সত্যি?’
‘হুম সত্যি।’
‘তাহলে সবার সামনে বললেন না কেন? তখনই মানা করে দিতেন।’
‘আমি কিছু বুঝিনি তাই কিছু বলতেও পারিনি।’
‘এখন তো বুঝেছেন,যান এখন গিয়ে বলুন।’
‘আচ্ছা বলব পরে।’
‘ওকে বলে দিয়েন দয়া করে। আমিও গিয়ে বলি স্রুতি আর আমার বিয়ের কথাটা। ফোন রাখলাম।’
রিমি নিশ্চুপ হয়ে কাঁদছে। শব্দ বিহীন সেই কান্না আহসানের কান না শুনলেও মন ঠিক শুনে ফেলেছে। আহসান শান্ত গলায় বলল,
‘চোখের পানি খুব সস্তা তাইনা? কান্না থামান।’
রিমি অবাক হয়ে গেল আহসানের কথায়। রিমি মনে মনে ভাবছে আহসান কিভাবে বুঝলো! ওতো সামান্য টু শব্দও করেনি তাহলে কিভাবে?
রিমি বলল,’মানে? কান্না করছি নাতো আমি।’
‘আপনার লাল হয়ে যাওয়া চোখ মুখ ভেসে উঠেছে আমার চোখের সামনে। দেখতে ভালোই লাগছে। তবে চোখের পানি গুলো খুব জ্বালাচ্ছে আমায়।’
রিমির এবার আরও কান্না পেল। এবার উচ্চস্বরে কেঁদে দিল।
তা শুনে আহসান বলে ওঠে, ইশ কতটা বাচ্চা প্রকৃতির মেয়ে আপনি!
কান্না থামান এখনি। নইলে এখনই আপনার বাসায় চলে আসলাম।’
রিমি ফুঁপিয়ে ফুঁপিয়ে কেঁদে বলল,’আপনি খুব খারাপ। অনেক খারাপ। আপনি আমাকে কষ্ট দিতে খুব ভালবাসেন তাইনা?’
আহসান স্মিত হেসে বলল,
‘একটু খারাপ যে হতে হয়। দোষ কার বলুন? ভালবাসেন কিন্তু মুখে বলতে কষ্ট হচ্ছে আপনার। তাই একটা ট্রিক বের করলাম।’
‘এটা কোন ধরনের ট্রিক হুম?’
‘মাইন্ডব্লোইং একটা ট্রিক। ভেবেছিলাম অনেক ঘুরাবো। কিন্তু তিয়াসা যেভাবে বলল আপনি কান্না করে শেষ, তাই আর পারলাম না।’
‘কিহ! তিয়াসা বলেছে আপনাকে? তার মানে ও সব জানে?’
‘হুম। ওতো আমার ডাকপিয়ন পিজন।’
‘পিজন না ছাই। চামচা বললে ঠিক হবে। ঘুম থেকে উঠুক একবার শুধু।’
‘কিছু বলবেন না ওকে। তাহলে আপনার খবর আছে।’
‘আমার খবর আছে? কি করবেন শুনি আমাকে?’
‘তিয়াসাকে মুক্তি দেব তার জল্লাদ বোনটা থেকে। বিয়ে করে নিয়ে আসবো। তিয়াসা জাস্ট চিল করবে।’
রিমির ঠোঁটের কোণে হাসি ফুটে উঠলো কথাটি শুনে। পরক্ষণেই আহসান বলল, এইতো এখন ঠিক আছে। হাসবেন সবসময়। মন ভালো থাকবে। আর আপনি হাসলে আমারও ভালো লাগবে।’
রিমি এবার অবাকের শেষ চূড়ায় পৌঁছে গেল। রিমি আশ্চর্যান্বিত হয়ে বলল, ‘আপনি কি ম্যাজিক জানেন? সত্যি করে বলুন তো?’
‘ম্যাজিক জানি কিনা জানি না। তবে প্রিয়তমার মন পড়তে পারি। এখন আবার প্রশ্ন করবেন না কিভাবে?’
‘প্রশ্ন তো করতেই হয় কিভাবে?’
‘সেটা জানি না। তবে এতটুকু বলতে পারি,আমার মাইন্ড আপনার মাইন্ড রিড করতে পারে। তাই হয়তো বুঝে যাই।’
‘আপনি এত কথা কোথায় পান বলুন তো?’
‘জানা নেই সেটা।’
‘বলুন না।’
‘সত্যি জানা নেই। আচ্ছা আপনি কথাটার আন্সার দিলেন না এখনও।’
‘কোন কথাটা?’
‘ওই যে ভালবাসেন তবে মুখে বলতে পারেন না। এটা বলার পর এই সম্মন্ধে কোনো কিছু বললেন না।’
‘আগে বলুন কাকে ভালবাসবো?’
‘তাহলে ভালো বাসেন না। তাইতো?’
রিমি এবার রাগান্বিত কন্ঠে বলে ওঠে,’সবই তো বুঝে ফেলেন না দেখেই। তাহলে এত ইঙ্গিত দেওয়ার পরও এটা কেন বুঝতেছেন না? কেন মুখে বলে দিতে হবে?’
‘তাহলে আমি কি বুঝবো হ্যাঁ বলেছেন?’
রিমি আড়ষ্ট গলায় বলল,
‘হুম।’
‘হুম মানে?’
‘আরে বাবা আই লাভ ইউ।’
‘বাবাকে ভালবাসা ভালো। তবে আমাকে কেন বলছেন?’
‘কেমন লোক আপনি! আপনাকে বলেছি আই লাভ ইউ।’
‘ভালো করে বলুন।’
‘পারবো না। বলেছি আর বলবো না।’
‘ওকে তাহলে স্রুতির থেকে গিয়ে শুনি।’
‘নাহ! আহসান আই লাভ ইউ। প্লিজ কোনো স্রুতির কাছে যাবেন না।’
আহসান ঠোঁটে বিশ্বজয়ের হাসি ফুটিয়ে বলল, আই লাভ ইউ ঠু। আমি কি সাইকো নাকি? এত সুন্দর একটা চাঁদ রেখে অন্য কোথাও কিভাবে যেতে পারি? নেভার এভার।’
‘তাহলে বারবার স্রুতির নাম কেন নিচ্ছেন? সেকি সত্যি আছে,নাকি সাজানো?’
‘সত্যি আছে। ইভেন আমাদের বাড়িতেই আছে।’
‘কিহ! তার সাথে কথা বলেন আপনি?’
‘কাজিন আমার। কথা কেন বলবো না?’
‘ও,হ্যাঁ তাও ঠিক। তবে আমার জেলাস লাগছে কেন জানি।’
‘জেলাস হয় বলেই তো আমার বিয়ের কথা শুনে কাল সারারাত ঘুমাননি। কান্না করে নদী বানিয়ে ফেলেছিলেন। শুনলাম স্যাড গানও গেয়েছেন।’
‘ইশ এই বোন নামের শত্রুটা সব বলে দিয়েছে দেখছি আপনাকে।’
‘এমনি এমনি বলেনি। অনেক আবদার করল আমার কাছে। তিয়াসা বাচ্চা মেয়ে সত্যি। এমন সব আবদার করেছে না।’
‘কি আবদার করল? দামী কিছু চেয়েছে নিশ্চয়ই!’
‘হুম অনেক দামী কিছু চেয়েছে। সে চেয়েছে আমার ছোট বোনকে আমি যেভাবে ভালবাসি,তাকেও যেন সেভাবেই ভালবাসি। আপনার হাত থেকে বাঁচাই। সবসময় যেন ওর সাপোর্ট করি। এসবই।’
‘আসলে ওর ভাইয়ের খুব শখ। আমাকে বলে আমি ছেলে হলাম না কেন! তখন কি বলি আমি?’
‘এই না। আপনি ছেলে হতে যাবেন কেন? আপনি যা আছেন ভালো আছেন। আমি ওর ভাই হবো নাহয়। তাহলেই হলো।’
‘থ্যাঙ্কিউ সো মাচ। আপনি সবসময় এমনই থেকেন। অন্যের বিপদে সাহায্য করা মানুষগুলো সত্যি খুব কিউট। যেমন আপনি।’
‘আপনি পাশে থাকলে অবশ্যই। ইনশাআল্লাহ।’
‘রাত হয়েছে ঘুমাবেন না?’
‘না কথা বলবো।’
‘হাতে গুনে কয়দিন পর আমাদের বিয়ে। এখন আমি রাত জাগতে পারবো না। তাহলে বিয়ের দিন প্রত্নীর মতো দেখাবে। বিয়ে খেতে আসা মানুষগুলো হয় ভয় পেয়ে পালাবে,নাহয় বলবে আমাকে গাছের সাথে ঝুলিয়ে দিয়ে আসতে।’
‘হা হা,ওকে ঘুমান। আরেকটা কথা।’
‘কি?’
‘আগামীকাল আপনাকে বাড়ির সবাই দেখতে যাবে। তাই সুন্দর করে রেডি হয়ে থাকবেন। পড়ে টরে যেয়েন না যেন আমার বাপির সামনে। উনি কিন্তু খুব কড়া।’
‘তাই! এটা তো খুব টেনশনের একটা কারণ দেখছি। আচ্ছা আমি তাহলে একটু প্রাক্টিস করি তাহলে। গুড নাইট।’
‘কোনো দরকার নেই। চোখে কালি পড়ে যাবে। দেখবেন কাল ভালো দেখাবে না।’
‘ও হ্যাঁ,তাহলে ঘুমাই আমি। যেভাবেই হোক চোখে কালি পড়তে দেওয়া যাবে না। বায় দেখা হচ্ছে কাল।’
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ২২
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
জান্নাত কানের দুল পড়তে পড়তে তার রুম থেকে বের হচ্ছিলো কি সেই সময় জিসানও জান্নাতের রুমের পাশ দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিলো। ফলে টক্কর খেল দুজন দুজনার সাথে। জান্নাত মুখ থুবড়ে পড়বে কি জিসান জান্নাতের হাত ধরে ফেলল। জান্নাত বিরক্তিকর ফেস করে বলল,
‘আমি যখনই কোনো কাজ করতে যাই,তুমি এসে বিগড়ে দাও।’
‘এটা আমার বলার কথা। ভালো কাজে পা বাড়াচ্ছিলাম,আর তুই দিলি বাঁধা।’
জান্নাত গরম চোখে বলল,
‘কিহ! আমি কি করেছি? তুমি আমার রুমের পাশ দিয়ে যাচ্ছিলে,আমি না ওকে?’
‘তার মানে তুই ইচ্ছে করে প্লান বানিয়ে ধাক্কা খেলি?’
‘আমি এটা কখন বললাম জিসান ভাইয়া?’
‘জানি আমি দেখতে হ্যান্ডসাম। তাই বলে বড় ভাইয়ের সাথে ধাক্কা খাবি! শেম শেম।’
‘তুমি কিন্তু বেশি বেশি বলছো ভাইয়া।’
‘কমই বলেছি। এই তুই কি একটা কানের দুল পড়েই যাবি নাকি? এটা নিউ কোনো ফ্যাশন নাকি!’
জান্নাত কানে হাত বুলিয়ে বলল, ‘একটা ইয়ার রিং পড়েছিলাম। আরেকটা পড়তে পারছিলাম না বলে নিচে যাচ্ছিলাম কারো হেল্প নেওয়ার জন্য।’
‘একটা কাজ কর। এভাবেই চল। অ্যাটেনশন পাবি।’
জান্নাত দাঁত কিরমির করে বলল,
‘দেখো তোমার সাথে এখন ঝগড়া করার কোনো ইচ্ছে নেই আমার। নো মোর আরগুমেন্ট।’
‘আমারও নেই।’ বলে জিসান চলে যাচ্ছিলো। কিন্তু জান্নাতের ডাকে থেমে গেল।
‘ভাইয়া শোনো!’
জিসান ব্যাকে গিয়ে বলল, ‘কি সমস্যা?’
‘তুমি ইয়ার রিং টা পড়িয়ে দাওনা প্লিজ।’
‘নো ওয়ে,তুই স্রুতি আপুর থেকে পড়ে নিস।’
‘কেন তুমি পড়িয়ে দিলে কি হয়?’
‘আমি পারবো না। মানে পারবো না।’
জান্নাত মন খারাপ করে বলল,
‘আচ্ছা থাক তাহলে। তুমি যাও।’
জিসান বুঝতে পারলো জান্নাত মন খারাপ করে কথাটা বলেছে। তাই জিসান না চাইতেও বলল,
‘আচ্ছা দে পড়িয়ে দিচ্ছি।’
জান্নাত খুশি হয়ে কানের দুলটা জিসানের হাতে তুলে দিল। জিসান জান্নাতকে কানের দুল পড়িয়ে দেওয়ার পর আর এক মুহুর্তও সেখানে দাঁড়িয়ে থাকলো না। চলে গেল সেখান থেকে। তা দেখে জান্নাতের রাগে মাথা ফেটে যাচ্ছে।
‘আনরোমান্টিক ছেলে কোথাকার। আমার পেছনে লাগার সুযোগ পেলে ছেড়ে কথা বলো না। আর রোমান্স করার সুযোগ দিলে পালিয়ে যাওয়ার বাহানা খোঁজো। কি যে বলি এখন আমি এই ছেলেটাকে? যাজ্ঞে,আমি এখন স্রুতি আপুর কাছে যাই। গিয়ে দেখি কান্না থামলো কি না।’
স্রুতি যখন থেকে জানতে পেরেছে রিমির কথা,তখন থেকে ওর মনের মধ্যে অশান্তির ঝড় তুফান বয়ে যাচ্ছে। এমনিতেই কদিন কান্না করে যায় যায় অবস্থা,তার উপর এত বড় একটা ঝটকা। স্রুতি যেন পুরোই ভেঙ্গে পড়েছে। চুপচাপ বসে নীরবে কান্না করা ছাড়া আর কিছু ভালো লাগছে না স্রুতির। জান্নাত এসে স্রুতির এমন অবস্থা দেখে বলে ওঠে,
‘আপু তুমি এখনো রেডি হওনি? বাড়ির ড্রেসটাই তো পড়ে আছো দেখছি!’
স্রুতি জান্নাতের দিকে এক ঝলক চেয়ে আবারও মুখ সরিয়ে নিয়ে বলল,
‘কেন রেডি হবো আমি? ভালবাসার মানুষের জন্য অন্য একটা মেয়েকে দেখতে যাব বলে?’
‘আপু এভাবে বলো না। দাদিয়া যদি জানতে পারে তুমি এখনো রেডি হওনি,তাহলে তোমাকে আর আস্ত রাখবে না।’
‘যা ইচ্ছা হয়ে যাক। আমি যাব না।’
‘আপু প্লিজ এমন করো না। প্লিজ চলো আমাদের সাথে।’
‘আমি যাব না বলেছি তো! তুই গিয়ে সকলকে বল আমি যেতে পারবো না। শরীর ভালো লাগছে না আমার।’
‘আপু তুমি তাহলে এই গানটা শোনো বসে বসে। সাজান, সাজান,সাজান মেরি। সাজান, সাজান, সাজান তেরি দুলহান সাজাউঙি। তেরি দুলজান,,,’
‘চুপ কর জান্নাত। মজা করবি না একদম। অন্যকে নিয়ে মজা করতে খুব ভালো লাগে তাইনা? নিজের সাথে হলে বুঝতি আমার কেমন লাগছে।’
‘সরি সরি আপু। আমি তো এমনি বলেছি। কিন্তু তুমি যে এত বোকা আমি তা জানতাম না।’
‘কেন?’
‘কেন আবার? যেই মেয়ে দাদিয়ার মন গলিয়ে ফেলল তার রুপ দিয়ে। সেই মেয়েকে একটাবার দেখবে না নিজের চোখে?’
‘না দেখার ইচ্ছে নেই আমার। আমি আজই বাড়ি চলে যাব ভাবছি।’
‘আসলেই তুমি বোকা। আরে বিয়ে তো এখনো হয়নি। এখনি হাল ছেড়ে দিচ্ছো কেন?’
‘আর কোনো উপায় নেইরে। আমি হেরে গিয়েছি ভালবেসে।’
‘এভাবে বললে তো হবে না আপু। আমরা আজ যাই রিমির বাড়িতে। গিয়ে একটু অপমান করবো তাদের। তাদের বোঝাবো তারা আমাদের লেভেলের না। তাহলে তারা আমাদের বাড়িতে নিজেদের মেয়েকে বিয়ে দেওয়ার স্বপ্ন ছেড়ে দেবে।’
‘তুই কি করতে চাইছিস জান্নাত?’
‘শুনলাম রিমিরা নাকি তেমন স্বচ্ছল পরিবারের না। তাই কোনো একটা খুদ ধরে ইন্সাল্ট করে দেব। হয়ে যাবে। তারপর তারা আর ভয়ে সাহস দেখাবে না বিয়ে দেওয়ার।’
‘ঠিক বলেছিস তো জান্নাত। কিন্তু নানুকে কিভাবে সামলাবি? আমাদের তো খবর হয়ে যাবে তাহলে।’
‘উফ আপু আমরা কি সেভাবে বলবো নাকি? এমন অভিনয় করবো যে কেউ কিছু বলতেই পারবে না।’
‘ঠিক আছে তাই করি নাহয়।’
‘হুম তাড়াতাড়ি রেডি হও তাহলে।’
‘ওকে।’ স্রুতি খুশি মনে একটা জর্জেট থ্রি-পিস নিয়ে ওয়াশরুমে ঢুকে গেল।
_____________________________
‘ইশ! আপু তোকে যে কি করি আমি?’
তিয়াসার কথায় রিমি ভয় পেয়ে গেল।
রিমি বলল, ‘কেন কি হয়েছে রে? খারাপ লাগছে নাকি আমাকে?
‘উহু, অনেক সুন্দর লাগছে। সামান্য সাজেই যদি এত সুন্দর লাগে,তাহলে বউ সাজলে কতটা সুন্দর লাগবে! আমি জাস্ট ভাবছি। আমি নিশ্চিত তোকে দেখে আহসান ভাইয়া মরে ভুত হয়ে তোর ঘাড়ে চেপে থাকবে।’
‘একদম আমার জামাইরে নিয়া উল্টো পালটা আজেবাজে কিছু বলবি না বলে দিলাম।’
‘বাব্বাহ এখনই জামাইয়ের বউ হয়ে গেলি? ভালো তো।’
‘কি ভালো? এইভাবে ঝুঁটি করেছিস কেন? তাও আবার দুটো!’
‘আমার এভাবেই ভালো লাগে।’
‘বাচ্চাদের মতো দেখাচ্ছে। ছেড়ে রাখ একটু বড় দেখাবে তাহলে।’
‘আমি তো বাচ্চাই। আর তোর মতো আমার ওতো লম্বা চুল নেই যে খোপা করবো। আমার এভাবেই ভালো লাগে। স্কার্টটার সাথে ঝুঁটিই ভালো লাগছে।’
‘তোকে বুঝিয়ে লাভ নেই।’
‘বোঝাতএ আসিস না আপু। তুই একটা কাজ কর। একটু হেঁটে দেখা আমাকে।’
‘কেন?’
‘কেন আবার? তারা যদি হেঁটে দেখাতে বলে?’
‘ঠিক তো। ওকে আমি হাঁটছি তুই ফিডব্যাক দিস।’
‘ওকে আপু।’ এমন সময় একটা বাচ্চা ছেলে এসে বলল,
‘তিয়াসা আপু, আন্টি তোমাকে রিমি আপুকে নিয়ে যেতে বলেছে। ওই বাড়ি থেকে সবাই চলে এসেছে।’
বলেই চলে যায় ছেলেটি।
‘ওই আপু সবাই তো চলে এসেছে।’
রিমি অবাক হয়ে বলল, ‘আহসান তো বলেছিল জানাবে আমাকে। তাহলে বলল না কেন?
‘হয়তো ভাইয়া বিজি ছিল। এখন চল। তুই চিন্তা করিস না। ওনারা যা যা করতে বলবে ভয় না পেয়ে করবি। স্পষ্ট উত্তর দিবি প্রশ্নের।’
‘হুম চেষ্টা করবো। বাকীটা আল্লাহ ভরসা।’
গতবারের মতো এবারও আহসানের পাশে রিমিকে বসানো হলো। সবাই এক ধ্যানে রিমিকেই দেখে যাচ্ছে। অপা চিন্তা করছিল, কিন্তু রিমিকে দেখার পর তার সব চিন্তা উবে গিয়ে মুখে হাসি ফুটে উঠে। আহসান রিমির দিকে তাকিয়ে ঠোঁট চেপে হাসছে। রিমিও পিটপিট করে তাকাচ্ছে। সুযোগ বের করে রিমি আহসানকে আস্তে করে বলল, ‘আপনি আমাকে জানালেন না কেন যে আপনারা এসে গেছেন?’
আহসান ফিসফিস করে বলল, ‘ওইযে দুটো মেয়ের সাথে একটা ছেলে বসে আছেনা? ও আমার কাজিন জিসান। সবসময় আমার সাথেই লেগে ছিল। তাই বলতে পারিনি।’
‘ও বুঝলাম। আচ্ছা সরি।’
‘কথা বলো না এখন। নইলে সবাই বুঝে যাবে আমরা কথা বলছি।’
‘আপনি ছেলে হয়েও এত ভয় পান?’
‘ভয়ের কথা না। ওইযে গম্ভীর মুখে বসে থাকা লোকটিকে দেখছো না? উনি আমার বাপি। বুঝতে পারলে কি ভাববে তোমাকে নিয়ে? চিন্তা করো একটু।’
‘হুম জানি যে উনি আপনার বাবা। কিন্তু উনি কি সবসময় গম্ভীর হয়ে থাকেন নাকি?’
‘প্রায় সময়ই।’ আহসান বলল।
‘আমার তো খুব ভয় লাগছে এখনই।’
‘চুপটি করে বসো। আমি তো আছি। ভয় পেও না।’
আহসানের কথায় রিমির ভয় কিছুটা কেটে গেল। ওইদিকে স্রুতি মুখে চওড়া হাসি টানলেও। মনে মনে রিমিকে যা ইচ্ছে বলে যাচ্ছে। স্রুতি পারছে না রিমির সাথে ঝগড়া করতে। স্রুতির রাগ হচ্ছে সাথে হিংসাও হচ্ছে রিমিকে নিয়ে।
#চলবে,,