স্মৃতিতে তোমার বন্দনা পর্ব ৩০

#স্মৃতিতে_তোমার_বন্দনা
#পর্ব_৩০
#Saji_Afroz
.
.
আজ খুব ভোরেই ঘুমটা ভাঙলো পরশের । বারান্দায় আসতেই দেখতে পেলো, ছোঁয়া বাগানে হাঁটছে খোলা চুলে । এমন একটা দৃশ্য এতদূর থেকে দেখার কোনো মানে আছে?
পরশ দ্রুতবেগে নিচে নেমে এলো । বাগান থেকে একটা গোলাপ ছিড়ে ছোঁয়ার পাশে এসে, তার দিকে এগিয়ে দিয়ে বললো-
শুভ সকাল বাগানের রানী ।
.
ছোঁয়া ফুলটি হাতে নিয়ে বললো-
বাগান টা কিন্তু আমার নয় ।
-রানী তো তোমাকেই লাগছে ।
-তাই?
-হু ।
-শুভ সকাল । আন্টি উঠেছে?
-নামাজ পড়ে শুয়ে গিয়েছেন । কেন? দায়িত্ব শুরু করে দেয়ার জন্য?
-দায়িত্ববোধ থেকেই যে করি তা নয় । আন্টি আমার মনে অনেকখানি জায়গা দখল করে নিয়েছে । শুধু আন্টি নয় । আপনারা সকলে । আপনাদের সকলকেই আমার খুব আপন মনে হয় ।
-আপন মানুষদের আপন মনে না হয়ে পর কেনো মনে হবে!
.
হাসলো ছোঁয়া । পরশ বললো-
এত সকালে চুল খুলে হাঁটছো যে, কোনো দুষ্টু পরী জেলাস করলে কি করবে?
-দুষ্টু পরী?
-সে কি! তুমি জানোনা? দুষ্টু পরীরা তাদের চেয়ে সুন্দরী কাউকে সহ্য করতে পারেনা ৷ নিয়ে গিয়ে বন্দী করে রাখে তাদের রাজ্যে ।
.
শব্দ করে হেসে উঠলো ছোঁয়া ।
পরশ বললো-
ভয় পাওনা?
-উহু । ভয় পাওয়ার মত কিছুই বলেন নি আপনি । মনে হলো কোনো বাচ্চাকে গল্প শোনাচ্ছেন ।
.
খানিকটা লজ্জা পেলো পরশ । ছোঁয়া কথা ঘুরিয়ে বললো-
একটা সিরিয়ার প্রশ্ন করলে উত্তর দিবেন? যদিও পারসোনাল…
-করো, দেয়ার মত হলে দিব ।
-বিয়ে কেন করছেন না?
.
প্রশ্নটা শুনে অবাক হয়ে পরশ বললো-
তুমি করছো আমায় এই প্রশ্ন! হঠাৎ?
-জানতে ইচ্ছে হলো । না মানে তোহা আপুরও কাল এনগেজমেন্ট। আপনি বসে আছেন কেন?
-সত্যি বলবো?
-মিথ্যে শোনার জন্য প্রশ্নটি করিনি ।
-অন্য একজন কে ভালো লাগে ।
.
এমন একটি কথা শোনার জন্য প্রস্তুত ছিলনা ছোঁয়া । সে চোখ জোড়া বড়বড় করে বললো-
সত্যি?
-হ্যাঁ ।
-তবে তাকেই করছেন না কেনো?
-সে যে আমাকে পছন্দ করেনা ।
-বলেছে?
-নাহ ।
-আপনি বলেছেন?
-তাও না ।
-তবে কিভাবে জানলেন সে আপনাকে পছন্দ করেনা?
-মনেহয় ।
.
মুখটা বাঁকিয়ে ছোঁয়া বললো-
হুর! এভাবে হবেনা ।
প্রপোজ করে দিন ।
-প্র প্র প্রপোজ!
-এভাবে তোঁতলানোর কি আছে? ভালোবাসবেন, প্রপোজ করবেন না? কি আশা করছেন? মেয়েটা এসে করুক?
-না তা না । আমি চাইছি সে বুঝতে পারুক, আমি তাকে ভালোবাসি ।
-বুঝার মত কিছু করেছেন?
-বুঝতে পারছিনা ।
-ওরে খোদা সেটাও বুঝতে পারছেন না?
.
মাথা নিচু করে পরশ বললো-
নাহ ।
.
বাগানে কিছুক্ষণ পায়চারি করে ছোঁয়া বললো-
কিছু ফুল, আর একটা কার্ডে নিজের মনের কথা লিখে মেয়েটিকে পাঠাবেন । আপনার তো নিজে বলার সাহস নেই, তাই এভাবে করতে হবে । মেয়েটি চিনে তো আপনাকে?
-তা ভালো করেই চিনে ।
-তাহলে তো হলোই!
-কিন্তু…
-কোনো কিন্তু না । ওকে প্রপোজ করবেন । রাজি না হলে অন্য একটা মেয়ে দেখে বিয়ে দিতে হবে আপনার ।
-অন্য একটা মেয়ে কেনো?
-আন্টিরা চান আপনি বিয়ে করুন তাড়াতাড়ি ।
-সে না হলে আর কেউ হবেনা ।
-এত ভালোবাসেন?
-অনেক বেশি ।
-তাহলে এতদিন বসে আছেন কেনো?
-তাকে হারানোর ভয়ে । যদি কথা বন্ধ করে দেয়? আমার দম আঁটকে যাবে ।
-কথাও হয়?
-হু ।
-পরিচয় কিভাবে?
-সবটা না জানলেই কি নয়?
-আচ্ছা বাদ দিলাম । এবার বলুন কখন প্রপোজ করবেন?
-ভাবছি ।
-পরশু করুন । তোহা আপুর এনগেজমেন্ট এর পর । কাল তাকে সময় দেওয়া উচিত আপনার ।
-সত্যি করবো?
-অবশ্যই । তার কি ফুল পছন্দ জেনে নিন ।
-তোমার কি ফুল পছন্দ?
.
প্রশ্নটি শুনে ছোঁয়া চমকালো ।
পরশ বললো-
এত সুন্দর আইডিয়া দিলে, তোমাকেও ফুল দিব ।
-এখন যেটা দিয়েছেন, লাল গোলাপ । লাল গোলাপই পছন্দ ।
-হুম ।
-আচ্ছা আমি আসি এখন । নাস্তা বানাতে হবে ।
-ওকে ।
.
ছোঁয়া চলে গেলো । পরশ পড়ে গেলো চিন্তায় । ছোঁয়া তাকে প্রপোজ করতে বলেছে, কিন্তু কাকে করবে এটা জানার পর সব ঠিক থাকবে তো?
অজানা এক ভয় কাজ করছে পরশের মনে । সে তার কার্যকলাপের মাধ্যমে বুঝাতে চেষ্টা করে তার ভালোবাসার কথা । কিন্তু কতটুকুই বা বুঝাতে পেরেছে সে!
.
.
তোহার বাসার থেকে মাত্রই এসে বসলো পরশ ও তার পরিবার । আজ তার এনগেজমেন্ট ছিল ।
সাফিনা আহম্মেদ ও শফিউল আহম্মেদ ভেতরের দিকে যেতে চায়লে পরশ বললো-
কাল আমি ছোঁয়াকে প্রপোজ করতে যাচ্ছি ।
.
দুজনেই থেমে গেলেন । সাফিনা আহম্মেদ অবাক হয়ে বললেন-
সত্যি?
-হ্যাঁ সত্যি ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
হঠাৎ এত সাহস মনে এলো কিভাবে?
-ছোঁয়ার জন্যই । সে বলেছে, যাকে ভালোবাসি তাকে জানিয়ে দিতে । মা, বাবা? কালকের দিনটা স্পেশাল আমার জন্য । তোমাদের সবার সামনেই ওকে মনের কথা জানাতে চাই আমি । আমি চাই শুধু আমি নয়, তোমরাও এই বাড়ির বউ হবার জন্য ওকে প্রপোজ করো । বলো করবেনা?
.
দুজনেই একসাথেই বললো-
হু করব!
-থ্যাংক্স । আমি একটু আসছি ।
.
শফিউল আহম্মেদ বললেন-
-কই যাস?
-ছোঁয়ার কাছে ।
.
.
কলিং বেলের শব্দে দরজা খুলে দিলো ছোঁয়া । পরশ তাকে দেখে বললো-
একটু বাইরে আসবে? বাগানে?
-এখুনি?
-হু । দরকার আছে ।
-চলুন ।
.
পরশের সাথে বাগানে এলো ছোঁয়া । সে বললো-
কবে এলেন আপনারা?
-এখুনি ।
-ওহ ।
-কাল মা বাবার বিবাহ বার্ষিকী ।
-তাই!
-হ্যাঁ । আমি চাচ্ছি কালকের দিনটা তাদের জন্য স্পেশাল করতে । ছোটখাটো একটা অনুষ্ঠান করতে চাই । আমরা দুই পরিবার উপস্থিত থাকব, আর সেখানে থাকবে আমার সে । আমি তাকে ফুল ও কার্ড দিব । তবে সবার সামনেই ।
কাল ওকে সবার সামনে প্রপোজ করতে চাই আমি ।
-ওয়াও! একসাথে দুটো ধামাকা!
-তোমার সাহায্য প্রয়োজন কিন্তু ।
-কেমন?
-কাল আমার সাথে শপিং করতে যেতে হবে । মা বাবার জন্য শাড়ি- পাঞ্জাবি নিতে হবে, ঘর সাজানোর জন্য জিনিস আর…
-আর?
-তার জন্য ফুল আর কার্ড ।
-ঠিক আছে । আমি এসব সামলে নিব । রান্নার দায়িত্ব আপুকে দিই?
-হ্যাঁ দাও । তবে হ্যাঁ, এসব কিন্তু সারপ্রাইজই থাকবে । তোমার বান্ধবী বলে সব বলে দিওনা যেন আমার মাকে ।
-একদমই না ।
-আচ্ছা যেতে পারো তুমি এখন, রাত হয়েছে ।
-ঠিক আছে ।
.
ছোঁয়া চলে যাচ্ছে । তার পথের দিকে তাকিয়ে আছে পরশ । কি হবে কাল? ছোঁয়া কি রাজি হবে তার প্রস্তাবে? নাকি দূরে সরিয়ে দিবে তাকে? নাহ, আজ আর ঘুম হবেনা পরশের….
.
চলবে

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here