#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#পঞ্চম_পর্ব
রবি ঠাকুরের সেই গানের চরণ গুলো মনে আছে,,
“যদি আরো কারে ভালোবাসো
যদি আর ফিরে নাহি আসো
তবে তুমি যাহা চাও
তাই যেন পাও,,
আমি যত দুঃখ্ পাই গো……
আমারো পরানো যাহা চায়!”
– ” তাহলে আমি কি করে তাকে আটকে রাখতাম বল?
আরমানের আর আমার ভালোবাসা সবার থেকে আলাদাই ছিল। ছেলেটা আমাকে প্রচন্ড ভালোবাসতো। ইন্টারের ছাত্রী থাকা অবস্থায় প্রথম দেখা হয় আমার আরমানের সাথে। ঐ সময়ও আমি ঠিক বুঝতাম না ভালোবাসা কি জিনিস। কিন্তু আরমান আমার লাইফে আসার পর আমি বুঝতে পারি ভালোবাসা কি? আমিও তার প্রেমে পড়ে যাই। প্রচন্ড ভাবে তার দিকে আকৃষ্ট হয়ে শুধু তাকে নিয়ে পড়ে থাকি। তখন আমার দুনিয়া বলতে শুধু আয়মান ই ছিল। আমার সবটুকু অনুভূতি শুধু তাকে ঘিরেই ছিল।
পরপর দুবার পরীক্ষায় খারাপ করার পর মাথা কাজ করছিলো না। এদিকে দু তিন মাস যাবৎ আরমানের সাথে ঠিকমতো কথা না হওয়ায় মাথা হ্যাং হয়ে গিয়েছিল আমার। শেষমেষ না পেরে আরমানের ক্লোজ ফ্রেন্ড আলিফকে জেরা করে জানতে পারি যে আরমান আমাকে, আমাকে ছেড়ে অন্য একটা মেয়ের সাথে রিলেশনে জড়িয়েছে।
ভেবেছিলাম আলিফ আমার সাথে মজা করছে কিন্তু না! আমার ধারণাকে ভেঙেচুরে যেদিন আরমান তার সদ্য বিয়ে করা স্ত্রী তুলিকে নিয়ে আমার সামনে এসে দাঁড়িয়েছিল। আমার সবটুকু বিশ্বাস ভেঙে দিয়ে অন্যের হাত ধরে আমাকে মাঝ রাস্তায় ফেলে চলে গিয়েছিল সে।
যাকে নিঃস্বার্থ ভাবে ভালোবাসার পরেও নিজের করে রাখতে পারিনি তাকে নিজের মায়ায় আটকে রাখতাম কি করে? জানিসই তো নির্দিষ্ট কারো মায়ায় একবার আটকে গেলে অন্য কাউকে ভালো লাগে না।
আরমানের পরে আর দুঃসাহস হয়ে উঠে নি দ্বিতীয়বার কারো প্রেমে পড়ার।
আর তখন থেকেই সবকিছু নতুন করে বুঝতে শিখেছি, ম্যাচিউর হতে শিখেছি। জীবনটাকে নিজের মতো করে উপভোগ করতে শিখেছি! আমি জানি না যে আমি আরমানকে আজো ভালোবাসি কিনা তবে হ্যাঁ এটা জানি যে আমি আমার লাইফে এই ভালোবাসা নামক বস্তুটাকে দ্বিতীয় বার প্রাধান্য দিতে চাই না।”
সিরাতের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকিয়ে কান্না মিশ্রিত কন্ঠে বলে উঠল চন্দ্রিকা। সিরাত নির্বাক হয়ে বসে আছে চন্দ্রিকার সামনে। তার কিই বা বলা উচিত?
————————————
– ” এই ছিল তোর মনে? অথচ সারা রাস্তায় তুই আমাকে এ সম্পর্কে কিছুই বলিস নি!”
ক্ষিপ্ত হয়ে ধ্রুবের দিকে একটা বালিশ ছুড়ে দিয়ে বলে উঠলো ফাইয়াজ।
ধ্রুব আমতা আমতা করে বলে উঠলো,
– ” আরে কি করছিস? আমি তো বললামই যে লাভ এট ফার্স্ট সাইট হয়ে গিয়েছে। এতে এত জিজ্ঞাসাবাদ করার কি আছে? এর থেকে ভালো হবে তুই প্লিজ আমার সাথে নিশাতের লাইনটা ক্লিয়ার করে দে।”
ধ্রুবের আবদারে ভ্রু কুঁচকে কিছুক্ষণ তাকিয়ে অট্টহাসিতে ফেটে পড়লো ফাইয়াজ।
– ” কিরে এভাবে হাত পা ছড়িয়ে ছিটিয়ে হাসছিস কেন? আমি হাসির এমন কি বললাম?”
ততক্ষণে হাসি থামিয়ে জোরে জোরে শ্বাস নিচ্ছে ফাইয়াজ।
– ” হাসবো না তো কি করবো? তুই বলছিস যে তুই নিশাতের প্রেমে পড়ে গিয়েছিস তাও আবার এক দেখাতে!
এখন আবার বলছিস নিশাতের সাথে তোর প্রেম করিয়ে দিতে, আমাকে। লাইক সিরিয়াসলি ধ্রুব? তুই জানিস আমি এসব প্রেম ভালোবাসা থেকে দশ হাত দূরে থাকি! তাছাড়া শুধু নাম জানলেই তো প্রেম হয়ে যাবে না। নাম্বার, ঠিকানা কিছু তো লাগবে তাই না?”
ফাইয়াজের বলা কথা শুনে সাথে সাথে মুখ চুপসে গেল ধ্রুবের।
ফাইয়াজের চোখ সেদিকে পড়তেই সে কিছুটা গম্ভীর হয়ে ধ্রুবের কাঁধের দিকে হাত এগিয়ে দিল।
রাতের আকাশে পূর্ণিমার চাঁদ স্পষ্ট ফুটে উঠেছে। চারপাশে চাঁদের মৃদু আলোয় আলোকিত হয়ে গিয়েছে। বেডরুমের সাথে এডজাস্ট করা মাঝারি আকারের ব্যালকনিতে ঝুলন্ত দোলনার উপর বসে পা দুটোকে সামনের দিকে এলিয়ে দিয়ে গুনগুন করছে সিরাত।
” বকুলের মালা শুকাবে,,
রেখে দেব তার সুরভী,,,
দিন গিয়ে রাতে লুকাবে
মুছো নাকো আমারি ছবি,,
আমি মিনতি করে গেলাম,,,,
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিংবা দূরে রও,
মনে রেখো আমিও ছিলাম,,,,,
এই মন তোমাকে দিলাম,
এই প্রেম তোমাকে দিলাম,,
তুমি চোখের আড়াল হও
কাছে কিংবা দূরে রও
মনে রেখো আমিও ছিলাম,,,,
এই মন তোমাকে দিলাম,,
এই প্রেম তোমাকে দিলাম,,,
( বাকিটুকু নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)
গুনগুন করে গান গাওয়ার মাঝেই পায়ে নরম তুলতুলে কিছুর সংস্পর্শ পেতেই শিউরে উঠলো সিরাত। কাঁপা কাঁপা হাতে পায়ের দিকটায় হাতড়াতে একটা খরগোশ ছানা হাতের নাগালে এলো তার। খরগোশ ছানাটিকে সযত্নে কোলে তুলে নিল সিরাত। নরম তুলতুলে খরগোশ ছানাটিও সিরাতের সংস্পর্শ পেয়ে নিজেকে গুটিয়ে বসে পড়লো।
– ” নিশাত?”
চন্দ্রিকার কন্ঠ শুনতে পেয়ে ঘাড় ঘুরিয়ে পেছনে তাকালো সিরাত।
– ” চন্দ্রিকা আপু, তুমি? কিছু লাগবে?”
– ” নিশাত কোথায়? ঘুমিয়ে পড়েছে নাকি?”
– ” হ্যাঁ আপু। সারাদিন ক্লান্ত থাকায় আজ একটু তাড়াতাড়ি ঘুমিয়ে পড়েছে নিশাত। কোনো কিছু প্রয়োজন ছিল?”
– ” হ্যাঁ, আসলে আমি নিশাতের আগের কলেজের টি.সি নিয়ে এসেছিলাম। এখানে চট্টগ্রামে কলেজে ভর্তি করতে হলে টি.সি লাগবে। আর আগামীকাল সকালে আমি এখানকার একটা ভালো কলেজে নিশাতের ভর্তি করিয়ে দিবো! চট্টগ্রাম এসেছিস মানে এই না তো পড়াশোনা বন্ধ করে বসে থাকবি।”
চন্দ্রিকার কথায় সিরাত দোলনা ছেড়ে এগিয়ে গেল চন্দ্রিকার দিকে।
– ” আপু, তোমাকে কি বলে ধন্যবাদ দিবো আমি বুঝতে পারছি না। আমার আর নিশাতের জন্য এত বড় রিস্ক নিয়ে আমাদের দুজনকে চট্টগ্রামে নিয়ে আসা, থাকার জন্য ব্যবস্থা করা আবার নিশাতের পড়াশোনা আবার রিস্টার্ট করা! আমি কি করে এত কিছুর ঋণ শোধ করবো বুঝতে পারছি না।”
চন্দ্রিকার হাতের উপর নিজের হাত রেখে অনুনয়ের কন্ঠে বলে উঠল সিরাত।
– ” কেন আমি কি আলাদা কেউ নাকি? মানছি আমাদের মাঝে কোনো রক্তের সম্পর্ক নেই তবুও তো ভালোবাসার সম্পর্ক আছে তাই না? তুই আর নিশাত তো আমার ছোট বোনের মতো, আর ছোট বোনের জন্য এতটুকু তো করতেই পারি।”
চন্দ্রিকার কথায় প্রতিক্রিয়া হিসেবে চন্দ্রিকাকে জড়িয়ে ধরলো সিরাত। চন্দ্রিকাও সিরাতের মাথায় কয়েকবার হাত বুলিয়ে দিল।
পরের দিন সকালের আলো এসে মুখশ্রী ছুঁয়ে যেতেই পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো নিশাত। আড়মোড়া দিয়ে বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াতেই চোখ পড়লো সামনের ব্যালকনিতে দোলনায় ঘুমন্ত সিরাতকে। কয়েক পলক তাকিয়ে মুচকি হেসে ফ্রেশ হওয়ার জন্য ওয়াশরুমের দিকে পা বাড়ালো নিশাত।
ফোনের ক্রিং ক্রিং আর ভাইব্রেশন এর শব্দ কানে পৌঁছাতেই ঘুমের ঘোরে চোখ মুখ কুঁচকে ফেললো ফাইয়াজ। ঘুমের ঘোরে পাশ ফিরে হাতড়ে হাতড়ে টেবিলের উপর থেকে ফোন নিয়ে সেটা কানের কাছে ধরতেই অপর পাশ থেকে একটা মিষ্টি মেয়েলি কন্ঠ ভেসে আসলো।
– ” গুড মর্নিং, ভাইয়ু!”
– ” গুড মর্নিং ফারু! ( ফারিহার সংক্ষিপ্ত)
ঘুম জড়ানো কন্ঠেই বলে উঠলো ফাইয়াজ।
– ” এই তুই এখনো পড়ে পড়ে ঘুমাচ্ছিস ভাইয়ু? আজকে না তোর কনসার্ট শো? কত বেলা হয়ে গিয়েছে আর এখনো তুই ঘুমাচ্ছিস। নট ফেয়ার!”
কনসার্ট শো এর কথা মনে পড়তেই হুড়মুড় করে বিছানায় শোয়া থেকে উঠে বসে পড়লো ফাইয়াজ। হ্যাঁ আজকে রাতে তো তার কনসার্ট শো আছে। কথাটা তো মাথা থেকে বেরিয়েই গিয়েছিল।
– ” এইরে আসলেই ভুলে গিয়েছিলাম। থ্যাঙ্ক ইউ ফারু, নাহলে আজকে সত্যিই মিস হয়ে যেত!”
– ” হয়েছে ঢং বাদ দে! এখন ঝটপট উঠে রেডি হয়ে নিস। আর শো এর জন্য তোকে এত্তগুলা বেস্ট অফ লাক!”
এভাবেই ভাই বোনের কথোপকথনের মাঝ দিয়ে বেশ খানিকটা সময় কেটে গেল। বিছানা ছেড়ে উঠে দাড়াতেই দরজায় ঠক ঠক আওয়াজ পেয়ে সেদিকে এগিয়ে গেল ফাইয়াজ।…………
#চলবে 🍂