বাসন্তী প্রেম পর্ব ৭

#বাসন্তী_প্রেম 🌼🌼
#লেখনীতে: ইনায়াত আহসান ( ছদ্মনাম)
#সপ্তম_পর্ব

– ” মিস সিরাত?”
কারো কন্ঠস্বরে নিজের নাম শুনতে পেয়ে পা বাড়াতে গিয়েও থমকে দাঁড়ালো সিরাত‌। পাশে নিশাতও একইভাবে থমকে দাঁড়ালো। এত রাতে এই অচেনা শহরে কে তাকে আটকাতে পারে ভেবেই দুশ্চিন্তায় পড়ে যায় সিরাত। পরক্ষণেই আবারো একই কন্ঠস্বর কানে পৌঁছাতেই ধীরে ধীরে পিছে ঘুরে তাকালো সে।

– ” আরে মিস সিরাত আপনি? আপনি এখানে কি করছেন? আরে নিশাত? তুমিও দেখছি এখানে!”
খানিকটা সামনে এগিয়ে এসে উৎসুক হয়ে জিজ্ঞেস করল ফাইয়াজ। ফাইয়াজের কন্ঠস্বর শুনতে পেয়ে হালকা নড়েচড়ে দাঁড়ালো সিরাত‌।
– ” মুগ্ধ ভাইয়া, আপনি? আমরা তো আপনারই কনসার্ট শো এটেন্ড করতে এসেছিলাম! কিন্তু আপনি এখানে কি করছেন?”
ফাইয়াজকে দেখামাত্রই‌ জিজ্ঞেস করে উঠলো নিশাত‌।
নিশাতের প্রশ্নে হালকা ভড়কে যায় ফাইয়াজ। নিশাতের প্রশ্নোত্তরে ঠিক কি বলা উচিত তা বোধগম্য হয়ে উঠছে না তার।
– ” এইরে এখন কি বলবো? এটাই যে স্টেজ থেকে সিরাতকে দেখতে পেয়ে এখানে সিরাতের পেছনে এসেছি! কিন্তু এটা বললে তো সিরাত আর নিশাত দুজনেই আমাকে ভুল বুঝবে। আর বললেও বলবো টা কি?”
ফাইয়াজের ভাবনার মাঝে ছেদ‌ পড়ে নিশাতের কথায়।
– ” কি ব্যাপার, মুগ্ধ ভাইয়া! কোথায় হারিয়ে গেলেন?”
– ” না আসলে ফেরার পথে মনে হলো মিস সিরাতকে দেখলাম তাই সন্দেহবশত ডাক দিয়েছিলাম!”
কোনোমতে বলে উঠলো ফাইয়াজ। নিশাত মুচকি হেসে প্রত্যুত্তরে বলে,
– ” ওও আচ্ছা! তবে আজকের শো টা কিন্তু দারুন ছিল! বাই দা ওয়ে ইউ নো এতদিন পর সামনাসামনি আপনার গান শুনে আমি আপনার আরো বড় ফ্যান হয়ে গিয়েছি!”
কিছুক্ষণ ফাইয়াজের সাথে নিশাতের আলাপচারিতার মধ্য দিয়ে কেটে যায়। কথাবার্তার এক পর্যায়ে ফাইয়াজ বলে উঠলো,
– ” আপনারা এভাবে দাঁড়িয়ে আছেন কেন? চলুন আমার সাথে আমি আপনাদের বাসায় ড্রপ করে দিচ্ছি।”
এতক্ষণ চুপচাপ এক কোণে দাঁড়িয়ে থাকলেও ফাইয়াজের বাড়িতে পৌঁছে দেয়ার কথা শুনে তড়িৎ গতিতে সিরাত‌ বলে উঠলো,
– ” না, তার কোনো প্রয়োজন নেই। আমরা ট্যাক্সি অলরেডি বুক করে ফেলেছি! আপনাকে কষ্ট করে আমাদের বাড়িতে পৌঁছে দিতে হবে না!”
আর কিছু বলতে যাবে তার আগেই পেছন থেকে ট্যাক্সি ড্রাইভার গাড়ির অপর পাশ থেকে এসে বলে উঠে,
– ” ম্যাম সো সরি, গাড়ির ইঞ্জিনে‌ কিছু একটা ফাংশনাল প্রবলেম হয়েছে যার জন্য গাড়ি চলছে না! এখন আপনাদের অন্য কোনো ব্যবস্থাই করতে হবে।”
ড্রাইভারের কথা শুনে হতভম্ব হয়ে যায় সিরাতে। অন্যদিকে ফোনে ইয়াসিন সাহেবের সাথে কথা শেষ করে পুনরায় গাড়ির কাছে আসতেই সিরাতের চিন্তিত মুখ চোখে পড়ে চন্দ্রিকার।
– ” কি ব্যাপার পূরবী? এভাবে বাইরে দাঁড়িয়ে আছিস কেন? গাড়িতে গিয়ে না তোকে আর নিশাতকে বসতে বললাম!”

– ” ঐ গাড়িতে আমাদের যাওয়া হবে না চন্দ্রিকা আপু।”
নিশাতের বলা কথা শুনে পিছন ফিরতেই নিশাতের পাশে দাঁড়িয়ে থাকা ফাইয়াজকে চোখে পড়লো চন্দ্রিকার।
– ” কিন্তু কেন? ”
– ” আমি বলছি! আসলে ট্যাক্সির ইঞ্জিনে প্রবলেম হওয়ার কারণে ট্যাক্সি স্টার্ট হচ্ছে না। আর তার জন্যই আমি বলেছিলাম যে আমি আপনাদের তিনজনকে ড্রপ করে দেই।
আর এতে আপনার কোনো প্রবলেম হওয়ার কথা না তাইনা মিস সিরাত?”
নিশাতের উত্তর দেয়ার পূর্বে ফাইয়াজ কথাগুলো বলে উঠে। ফলস্বরূপ চন্দ্রিকার অনুমতি পেয়ে ফাইয়াজ আলতো হেসে গাড়ির দিকে পা বাড়ায়।
গাড়ির ফ্রন্ট সিটে বসে ড্রাইভ করছে ফাইয়াজ। পাশের সিটে বসে মোবাইলে ঘেঁটে যাচ্ছে ধ্রুব। আর পেছনের সিটে চন্দ্রিকা, সিরাত আর নিশাত পর্যায়ক্রমে বসে আছে। গাড়ি ড্রাইভ করার ফাঁকে ফাঁকে লুকিং গ্লাসে ‌আড়চোখে সিরাতের দিকে দৃষ্টি নিক্ষেপ করে ফাইয়াজ।
– ” কন্ট্রোল ইউরসেল্ফ, ফাইয়াজ! কি করছিস টা কি? একটা মেয়ের দিকে এভাবে বারবার তার অনুমতি ব্যতীত তাকাচ্ছিস? লাইক সিরিয়াসলি! কি হয়েছে আমার! ড্রাইভিং এ কনসানট্রেট কর ফাইয়াজ! ইডিয়ট একটা!”
নিজেই কিছুক্ষণ বিড়বিড় করার পর ড্রাইভিং এ মনোযোগ দিল ফাইয়াজ। ঘন্টা খানেক পর নিশাতের ইন্সট্রাকশন অনুযায়ী ফজিলাতুন্নেসা অনাথ আশ্রমের সামনে এসে গাড়ি থামে। এতে করে কিছুটা সামনের দিকে ঝুঁকে পড়ে সিরাত‌। তবে সিটবেল্ট থাকার কারণে তেমন কিছুই হয়নি।
নিশাতকে অবলম্বন করে পিছু পিছু গাড়ি থেকে বেরিয়ে পড়ে সিরাত‌। ফাইয়াজও এককোণে গাড়ি পার্কিং করে বের হয়ে সিরাতকে বিদায় জানানোর উদ্দেশ্যে এগিয়ে আসে। সবার সাথে হাসিমুখে কথা বলার পর সর্বশেষে সিরাতকে কিছু বলবে তার আগেই সিরাত ক্ষীণ কন্ঠে শুকনো হেসে বলে,
– ” থ্যাঙ্ক ইউ মিস্টার ফাইয়াজ আহমেদ মুগ্ধ।”

সিরাতের কথায় মুচকি হেসে প্রত্যুত্তরে ফাইয়াজ বলে,
– ” ইউ আর ওয়েলকাম‌ মিস সিরাত!”
একে একে বিদায় জানিয়ে আশ্রমের ভিতরে ঢুকে পড়ে সিরাত, চন্দ্রিকা, আর নিশাত। আর সেদিকেই কয়েক পলক তাকিয়ে ফের ড্রাইভিং সিটে বসে পড়ে ফাইয়াজ।

রাত একটার দিকে অগোছালো ভাবে নেশায় বুঁদ হয়ে ঢুলুঢুলু পায়ে চৌধুরী ম্যানশনে প্রবেশ করে রিয়ান‌। হাতে থাকা হুইস্কির বোতল নিয়ে হলরুমের সোফার উপর কোনোমতে হেলান দিয়ে বসে পড়ে।
– ” সিরাত! তুই শুধু আমার! তুই যেখানেই লুকিয়ে থাকিস না কেন, আমি তোকে খুঁজে বের করবোই! তোকে ঘুরে ফিরে আমার খাঁচাতেই বন্দী হতে হবে।”
নেশার ঘোরে উল্টোপাল্টা প্রলাপ বকা শুরু করে রিয়ান‌। মাঝরাতে হঠাৎ নিচতলা থেকে চেঁচামেচির আওয়াজ শুনতে পেয়ে দরজা খুলে বেরিয়ে আসেন সেলেনা চৌধুরী। নিচে হলরুমে সোফার উপর রিয়ানকে নেশাগ্রস্ত অবস্থায় চেঁচামেচি করতে দেখে বিরক্তিবোধ প্রকাশ করলেন তিনি। ছেলের দিনের পর দিন এভাবে বেখেয়ালিপনা আর উশৃঙ্খল আচরণ তার বিরক্তি প্রকাশের অন্যতম কারণ। কয়েক পলক তাকিয়ে পুনরায় আবার রুমে গিয়ে সজোরে দরজা লাগিয়ে দিলেন সেলেনা চৌধুরী।
আর এদিকে মিনিট বিশেক পর প্রলাপ বকতে বকতে সোফার সাথে হেলান দিয়ে ঘুমের মধ্যে তলিয়ে যায় রিয়ান।

” বিখ্যাত রকস্টার ফাইয়াজ আহমেদ মুগ্ধের সাথে গতকাল রাতে এক অচেনা নারীকে অনেকক্ষণ একসাথে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখা গিয়েছে। কে সেই নারী? আর তার সাথে রকস্টার মুগ্ধের ই বা কি সম্পর্ক?”
পত্রিকার ম্যাগাজিন পৃষ্ঠার লাল রঙের আর্টিকেলে লেখা কথাটি। আর তার নিচেই মুগ্ধের সাথে দাঁড়িয়ে আছে একটি নারীর অবয়ব। এমন অপ্রীতিকর ঘটনার পরিস্থিতির বোধ হয় কখনোই সম্মুখীন হতে হয় নি সিরাতের‌। লেখাটার দিকে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নিশাত‌। অভ্যাসগত কারণে প্রতিদিনের ন্যায় আজকেও ম্যাগাজিনের পাতা উল্টাতেই এমন বড়সড় একটা শক খেতে হবে তা কল্পনাও করতে পারে নি সে। পাশে সিরাতের দিকে তাকিয়ে কাঁপা কাঁপা কন্ঠে বলে উঠে নিশাত,
– ” আ,আপ্,আপু! ”
হঠাৎ নিশাতের অস্বাভাবিক কন্ঠ শুনতে পেয়ে মাথা তুলে তাকালো সিরাত। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করে উঠলো,
– ” কি হয়েছে নিশাত? এভাবে কথা বলছিস কেন?”

– ” আপু পত্রিকায় তোর আর মুগ্ধ ভাইয়ার ছবি ছাপিয়ে দিয়েছে সাংবাদিকরা!”
নিশাতের মুখে এমন একটা ভয়াবহ কথা শুনতে পেয়ে রুহ্ কেঁপে উঠলো সিরাতের‌।

– ” কি সব বলছিস নিশাত? পত্রিকায় আমার আর মিস্টার ফাইয়াজের ছবি কেন ছাপা হবে?”
– ” ঠিকই বলছি আপু! কাল রাতে আমাদের চারজনকে একসাথে দেখলেও ছবি তুলেছে তোর আর মুগ্ধ ভাইয়ার। আর সেখানে আর্টিকেল হিসেবে তোর আর মুগ্ধ ভাইয়ার সম্পর্ক জানতে চাইছে রিপোর্টাররা‌।”

সাংবাদিকদের এমন বিরূপ আচরণে হতবাক সিরাত। শেষ পর্যন্ত ফাইয়াজের সাথে তার সম্পর্ক! অথচ আজ পর্যন্ত ফাইয়াজকে ঠিকমতো চিনেও না সে।

– ” চেহারা বোঝা না গেলেও আমার ভয় করছে নিশাত‌। এই নিউজটা যদি কোনোভাবে রিয়ান ভাইয়ার কাছে পৌঁছে যায় আর বাই চান্স যদি সে এটা দেখে ফেলে তাহলে তো আমাকে খুঁজে বের করে ফেলবে সে। আর যদি একবার আমাকে তার হাতের নাগালে পেয়ে যায় তাহলে এর পরিণতি যে কতটা ভয়ংকর হবে তা কল্পনাও করতে পারবি না নিশাত!”
ভয়ার্ত কন্ঠে নিশাতকে বলে উঠলো সিরাত। চোখে মুখে বিরাট এক দুশ্চিন্তার ছাপ।

জিম থেকে বেরিয়ে তোয়ালে গলায় জড়াতেই রুমে হুড়মুড় করে ঢুকে পড়লো ধ্রুব। ধ্রুবকে জোরে জোরে শ্বাস নিতে দেখে কপাল কুঁচকালো ফাইয়াজ।
– ” কি ব্যাপার? সকাল সকাল এমন দৌড়ে এসেছিস কেন? এনিথিং রং? আর তোর হাতে ওটা কি?”
ধ্রুবের দিকে তাকিয়ে বলল ফাইয়াজ।

– ” কি হয়নি সেটা বল! আজকের নিউজপেপারের ম্যাগাজিন আর্টিকেল পড়েছিস?”
– ” না তো! কেন আজকে কি কিছু স্পেশাল আছে নাকি যে আমাকে নিউজপেপার পড়তে হবে?”

ফাইয়াজের ভাবলেশহীন প্রশ্নোত্তরে আর কোনো তর্ক না করে নিউজপেপার টা ফাইয়াজের দিকে এগিয়ে দেয় ধ্রুব। ফাইয়াজও একপ্রকার বিরক্তি নিয়ে নিউজপেপার হাতে নিতেই মুখের রং উড়ে যায় তার। রাগে ক্ষোভে চোয়াল শক্ত হয়ে আসে তার।
– ” ওহ্ নো! ড্যাম ইট! কল দা বাস্টার্ড ইমিডিয়েটলি!”………….

#চলবে 🍂

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here