গল্পঃ ক্যারিয়ার। ( ষষ্ঠ পর্ব )
শুভ মন খারাপ করে বসে আছে অফিসে, মুন সামনের চেয়ারে। মজনু দরজা ঠেলে ভেতরে ঢুকে মুন ও শুভকে নীরব দেখে বললো,– ইন্ডিয়ান চ্যানেল বন্ধ করে দেবার পর থেকে বাসায় বউ চুপ, অফিসে এসে দেখি তোমরা চুপ, পৃথিবীটা এরকম নীরব দেখলে ইচ্ছে করে সুইসাইট ভর্তা বানিয়ে খেয়ে ফেলি।
মুন হেসে ফেলে বললো,– মজনু ভাই সুইসাইড ভর্তা বানিয়ে খেয়ে ফেললে মজনুর প্রেম কাহিনী তো অসম্পূর্ণ থেকে যাবে।
একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে মজনু বললো,– আর প্রেম, প্রেমের গুষ্টি কিলাই!
মুন অবাক হয়ে বললো,– প্রেমের গুষ্টি কিলাই মানে! প্রেমের সাথে আপনার শত্রুতা কি?
মজনু দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– সে এক লম্বা ইতিহাস রে মুন, জীবনের প্রথম প্রেম করলো আমায় খুন।
মুন বললো,– আহারে! তো লম্বা ইতিহাস হাল্কা খাটো করে বলা যায়না মজনু ভাই।
মজনু বললো,– সবার জীবনে ভালোবাসা আসে, আমার জীবনে এসেছিল ভালো বাঁশ! তাও কঞ্চি সহ। উফফ!! সেই কথা আজও মনে হলে জ্বলে খুব। মাধুরি, আমার প্রেম কাহিনী রেখে গেল আধুরী।
বেশ উৎসাহ নিয়ে মুন বললো,– মজনু ভাই প্লিজ বলেন না আপনার প্রেম কাহিনী!
মজনু বলতে শুরু করলো–
অনেক ঝক্কিঝামেলা শেষে অবশেষে মাধুরি আমায় ভালোবাসতে রাজি, তবে একটা শর্তে। শর্তটি হলো– মাধুরি’র বাড়ির ডান পাশের আম বাগানের একেবারে বামপাশের নতুন গাছটা থেকে এক হালি আম চুরি করে জায়গায় বসে চিবিয়ে খেতে হবে, ধরা পড়লে ইহজন্মে আর প্রেম হবেনা।
মনে মনে বেজায় খুশি আমি, প্রেম তো করবেই তা-ও আবার সিজনের ফল খাইয়ে, তাহলে কি মাধুরি বুঝতে পেরেছে যে আমি ছাড়া তার নারী জনম বৃথা! তাহলে এতদিনে কেন আমার বক্ষে ঝাপাইয়া পড়িয়া কইলো না সে ভালোবাসার কথা? মনে হয় লজ্জায়!
বিকেলে গুলতি হাতে পাখি শিকারের ভান করে মাধুরিদের আম বাগানে প্রবেশ করলাম। কেউ দেখলেও যেন মনে করে আমি শিকারে বেড়িয়েছি।
আম বাগানে ঢুকে একেবারে বাম পাশের নতুন গাছের তলায় এসে হাজির। থোকায় থোকায় আম, আমার হইছে কাম, জিহ্বা অনবরত জল ছড়িয়ে মুখ ভরে তুললো, কিছুক্ষণের জন্য মাধুরির বিষয়টি ভুলে আমের ধ্যানে ডুবে রইলাম। আম এত সুন্দর হইতে পারে! চোখ ফেরানো দায়, লোভ সংবরন দূরের কথা।
হাত বাড়িতে আলতো করে একটা আম ছিড়ে, লুঙ্গিতে আমটিকে কয়েকটা ঘষা দিয়ে ক্লিন করে নিলাম। বিসমিল্লাহ বলে আমে কামড় বসালাম–
‘ মা গো,’ বলে একটা চিৎকার দিয়ে কয় মিনিট বেহুশ ছিলাম জানিনা! আমি আমে কামড় বসিয়ে ছিলাম, নাকি আম আমার দাঁতে কামড় বসিয়ে ছিল জানিনা! এরথেকে মাধুরি যদি নিজের হাতে এক বোতল বিষ দিতো, সেই বিষ পান করলেও মনে হয় কম যন্ত্রণা অনুভব হতো। এত টক যে প্যারালাইজড ব্যক্তিকে এই আম খাইয়ে দিলে হয় অক্কা পাবে, নয়তো উঠে হাজার কিলোমিটার বেগে দৌড়ে পালাবে।
ওদিকে আমার সেই ‘ মা গো,’ বলে আর্তনাদ শুনে মাধুরির বাবা চোর ধরতে আম বাগানে এসে প্রস্তুত। বুঝলাম এই জন্মে আমার আর মাধুরির প্রেম কাহিনী আধুরি রয়ে যাবে।
মাধুরির বাবার হাতে ডান্ডা, তাই দেখে আমার শরীরের সমস্ত ব্লাড ঠান্ডা। একটা আম ছিড়ে মাধুরির বাবার হাতে দিয়ে বললাম– কাকা আমারে যা বলতে মনে চায় পরে বইলেন, আগে আপনার নতুন গাছের আমে একটা কামড় দিয়া দ্যাহেন যে কি মাল ইমপোর্ট করছেন, যে একবার খাবে সে এই আমের স্বাদ আমৃত্যু মনে রাখবে।
প্রশংসায় হাল্কা খুশি হয়ে, হাত বাড়িয়ে আমটা নিয়ে একটা কামড় দিতেই মনে হলো, মাধুরির বাবার টাক মাথাটা লাল হয়ে ধোঁয়া বেরুচ্ছে। তারপর স্লো-মোশনে হেলতে দুলতে ধপাস করে মাটিতে পড়ে গেল মাধুরির বাবা।
আমি ফাস্ট মোশনে পালিয়ে এসে বাঁশ বাগানে নিরাপদ আশ্রয়ে এসে লুকিয়ে পড়লাম। কি মারাত্মক স্বাদের আম’রে বাবা!
মাধুরি চালাকি করেই এমন করেছিল আমি নিশ্চিত, এ-জন্মে আর মাধুরিকে পাওয়া হবেনা ভাবতেই নিজের অজান্তেই গুনগুনিয়ে গেয়ে উঠলাম– মাধুরি-ই-ই-ই, মরার আগে একবার যেন তোরে দেখতে পাই।
বলা শেষে লম্বা একটা দীর্ঘশ্বাস ছাড়লো মজনু ভাই।
এদিকে মজনুর প্রেম কাহিনী শুনে মুন আর শুভ হেসেই অস্থির। হাসি কিছুতেই থামছে না ওদের।
তাই দেখে মজনু বললো,– এর জন্যই বলে কারো পৌষ মাস, কারও সর্বনাশ।
শুভ কোন মতে হাসি থামিয়ে মজনুকে বললো,– মজনু ভাই মাধুরিকে কিস খাবার ঘটনাটি একটু বলো মুনকে।
মজনু আবার বলতে শুরু করলো,–
সে আমায় ঢেকেছিল কিস এর নিমন্ত্রণে। আমের দূর্ঘটনার পরে সম্ভবত মাধুরির মনে হাল্কা প্রেমের সঞ্চার হয়েছিল। অল্প অল্প কথা হতো অনলাইনে। হাল্কা হাল্কা ভালোবাসার আবেশ।
প্রেমে পড়লে মেয়েরা ফুচকা বাদাম খেতে চায়, আর দুষ্ট পোলারা খেতে চায় কিস, আমিও তাদেরই একজন। মাধুরিকে অনলাইন দেখে টেক্সট পাঠিয়েছিলাম– মাধুরি, ভাত তরকারি খাবার আর রুচি নেই আমার দিলকি রানী পরিমনি, মনডা খালি কিস খাই, কিস খাই করে, ভালোবেসে পারবে তুমি? পারবে আমার দুই গালে দুটো দিতে?
রিপ্লাইতে মাধুরি লিখলো,– কি দিবো, দুই গালে দুই থাপ্পড়!
আমি লিখলাম,– ধুর কিস এর মধ্যে কিসব বলছো! ভালোবেসে মানুষ জীবন দিতে পারে, তুমি কি পারবেনা এই অবলারে দুটো কিস দিতে!
মাধুরি কথা না বাড়িয়ে লিখলো,– ঠিক আছে, কাল রাত ঠিক বারোটার সময় আসবেন।
মাধুরি বলেছিল কাল, সুতরাং পরদিন রাত ঠিক বারোটায় মাধুরিদের বাড়ির পেছনে গিয়ে উপস্থিত হলাম। সময় বয়ে যাচ্ছে অথচ মাধুরির খোঁজ নেই! হঠাৎ পেছনে মর্মর ধ্বণি শুনতে পেয়ে সেদিকে পা টিপে টিপে এগিয়ে গিয়ে বললাম,– মাধুরি তুমি আইছো!
কোন সাড়াশব্দ নেই! তারপর আচানক ঘেউ ঘেউ করে উঠলো মাধুরিদের বজ্জাত কুকুরটা! ধীরে ধীরে জুতো খুলে হাতে নিয়ে ঘন্টায় সাতশ কিলোমিটার গতিতে দৌড় লাগালাম। কুকুরের একটা কামড়, সাথে চোদ্দটা ইনজেকশন ফ্রী, ভাবতেই যেখানে যেখানে ইনজেকশন দেয়া হয় সেসব স্থানে সুই ফোটানোর ব্যাথা অনুভব হচ্ছিল। এত রিস্ক নিয়ে প্রেম করায় কাম নাই। বেচে থাকলে জীবনে অনেক মাধুরি আসবে। এক দৌড়ে বাড়ি গিয়ে হাঁপাতে হাঁপাতে খাটের ওপর শুয়ে পড়লাম। পকেট থেকে ফোন বের করে মাধুরিকে মেসেজ দিলাম,– আমাকে উপস্থিত থাকতে বলে কুকুরের কামড় খাওয়ানোর ষড়যন্ত্র!
মাধুরির রিপ্লাই আসলো,– হা হা হা, তার মানে একটু আগে কুকুর যে দৌড়ানি দিলো, আমরা চোর ভাবলাম, ওটা আপনি?!
আমার বিপদে মাধুরিকে হাসতে দেখে সেদিন বুঝেছিলাম মাধুরি ইজ মেড ফর অন্য কারো। আমাকে সে বোকা বানানোর জন্যই ওসব করেছিল। তারপর নিজ দায়িত্বে প্রেমের মুখে লাগাম টানলাম…
চলবে…
গতকাল অনেকেই অনুরোধ করেছেন গল্পটা যেন এত তাড়াতাড়ি শেষ করা না হয়, সেটা বিবেচনায় রেখে গল্পটা আরও লম্বা করলাম।
লেখাঃ ইমতিয়াজ আহমেদ চৌধুরী।