গল্পঃ ক্যারিয়ার। ( সপ্তম এবং শেষ পর্ব )
–“ আপনি তাইলে কিস খেতে গিয়ে কুকুরের দৌড়ানি খাইলেন মজনু ভাই।” বলে হেসেই অস্থির মুন। মজনু বললো,– প্রেমে ধোকা খেয়ে পাবলিক হারপিক খেতে পারে, আর আমি প্রেমে পড়ে কুকুরের দৌড়ানি খাইলেও দোষ! হায় আফসোস!!
শুভ সিরিয়াস হয়ে মুনকে বললো,– মুন আমার মনে হয়না তুলি ফিরবে, মরে যাওয়াটা কোনকিছুর সমাধান যদি হতো তবে মরেই যেতাম। কয়েকদিন আগে গভীর রাতে একটা ঘটনা ঘটলো!
মুন ও মজনু আগ্রহের সাথে জিজ্ঞেস করলো,– কি সেই ঘটনা?!
সেই রাতে ফেসবুক ফ্রেন্ডলিস্টের একটা মেয়ে হঠাৎ ইনবক্সে লিখে পাঠায়,– ও, আর কিছু করার নেই, এবার মরতে হবে।
মেয়েটির সাথে দুএকবার হাই হ্যালো হয়েছে পর্যন্তই, কিন্তু সেদিনের ঐ কথাটি শুনে বুকের ভেতর ভীষণ ধাক্কা লাগলো। পৃথিবীতে কত বিকলাঙ্গ মানুষ আছে, কারও হাত নেই, কারও পা নেই, কারো দুটি চোখ না থাকা সত্বেও বেঁচে থাকার স্বপ্ন দেখে। কিন্তু ইনি সর্ববিষয়ে ভালো থেকেও মরতে চাইছে। তবে এনার আছে একবুক যন্ত্রণা, ভালোবাসার মানুষের থেকে প্রাপ্ত অবহেলা এবং প্রতারণার যন্ত্রণা।
যা-ই হোক আমার পোস্টগুলো মোটিভেশনাল হয়ে থাকে বলে অনেকেই পছন্দ করে, অনেক অনেক প্রশ্ন করে, সেহেতু এটা স্বাভাবিক।
মেয়েটি আবার মেসেজ দিলো,– হাই!
আমি উত্তরে লিখলাম,– হ্যাঁ বলেন।
: একটা কথা জিজ্ঞেস করি, কিছু মনে করবেন না প্লিজ।
: ওকে বলেন।
: আমি আপনার পোষ্ট গুলো পড়ে যা বুঝলাম, ভালোবাসা সম্পর্কে আপনি ভালো বোঝেন, তাই না?
: ভালোবাসা সম্পর্কে বোঝা তো অপরাধ না!
: একটা প্রশ্নের উত্তর আজও পাইনি।
: বলেন দেখি।
: ধরেন আপনি একজনকে ভালোবাসেন খুব বেশি, সারাজীবনের জন্য পাশে থাকতে চান ভালোবেসে। ও’ও আপনাকে ভালোবাসে, কিন্তু দেখা গেল ও যে কোন উপায় আপনাকে কষ্ট দিল, কিন্তু আপনি ওকে এত ভালোবাসার পরেও কেন কষ্ট দিল? কেন সে আপনার বুক ভরা ভালোবাসার বিনিময়ে ব্যাথা দিল? ভালোবাসার প্রতিদানে কেন সে দিলনা ভালোবাসা? উত্তর দেবেন!
আমি কিছুক্ষণ চুপচাপ থেকে তারপর উত্তর দিলাম–
: প্রথমত সত্যিকারের ভালোবাসা কখনও রং বদলায় না। আর সত্যিকারের ভালোবাসা মানে দুটি মনের একই কথা বলা, একই পথে চলা, একটাই স্বপ্ন দেখা, কল্পনায় নিজেদের ভালোবাসার সুন্দর একটি প্রতিচ্ছবি আঁকা। এবং সেটা সম্ভব তখন, যখন দুজনের ভালোবাসা’ই দুজনের জন্য সমান হয়। এবার আপনি ভেবে দেখুন, দুজনের ভেতর অবশ্যই একজনের ভালোবাসায় তারতম্য ছিল নিশ্চয়ই, যার পরিনতি এটা।
আসাকরি উত্তর পেয়েছেন…
: ধন্যবাদ, কিন্তু উত্তরটা এলোমেলো লাগল!
: মোটেই না, আপনি এখনও মন থেকে মেনে নিতে পারেননি বিষয়টি, তাই এলোমেলো লাগছে।
: হয়তোবা, আসলে কিছুই বুঝতে পারছি না।
: হয়তোবা না, ভীষণ ভালোবাসতেন তাই।
: আচ্ছা অভিমান জিনিসটা কী খুব খারাপ?
: দুজনের মধ্যে দূরত্ব সৃস্টি করার জন্য একটু অভিমান’ই যথেষ্ট। যদি সে আপনার অভিমানকে মূল্যায়ন না করে, বুঝতে চেষ্টা না করে। এর জন্যই দুজনের দুজনকে বুঝতে হয়।
: যদি বুঝতে চেষ্টা না করে, তাহলে কী করা উচিৎ?
: সেটা আপনি ভালো বোঝেন হয়তো!
: প্লিজ বলেননা, আচ্ছা কার আগে অভিমানটা ভাঙ্গানো উচিৎ?
: যে আপনার মান, অভিমান, ভালো মন্দের মূল্যায়ন করতে না জানে, তার আপনার প্রতি ভালোবাসার গভীরতা কম। এবার আপনি ভাবুন কী করবেন।
: ও, আর কিছু বলার নেই, এবার মরতে হবে।
: মানে?!
: মানে মরে যাবো, বাঁচার আর উপায় দেখছি না।
: বোকার মতো কাজ কেন করবেন। কেউ আপনাকে অবহেলা করলো, আর আপনি তার জন্য মরবেন, কী বোকা আপনি। আপনি মরলে তার কিছুই এসে যাবেনা। বরং আপনার মা বাবার বুকটা ফেটে যাবে কষ্টে। ওর জন্য না মরে, মা বাবার জন্য বাঁচুন।
: তাহলে এত ভালো বেসেও তার কোনো মূল্যায়ন কেন পাবো না, বলতে পারেন?
: আপনার মা কিন্তু মৃত্যুর কষ্টের চেয়েও শতগুণ কষ্ট সয়ে আপনাকে ভূমিষ্ট করেছিলেন পৃথিবীতে। আবার আপনার মুখটি দেখে সবকষ্ট ভুলে গিয়েছিলেন। বাইরের একজনের জন্য মরতে পারবেন। মায়ের মুখের দিকে তাকিয়ে বাঁচতে পারবেন না?
: হ্যাঁ পারবো, মায়ের সঙ্গে কারও তুলনা হয়না।
: গুড।
: নিজের ভালোবাসার মানুষকে ভুলে গিয়ে নতুন কাউকে আপন করে নেওয়া কী সহজ ব্যাপার?
: অনেকের জন্য সহজ ব্যাপার!
: হাসালেন।
তার এই ‘ হাসালেন ’ শব্দটা শুনে একটু খারাপ লাগলো। আমি ‘ ওকে স্যরি ’ লিখে দিলাম। তারপর সে দুবার মেসেজ দিয়েছিল, আমি রিপ্লাই দেইনি।
যা-ই হোক। মেয়েটি হয়তো প্রচন্ড ভালোবেসে আঘাত পেয়ে আবেগের বশে এসব চিন্তা ভাবনা করছে। কিন্তু মনে রাখবেন, আবেগ কিন্তু ব্লু-হোয়েল গেমসের মতই ধাপে ধাপে আপনাকে মৃত্যুর মুখোমুখি নিয়ে দাড় করাবে। তাই অতিরিক্ত আবেগ প্রশ্রয় দেয়া ঠিক নয়। আবার দিলেও ঐ মুহূর্তে মা-বাবার কথা ভাবুন। আবেগ দুই ভাগে বিভক্ত হয়ে যাবে, উল্টাপাল্টা চিন্তা দূর হয়ে যাবে মস্তিষ্ক থেকে।
আমার এই কথাগুলো শুধু ওনার জন্য ছিলনা, সবার জন্য। এবং আমার নিজের জন্যও। আমাদের এভাবেই ভাবা উচিত।
কথা শেষে শুভ চুপ। মুন বললো,– তারপর?
শুভ বললো,– কারো জন্য জীবন থেমে থাকবে এমন তো হওয়া উচিৎ নয়, জীবন তো একটাই, জীবনকে অপশন দেয়া উচিৎ।
মুন বললো,– মানে?
শুভ বললো,– মানে আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই, বলো তোমার কী মতামত!
শুভর কথা শুনে মুন হকচকিয়ে উঠে বললো,– ইয়ে মানে এডা কেমন কথা! আমার ভাবতে একদিন সময় লাগবে।
শুভ বললো,– এতদিন কি দিন ছিলনা, ভাবাভাবির কি আছে! আচ্ছা যাও দিলাম একদিন সময়।
তারপর শুভ মজনুকে বললো,– মজনু, অফিসের সবাইকে জানিয়ে দাও আমি আর মুন বিবাহের সিদ্ধান্ত নিয়েছি।
মজনু ফাইব-জি গতিতে বার্তা পৌঁছে দিলো সবার কানে, শুনে কেউ হতাশ, আবার কেউ আনন্দিত। লাঞ্চের পরে মজনু শুভর অফিস রুমে ঢুকে মন খারাপ করে বললো,– আর একবার ভেবে দেখলে হয়না।
শুভ বললো,– ভাবাভাবির দিন শেষ, নতুন বিয়ের বাংলাদেশ। যার কাছে আমার ভালোবাসার কোনো মূল্য নেই, তারকাছে ভালোবাসা প্রকাশ করে ছোট হবার দরকার নেই।
অনেক রাত পর্যন্ত বাইরে থেকে বাসায় ফিরলো শুভ। দরজা খুলে ভেতরে ঢুকে ডাইনিং রুমে তুলিকে দেখে অবাক হলো শুভ!
তুলি মিষ্টি হেসে বললো,– এই যে স্যার, দেরি করলে লেট হয়ে যাবে কিন্তু, তাড়াতাড়ি হাতমুখ ধুয়ে আসুন পোলাউ রান্না করেছি আপনার জন্য।
শুভ বললো,– পোলাও খাওয়া বাদ দিছি, এখন বিরিয়ানি খাবার চিন্তাভাবনা চলতেছে।
তুলি কোমরে শাড়ির আঁচল বেধে কোমরে হাত রেখে ভেংচি কেটে বললো,– এতদিনের জমা বিরিয়ানি খাইয়ে আজ যদি হালুয়া টাইট না করি তাহলে আমিও তুলি না।
যেহেতু শুভর সবটা জুড়ে তুলি, সেহেতু হঠাৎ তুলিকে সামনে পেয়ে রাগটাও প্রকাশ করতে পারছে না। হাতমুখ ধুয়ে এসে চুপচাপ খেতে বসলো শুভ।
পাশের রুম থেকে সলমন আর মুন বেরিয়ে এসে শুভর দুই পাশে বসলো। শুভর চক্ষু চড়কগাছ।
মুন হেসে ফেলে শুভকে বললো,– দুলাভাই আপনার শালা বউয়ের এক্টিং কেমন ছিল।
শুভ অবাক হয়ে বললো,– তার মানে?
তুলি মুচকি হেসে বললো,– মুন সলমনের বউ, মানে তোমার শালা বউ। অতি রাগে আবার বাইরে নজর দিয়ে না ফেল তাই নজরটা নিজেদের দিকে রাখতেই তোমাদের কোম্পানির মালিকে বলে মুনকে তোমার পার্সোনাল এসিস্ট্যান্ট করে পাঠাই।
মুন মুচকি হেসে বললো,– দুলাভাই, সেদিন আপনাকে কিস খাবার অভিনয় করলাম আপনাকে টেস্ট করার জন্য, তারপর বুঝলাম আপনি জিনিসটা সলিড, উল্টাপাল্টা করলেই বুঝতেন মাসে কয়দিন।
শুভ হেসে ফেলে বললো,– আগে জানলে তো কিসটা করেই ফেলতাম।
তারপর সবাই হো হো করে হেসে উঠলো।
খাওয়া শেষে মুন ও সলমন এক রুমে চলে গেল। শুভ ও তুলি তাদের রুমে।
শুভ চুপচাপ কোলবালিশ জড়িয়ে শুয়ে আছে, তাই দেখে তুলি বললো,– বউ থাকতে কোলবালিশ কেন জনাব?
শুভ বললো,– বউ মনে আঘাত দিলেও কোলবালিশ কখনও এমন করেনা, তাই।
তুলি শুভকে টেনে চিৎ করে শুভর ওপর ঝুকে পড়ে শুভর ঠোঁটে চুমু খেয়ে বললো,– ঐদিন তোমাকে ওরকম কথা বলার পরেই আমি আমার ভুল বুঝতে পেরে ঘৃনায় নিজেকে নিজে ধিক্কার দিয়েছি হাজার বার, যে ক্যারিয়ার ভালো চাকরির জন্য আমার মনে অহংকারের জন্ম হয়েছে, তোমাকে ওরকম বলার পরের দিনই আমি সেই চাকরি ছেড়ে দিয়েছি। আমার ভুলের জন্য তোমার যে শাস্তি দিতে ইচ্ছে হতো দিতে, তারপর আবার বুকে টেনে নিতে, কই অভিমানে তুমিও তো সেই খোঁজ টুকু রাখোনি।
শুভ বললো,– তাই বলে চাকরি ছাড়তে হবে কেন! আর আমি মনে কষ্ট পেলেও তোমার প্রতি আমার ভালোবাসা বিন্দুমাত্র কমেনি। যাকে ভালোবাসা যায়, তাকে ঘৃণা করা যায়না।
তুলি শুভকে শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো,– আমি ক্যারিয়ার চাইনা, আমি তোমাকে চাই শুভ, আমাকে ক্ষমা করে দাও প্লিজ, নয়তো এই অপরাধবোধে আমি মরে যাবো।
তুলির চোখ থেকে টপটপ করে জল ঝরছে। তুলির চোখের জল মুছে দিয়ে ঠোঁটে চুমু খেয়ে শক্ত করে বুকের সাথে চেপে ধরে শুভ বললো,– এই দুমাস তোমার বিরহে আমিই মরিমরি অবস্থা, তুমি ছাড়া বেঁচে থাকা দায়, আমার মন জানে সেকথা।
তুলি বললো,– আরও একটা খুশির খবর আছে।
শুভ বললো,– তাইলে আগে সেটা বলো।
তুলি বললো,– চাকরিতে রিজাইন দিয়ে ভালে ডাক্তারের থেকে চিকিৎসা নিয়েছি, গতকাল টেস্ট দেবার পর ডাক্তার বলেছে এবার চেষ্টা করলে সৃষ্টিকর্তার কৃপায় আমরা বাবা মা হতে পারি।
তুলির মুখে এই কথা শুনে খুশিতে আত্মহারা হয়ে কমপক্ষে একশোটা চুমু খেল শুভ। তারপর বললো,– চলো তবে চেষ্টা শুরু করা যাক, মিশন শুরু করি।
তুলি মিষ্টি হেসে বললো,– আগে রুমের লাইট তো অফ করি।
অন্ধকারে তুলি ফিসফিস করে বললো,– ক্যারিয়ারে একটাই অপূর্ণতা একটা বাবুর। চলো এবার সেদিকে মন দেই, পূর্নতা পাক ক্যারিয়ার।
তারপর! তারপর পাঠকরা এতটাও বোকা নয় যে তারা কিছু বোঝেনা।
শুভ তুলির মিল হওয়ায় সবাই যখন খুশি, তখন আমার একটু খারাপ লাগছে কারণ গল্প শেষ হওয়ায় চরিত্রগুলো খুব মিস করবো। তবুও অনেক অনেক শুভকামনা শুভ ও তুলির জন্য।
গল্পঃ ক্যারিয়ার ( বোনাস পর্ব )
–‘আচ্ছা তুলি তোমার কি বমি বমি ভাব হচ্ছে? সত্যি কথা কও সোনা,’ শুভ বললো তুলিকে। শুভর কথা শুনে তুলি হাসতে হাসতে বিছানায় গড়াগড়ি খেয়ে অস্থির।
তুলির অবস্থা দেখে শুভ ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে বললো,– বমির কথা শুনে হাসতে হাসতে গড়াগড়ি খাচ্ছো, বলবা তো বমি বমি ভাব হয় কিনা!
তুলি হাসতে হাসতে বললো,– ভাই গতরাতে বীজ বুনে আজই যদি চারা দেখতে চাও সেটা কেম্নে সম্ভব! বাবু কি ফাইব-জি গতিতে ডাউনলোড করে তোমার হাতে দিমু! অবশ্য যদি সম্ভব হতো তাইলে দিতাম, তোমার কথা ভেবে শুধু।
শুভ বললো,– মা হবার অন্য কোনো লক্ষ্মণ টের পাও তুলি?
তুলি আবার হো হো করে হেসে ফেলে বললো,– ভাই একটু থামো তুমি, এমন ভাবে বলছো যেন গর্ভধারণ করার পর তিন দিনে ডেলিভারি হবে তাই প্রথম দিনেই বমি এবং অন্যান্য লক্ষ্মণ ফুটে উঠবে!
শুভ কাচুমাচু করে বললো,– পূর্ব অভিজ্ঞতা নাই এর জন্য বললাম, তুমি এমন ভাবে হাসছো দেখে কেমন শরম শরম লাগতাসে আমার!
তুলি শুভকে টান দিয়ে বিছানায় শুইয়ে শুভর ঠোঁটে লম্বা একটা কিস করে বললো,– মিস্টার পুরুষ লজ্জাবতী, গভীর রাতে বাবুর বীজ বপন করার সময় লজ্জা কোথায় ছিল শুনি! নাকি তখন জামাকাপড়ের সাথে লজ্জাও খুলে রেখেছিলেন। লুচ্চা বেডা।
শুভ তুলির নাক টেনে দিয়ে বললো,– এই যে, আমি আপনার স্বামী, সবকিছু বৈধ, লুচ্চা কেমনে হইলাম আবার!
তুলি শুভকে জড়িয়ে ধরে কপালে অনেকগুলো চুমু খেয়ে বললো,– তুমি আমার প্রাণের স্বামী মিস্টার হিরো আলম, ও স্যরি শুধু মিস্টার হিরো।
শুভ হেসে ফেলে দাঁত দিয়ে তুলির ঠোঁট আলতো করে কামড়ে ধরে বললো,– এই যে ম্যাডাম আমি শুধু হিরো, আপনার হিরো। আলম হয়ে জাতির হিরো হবার সখ নাই।
তুলি মুচকি হেসে বললো,– ভাই আবেগে মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, আমার লক্ষী স্বামীরে যে কত নামে ডাকতে মনে চায়।
শুভ তুলিকে জড়িয়ে ধরে বললো,– যে নামে ডাকতে মনে চায় ডাকো, তবু তুমি এমনই সুখে থাকো।
শুভ অফিসে এসে চেয়ারে বসলো, মজনু দরজা খুলে ভেতরে এসে বসলো।
শুভ হাসিমুখে মজনুকে বললো,– কি চাচা মন ভালো তো?
মজনু ভীষণ অবাক হয়ে বললো,– কিরে শুভ, তুলির হাতের প্যাদানী খেয়ে আসলি নাকি! কিসব পাগলের মতো কথা বলছিস! আমি তোর কোন জন্মের চাচা ছিলাম রে!
শুভ হেসে ফেলে বললো,– বউয়ের হাতের প্যাদানীতেও একপ্রকার শান্তি মজনু ভাই, তুমি তো লায়লার বিরহে কাতর তুমি কিভাবে বুঝবে। আর তোমাকে আমি আমার চাচা বলিনি, আমার সন্তানের চাচা বলেছি!
মজনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– হইতে পারে! তবে সন্তানের পিতা হবার সে এক অন্যরকম অনুভূতি, যা এক্সপ্লেইন করার মতো না রে ভাই!
শুভ খুব আগ্রহ নিয়ে বললো,– বলো না মজনু ভাই, একটু হলেও এক্সপ্লেইন করো প্লিজ।
মজনু গম্ভীর গলায় বললো,– এক্সপ্লেইন করমু কিভাবে আমি নিজেই তো সন্তানের বাবা হইতে পারলাম না, তোমারে আর এক্সপ্লেইন করমু কি।
শুভ অবাক হয়ে বললো,– তাইলে একটু আগে যে ডায়লগ মারলা– পিতা হবার সে এক অন্যরকম অনুভূতি, যা এক্সপ্লেইন করার মতো না।
মজনু একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বললো,– ঐডা আবেগে বলছি রে ভাই, আবেগে। বাস্তবে তো হইনাই, ভাব ধরে যদি শান্তনা পাই।
মজনুর কথা শুনে শুভ হেসে অস্থির।
শুভর হাসি দেখে মজনু বললো,– অন্তরে যত্ন করে দিলো ঘা, সে আমার ঝানেমন শাহিদা।
শুভ বললো,– শাহিদা আবার কি করলো?
মজনু বললো,– বিয়ে করতে সেই রাজি হইলো, কিন্তু এত দেরি করে, আগেভাগে রাজি হইলে এতদিনে পিতৃত্বের স্বাধ গ্রহণ করে জীবনডা ধন্য হইয়া যাইতো।
শুভ বললো,– শাহিদা ভাবীকে ভুলিয়ে ভালিয়ে পিতৃত্বের স্বাধ পাবার মিশন চালু করো পুরোদমে, অগ্রিম অভিনন্দন।
তুলি গর্ভবতী, যত দিন যাচ্ছে তুলির শরীরের আকৃতি পরিবর্তন হচ্ছে, এখন তুলিকে আদর করে শুভ দারোগা ডাকে।
যখন পাঁচমাস হলো, শুভ চাকরিতে রিজাইন দিয়ে সারাক্ষণ বাসায় তুলির ছায়া হয়ে। তুলি তো রেগেমেগে আগুন, শুভ জবটা কেন ছাড়লো।
তুলির পেটে চুমু খেয়ে শুভ বললো,– ব্যাংকে মোটামুটি যা আছে তাতে কমপক্ষে বছর দুই চলবে বেকার থাকলেও। এই সময়ে আমার কাছে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ আমার বউ আর আমাদের বাবু, এখন থেকে একটা মূহুর্তও মিস করতে চাইনা, তোমাদের ছায়া হয়ে থাকতে চাই, এই মূহুর্তে আমাকেই বেশি দরকার তোমাদের। তোমরাই আমার পৃথিবী, আমি অন্য কিছুর ধার ধারিনা।
শুভ কথায় তুলি এতটা খুশি হলো যা ভাষায় প্রকাশ করা সম্ভব নয়। তুলি শুভকে জড়িয়ে ধরে ঠোঁটে একটা চুমু খেয়ে বললো,– এত ভালোবাসা দিলে প্রতি বছর একটা করে বাবু দিতেও আমার আপত্তি নাই গো বাবুর আব্বু।
এভাবেই দিনরাত হাসি আনন্দে কেটে যায় বাকী দিনগুলো। অবশেষে শুভদের জীবনে আসে সেই শুভ দিন, শুভ ও তুলির সংসার আলোকিত করে ফুটফুটে এক সন্তানের আগমন। চারিদিকে খুশির ছড়াছড়ি।
মজনু ও শাহিদা শুভর বাসায় এসে হাজির।
শাহিদা ফিসফিস করে মজনুকে বললো,– বাবুর জন্য জামাকাপড়ের সাথে ফিডার কেনা দরকার ছিল, বুকের দুধে না হলে ফিডারের প্রয়োজন হয়।
মজনু ভ্রু কুঁচকে বললো,– ফিডার তো আমার তোমারে খাওয়াইতে মনে চায়, শুধু কি অন্যের বাবুকে কোলে নিয়ে স্বাধ মিটাতে হবে, নিজে তো একটা জলদি করে দিতে পারো না!
শাহিদা হেসে বললো,– তুমি পারোও বটে, হা হা হা।
অবশেষে শুভ তুলির ক্যারিয়ারের অপূর্ণতা পূর্নতা পেলো। সুখে ভরে গেল ওদের সংসার নামক ছোট্ট সুখের স্বর্গ।
সমাপ্ত।