তোলপাড়💓 পর্ব ৪৩+৪৪

#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৪৩
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না)

বালিশ, বিছানার চাদর এলোমেলো হয়ে মাটিতে পড়ে আছে। জান্নাত ভাবছে ওতো রুম থেকে বের হওয়ার সময় সব ঠিকঠাক ছিল। তবে এখন সব অগোছালো কিভাবে হয়ে গেল?

জান্নাতের ভাবনার মাঝে জোরে দরজা লাগানোর শব্দ কানে গিয়ে বারি খেল তার। ভয়ে চকিত আতশবাজির মতো লাফিয়ে ওঠে জান্নাত। সে আস্তে আস্তে জিসানের দিকে তাকাল। দেখলো জিসানের চোখ লাল হয়ে রক্তজমাট বাঁধার মতো হয়ে আছে। জিসান যে রেগে আছে তা জিসানের হাবভাবই বলে দিচ্ছে।
জান্নাত কিছু বলে ওঠার আগেই জিসান গিয়ে শক্ত করে জান্নাতের হাত চেপে ধরে। তারপর হাত ঘুরিয়ে জান্নাতের পিঠের সাথে ঠেকিয়ে মুখ একেবারে জান্নাতের মুখের কাছে নিয়ে গেল। সাথে সাথে জান্নাত ব্যথায় চোখ বন্ধ করে নিল। জিসান দাঁত চেপে বলল, ‘চোখ খোল। তাকা আমার দিকে।’

জান্নাত তাকাচ্ছে না। একই ভাবেই চোখ বন্ধ করে রেখেছে। তা দেখে জিসানের রাগ আরও দশগুণ বেড়ে গেল।

‘কি হলো! চোখ খুলতে বলেছি না?’

ধমক দিয়ে বলায় ফট করে চোখ মেলে ফেলল জান্নাত। চোখে পানি টলমল করছে জান্নাতের। জিসান আবারও বলল, ‘হাসাহাসি,মজা – ঠাট্টা, করতে খুব ভালো লাগে তোর!’

জান্নাত কাঁপা কন্ঠে বলে, ‘মানে?’

‘মানে বুঝিস না? ছোট বাচ্চা নাকি তুই?’

জান্নাত ব্যথাতুর কন্ঠে বলে,
‘আমার হাত ভেঙে যাবে। ব্যথা পাচ্ছি আমি।’

‘ভাঙুক, তাতে আমার কিছুই এসে যায়না। আমার প্রশ্নের উত্তর দে তুই।’

‘তুমি কি বলছো বলোতো? আমি কি উত্তর দেব?’

‘এটাই যে হাসাহাসি করতে ভালো লাগে, নাকি লাগে না?’

‘আশ্চর্য! এটা কেমন প্রশ্ন?’

‘শুধু হ্যাঁ বা না বল।’

জিসান চোখ বড় করে রেখেছে তো রেখেছেই। চোখের মণি অবধি নড়ছে না তার।

‘আমি বুঝতে পারছি না তুমি হঠাৎ এই প্রশ্ন কেন করছো? আমি কি করেছি?’

‘কি করেছিস! আবার জিজ্ঞেস করছিস? তুই পরপুরুষের সাথে হাসাহাসি করেও বলছিস, আমি কি করেছি?’

‘পরপুরুষ? তুমি কার কথা বলতে চাচ্ছো? পরপুরুষ কোথ থেকে আসলো?’

‘আমি অতশত শুনতে চাইনা। তুই শুধু বল হাসাহাসি ভালো লাগে কি না?’

জান্নাত ধীরে বলল, ‘হুম লাগে। তো?’

‘তাই? তাহলে এখন থেকে আর হাসতে পারবি না। আমি হাসা বন্ধ করার ব্যবস্থা করছি তোর।’
এতটুকু বলে জিসান জান্নাতের হাত উন্মুক্ত করে দিল। তারপর দুহাত দিয়ে জান্নাতের চুল শক্ত করে আঁকড়ে ধরে শরীরের সমস্ত রাগ নিয়ে জান্নাতের ঠোঁট কামড়ে ধরে। জান্নাত ব্যথায় ছটফট করায় জিসান জান্নাতের থেকে সরে আসলো। সজ্ঞানে ফেরে জিসান। তবে লেট করে। ততক্ষণে জান্নাতের ঠোঁট কেটে রক্ত বের হয়ে গেল। ঠোঁট চুইয়ে রক্ত গড়িয়ে পড়ছে। জান্নাত ডুকরে কেঁদে বিছানায় গিয়ে উবুড় হয়ে শুয়ে পড়ে। বিছানার সাথে মুখ গুজে বেশ শব্দ করে কাঁদছে জান্নাত।

এইদিকে জিসান বেশ অনুতপ্ত তার কাজে। কি করবে সে আসলেই বুঝতে পারছে না। বার দুই জান্নাতের দিকে হাত বাড়িয়েও হাত ফিরিয়ে আনতে হলো তাকে। কোনো এক সংকোচ বাঁধা দিচ্ছে জিসানকে। তাই শত চেষ্টা করেও জান্নাতকে ডাকতে পারলো না।

_____________________

মুখ ফুলিয়ে বারান্দায় দাঁড়িয়ে রিমি। আহসান বারবার কথা বলতে চেয়েও পারছে না। কারণ রিমি কিছু বলছেই না। বরং মুখ ঘুরিয়ে অন্যপাশে চেয়ে আছে। আহসান এবার কান ধরে ওঠবস করতে করতে বলল,

‘আমাকে মাফ করে দাও রিমি। আমি যা করেছি ভুল করেছি। কিন্তু তুমি চিন্তা করো বা ভেবে দেখো, তখন আমি ছোট ছিলাম। এখন ওসব নিয়ে রাগ করার মানেই হয়না। তবুও আমি আমাকেই দোষ দিলাম।’

‘আমি কোনো কথা শুনবো না। তুমি যাও তোমার বেয়ানের কাছে। আমার রাগ হচ্ছে তোমাকে দেখে।’

‘আচ্ছা যাচ্ছি। সেই ভালো হবে।’

আহসান কদম ফেলবে কি রিমি বলে ওঠে, ‘দাঁড়াও, কোথায় যাওয়া হচ্ছে?’

‘তুমি না বললে বেয়ানের কাছে যেতে! তাই তার কাছেই যাচ্ছি।’

‘তো বেয়ান টা কে শুনি?’

‘কে আবার? স্রুতি।’

রিমি গিয়ে আহসানের টি-শার্টের কলারে থাবা বসালো। তারপর দাঁত কিরমির করে চোখ পাকিয়ে বলল,
‘আবার বলো তো কোথায় যাবে?’

‘কোথাও নাতো! আমি তো আমার রিমির কাছেই থাকবো। আমি আবার কোথায় যাব তাকে রেখে।’ বলে বোকা স্মাইল দিল আহসান।

‘হুম ঠিক আছে এইবার। স্রুতির নাম নেবে তো মার, ওর কথা ভাবলেই মার। অর্থাৎ মারের উপর মার।’

‘তাই নাকি? তো মারো আমাকে। দেখি কিভাবে মারো আমায়।’ আহসান রিমির দিকে এগিয়ে গেল।

‘থাক মাফ করে দিলাম। অন্য কোনদিন মারামারি হবে। আজ মাফ।’

‘উহু, আজই মারবে আমাকে।’ বলে রিমির কোমড় জড়িয়ে নিল আহসান।

‘কি করছো হুম? বলেছি তো মারবো না। তাছাড়া স্ত্রী কি স্বামীর গায়ে হাত তোলে নাকি?’

‘আমি অনুমতি দিলাম। মারো আমাকে। মনের দিক দিয়ে তো সেই কবেই মেরে ফেলেছো আমাকে। এবার প্রাকটিকালি মারো।’

নেশাক্ত চোখে আহসান রিমির গালে স্লাইড করতে লাগলো। রিমি ভয়ে ঢোক গিলছে। ইতোমধ্যে রিমি তার চোখ অস্বাভাবিকের ন্যায় বড় করে ফেলেছে। আহসান ধীরে ধীরে তার ঠোঁট জোড়া রিমির কপালে ছোঁয়াল। তারপর পর্যায়ক্রমে দু গালে, নাকের ডগায় ও থুতনিতে। রিমি আহসানের শীতল ঠোঁটের স্পর্শ পেয়ে চোখ বুজে নিল। আস্তে আস্তে আহসান রিমির ঠোঁটের কাছে মুখ নিয়ে ঠেকালো। পরক্ষণেই আহসান রিমির থেকে সরে আসলো তিয়াসার আওয়াজ শুনতে পেয়ে।

তিয়াসা উল্টো দিকে ফিরে বলল, ‘স্যরি,স্যরি,স্যরি আমি আসলে বুঝতে পারিনি। তোমরা রোমান্স করো আমি গেলাম।’

রিমি কঠিন সুরে বলল, ‘থাম, মেরে তক্তা বানিয়ে সানসেট ভেঙে তার বদলে তোকে টাঙিয়ে রাখবো দেখিস। কি বলতে এসেছিস তাই বল।’

‘ডিনার দিয়ে গেছে। তাই ডাকতে আসলাম তোকে আর ভাইয়াকে।’

আহসান বিড়বিড় করে বলল, ‘পরে আসলে কি হতো?’

রিমি চোখ গরম দিল আহসানকে। তাই চুপ করতে বাধ্য হলো আহসান।
_________________
দিন কিংবা রাত সাজেক যেন রঙ তুলিতে আঁকা ছবির মতই অপার্থিব এক মনোমুগ্ধকর দৃশ্য। সহজ-সরল আদিবাসীদের সান্নিধ্য ও জীবনযাপনের বৈচিত্র‍্যতা দেখতে দেখতেই সাজেক ভ্রমণকারীদের সময় অতিবাহিত হয়ে যাবে মুগ্ধতার সাথে। সাজেক ভ্যালির সর্বোচ্চ চূড়া কংলাক পাহাড়। এটি সাজেকের অন্যতম জনপ্রিয় একটি স্থান। বিকেল বেলা সময় কাটানো ও সূর্যাস্ত দেখার জন্য কংলাক পাহাড় সবচেয়ে আদর্শ জায়গা। সাজেকের শেষ গ্রাম কংলাক পাড়া। পাহাড়ে উঠার জন্য কিছুটা পথ একটু কষ্ট করে ট্র‍্যাকিং করে উঠতে হয়। এক্ষেত্রে লাঠি খুব সাহায্যকারী হাতিয়ার। পাহাড়ের চূড়ায় ওঠা মানে কিছুটা এডভেঞ্চার আহরণ করার মতোই। কারো সূর্যোদয় দেখার ইচ্ছে হলে অবশ্যই তাকে হেলিপ্যাডে যেতে হবে। এটি সাজেকের আরেকটি অন্যতম জায়গা। আহসানরা পুরো সকাল হেলিপ্যাডে আনন্দ মজা করে বিকেলে এসেছে কংলাক পাহাড়ে।

বেশ কিছু সময়ের ব্যবধানে পাহাড়ের চূড়ায় উঠতে সার্থক হলো সকলে। রিমি পুরো রাস্তা আহসানের কাঁধে ভর দিয়েই চড়েছে বলতে গেলে। সকলে হাপ ছেড়ে বাঁচলো যেন। একাধারে সকলেই হাঁপাচ্ছে। আহসান পানি খেয়ে রিমির উদ্দেশ্যে বলল, ‘তুমি তো পুরো পথ আমার উপর ভর দিয়েই আসলে। তাও হাঁপাচ্ছো?’

‘তো কি? পা তো আমারই ছিল। কোমড় শেষ আমার। ওমা গো।’

‘আগে বলতে তাহলে কোলে করে নিয়ে আসতাম তোমাকে।’

রিমি ভেংচি কেটে বলল, ‘হ্যাঁ তারপর দুজনে মুখ থুবড়ে পড়ে একসাথে মরে ভুত হলে ভালো হতো তাইনা?’

পাশ থেকে তিয়াসা বলে ওঠে, ‘তাও তো ভাইয়া বলেছে। এমন করিস কেন আপু?’

‘তুই তোর ভাইয়ার পক্ষেই কথা বল। হুহ!’
এই বলে কিছুদূর এগিয়ে জান্নাতের কাছে গেল রিমি। তারপর বলল, ‘বেশ ভালো দেখাচ্ছে তো তোমায়। লাল রঙের লিপস্টিকে খুব বেশি ফর্সা দেখাচ্ছে।’

জান্নাত মৃদু হেসে বলল, থ্যাংকস ভাবি।’ তারপর মুখ লুকিয়ে বেদনাদায়ক এক শ্বাস ত্যাগ করে সবুজ প্রকৃতির ভেতর চোখ ভাসালো।

জিসান আর রেজওয়ান পাহাড়ের অন্যদিকে ঘুরছে। জিসান একা একা ঘুরতে চেয়েছিল পাহাড়ের চারিপাশে তবে রেজওয়ানও ওর সাথে লেগে গেল।

‘তুই আমার সাথে কথা বলছিস না কেন জিসান? অন্যসময় তো আড্ডা করার জন্য আনন্দে বিমোহিত হয়ে থাকতিস।’

‘আমার ভালো লাগছে না। তুই রিসোর্ট ছেড়ে এখানে কেন এসেছিস? কাজে গাফিলতি করা লোকদের আমার বিরক্ত লাগে।’

‘ইট’স রং ব্রো। তুইতো এমন ছিলি না! তাছাড়া তোরা আছিস বলে আসলাম। ফ্যামিলি টাইম স্পেন্ড হবে বলে।’

‘তো? সবসময় কি একইভাবে থাকবো নাকি?’

‘মনে হচ্ছে তোর মুড অফ। আমি তোকে বিরক্ত করলাম না। মুড ভালো হলে কথা হবে।’

রেজওয়ান চলে গেলে জিসান বুক পকেট থেকে ফোন বের করে। তারপর আশেপাশের কিছু দৃশ্য ভিডিও করতে থাকে। আচমকাই জিসানের ভিডিওর মধ্যে তিয়াসা চলে আসে। পরমুহূর্তে জিসান তড়িঘড়ি করে ভিডিও করা অফ করে ফেলল। সেই সময় তিয়াসা নানান পোজে ছবি তুলছিল। হঠাৎ করে জিসানের সামনে পড়ে যাওয়ায় কিছুটা ইতস্ততবোধ হচ্ছে ওর। দুজন একে অপরের দিকে চেয়ে আছে। অকস্মাৎ জিসান কপাল ভাজ করে পিঠ দেখিয়ে সেখান থেকে প্রস্থান করল। তিয়াসা হা হয়ে তাকিয়ে রইলো জিসানের পানে। সঙ্গে সঙ্গে রাগে কটমট করে দুহাত বুকের সাথে বেঁধে নিল সে। তারপর বলল,

‘এবার একদমই অতিরিক্ত হয়ে গিয়েছে। এত ভাব দেখানোর কি আছে? মনে হচ্ছে আমি ওনার গলায় ঝুলে পড়ছি যেন। যেই মনোভাব আমার দেখানো দরকার সেটা উনি দেখাচ্ছে! নাহ, খুব বেশি বাড়াবাড়ি করছেন উনি। কি এমন করেছি আমি যে আমাকে দেখলেই মুখ ফিরিয়ে নিতে হবে! খুব বেশি আকারে ওনার পরিবর্তনের কারণ জানতে ইচ্ছে হচ্ছে আমার। ধুর পাজি ছেলেটা কেন যে মুডের বারোটা বাজাতে সামনে আসলো? ভাল্লাগে না আমার।’
#তোলপাড়💓
#সিজন২
#পর্বঃ৪৪
#শান্তনা_আক্তার(Writer)
(কোনো ক্রমেই কপি করবেন না)

পরদিন সকালে,,,

সাজেকের স্টোন গার্ডেন বেশ গোছানো একটি জায়গা। নান্দনিক পাথরের ব্যবহারে এখানে রয়েছে বসার বেঞ্চ,সেতু এবং উন্মুক্ত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে ভরপুর মনোমুগ্ধকর সব দৃশ্য। এখান থেকে বের হয়ে বেলা ১১ টার দিকে আহসানরা পা বাড়ালো লুসাই গ্রামের উদ্দেশ্যে।

হেলিপ্যাডের পাশেই লুসাই গ্রাম। এখানে লুসাইদের সংস্কৃতির সাথে পরিচিত হওয়ার পাশাপাশি লুসাইদের ঐতিহ্যবাহী পোশাক পরিধান করে ছবি তোলার সুযোগ রয়েছে। রিমি রাত থেকেই বায়না শুরু করেছে লুসাইদের কাপড় পড়বে সাথে আহসানকে নিয়ে কাপল ছবি তুলবে। তবে আহসান রিমির অর্ধেক ইচ্ছে পূরণ করতে রাজী হলেও পুরোপুরিভাবে রাজী হলো না। আহসান সাফ সাফ বলে দেয় সে এসব কাপড় পড়তে পারবে না। হাজার রিকুয়েষ্ট করেও আহসানকে মানাতে না পেরে মুখ ফুলিয়ে অন্যদিকে হাঁটা ধরে রিমি। আহসান গিয়ে পথ আটকে বলে,

‘প্রতিটি কাজে বা বিষয়ে রাগ না দেখালে হয় না, তাইনা?’

রিমি মুখ গোমড়া করে জবাব দিল,
‘আমার এখানে ভালো লাগছে না। আমি রিসোর্টে ফেরত যাব।’

‘সবার থেকে বেশি তুমি লাফালাফি করেছো এখানে আসার জন্য। ঠিক মতো কফিটাও খেতে দাওনি মর্নিং এর। এখন তোমার ভালো লাগছে না বললে কিভাবে হয়?’

‘আমি জানি না। আমি থাকবো না এখানে।’

আহসান বাধ্য হয়ে কোনো কূল-কিনারা না পেয়ে বলেই ফেলে,
‘ভাগ্য করে একটা বউ পেয়েছি আমি। বউ না যেন বাচ্চা শিশু। যা বলবে তাই করতে হবে! আচ্ছা চলো আমরা ড্রেস চেঞ্জ করে আসি। কোনো ওয়ে তো নেই। কি করার? বিয়ে করার আগে ভাবা উচিত ছিল আমার।’ বলেই বড় একটা শ্বাস ত্যাগ করে আহসান।

এতক্ষণে রিমির আঁধার-কালো গম্ভীরমুখে হাসির ঝলক ছলকে উঠল।

রিমি রেজওয়ানকে বলে আগে থেকেই আহসান আর রিমির জন্য কাপড়ের অর্ডার দিয়ে রেখেছিল। তাই ওরা ড্রেস কালেক্ট করেই ট্রায়ালে চলে গেল। কাপড় বদলানো শেষে আহসান বাহিরে বের হতেই চাচ্ছে না। রিমি কোনমতে ঠেলেঠুলে বাহিরে নিয়ে আসলো আহসানকে। (পিকচার থেকে ড্রেসের ধরণ দেখে নিয়েন)

রিমি ওর মাথার মুকুটটা ঠিক করে ফোনের স্ক্রিনে নিজেকে দেখতে ব্যতিব্যস্ত হয়ে পড়ে। এইদিকে আহসান এতটাই অস্বস্তিবোধ করছে যে তার মন চাচ্ছে পুনরায় গিয়ে চেঞ্জ করে আসবে। কিন্তু রিমির জন্য সেই সাহস হয়ে উঠছে না। পাশ থেকে জিসান আর রেজওয়ান ইতোমধ্যে হাসাহাসি শুরু করে দিয়েছে। তা দেখে আহসানের বিরক্তি আরও কয়েকশো কোটি বেড়ে গেল। রিমি গরম চোখ দুটো জিসানদের দিকে তাক করে বলল,

‘এখানে হাসার কি হলো হুম? তোমাদের হাসি দেখে লুসাইরা প্রাণের ভয়ে পালাবে বুঝলে?’

জিসান পেট চেপে হাসি থামিয়ে বলল,
‘লাইক সিরিয়াসলি ভাবি! আমি তো তোমাকে দেখে হাসিনি। আমি তো ভাইয়াকে দেখে হাসছি। হা হা হা।’

‘তো তোমার ভাইয়াকে দেখেই বা হাসার কি হলো? ভালোই তো কিউট লাগছে। কত কষ্ট করে মানিয়েছি আমি। এখন তোমাদের জন্য যদি রেগে যায় তো দেখে নিও!’

পাশ থেকে তিয়াসা ব্যঙ্গ করে বলে ওঠে,
‘আপু আসল কথা হচ্ছে এনারা কিছুই বোঝে না। এটাও যে একটা ইউনিক স্টাইল তা নিশ্চয়ই এনারা জানেন না। আমার মনে হচ্ছে তাই এভাবে হাসছে। ছাড় তো তুই এনাদের কথা। আমার কাছে তো খুব হ্যান্ডসাম লাগছে আহসান ভাইয়াকে। ভালো কিছু চেনা বা বোঝার জন্য সুন্দর দৃষ্টিভঙ্গি লাগে। যা সবার থাকে না।’

জিসান কপাল ঘুচিয়ে একবার তিয়াসার দিকে চেয়ে পুনরায় আহসানের দিকে দৃষ্টি স্থির করল। তারপর বলল, ‘আমি কিন্তু এই দৃশ্যটা মিস করতে চাইনা ভাইয়া। তাই তোর আর ভাবির একটা পিক তো তোলাই যায়।’

আহসান স্পষ্ট করে বলল, ‘একদমই না। কোনো ছবি তোলা যাবে না। তুই দূরে রাখ তোর ক্যামেরা।’

‘তোমার প্রবলেম কি হুম? ছবি না তুললে সুন্দর ড্রেস পড়ার মানে থাকলো কি? তোলো, তোলো। তোমরা সবাই তোলে। আমার ফোনেও কটা তুলে দিও। পরে সময় করে ফটোগুলো ফরওয়ার্ড করো।’

এরপর রিমি নানান ভাবে পোজ দেওয়া শুরু করে দিয়েছে। একা নয়, আহসানকে সঙ্গে নিয়ে।
নানান এঙ্গেলে ছবি তোলার পর হাঁপিয়ে উঠেছে আহসান। সাথে বিরক্তিও কম হচ্ছে না তার। তবে রিমির মুখে বিরক্তির এক কোণাও নেই। সবাই বিরক্ত হয়ে যার যার মোহে জড়িয়ে পড়ে। কেউ আর ফটোগ্রাফার হতে চাচ্ছে না। কিভাবে চাইবে? রিমি তো থামার নাম-গন্ধই নিচ্ছে না। আহসান কোন মতে দাঁত কামড়ে সব সহ্য করল। পড়ে গুনে গুনে শোধ নেবে এই ভেবে মনকে শান্তও করে নিল।

জান্নাত হাত দিয়ে বাঁশের তৈরি বাড়ি-ঘর ছুঁয়ে দেখছে। ফুলগাছ চোখে পড়লে মাঝে মাঝে বুক ভরে ফুলের সুবাসও নিচ্ছে। আচমকাই কোথ থেকে যেন রেজওয়ানের আবির্ভাব ঘটে। সে গলা খাঁকারি দিয়ে বলে ওঠে, ‘একা একা কি করছিস জান্নাত পরী?’

‘সবাই যা করছে তাই করছি।’ সোজাসাপ্টা উত্তর দিল জান্নাত।

‘গুড আন্সার। বাই দ্যা ওয়ে, তোকে এখন বেশ বড় লাগে। মানে সেই বাচ্চাদের মতো চঞ্চলতা স্বভাব নেই আর। ঠিক সুন্দরী যুবতী মেয়েদের মতো লাগে।’

‘এটা কেমন কথা! আমার একদমই পছন্দ হলো না কথাটা। প্রথমত,বড় হয়েছি যখন বড় তো লাগবেই। আর রইলো সুন্দরী যুবতীর কমপ্লিমেন্ট টা! আমি তো বয়স্ক নই যে বুড়ি লাগবে আমাকে।’

‘হুম তাও ঠিক। তবে আমার কাছে একটা জিনিস একদমই ভালো লাগেনি জানিস!’

‘কি?’ জিজ্ঞেস করে জান্নাত।

‘জিসানকে জোর করে বিয়ে করাটা ঠিক হয়নি তোর। বেচারা তোকে একটুও ভালবাসতো না। ওতো তোদের বিয়ের কদিন আগে আমাকে বলেছিল যে ও নাকি কারো প্রেমে পড়েছে। কিন্তু কার প্রেমে পড়েছে সেটা বলেনি। তুই কি জানিস সেসব?’

জান্নাত অপ্রস্তুত হয়ে পড়ে রেজওয়ানের প্রশ্নে। তবুও ঠোঁটে বৃথা হাসি ফোটাল। তারপর বলল, ‘কি যা-তা বলছো? জিসান আমার কথাই বলেছে। হয়তো কোনো কারণে নাম বলেনি।’

‘কিন্ত ওতো স্পষ্ট বলেছিল তুই না অন্যকারো প্রেমে পড়েছে। তাও আবার লাভ অ্যাট ফার্স্ট সাইড নাকি!’

‘আমি বললাম না জিসান তোমাকে বলতে চায়নি হয়তো। আচ্ছা আমি পরে কথা বলবো।’

‘পালাতে চাচ্ছিস নাকি এড়িয়ে যাচ্ছিস?’

জান্নাত চলতি অবস্থায় থমকে দাঁড়িয়ে বলল, ‘অদ্ভুত তো! আমাকে এসব কেন জিজ্ঞেস করছো? যে বলেছে তাকেই ধরো গিয়ে। আমাকে নেক্সট টাইমে এসব জিজ্ঞেস না করলেই খুশি হবো।’ কথাগুলো উগ্র কন্ঠে বলে চলে গেল জান্নাত।

লুসাই গ্রাম থেকে বেড়িয়ে সকলে মিলে সিদ্ধান্ত নিল রেস্টুরেন্টে যাবে লাঞ্চ করার জন্য। কিন্তু কোনটায় যাবে এটা এখনো পর্যন্ত ডিসাইড করতে পারছে না।

এক পর্যায়ে রিমি বলল, ‘তোমরা এত প্যাচাল কেন করছো? আমি কয়েকটা ভালো ভালো রেস্টুরেন্টের নাম বলছি, তোমরা বলো কোনটায় যাবে। তো এখানকার জনপ্রিয় রেস্টুরেন্টগুলো হচ্ছেঃ- মনটানা, হোটেল পেদা টিং টিং, সাজেক চিলেকোঠা, মেঘ-সজ্জা, CHIMBAL Restaurant আরও আছে তবে মনে নেই। তো বলো কোনটায় যাব আমরা?’

আহসান বলল, ‘আমাদের সাথে রেজওয়ান আছে তো। ওই বলুক কোনটায় ভালো ব্যবস্থা রয়েছে।’

তারপর রেজওয়ানের তথ্য অনুসারে সকলে সিদ্ধান্ত নিল হোটেল পেদা টিং টিং যাওয়ার। সেখানে গিয়ে ভাত, আলু ভর্তা, মুরগির মাংস, গরুর মাংস, সাজেকের স্পেশাল ব্যাম্বো চিকেন, খিচুরি, বারবিকিউ উইথ পরোটা ইত্যাদি যার যার পছন্দ মতো খাবার অর্ডার করে।

জান্নাতের একপাশে জিসান আর অন্যপাশে রেজওয়ান বসেছে। এখনো অর্ডার করা খাবার আসেনি বলে সকলে গল্প করছে। জিসান কেন জানি জান্নাতের পাশে রেজওয়ানকে সহ্য করতে পারছে না। ঘুরেফিরে বারবার ওদের দিকেই নজর চলে যাচ্ছে জিসানের। এই মুহুর্তে নিজেকে জ্বলন্ত আগুনের মতো লাগছে জিসানের কাছে। সে বাধ্য হয়ে জান্নাতের কানের কাছে মুখ নিয়ে বিড়বিড় করে বলল, ‘আমার রেজওয়ানের সাথে কিছু কথা বলার আছে। তুই আমার চেয়ারে এসে বসলে ভালো হতো’

জান্নাত সঙ্গে সঙ্গে চেয়ার ছেড়ে উঠে পড়ে। তারপর জিসানের সাথে চেয়ার অদলবদল করে নেয়। তা দেখে রেজওয়ান জিজ্ঞেস করে বসে,

‘এনি প্রবলেম?’

জিসান চেয়ার টেনে বসতে বসতে বলল, ‘না, আসলে তোর সাথে বসতে ইচ্ছে হলো বলে চলে এলাম তোর পাশে।’

‘এতক্ষণে আমার কথা মনে পড়লো তোর? যাই হোক, এখন একটু ভালো করে কথা বলিস আমার সাথে। আসার পর থেকে কি যে হয়েছে তোর!! কি জানি?’

খাবার পর্ব শেষ করে সবাই কিছুক্ষণ রেস্টুরেন্টের বাহিরে হাঁটাচলা করলো। একটা সময়ে রেজওয়ান সবাইকে একসাথে জড়ো হওয়ার জন্য বলল। সবাই এগিয়ে আসলো।
সর্বপ্রথম আহসান জিজ্ঞেস করে, ‘কি হয়েছে? এখনই চলে যাব নাকি আমরা?’

রেজওয়ান বলল, ‘না, আসলে তোরা যদি চাস আমি রিসোর্টের ছাদে ছোটখাটো একটা পার্টির আয়োজন করতে চাই। তোরা তো দুদিন পর চলেই যাবি, তাই ভাবলাম একটা সারপ্রাইজ দেই সকলকে।’

পার্টির কথা শুনে সবাই খুশি হয়ে গেল। সাথে সম্মতিও দিল। তারপর ঠিক ২টোর দিকে ক্লান্ত শরীর নিয়ে সকলে রিসোর্টে ফেরত চলে আসলো।

#ছবিয়ালঃ নিলয় আলমগীর ও তার স্ত্রী হৃদি।

#চলবে,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here