বাসন্তী প্রেম পর্ব ৬

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#ষষ্ঠ_পর্ব

সদর দরজার অপর পাশে ধ্রুবকে দেখতে পেয়ে ভ্রু খানিকটা কুঁচকে তাকালো ফাইয়াজ। পরিপাটি হয়ে জ্যাকেট, জিন্স গায়ে চোখে সানগ্লাস লাগিয়ে দরজার সামনে পোজ নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে ধ্রুব।
– ” সাত সকালে এভাবে রেডি হয়ে আমার রুমের দরজার সামনে মূর্তির মত দাঁড়িয়ে আছিস কেন?”
ফাইয়াজের প্রশ্ন শুনে গলা খাঁকারি দিয়ে উঠে ধ্রুব।
– ” সাত সকাল বলছিস? ঘড়িতে দেখেছিস কয়টা বাজে? আর আমার কথা বাদ দিলাম তোর অবস্থা এমন কেন? এখনো টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়ে আছিস, ঘুমে ঢুলছিস! বাই এনি চান্স তুই কি টিশার্ট আর ট্রাউজার পড়েই স্টেজে পারফরম্যান্স করতে চাস?”
ধ্রুবের মুখে এমন উদ্ভট কথাবার্তা শুনে চেহারায় একরাশ বিরক্তির ছাপ স্পষ্ট ফুটে উঠল ফাইয়াজের।
– ” সাত সকাল বলব না তো কি বলব? আমার কনসার্ট শো কয়টায়? সেই রাতের বেলা! আর তুই এখনি রেডি হয়ে বসে আছিস? আচ্ছা বাই এনি চান্স তুই আর ফারিহা দুজন একসাথে মিলে প্ল্যানিং করিস নি তো? নাহলে দুজনেই সকাল থেকে আমাকে শো এর জন্য জ্বালাচ্ছিস!”
ফাইয়াজের ঝাড়ি শুনে মুহুর্তেই মুখ চুপসে গেল ধ্রুবের‌। কোনোমতে আশপাশ তাকিয়ে সেখান থেকে ভো দৌড় দিয়ে নিচতলায় পৌঁছে গেল‌ সে। এতে করে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে ধ্রুবের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে পুনরায় রুমের দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভেতরে চলে আসে ফাইয়াজ। ঘড়ির দিকে তাকিয়ে বিছানা গুছিয়ে নিয়ে পাশের হ্যাঙ্গার থেকে তোয়ালে নিয়ে পা বাড়ায় ফ্রেশ হওয়ার উদ্দেশ্যে।

নতুন কলেজে প্রথম দিন কাটিয়ে বাড়িতে ফিরে নানা রকম গল্প জুড়ে দিলো বড় বোন সিরাতের কাছে নিশাত‌। চন্দ্রিকাও পাশে বসে সবটা শুনে যাচ্ছে। কথাবার্তার এক পর্যায়ে নিশাত বলে উঠলো,
– ” চন্দ্রিকা আপু? সিরাত আপু?
– ” হুম বলো!”
– ” চন্দ্রিকা আপু তুমি তো চট্টগ্রামের অনেক জায়গায়ই চিনো তাই না?”
– ” হ্যাঁ, চিনি তো। কেন কি হয়েছে?”
– ” আমাকে প্লিজ একটা জায়গায় নিয়ে যাবে?”
নিশাতের কথা শুনে খানিকটা মাথা তুলে ভ্রু কুঁচকে ফেলল চন্দ্রিকা। পাশে সিরাত ও বসে অপেক্ষা করছে নিশাতের পরবর্তী কথা শোনার।
– ” কোথায় যাবে তুমি নিশাত?”
– ” আরে আপু তোমাকে সেদিন রেলস্টেশনে একটা ছেলের সাথে দেখা করালাম না, যে আমাদের দুজনকে বাঁচিয়েছিল? তুমি জানো সে সেই ফেমাস রকস্টার মুগ্ধ। আর আজকে তারই একটা লাইভ কনসার্ট শো হবে তাও আবার এই চট্টগ্রামে। আপু প্লিজ আমাকে এই কনসার্ট শো তে নিয়ে চলো না, প্লিজ!”
হঠাৎ নিশাতের এমন আবদারে খানিকটা ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে যায় সিরাত‌। অতঃপর মুখের মধ্যে যথেষ্ট পরিমাণে কাঠিন্যতা বজায় রেখে বলে উঠল,

– ” কোনো প্রয়োজন নেই! লাইভ কনসার্ট তো তুই তোর ফোনেও দেখতে পারবি! অযথা এই ভীড় ভাট্টায়‌, এত এত লোকের মাঝে যাবার প্রয়োজন নেই। চন্দ্রিকা আপু তুমি নিশাতের কথায় কান দিও না তো!”
চন্দ্রিকাকে উদ্দেশ্য করে বলে উঠলো সিরাত‌।

– ” লাইভে দেখা আর ফোনে দেখা কি এক কথা আপু? ইউ নো, তার কত কত ফ্যান ফলোয়ার সেখানে উপস্থিত হবে? আর রকস্টার মুগ্ধের গান শোনার জন্য কত কত মানুষ কত দূর থেকে ছুটে আসবে অথচ আমি এতটা কাছে থেকেও যেতে পারবো না। দিস ইজ নট ফেয়ার, আপু!”
বলেই মুখ ফুলিয়ে বসা থেকে উঠে দাঁড়িয়ে পাশের রুমে গটগট করে চলে গেল নিশাত‌।
এদিকে নিশাতের যাওয়ার পানে তাকিয়ে একটা দীর্ঘশ্বাস ফেললো চন্দ্রিকা।
হঠাৎ হাতের উপর কারো স্পর্শ পেয়ে চমকে উঠে সিরাত‌। পরক্ষণেই চন্দ্রিকার উপস্থিতি টের পেয়ে স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলে সে। মিনিট পাঁচেক বাদে চন্দ্রিকার বলা কথাগুলো কর্নকুহরে পৌঁছাতেই মুখে সুপ্ত হাসির রেখা ফুটে উঠলো সিরাতের‌।

রাতের খোলা আকাশের নিচে বিশালাকার স্টেজে বিভিন্ন ধরনের লাইটিং সহ সজ্জিত করা হয়েছে চারপাশ। স্টেজের দু পাশে বিভিন্ন ব্যান্ডের সরঞ্জামাদি রাখা হয়েছে। কালো পোশাকে সজ্জিত কয়েকদল ব্যান্ড বাজিয়ে টুকটাক আওয়াজ করছে।
উৎসুক জনতার মাঝে শুধু একটা নামই উচ্চারিত হচ্ছে আর তা হলো মুগ্ধ। সব বয়সের মানুষই উপস্থিত হয়েছে সামনের খোলা মাঠে। সবার অধীর অপেক্ষার অবসান ঘটিয়ে একজনের ছায়ামূর্তি স্টেজের উপর পড়তেই সবাই একত্রে মুগ্ধ মুগ্ধ বলে চিৎকার করা শুরু করে।
এদিকে নিশাত, সিরাত আর চন্দ্রিকা বহু কষ্টে ভীড়ের মধ্যে এগিয়ে গিয়ে সামনের একটা খোলা জায়গায় গিয়ে দাঁড়ায়। যার ফলস্বরূপ স্টেজের অনেকটা কাছাকাছি থাকায় সবকিছু স্পষ্ট ভাবে দেখা যাচ্ছে।
পুরো রকস্টার লুকে কাঁধে একটা গিটার ঝুলিয়ে হোয়াইট জিন্স আর ব্ল্যাক জ্যাকেট গায়ে স্টেজে প্রবেশ করলো ফাইয়াজ। সাথে সাথে শোরগোল পড়ে যায় চারপাশে। ফাইয়াজ আলতো হেসে মাইক হাতে নিতেই পাশ থেকে গিটারের সুর কানে ভেসে আসে।

” ইতনি মহাব্বাত কারোনা,,
মেয় ডুব না যাউ কাহি,,,,

ওয়াপাস কিনারে পে আনা,
মেয় ভুল না যাউ কাহি,,,

দেখা যাব সে হ্যায় চেহ্‌রা তেরা,,
মেয় তো হাফতো সে সোয়া নেহি,,,

বোল দো না জারা
দিল মে যো হেয় ছিপা,
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি!

বোল দো না জারা
দিল মে যো হেয় ছিপা,
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি!(২)
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি,,,
হো,ওওওও্‌

মুঝে নিন্দ্ আতি নেহি হে আকেলে‌,,
খাবো মে আয়া কারো,,
নেহি চাল সাকুগা তুমহারে বীনা,
মেরা তুম সাহারা বানো,,

এক তুমহে চাহনে কে আলাভা
অর কুছ হামসে হোগা নেহি,,
বোল দো না জারা
দিল মে যো হেয় ছিপা,,
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি,,

বোল দো না জারা
দিল মে যো হেয় ছিপা,,
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি,,
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি,,,,

পুরো পরিবেশ থমথমে হলেও ফাইয়াজের সুরের সাথে তাল মিলিয়ে মিলিয়ে চারপাশের উপস্থিত মানুষ ও গান গাওয়া শুরু করে দিয়েছে। মিডিয়া আর প্রেসের লোকজন ও ইতোমধ্যে লাইভ টেলিকাস্ট করছে ফাইয়াজ ওরফে রকস্টার মুগ্ধের কনসার্ট শো!
এদিকে নিশাত অতি উৎসাহের সাথে ইনজয় করে যাচ্ছে শো। সিরাত চুপচাপ আনমনে গানের মাঝে কখন‌ যে ডুবে গিয়েছে নিজেই জানে না। মুগ্ধ হয়ে চোখ বুঝে চুপচাপ একমনে‌ গানের লাইন গুলো উপভোগ করে চলেছে।

হামারি কামি তুমগো মেহসুস হোগি,,
ভিগাদেগি যাব বারিশে,,
মেয় ভার কার কে লায়া হু
আনখোন মে আপনি,,

আধুরি ছি কুছ খোয়াহিশেন্
রুহ্ সে চাহনে ওয়ালে আশিক,,
বাতে জিসমো কে কারতে নেহি,,

বোল দো না জারা
দিল মে যো হেয় ছিপা
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি
মেয় কিসিসে কাহুগা নেহি,,,,,,”

গিটারের টুংটাং শব্দের সমাপ্তি ঘটতেই সামনে দাঁড়িয়ে থাকা উৎসুক জনগণের মধ্যে হট্টগোল শুরু হয়ে যায়। প্রত্যেকে ফাইয়াজের সাথে একবার কথা বলার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে আছে। সবার সাথে বিদায় নেয়ার জন্য হাত বাড়াতেই সামনে মৃদু আলোতে দাঁড়িয়ে থাকা সিরাতের উপর চোখ পড়ে ফাইয়াজের। ঠোঁটের কোণে লেগে থাকা মুচকি হাসিতেই চোখ আটকে যায় ফাইয়াজের। মেয়েদের হাসলেও এত স্নিগ্ধ লাগে নাকি? অপলক দৃষ্টিতে সিরাতের দিকে তাকানোর ফুরসৎ এ ব্যাঘাত ঘটে ধ্রুবের ডাক শুনে।
– ” এই ফাইয়াজ, দাঁড়িয়ে আছিস কেন? চলে আয়। শো তো শেষ, ফিরে যেতে হবে আমাদের!”

ধ্রুবের কথা শুনে পুনরায় সামনে তাকাতে ভীড়ের মাঝে যেন মিলিয়ে গেল সিরাত‌। চারপাশ তন্নতন্ন করে খুঁজেও আর দ্বিতীয়বার চোখে পড়লো না সিরাতকে।
– ” সিরাতকে সবসময় আমার চোখের সামনে দেখতে পাচ্ছি কেন? আজ সকাল পর্যন্ত ও তো ঠিক ছিলাম। তাহলে এখন আবার এমন হলো কেন? একটু আগেও সিরাত কি সত্যিই এখানে ছিল নাকি সবটাই আমার চোখের ভুল?”
পুনরায় ধ্রুবের তাড়া পেতেই হাসিমুখে সবার কাছ থেকে বিদায় নিয়ে স্টেজ থেকে নেমে পড়লো ফাইয়াজ।

অহরহ মানুষের ভীড় থেকে বেরিয়ে আসতেই জোরে জোরে কয়েকটা নিঃশ্বাস নিল সিরাত‌। ভ্যাপসা গরমে কপালে বিন্দু বিন্দু ঘাম জমে গিয়েছে ইতিমধ্যে। পাশের সাইড ব্যাগ থেকে পানির বোতল নিয়ে ঢকঢক করে পানি খাওয়া শুরু করে দিলো সে।
– ” ও মাই গড! এত কাছাকাছি থেকে রকস্টার মুগ্ধের গান শুনতে পারবো তা কখনো কল্পনাও করিনি। থ্যাঙ্ক ইউ, থ্যাঙ্ক ইউ সো মাচ! তোমাদের দুজনের জন্যই আমার অনেক বড় একটা ড্রিম পূরণ হয়েছে। নাহলে আজকেও লাইভ শো ফোনে বসে বসেই দেখতে হতো। তোকে এত্তগুলো ভালোবাসা আপু!”
বলেই ফাঁকা রাস্তায় সিরাতকে জড়িয়ে ধরলো নিশাত।
– ” আচ্ছা, অনেক রাত হয়েছে। এখন তো বাড়িও ফিরতে হবে তাই না? আমি দেখছি কোনো গাড়ি পাওয়া যায় কি না! তোমরা এই পাশটায় দাঁড়িয়ে একটু অপেক্ষা করো।”
বলেই আশপাশে চোখ বুলিয়ে নিলো চন্দ্রিকা আর সৌভাগ্যক্রমে কিছুক্ষণ পর একটা ট্যাক্সি ও পেয়ে গেল। হাতের ইশারায় গাড়ি থামিয়ে নিশাতকে চোখের ইশারা দিতেই সিরাতকে নিয়ে গাড়ির দিকে পা বাড়ালো দুজনেই‌। কিন্তু পরক্ষণেই কারো কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে থমকে দাঁড়ালো সিরাতের পা।………

#চলবে🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here