“দ্বিতীয় বাসর ‘ (গল্প)পর্ব-৮৮
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
মিতু পাশের ঘরে গিয়েই অবাক হয়ে যায়।
হীমেল ড্রাইনিং টেবিলে, গ্লাসে পানি ঢেলে খাচ্ছে ফ্রিজ থেকে বোতল বের করে।
হাতে কিসের যেন একটা প্যাকেট।
“হীমেল ভাই? আপনি এখনো যান নি?এখানে কি করছেন?’
“পানি খাচ্ছি মিতু। তাছাড়া আমি খাইনি এখনো খুব ক্ষুধা লেগেছে।’
“সে কি?এখনো খান নি কেন?’
“তোমার জন্যে মিতালী।’
মিতুর মেজাজটা যেন বিগড়ে যায় হীমেলের মুখে মিতালী ডাকটা শুনলে।
“আমার জন্যে মানে?’
“না মানে মুহিন বলছিল তুমি খাওনি।’
“ও আচ্ছা। এখন খাবার দিবো খাবেন?’
“হ্যা তবে তুমিও খাবে কেমন?’
মিতু দেয়াল ঘড়ীটা দেখে সাড়ে বারোটা দশ গেছে।ফের তার বাবার ঘরটায় তাকায়, দরজাটা ভেজিয়ে দিয়েছে।মানুষটা তার এতদিন পর এসেছে,কতোদিন পর আরাম করে ঘুমুচ্ছে তার বাবু।
ঘর অন্ধকার করে ঘুমাতে বড় ভালোবাসে বন্ধন।যদিও মাঝে মাঝে ডিম লাইটটা জ্বালাতো।ডিম লাইটের মৃদু নীল আলোয় মিতালীর মুখটা দেখার জন্যে আর তাতে ভালোবাসার ছোঁয়ায় মাখামাখি করার পর ফের লাইট অফ করে দিতো বন্ধন বাবু।
মিতুর বুকটা মোচড় দিতে থাকে,মানুষটা না খেয়ে ঘুমিয়ে গেছে,সে কি করে খাবে?
কিচেনে প্যাকেট করা খাবার সব।তাছাড়া বিশেষ অতিথি অর্থাৎ জামানের মা, খালা আর ওদের আত্মীয় স্বজনদের জন্যে সেতারা ও মিতু কিছু স্পেশাল আইটেম চাইনিজ খাবার, পায়েস, দইবড়া, ফ্রুট সালাদ আর ফালুদা বানিয়ে রেখেছিল।
মিতু এক প্যাকেট বিরিয়ানি নিয়ে আসলো,সাথে ফ্রুট সালাদ।
“তোমারটা কই মিতু?’
“আমি পরে খাবো। ‘
বলেই আবারো ঐ ঘরটায় উঁকি দেয় মিতু।
“দেখো কত রাত হয়ে গিয়েছে? শরীর খারাপ করবে তো
পরে খেলে।’
প্লেট আগিয়ে দেয় মিতু।এরপর জগ থেকে ফালুদাটা গ্লাসে ঢালে।
মনে মনে ভাবে,
“বাবুকে এক গ্লাস ঠান্ডা ফালুদাটা তখন দেয়া যেতো….’
হীমেল চেয়ার টেনে বসে,জামার হাতা উঁচু করে বেশ মজা করে খাচ্ছে।ওকে দেখে মনে হলো আসলেই তার ক্ষুধা লেগেছে।মিতুকে বারবার ও ঘরটায় উঁকি দিতে দেখে বল্ল,
“তুমি বসে পড়লেই পারতে….।আর বারবার ও ঘরটায় কি দেখছো ওমন করে?’
“কিছু না,আপনি খান…।’
“একটা কথা জিজ্ঞেস করি? ‘
মিতু ফের ঘড়িটা দেখে পৌনে একটায় পৌঁছেছে ঘড়ীর কাঁটা, এখনো সেতারা আর মুহিন আসছে না!ভীষন অস্বস্তি লাগছে তার।
“বলেন?’
“আমাকে কেন আবার আপনি করে বলছো মিতালী?মাঝে তো তুমি করে বলতে?’
“এসব কথা বলতে ভালো লাগছে না।’ বিরক্তি মিতুর।
হীমেলের খাবার প্রায় শেষ।
ঠান্ডা বরফ কুচি দেয়া ফালুদাটার গ্লাসে চুমুক দিয়েই যেন তৃপ্তি পায় ভীষন।
“তুমি বানিয়েছো?’
“হুম।’
“অনেকদিন পর খেলাম বাট টেস্টটা সেই আগের মতোই আছে বরঞ্চ আরো বেড়ে গেছে।’
“থ্যাংকস। ‘
চেয়ার ছেড়ে উঠে টেবিলে রাখা প্যাকেটা বাড়িয়ে দেয় এবার।
“কি এটা?’মিতুর কৌতুহল
“রসমালাই।তুমি নাকি খেতে চাচ্ছো কদিন ধরে আমি বগুড়া থেকে আনিয়েছি বন্ধুকে দিয়ে শুধু তোমার জন্যে মিতু…।’
মিতু আমতা আমতা করছে।
“এটা এতক্ষন বাইরে ছিল? নষ্ট হয়ে যাই নি আর এসবের কি দরকার হীমেল ভাই আপনি কেন এসব করছেন আমার জন্যে?’
“ভয় নেই আমি আনার সাথে সাথে ফ্রিজে রেখে দিয়েছিলাম।প্লিজ বের করে একটু খাওনা আমার সামনে?’
“আমি এখন কিছু খাবো না বলেছি তো।’
“ঠিক আছে ফ্রিজে তুলে রাখো আর একটা কথা…।’
“কি?’
“আম্মা কাল আবার আসতে পারে।’
“কাল হঠা?’
“সেতারা আপার সাথে কিছু জরুরী কথা আছে।’
“কি জরুরী কথা?আজ তো ছিলই মামী আজ না বলে আবার কাল কি এমন কথা?’
হঠাৎ মিতুকে চমকে দিয়ে হীমেল ওর দুপাশটায় ধরে বসলো কাছে নিতে চাইলো যেন।
“মিতু তুমি এখনো বুঝতে পারছো না?মিতু শোনো…. সব ঠিক হয়ে যাবে তোমার সব কষ্ট দূর হয়ে যাবে… আমি তোমাকে আগলে রাখবো মিতালী…আর তোমাকে ভেংগে পড়তে দেবো না….।’
এক ঝটকায় ধাক্কা দিয়ে সরিয়ে দিল মিতু হীমেলকে প্রচণ্ড শক্তিতে।
“আপনার স্পর্ধা দেখে আমি অবাক হয়ে যাচ্ছি হীমেল ভাই?আমাকে স্পর্শ করার সাহস আপনি পান কিভাবে?আর কি ঠিক হবে হ্যা?ডোন্ট ক্রস ইউর লিমিট ওকে….?’
“বাহ্ খুব ভালো মিতু? এই এতটা দিন গত কয়েকমাস আমি তোমাকে খেয়াল রাখছি,ফুপা মারা যাবার পর থেকে আমি প্রতিটা দিন তোমার খোঁজ নিয়েছি আর তুমি বলছো লিমিট ক্রস করছি?কার জন্যে তোমার এতো অহংকার মিতালী?যার জন্যে অসুস্থ হয়ে পাগলের মতো পড়ে আছো..? কই সে তো একটা দিনও তোমার খোঁজ নেয়নি?সে ঠিকই তার প্রথম প্রেমের কাছে ছুটে গেছে? বিশ্বাস না হলে এখনই খোঁজ নিয়ে দেখো ধোকা দিয়েছে বন্ধন সাহেব তোমাকে….! ‘
মিতু হীমেলের কথা গুলো আর নিতে পারছে না।এমনিতেই ও এখন পর্যন্ত সাইকোসোমাটিক রুগী,পুরোপুরিভাবে অসুস্থতা ও দূর্বলতা থেকে কাঁটিয়ে ওঠেনি মিতু এখনো।
ওর মাথাটা যেন ফের ঘোরাতে থাকে।
ফের প্রচণ্ড রাগে জবাব দেয়,
“প্লিজ স্টপ ইট আই সে… বন্ধন আমাকে ধোঁকা দিয়েছে এটা অন্তত আপনার কাছ শুনতে চাই না….আর আপনাকে আমি বা আমার পরিবারের কেউ আজ পর্যন্ত বলেনি আমার কেয়ার নিতে।আপনি নিজেই আমার পেছনে মৌমাছির মতো ঘুড়ে বেড়িয়েছেন,সেতারা আপু, মুহিন ওরাও বলতো বাট তখন বুঝিনি….আপনার লজ্জা হওয়া উচিত হীমেল ভাই নিজের স্ত্রী সন্তানের মোহ এত তাড়াতাড়ি কিভাবে কাঁটে? তাদের পেছনে না ছুটে আমার পেছনে কিসের আশায় ছুটছেন আমি কি বুঝি না? আর বন্ধন নিয়ে কোনোরকম বাজে কথা আমাকে বলবেন না আই ওয়ার্ন ইউ….?
প্রচণ্ড রকম উত্তেজিত মিতু তার ওপর রাতের খাবার খায়নি,বন্ধনকে নিয়ে চিন্তা আবার ওষুধ না নেয়া পর্যন্ত অস্থিরতা বেড়ে যায় মিতালীর।
হঠাৎ করে চেয়ারটা টেনে দুম করে বসে পড়ে হাত মাথায় দিয়ে।
“মিতু এই মিতু কি হয়েছে চোখ খোল?’
সেতারা তাকে ঝাকিয়ে জিজ্ঞেস করে।মুহিন ওর চোখে মুখে পানি দেয় মাথাটা ধরে।
ভ্রুনিক্ষেপ করে হীমেলের দিকে তাকিয়ে সেতারা বলে ওঠে এবার।
“কি ব্যাপার হীমেল?তুমি এতো রাতে এখানে কি করছো?আর মিতু এভাবে কেন?’
হীমেল আমতা আমতা করে বলে,
“আপা আমি তো খাচ্ছিলাম, মিতুই খাবার বেড়ে দিল বাট হঠাৎ করেই ও এক্সাইটেড হয়ে গেল আসলে বন্ধন সাহেব…?’
“বন্ধন?কি হয়েছে বন্ধনের তুমি কিছু বলেছো মিতুকে?’
“বন্ধন সাহেব এসেছিলেন !’
“বন্ধন এসেছিল! কি বলছো হীমেল?তুমি কই দেখেছো?কোথায় ও?’ উত্তেজনা সেতারার।
হঠাৎ চোখমুখ উল্টিয়ে সজাগ হয়ে বসে পড়ে মিতু।ওর মনে হচ্ছিল পায়ের আওয়াজ পেয়েছিল বন্ধনের।
দৌড়ে ওর আব্বুর ঘরটায় যায় বাবু বলে ডেকে।
দরজাটা খোলা দেখেই বুঝে গিয়েছিল বন্ধন আবারও চলে গেছে ওকে ফেলে।
প্রচণ্ড রাগে হীমেলের দিকে তাকায় মিতু।
দুচোখ বেয়ে যেন আগুন ঝরছে ওর,
“বাবু চলে গেছে তাই না?আপনি খুশি তো হীমেল ভাই?’
“মিতু….. বিশ্বাস করো আমি জানতাম না বন্ধন সাহেব এখানে, আমি তো শুধু তোমার খেয়াল নিতে চেয়েছি….?’
“ব্যাস চুপ করেন প্লিজ….চাই না আপনার খেয়াল ঠিক আছে?দয়া করে ক্ষান্ত দিন আমায়…..?প্লিজ লিভ মি এ এলোন….!’
ফ্লোরে বসে মাটিতেই পড়ে কেঁদে ওঠে মিতু প্রবল হাহাকারে…।
(চলবে)”দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প) পর্ব-৮৯
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
কদিন যাবৎ মিতু খেয়াল করছে মুহিন কেমন যেন মনমরা। ক্লাস শেষ করে বাসায় আসে বিকেলে বা সন্ধ্যায় তার প্রিয় মিতু বোনের মন ভালো করার জন্য মজাদার জোকস শোনাতো কখনো বোনকে গল্পের বই,অথবা বাংলা ছায়াছবির সিডি এনে দিতো।
মিতু বাংলা ছায়াছবি বেশ পছন্দ করে।টিভিটা ছেড়ে দিয়ে বিয়ের আগে রান্না করতে যেতো চুলার পাড়ে।অবশ্য বিয়ের পরও এ অভ্যাস ছিল।
তারপর বোনদের সাথে দুটো গল্প করে টিউশনীতে চলে যেত।ছিনতাই এর ঐ বাজে ঘটনার পর কোচিং এ পড়ানো ছেড়ে দিয়েছে।
তাছাড়া মিতু এটা নিয়ে তাকে সাবধান করেছে,
“খবরদার আর কোনোদিনও ওমুখো হবি না,তোর কিসের টাকার অভাব এই বয়সে?আমরা কি মরে গেছি?’
তাছাড়া তিনতলা আর নীচে বাসাটার বড় সাইড যেটা সেটাও ভাড়া দেয়া।
মাসে যে ভাড়া আসে তা সেতারা, মিতুর বাবার একাউন্টে আগে জমা হতো।
সেতারা মালয়েশিয়া থেকে আসার পর ভাড়াটা সংসারের খরচে কাজে লাগাচ্ছে।এছাড়া মুহিনের পড়ার খরচ,মিতালীর চিকিৎসা আর নিজে থাকছে ছোটমেয়ে সিমলাকে নিয়ে এগুলোও চলছে সেটাকা দিয়ে।যদিও নিজের জন্যে কোনো টাকা এভাবে নিতে রাজী নয় সে।আর বাদবাকি যা থাকে তা ব্যাংকে যার যার নামে তাদের এক্যাউন্টে জমা রাখার চেষ্টা করে সেতারা।
তবে বড় চাচা এসে সুন্দরভাবে বন্টনের বিষয়টা তিনজনের মধ্যে নিষ্পত্তি করে নিতে বল্লেন।
তাছাড়া মিতালীর বাবার যখন বেশ কিছুদিন ধরে অসুস্থ তখনও তিনভাই বোনের ভেতর তাদের বাড়ীটা কিভাবে ভাগাভাগি হবে তা জানাতে চেয়েছিলেন।
মুহিন এখনও অনেক ছোট দেখে সেতারা, মিতু কেউ রাজি ছিল না তেমন।
বড় চাচার কথা মতে এখন এ বাড়ীর মালিকানা মুসলিম আইন অনুযায়ী ভাগাভাগি করে নেয়ার জন্যে ভালো ডেভলপারকে দিয়ে দেবার পরামর্শ করলেন।
তাতে চারতলা যদি করা যায়,তাহলে ইসলামি আইন অনুযায়ী দুইটা ফ্ল্যাট পাবে মুহিন।আর একটি করে দুবোন।
সেতারার স্বামী অবশ্য বল্ল,
“তাতেও তো ঝামেলা যে ডেভেলপারকে দেয়া হবে তাতে তাকে জমির কিছু অংশ বা একটা ফ্ল্যাট ও দিয়ে দেয়ার ব্যাপার থাকে।’
“হুম আজকাল ডেভেলপাররা সহজ শর্তে বাড়ী বানিয়ে দিতে রাজী নয়, নানা ধরনের শর্ত দিয়ে বসে,ডেভেলপার দিয়ে বাড়ী বানানোও একটা কঠিন ব্যাপার সবদিক দিয়ে ফায়দা লুটে তারা খুব সহজে বড় লোক হচ্ছে।’
মিতুর চাচাতো ভাই কানন বল্ল।
উত্তরে সেতারার স্বামী আরিফ বল্ল,
“শুধু বড়লোক বলছো?রীতিমতো আঙুল ফুলে কলাগাছ।’
তেমন পছন্দসই ডেভেলপার সেতারারা পাচ্ছিলো না,বলে কোনো ভরসা পাচ্ছিলো না এভাবে ডেভেলপারকে তাদের প্রিয় বাড়ীটা দিয়ে দিতে।তবে বাড়ীটার আর একতলা করার কথা ভাবছে,
মনে মনে ভাবে সেতারা,
“আল্লাহর রহমতে আমাদের দুবোনের ভালো বিয়ে হয়েছে আর আমাদের জামাইরা কেউই ছোটো মনের মানুষ নয়,মিতুর সবকিছু ঠিক হয়ে গেলে বাড়ীর কাজে হাত দিবো ইন শা আল্লাহ।এর মধ্যে ব্যাংকে ফিক্সড ডিপোজিট এ ভাড়ার টাকা জমছে জমুক।আর একতলার জন্যে লন নিবো, দরকার হলে আমাদের দুবোনের জামাই সাহায্য করবে।বন্ধন এসময় থাকলে ও চুপ করে বসে থাকতো না অবশ্যই সে এ ব্যাপারে সবার আগে এগিয়ে আসতো।কিন্তু কি হয়ে গেলো মিতুটার মতো ওমন লক্ষী মেয়েটার সাথে….?’
রাতে মুহিন পড়ার টেবিলে বসে পড়ছিল।মিতু ওর জন্যে হরলিক্স বানিয়ে নিয়ে যায় ওর ঘরে।
রাতে গরম সরতোলা দুধের সাথে হরলিক্স খেতে ভীষন ভালোবাসে মিতালীর আদরের ছোটভাই।
মিতু নিজের স্কুলের বেতন অথবা টিউশনীর টাকা দিয়ে কত ওকে কিনে দিয়েছে?
ওর রুমে ঢুকতেই হাতে থাকা মোবাইলটা সরিয়ে ফেলে মুহিন।পেছনে ফিরে বোনকে দেখে ভীষন অবাক হয় সে।আজ অনেকদিন পর তার প্রিয় হরলিক্সের গ্লাসটা বোনের হাতে দেখলো।
অথচ কে বলবে মাত্র দুদিন আগে বন্ধন এসে আবার চলে যাবার পর বারবার মূর্চ্ছা গেছে তার প্রিয় এ বোনটি। (চলবে)”দ্বিতীয় বাসর’ (গল্প),পর্ব-৯০
হাসিনা সাঈদ মুক্তা
পিছন ফিরে বোনের দিকে তাকিয়ে মুহিন বল্ল,
“মিতু আপু তুমি এখনো ঘুমাও নাই?
“নারে ঘুম আসছিল না… তুই কি করছিস?নে এটা খেয়ে নে..। ‘
হরলিক্সের মগটা বাড়িয়ে দেয় মিতালী, ভাইয়ের জন্যে।মগটাও নতুন এটাও মিতু কিনে দিয়েছে ওকে।
সুন্দর মগটা হাতে নিয়ে এদিক ওদিক তাকায় মুহিন।
ভাবে বোনটা কতো খেয়াল করে তার জন্যে, কিন্তু সে কিছুই করতে পারে না। দীর্ঘশ্বাস ছেড়ে মুহিন বলে,
“আবার আমার জন্যে নতুন মগ এনেছো আপু,হরলিক্সও আজ কিনেছো?আমার জন্যে আর কত খরচা করবা আপু?নিজের জন্যেও তো কিছু কিনো না।বন্ধন দুলাভাই এর জন্যেও তো কিছু কিনতে পারো?’
বলে গরম হরলিক্সের মগে হালকা চুমুক দেয়।
“আর বন্ধন দুলাভাই?কোথায় পাবো তাকে?সেকি আর আমার আছে?’
“আহা আপু এত ভেঙ্গে পড়োনা তোমার নাই মানে?তোমার না তাহলে কার?তুমি তো দেখো নাই দুলাভাই কত কাঁদছিলো তোমাকে ধরে যখন হসপিটালে তোমার সেন্স ছিলনা,তোমার জ্ঞান ফেরার আশায় সিসিইউতে তোমার হাত ধরে বসে থাকসে,ডাক্তারের বারন সত্ত্বেও ….।’
মুহিন তার বোনের হাত দুটো নিজের হাতে চেপে বোঝায় যেন এখন সে তার গার্ডিয়ান ।
ভাইয়ের কথায় চোখ ছলছল এখনই বৃষ্টি নামবে যেন শীতল মনের মিতুর দুচোখ ছাপিয়ে,তাই সাথে সাথে মুহিন কথা ঘোরায় ফের।
“আচ্ছা বাদ দাও তো দুলাভাই এর জন্যে আপাততো কেনাকাটা বাদ….এখন থেকে নিজের জন্যেও কিনবে তুমি,আমার জন্যে সবসময় কিনবে না।’
“তুই যে কি বলিস না?তোর জন্যে কেনা, নিজের জন্যে কেনা আবার আলাদার কি আছে?আর কতোদিন হয় কিছু কেনা হয় না,আজ বেতন পেলাম তাই কিনলাম…।’
মার্চ মাসের শেষ আজ স্কুলের বেতন পেয়েছিল মিতালী।
“তারপরও কাল চলো শপিং এ যাই এবার তুমি কিনবে আর আমি কিনে দিবো তুমি শুধু পছন্দ করবে…।’
মৃদু হেসে দেয় মিতালী পাগল ভাইটার কথায়।
“তাই বুঝি?আচ্ছা কথা ঘোরাচ্ছিস কেন? কি জিজ্ঞেস করলাম? ‘
“কি যেনো?’
“তোর পড়ালেখা কেমন চলছে মুহিন?আর এতরাত জেগে টেবিলে বসে আছিস কেন?’
“এই তো মোটামুটি…বসে আছি কই পড়ছিলাম তো?’
“পড়ছিলি কই? আমি তো দেখলাম মোবাইল টিপছিস?পড়তে ইচ্ছে না করলে ঘুমিয়ে যা,এভাবে স্ক্রীনে তাকিয়ে থাকলে চোখ খারাপ হয়ে যাবে,শরীরও খারাপ করবে..। ‘শাসনের সুর মিতুর মুখে।
“আচ্ছা বাবা তুমি রাগছো কেন?আচ্ছা তুমিও তো জেগে আছো?ওষুধ খেয়েছো?সেতারা আপু আর সিমলা কই ওরা ঘুমিয়ে গেছে?’
“হুম।’
ফের বলে মিতু,
“আচ্ছা ভালো কথা,আঁখির কি খবর রে?ওকে অনেকদিন ধরে দেখিনা,আগে কি সুন্দর ফোন করে খোঁজ নিতো,বাসায় আসতো…কই হারায় গেলো তোর বন্ধু?’
আবারও সেই একই দীর্ঘশ্বাস মুহিনের।
“কি ব্যাপার বলতো মুহিন?ওর সাথে কিছু হয়েছে তোর?’
“না… কি হবে?’
“তাহলে?চুপ করে আছিস কেন?’
“মিতু আপু….আঁখির বিয়ে ঠিক হয়ে গেছে।’
গলাটা যেন নড়ে উঠল খানিকটা মুহিনের।
মিতু শুনেই আঁতকে ওঠে,
“কি বলছিস? এত তাড়াতাড়ি? ‘
“তাড়াতাড়ির কি আছে আপু,মেয়ে মানুষ ভালো ছেলে পেয়েছে এখন শ্বশুরবাড়ি চলে যাবে।’
মুহিনের কন্ঠটায় গম্ভীরতা যেন সে কতো বড় হয়ে গিয়েছে।
“ভালো ছেলে পেয়েছে ঠিক আছে,তবে এত তাড়াতাড়ি করবে কেন? মাত্র কদিন আগে না তোরা ইন্টার পাশ করলি?ওর কি এমন বিয়ের বয়স হয়েছে?’
“সেটা জানিনা,তবে ওর মা এমন পাত্র হাতছাড়া করবে না।’
“তোকে একটা কথা জিজ্ঞেস করি মুহিন?’
“কি? ‘
“তোর কি খারাপ লাগছে ওর জন্যে?আমি কয়েকদিন ধরে খেয়াল করছি তুই কেমন মনমরা চুপচাপ,আগের মতো হাসাস না আমাকে,কথাও তেমন বলিস না সবার সাথে?কি হয়েছে তোর?আর মোবাইলে কার ছবি দেখছিলি…?’
এতগুলো জিজ্ঞাসা শুনে মুহিন কি বলবে বুঝতে পারছেনা,মাথাটা নীচু করে ফেলে সে বোনের কথায়।
“দেখি ছবিটা?’ নির্দেশ করে যেন মিতু মুহিনকে।
“কোন ছবি?’
“যেটা তুই খুব মন দিয়ে দেখছিলি সেটা দেখা আমায়।’
মিতালীর অনুমানই ঠিক ছিল,তার ভাই মন দিয়ে আঁখির ছবি দেখছিল তার মোবাইলে।
আর তেমন কিছু জিজ্ঞেস করে না মুহিনকে।
আঁখির কথা জিজ্ঞেস করতেই ওর প্রচণ্ড মুড অফ হয়ে গিয়েছিল তাতে মিতালীর যা বোঝার বোঝা হয়ে গেছে।
মুহিন অবশ্য জানিয়েছে,আঁখির জন্যে ডাক্তার পাত্র পাওয়া গেছে।বাবাহীন সংসারে আঁখির মায়ের কাছে আঁখির জন্য এমন পাত্র অবশ্যই সুপাত্র।
মিতু এবার তার ঘরে চলে আসে ভীষনরকম মন খারাপ হয় তার।
মুহিন, আঁখিকে বেশ পছন্দ করে,আর করবেই বা না কেন? মুহিনের বিপদ দেখলেই এই মেয়েটাই সবার আগে ছুটে আসতো।
মিতু যখন হাসপাতালে তখন আঁখিও এসেছিল বন্ধুর বিপদে তার পাশে এসে দাঁড়াতে।
শুধু তাই নয়,মিতালীর বিয়ের পর আঁখি কয়েকবার নিজের হাতে রান্না করে মুহিনের জন্যে খাবার পাঠিয়েছে।রহিমা খালা জানিয়েছে এ কথা।
তাছাড়া মুহিনের ছিনতাই এর সেই বাজে ঘটনাটাও আঁখি সবার আগে জানিয়েছিল তার বাসায় সেই গভীর রাতে।
উজ্জ্বল শ্যামলা, ভীষন সুন্দর দুটি চোখ আর মায়াভরা মেয়েটিকে মিতুরও বেশ পছন্দ তার ভাইটির জন্যে।
কিন্তু কিছুই সে করতে পারবে না।এতো অসহায় লাগছিল নিজেকে,বালিশে মুখ গুজে চাপা গোঙানীর মতো করে ওঠে মিতু ।
মানসিক সমস্যাটা বেড়ে যাচ্ছে যেন, ওর বুকে প্রবল যন্ত্রনা হয় ফের।কোথাও কোনোদিক দিয়ে শান্তি পাচ্ছে না মিতালী।বন্ধনকে এসময়ে আরো বেশী মনে হয় তার।
এসময় বন্ধন বাবু কাছে থাকলে ওকে বুকে আগলে রাখতো।
বালিশ চাপা দিয়ে ফুঁপিয়ে ওঠে মিতালী,ফের শিশুর আঁকুতি জানায়,
“বাবু আপনি কই?প্লিজ আপনি ফিরে আসেন…. আমার যে বড় কষ্ট,আপনাকে ছাড়া কাকে বলবো?আপনাকে এখন বড় দরকার আমার….আমি যে আর পারি না সইতে….।’
বিয়ের ছবি গুলি আর আগের ছবি থেকে মিতু বন্ধনের কিছু ছবি তুলে নিয়েছিল তার মোবাইলে।সেগুলো দেখার উদ্দেশ্যে মোবাইল স্ক্রীনে চাপ দেয়।
দেখে অনেকগুলো আননোন নাম্বার।
বন্ধনের নাম্বার তো বাবু দিয়ে সেভ করা আর মুখস্থ মিতালীর।
“এতোদিন পর এতোরাতে কে ফোন দিল?বাবুর নতুন নাম্বার নাতো? ফোন দিয়ে দেখবো এখন….?’
(চলবে)