দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
মিতালীর ডাক পড়ল ডকটরের রুমে।ফরসা,সুন্দরী এবং স্মার্ট গাইনোকোলজিষ্ট শাহানা পারভীন,বন্ধনের ডাক্তার বন্ধু মিজানুর রহমান মিজানের স্ত্রী।
মিতু কিছুটা অবাকই হয় কারন, শাহনার বয়স অনেকটা মিতুর বয়সেরই সমান হবে।যদিও ডকটর মিজান এর বয়স তো বন্ধনের সমানই।বন্ধুদের ভিতর বন্ধন ও মিজানকে দেখলে অবশ্য বোঝা যায় না,যে তাদের পঁয়তাল্লিশ চলছে।অন্যসব বন্ধুদের সেভাবে না দেখলেও একবার এক দাওয়াতে মিতু দেখেছিল, বন্ধনের প্রায় সব বন্ধুরই বয়স এমন বোঝা যায়।
বন্ধন অবশ্য বলেছিল শাহানা,মিজানের মেডিকেলের ছাত্রী।
পরিচয়ের শুরুতে স্বাভাবিক কুশল বিনিময় হলো দুজনের।
শাহানা ফের তাকে কুইক প্রেগনেন্সী টেষ্ট করাতে পাঠালো,হসপিটালের ওয়াশরুমেই।
দ্বিতীয়বারও পজিটিভ রেজাল্ট আসলো।
” কংগ্রেচুলেশন ভাবী।’শাহানার অভিনন্দন মিতুর প্রতি।
মিতুর সাথে পারুলকে দেখে জানতে চাইলো।
“আপনার ননদ, ভাবী? ‘
“না না আমার মামাতো বোন।’
“ও আচ্ছা।আমি তো ননদ ভেবেছিলাম।এরকম একজন ননদ থাকলে আপনার প্রতি কেয়ার রাখার কথা বলতাম।ভাই কেমন সময় দেয়?’
“উনি খুব ব্যস্ত থাকেন।বেশী একটা সময় দিতে পারেন না।’
শাহানা প্রেসক্রিপশন এ কিছু ওষুধ লিখে দেয়।জবাবে জানায়,
“আমাদের দেশের মেইন সমস্যা কি জানেন ভাবী?পুরুষরা বিয়ে করে,কিন্তু স্ত্রী সন্তানসম্ভাবা হলে তার যে স্পেশাল কেয়ার দরকার এটা অনেক পুরুষই ভুলে যায়।বিশেষ করে এসময় মেয়েদের হরমনের যেহেতু কিছু চেইঞ্জ হয় তাই তাদেরকে শারীরিক সাপোর্টের পাশাপাশি মানসিক সাপোর্টটাও খুব দরকার হয়ে পড়ে।নিউ প্রেগন্যান্ট মা সবসময় তার হ্যাসবেন্ডকে এক্সপেক্ট করে।অবশ্য ব্যতিক্রম ও আছে।কিছু হ্যাসবেন্ড আবার অনেক বেশী এক্সাইটেড। তারা আবার সারাক্ষণই স্ত্রীর পাশে পাশে থাকেন।’
মিতু মাথা নেড়ে সায় দেয়।
“জ্বী ভাবী আমার বড় বোনের ফার্স্ট প্রেগনেন্সীর সময় দেখেছিলাম দুলাভাই ভীষন এক্সসাইটেড ছিল।আপুর জন্য তো অফিসও ছুটি নিতো।’
“বাইরের কানট্রিগুলিতে তো ডেলিভারীর সময় বাবাকেও এলাও করে, মায়ের কষ্টটা বোঝানোর জন্য।তবে যাই হোক,আজ তো বলবো ভাই এর আসা উচিত ছিল।যত ব্যস্তই থাকুক।আপনি তো প্রথমবারের মতো মা হতে যাচ্ছেন।উনারও এ জিনিসগুলি জানা দরকার।’
মিতু কিছুটা লজ্জা পায় শাহানার কথায়।
“আপনার ভাই এর আজ ট্যুর পড়ে গেছে,অফিসিয়াল ইন্সপেকশন ।আপনাকে দেখিয়ে আমিও যাচ্ছি সেখানে।’
” তাই নাকি?কোথায়?’
“বান্দরবনে।’
“বান্দরবনে!কিন্তু এ অবস্থায় ইটস রিক্স ভাবী।কারন বান্দরবনের রাস্তা যথেষ্ট উঁচু নীচু,খাদে ভরপুর।’
“উনি তো বল্লেন বিমানে চিটাগাং যেয়ে তারপর হেলিকপ্টারে বান্দরবনে যাওয়া হবে।’
শাহানা কিছুক্ষণ ভেবে বল্ল,
“ওয়েল দেন ওকে।তাহলে তেমন একটা প্রবলেম নাই।তবে হ্যা খুব সাবধান যেখানেই বা যতদূরে যান মুভমেন্ট করবেন কিন্তু সমান জায়গায়।ভাইকে সবসময় ধরে ধরে জায়গাগুলো পার হবেন।আর ওষুধগুলি রেগুলার খাবেন।ডায়েট চার্ট দিয়ে দিয়েছি ফলো করবেন।একমাস পর পরর রেগুলার চেকআপ ওকে….।’
মিতু ডকটরের কাছ থেকে বিদায় নিল।শাহানারও এক বাচ্চা ক্লাস ওয়ানে পড়ে। সেও ছেলে।শাহানার কাছ থেকেই জানলো আজ।
তবে পারুলকে দেখে সত্যি খুব মায়া হচ্ছে। এখনো মুখ গোমড়া করে বসে আছে।
“এমন সুন্দর মুখখানা কি ভার করে রাখলে ভালো লাগে?বেচারা কত শখ করলো দুলাভাই আজ তাকে ট্রিট দিবে।ঐ নীবিড়টা মাঝখানে এসে সব পন্ড করে দিল।’মনে মনে বিড়বিড় করে মিতু।ফের বোনের চিবুকটা ধরে জিজ্ঞেস করে,
“কি ওত ভাবছিস সেই তখন থেকে?ছাড় তো নীবিড়ের কথা।ওতো দুদিন পর কানাডা চলেই যাবে?তুই বরং এক কাজ কর,বাসায় যেয়ে তোর লাগেজটা গুছিয়ে নিয়ে আয়।তারপর আমাদের সাথে ট্রিপে চল।ভালো লাগবে।’
পারুল হেসে দেয় শুনে।
“কি যে বলোনা মিতু আপু?তোমাদের সাথে যাই,কাবাব মে হাড্ডি হতে?’
“তাহলে মন খারাপ করে আছিস কেন?’
“মন খারাপ হবে না?তুমিই বলো,আমাকে নিয়ে তোমার দেবর যা খুশী বল্ল,এমন মিথ্যে কথা বানিয়ে বানিয়ে বল্ল,তোমার কাছে নিজেকে নির্দোষ সাজিয়ে আমাকে গাল খাওয়ালো আর আমি মন খারাপ করবো না….?’
“আহা যা হবার তাতো হয়েছেই এটা নিয়ে ওতো ভাবছিস কেন?’
“ভাববো না মানে?উনি আমার ভার্সিটি এসে আমাকে প্রেম নিবেদন করেছেন,একমাস প্রেমও করেছে আর আমি ভাববো না? এত সহজ…?’পারুল এবার আসলেই চটে যায়।
“আচ্ছা ঠিক আছে এখন মাথা ঠান্ডা কর।এই মুহুর্তে তো কিছু করা যাবে না।আমি পরিস্থিতি বুঝে বন্ধনের সাথে আলাপ করবো।বাট ইউ কনট্রোল ইউরসেলফ।ডোন্ট ট্রাষ্ট হিম নাও।আমরা কথা বলার আগে কোনরকম যোগাযোগ করিস না ওর সাথে।’
কথাটা শেষ হতে না হতেই পারুলের মোবাইলে ম্যাসেজ আসার টোন বাজলো।
পারুল এইবার তার বোন মিতালীকে ম্যাসেজটা দেখালো।
“দেখো তোমার দেবর তো আমাকেই দুষছিল এইবার তাহলে কে এস এম এস করেছে আগে?দেখো কি লিখেছে….আবার সাধু সাজে?’
“বেবী ওয়ার ইউ ওয়াই ইউ ডু নট রিসিভ মাই ফোন।বাজে একটা ঘটনা ঘটেছে রাতে।ভাবী কি কিছু বলেছে?প্লিজ বেবী ডোন্ট মিস আন্ডারস্ট্যান্ড মি…’
ম্যাসেজটা পড়ে যেন পিত্তি জ্বলে যেত লাগলো দু বোনের।
পারুলের তো চোখ ছলছল।ওতো বিশ্বাসই করতে পারছে না নীবিড় এইভাবে তাকে আন্ডারএস্টিমেট করেছে।
মিতু তো রাগে গজগজ করছে।মনে মনে লুজ ক্যারেকটার বলে গাল দিচ্ছে।
“ঘরে রাতে রানুর সাথে পিতলামী আর দিনে আমার বোনের সাথে দাঁড়াও তোমার ভাইকে সব জানাবো লাফাংগা কোথাকার!’
“শোন পারুল তুই কোন রিপ্লাই দিবি না।’
“দেইনা যে নিজের চোখেই তো দেখলা ফোন ধরিনা….তাহলে ফোনে আমাকে এত ঝাড়লা কেন?’
“উফ্ ভুল হয়ে গেছে বলেছিতো বাট তুই কোন জবাব দিবি না এখন।’
“কি করবো তাহলে?’
“ফোন কটা দিন অফ রাখ আমরা না আসা পর্যন্ত অন্য সিম ব্যবহার কর।ওকে হাতেনাতে ধরতে হবে।কেন এসব বানিয়ে বলেছে হি হ্যাজ টু এনসার।’
বোনকে বিদায় দিয়ে মিতুও চিন্তিত মনে বাসায় ঢুকলো।সাড়ে সাতটার মতো বাজে।মোটামুটি সব গুছানো।একটু পরেই জিপ গাড়ীটা আসবে ওকে বিমান বন্দরে নিতে।মিতু ওষুধগুলো ওখান থেকেই কিনে ব্যাগে সযতনে ঢুকালো।
ঘরের চারপাশ এদিক ওদিক উঁকি দিলো।বাবাই এর নতুন টিচার রাখা হয়েছে।আজ স্কুল বন্ধ ছিল।
মিতুও পড়ায় তবে ম্যাথ ও ইংলিশটার জন্য টিচার দরকার বন্ধনকে বলে ঐ রেখেছে বাবাই এর টিচার।
ইদানীং নীবিড়ও আগের মতো বাবাই এর দিকে খেয়াল রাখে না।বাবাইকে সবসময় স্কুলে দিয়ে নিয়ে আসাযাওয়ায় তার ভিতরে কিছুটা বিরক্তি চলে এসেছে।
“বাসায় কি আর মানুষ নেই?আমাকেই কেন সবসময় যেতে হবে….?’মিতুর দিকেই ইশারা করে নানুকে বলছিল সেদিন।
অথচ ভাইকে তো বলেছে, এটা ওর দায়িত্ব
অথচ ইচ্ছে করলেই বাবাইকে ইংলিশ আর ম্যাথটা দেখিয়ে দিতে পারতো।তাতে নাকি তার সময় অপচয় হয়ে যাবে?
মিতালী এবার নিজের মনেই বলে ওঠে,
” কি ছাই পাশ ভাবছি তখন থেকে।’
লাগেজ নিতে সৈনিক এসে গেছে।মিতুকে বন্ধন বলে দিয়েছিল নানুর কাছ থেকে বিদায় নিয়ে আসতে।
আর রানুকে বলতে বাবাই ও নানুর দিকে খেয়াল করার কথা বলতে।
মিতু নানুর ঘরে যায়।কেমন যেনো থমথমে পরিবেশ।
আজ অনেকদিন পর নানুর ঘরে আসলো।
রানু নানুর বিছানায় নানুকে কোলে নিয়ে দুজনেই ঘুমিয়ে আছে।
নানু….. নানু বলে কয়েকবার ডাকলো মিতু।
কিন্তু কোন সাড়া শব্দই বোঝা গেল না।
তবু মিতু নানুর পায়ে হাত ছু্ঁয়ে সালাম করে বল্ল,
“তোমার নাতী আমাকে ট্যুরে নিয়ে যাচ্ছে।আমাদের জন্যে দোয়া করো।’
রানুকে আস্তে করে ডেকে বাবাই ও নানুর দিকে খেয়াল রাখতে বল্ল।
রানু বড় বড় হাই তুলছিল।
“এই অবেলায় এত ঘুম কেন মেয়েটার?রাত দশটায়ও তো বাজে নি?’মনে মনে বিরক্ত মিতু।
বাবাই এর কাছ থেকেও বিদায় নিয়ে নিল,ওর কপাল এর চুলগুলি সরিয়ে দিয়ে। মাথায় হাত বুলিয়ে আশীর্বাদ করে দিল।
চশমার ফাঁকে মিতালী ঠিক বুঝে নিল,বাবাই এর এবার মন খারাপ হচ্ছে।
বুকে জড়িয়ে আদরের পরশ বুলিয়ে হাটু গেড়ে বসলো এবার মিতালী ঠিক যেন বাবাই ওর ছেলে আর ও মমতাময়ী মা।
বাবাইকে বোঝালে দুদিনের বেশী সময় লাগবে না।দ্রুত তাদের আবার দেখা হবে।
আন্টি বলে ডাকে যদিও বাবাই তবু মিতুর কাছে এখন বন্ধন আর বাবাই ছাড়া কাউকে আপন মনে হয় না।
বাবাই এর কপালে স্নেহের পরশ চুমু খেতে মন চাচ্ছিলো।তবে সেদিনটির জন্য আরও কিছুদিন সময়ের
অপেক্ষায় রইল মিতালী।
গাড়ীতে উঠতে হবে।মিতু যাচ্ছে তার বর তাকে ঢাকার বাইরে ট্যুরে নিয়ে যাচ্ছে।এ যে বিশাল আনন্দ মিতু!
কিন্তু এ আনন্দে চিড়ঁ ধরেছে।নানুকে এখন পর্যন্ত খুশীর সংবাদটা সে জানাতে পারেনি। বিদায়বেলায় সালাম করার সময় যখন মিতু বলছিল ঢাকার বাইরে যাচ্ছে,শুধু হুম আওয়াজ করলো নানু।
মিতুর বুকটা বড় ফাঁকা লাগে কেবলই এই একটা আওয়াজ শুনে নানুর কাছ থেকে।
কেন এমন করছে নানু?কি ভুল হয়েছে তার।অথচ এই নাবুই মায়ের মমতা দিয়ে তাকে এতদিন আগলে রেখেছিলেন?
মাতৃহীন মমতার পরে নতুন করে নানুর স্নেহ,ভালোবাসা তাকে এনেদিয়েছিলো মাতৃতুল্য স্বাদ।যে এই সময়টা এখন দরকার তা ক্রমশ যেন হারিয়ে ফেলছে মিতু।
“এখন আমি মা হতে যাচ্ছি নানু,আর তুমি মায়ের মতো আচরন না করে আমাকে কষ্ট দিচ্ছো…..?কেন এমন করছো আমার সাথে?একটা কথাও এখন আমাকে বল্লানা?’
ভীষন একটা চাপা মনোবেদনা নিয়েই জিপগাড়ীতে চড়ে বসল মিতু। (চলবে)
নিয়মিত গল্প পড়তে ভিজিট করুন গল্পের ঠিকানা ওয়েবসাইট এবং গল্পের শহর চ্যানেল সাবস্ক্রাইব করে রাখুন যাতে করে পোস্ট হওয়ার সাথে সাথেই নোটিফিকেশন পান
দ্বিতীয় বাসর(গল্প),পর্ব-৩১
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
বন্ধনের হাতটি ধরে রাত দশটা নাগাত বিমানে ওঠে মিতু।বিমানটি ছিল নব এয়ারলাইনস।
বন্ধনকে দেখামাত্রই প্রাণ ফিরে পায় মিতালী।সাদা আর্মি স্যুট,ফ্লাইট ইঞ্জিনিয়ার এর ক্যাপ,চোখ সানগ্লাস।সহাস্যমুখ,সুদর্শন বন্ধনের।
“উফ্ বাবু আপনাকে আজ আরো বেশী সুন্দর লাগছে!’মনে মনে আওরায় মিতু।
যে পরিমাণ মিতু খুশীতে টগবগ,বন্ধনকে তার থেকে বেশী আনন্দিত লাগছে।মিতুর মনে হচ্ছিল
তার স্বামীকে খুশীর সংবাদটা মোক্ষম সময়ে দিতে পেরেছে।মিতুকে দেখে অতি ব্যস্ত বন্ধন।
বারবার স্ত্রীর হাত,কনুই ধরে থাকছে।যেকোন কোথাও মিতুর গায়ে একটা আঁচড় দিতে দিবে না বন্ধন।বিমানে ওঠার আগে,ড্রাইভারকে বলতে শুনে মিতু,
“সাবধানে নিয়া আসছো তো ম্যাডামকে?কোন ঝাকিটাকি ছিল না তো পথে?গাড়ীর স্পিড কত ছিল….?’
“না স্যার ম্যাডামকে খুব সাবধানে আনছি।গাড়ী খুব স্মুথলি চালিয়েছি ম্যাডাম আরামের সাথে এসেছেন।ফারুককে জিজ্ঞেস করেন।’
ফারুক একজন সৈনিক।এবার কমান্ড স্টাইলে ফারুকে অর্ডার করে।মিতুর কাছে একটা জিনিস বিয়ের পর থেকেই বেশ মজার লাগে।আর্মি অফিসার কথার আগে,পরে, মাঝে যে কতবার স্যার শব্দটা বলে তার হিসার নেই।
“ফারুক।’
“জ্বী স্যার।’
“ম্যাডামের লাগেজ বিমানে তোলার ব্যবস্থা করো।’
“জ্বী অবশ্যই স্যার।’
মিতু বন্ধনের দিকে মুগ্ধ নয়নে তাকিয়ে থাকে।
“কি জান?কি দেখো?’আদুরে গলায় বলে তার স্বামী।
“আপনি রাতেও সানগ্লাস পড়ে আছেন যে?’
“আরে আর্মিদের অনেক সময় এটা পড়ে থাকা লাগে।তাদের কি দিনরাত বলে কিছু আছে?সে গল্প বলছি পরে।’
বিমানে ওঠার আগে বন্ধন তার সিনিয়র এক স্যারের কাছ থেকে বিদায় নেয়।
স্যার এয়ার চিফ মার্শাল জামান পারভেজ বলছেন,
“উনি তোমার ওয়াইফ?’
“জ্বী স্যার।’
“গুড নিউজ শুনলাম।তবে খুব সাবধান।বান্দরবন যথেষ্ট কাটাছেঁড়া,টেরিবল এড়িয়া।স্ত্রীর দিকে এসময় বেশী নজর রেখো।’
“জ্বী অফকোর্স স্যার।স্যার প্রে ফোর আস।’
“অফকোর্স মাই বয়।আর হ্যা নীলগিরি যাচ্ছো,চমৎকার জায়গা, স্ত্রীকে সুযোগ পেলে প্লেস গুলি ঘুড়িয়ে নিয়ে এসো।খালি রেষ্ট হাউজে একা বসিয়ে রেখো না।তাহলে আননেসেসারি এংজাইটি পেয়ে বসবে….।আর ফেমেলিকে নিয়ে বাসায় এসো।তোমার ভাবী খুশী হবে।’
“স্যার থ্যাংকস এ লট স্যার…।’
মিতুও পায়ে হাত দিয়ে সালাম করতে যাবে বাধা দিলেন,বন্ধনের স্যার এয়ার চিফ মার্শাল জামান পারভেজ।
“আরে ডোন্ট ডু দিস … ইটস নাও রিক্সস।’
মিতুও টের পায়।
“ও হ্যা তাই তো কি করছিলাম আমি।হাতে দিয়েও তো সালাম করা যায়।আমি তো ভুলেই গেছিলাম আমি এখন আর একা নই…।’
মিতু লাজুক হাসে।
স্বামীর সাথে তার হাতটি ধরে বিমানে ওঠে এবার।মিতু খেয়াল করলো, আশেপাশের যাত্রীরাও মুগ্ধ নয়নে দেখছে ব্যাপারটা,যে বন্ধন কতটা সযতনে স্ত্রীকে প্লেনে উঠাচ্ছে।
মিতুর কাছে মনে হতে লাগলো পারলে বন্ধন যেন তাকে কোলে তুলে নেয় বিমানে।
“সন্তান আসছে বলেই কি বাবুর এত মায়া?ছেলেরা কি এসময় আসলেই অনেক এক্সসাইটেড থাকে,ডকটর যেরকম বলছিল…।’
অবশ্য মিতু একটা জার্নালে পড়ে জেনেছিল,এসময়ে ছেলেরাও যারা নতুন বাবা হোন তাদের স্ত্রীদের প্রতি অনেক বেশী ফিলিংস আসে,সেটা সন্তান ও স্ত্রী দুজনের প্রতিই দায়িত্ব থেকে।
“আচ্ছা দায়িত্ব তো বুঝলাম,ভালোবাসাটা কেমন বাড়ে?’খুব জানতে ইচ্ছে করে মিতালীর।
বিমান উড্ডয়নের সময় মিতু তো প্রচন্ড ভয়ে অস্থির।বাচ্চা মানুষের মতো আচরন ওর।স্বামীর হাতটা শক্ত করে ধরে।কিছুতেই ছাড়বেনা এ হাত।ভয়ে চোখ বন্ধ করে ফেলে মিতু।এসি বিমানে মিতু যেন ঘেমে যায়।এমন অবুঝ ছেলেমানুষী আচরনে বন্ধনও বেশ ঘাবড়ে যায়।
আকাশে ওড়ার পর বলে,
“ম্যাডাম আপনি নিজে একটা বাচ্চা,তাহলে বাচ্চা জন্ম দিবেন কিভাবে?দেখেন আমার হাতটা কি করেছেন?’
মিতু দেখলো বন্ধনের ফরসা হাতটাতে ওর আঁচড় বসে গিয়েছে।
” ওহ্ বাবু সরি খুব লেগেছে আপনার?জ্বলছে তাই না?’
“আমি আপনার মতো বাচ্চা না যে,এত অল্পেই জ্বলবে।বাট আই এম অরিড এবাউট ইউ,এত অল্পতেই এত ফোবিয়া কেন?বি স্ট্রোং ওকে,ব্রেভি হতে হবে,না হলে বেবী ডেলিভারির দিন কি করবা আল্লাহই জানেন।’
ফের বলে,” নিজে একটা বেবী,জন্ম দিবে আর একটা বেবী,এ তো গুলি বাচ্চা কেমনে সামলাবো হ্যা এত ভয় পেলে?’
মিতু মুচকী হাসে এবার,মনে মনে ফের ভাবে,
“ঠিকই তো এত ভয় পেলে হবে?আর্মি অফিসারের বউ বলে কথা সাহস সঞ্চার করা অবশ্যই উচিত।’
চিটাগাং এ পৌঁছাতে আধাঘন্টা লেগে যায়।তবে বন্ধনরা সরাসরি কক্সবাজার যায়।বিমানে হালকা স্ন্যাকস জাতীয় খাবার যেমন স্যান্ডুউইচ ও পাপায়া জুস খায়।’
পাপায়া জুসটা বন্ধনই স্পেশাল অর্ডার দিয়ে আনিয়েছিল।
মিতুর ভাগ্যটা ভাল।বিকেলের পর থেকে ওর বমী হয়নি।স্যান্ডউইচটা বেশ মজার।অর্ধেকটা খেতে চেয়েছিল বন্ধন পুরোটা খেতে বলে আস্তে আস্তে।
এরপর হেলিকপটারে চেপে বসে,নীলগিরি বান্দরবনের উদ্দেশ্যে।বন্ধন আগে থেকেই হেলিকপ্টার ম্যানেজ করে রাখে,তার সহধর্মিনীর জন্যে।
নীলগিরিতে পৌঁছাতে রাতই হয়ে গেল।মিতু বেশ টায়ার্ড ফিল করে।ওর চোখে ঘুম আসতে থাকে।
আর্মিদের জোনই বলা যায় নীলগিরি রিসোর্ট গুলো।
আর্মিদের তত্ত্বাবধায়নেই এই পাহাড়ী অপরূপা সাজে নীলগীরি এবং এর রিসোর্ট।
মিতু আধার রাতেও বুঝে ফেলে কতখানি সৌন্দর্যমন্ডিত এই নীলগিরি।চাঁদনী পশরে এর সৌন্দর্য আরো বিমোহিত করে ভ্রমনকারীদের।
তবে প্রচন্ড টায়ার্ড দুজনেই।যদিও বন্ধন এত সহজে ক্লান্তি অনুভব করেনা।
রেষ্টহাউজে উঠে মিতালীকে জড়িয়ে নেয় বুকে।
রোমাঞ্চকর আবেগী কএকটা মুহূর্ত।
হঠাৎ ফোন বেজে ওঠে বন্ধনের।
মিতুর থেকে একটু সরে গিয়ে ফোনটা রিসিভ করে বন্ধন।মিতালী শুনতে পায় বন্ধন বেশ জোরেসরেই কাকে যেন ধমকের সুরে বলছে,
“কতবার বলেছি আমাকে যখন তখন ফোন করবে না….?আর বেশী ফোন করলে ব্লকলিষ্টে দিয়ে দিব তোমার নাম্বার…লিভ মি এলোন ওকে…।
মিতালীর বুকটা যেন কেমন করতে থাকে।মনে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ভাবনা জেঁকে বসে,
“কে?কে এত রাতে আমার বাবুকে ডিষ্টার্ব করছে!আর বন্ধনই বা তাকে এত ঝাড়ছে কেন?'(চলবে)