পদ্মপাতার জল পর্ব ১৪

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১৪
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

হঠাৎ দরজা আটকানোর শব্দে পদ্ম বলল, আমার হয়ে গেছে। দরজা আটকাচ্ছো কেন মনিকা? তারপর পেছন ফিরে চমকে উঠল। কাঁপা গলায় বলল, আকাশ!!!
.
.
.
.
আকাশ মুখে বাঁকা হাসি নিয়ে এগিয়ে এল ওর দিকে। সাথে পদ্মও পেছাতে লাগল। একটু যেতেই ড্রেসিং টেবিলের সাথে ধাক্কা খেল ও। ভয় পেয়ে বলল, আপনি এখানে?

আকাশ- তোমাকে কিছু বলার ছিল।

পদ্ম- যা বলার দূর থেকে বলুন। এমন এগিয়ে আসছেন কেন?

কিছু বোঝার আগেই আকাশ টান দিয়ে পদ্মকে নিজের কাছে টেনে নিয়ে ওর কোমর জড়িয়ে ধরে বলল, তোমাকে আমার খুব ভালো লেগেছে মিস পদ্ম। তোমার এই মুখ, এই চোখ, চোখের চাউনি সবকিছু আমার ভালো লেগেছে।

পদ্ম- ছাড়ুন বলছি।

আকাশ খুব বাজে ভাবে ওর মুখে গলায় হাত দিতে লাগল। পদ্ম নিজেকে ছাড়ানোর চেষ্টা করল কিন্তু আকাশের জোরের কাছে কিছুই করতে পারছে না।

আকাশ- কেন? আমার ছোঁয়া বুঝি খুব খারাপ লাগছে। ইয়াশও তো এভাবে ধরেছিল, কই তখন তো খারাপ লাগেনি।

পদ্ম- হ্যাঁ, ও আমাকে এভাবে ধরেছিল তবে আপনার মতো বাজে ইনটেনশান নিয়ে ধরেনি।

আকাশ- ও তাই। তাহলে ও কি ভেবে ধরেছিল?

বলে আকাশ পদ্মের ঠোঁটে নিজের হাত বুলিয়ে আনল। ঘৃণায় পদ্মের সারা শরীর কেঁপে উঠল। ও সবশক্তি দিয়ে ধাক্কা মারল আকাশকে। ও ছিটকে পড়ল মেঝেতে। তখনই গ্রাউনের হাতার কিছুটা ছিঁড়ে আকাশের হাতে চলে এল। ও মেঝে থেকে ওঠার আগেই পদ্ম দ্রুত ওয়াশরুমে ঢুকে দরজা আটকিয়ে দিল।

আকাশ জোরে দরজা ধাক্কা দিতে দিতে বলল, মিস পদ্ম, দরজা খোলো। কি হল? কথা কানে যাচ্ছে না? ভালোয় ভালোয় দরজা খোলো না হলে দরজা ভেঙে তোমাকে বের করে আনব।

পদ্ম দরজা খুলছে না দেখে অনেকক্ষণ পা দিয়ে লাথি মেরে দরজা খোলার চেষ্টা করল। শেষে না পেরে বলল, এখানে থেকে তুমি আমার থেকে বাঁচতে পারবে না। আজ হয়ত বেঁচে যাবে। কিন্তু তোমাকে আমি খুঁজে বের করব। কতদিন পালবে? তুমি আকাশ চৌধুরীকে চেন না। যা ভালো লাগে তা আদায় করে নেয়। তোমাকেও আমি নিজের করে তবেই ছাড়ব।

আকাশ রেগে গ্রাউনের টুকরোটা মেঝেতে ফেলে দিয়ে রুমের দরজা খুলে বেরিয়ে গেল। পদ্ম ওয়াশরুমে বসেই কাঁদতে লাগল।
.
.
.
.
ইয়াশ আশেপাশে তাকাচ্ছে। পদ্মকে কোথাও দেখতে পাচ্ছে না। এদিকে আকাশও হাওয়া। ব্যাপারটা ঠিক ভালো লাগছে না ওর কাছে। এমন সময় ও আকাশকে দোতলা থেকে নিচে নামতে দেখল। কিন্তু পদ্মের দেখা নেই। শেষে ইরিনাকে জিজ্ঞেস করল, আপু, পদ্ম কোথায়?

ইরিনা- হঠাৎ ওকে খুঁজছিস কেন?

ইয়াশ- দরকার আছে।

ইরিনা- ব্যাপার কি? আজ সাহেব শুধু পদ্মের পিছে পড়ে আছে।

ইয়াশ- উফ্, দয়া করে বলবে ও কোথায়।

ইরিনা- জানি না, বাপরে বাপ। আছে হয়ত আশেপাশে। উপরেও হতে পারে।

ইয়াশ উদ্বিগ্ন হয়ে বলল, তুমি দেখেছ ওকে উপরে যেতে?

ইরিনা- না রে বাবা, আন্দাজ করলাম আরকি। ভাই কমন সেন্স বলেও তো একটা ব্যাপার আছে নাকি?

ইয়াশ দৌঁড়ে দোতলায় চলে গেল। ইরিনার লেকচার শোনার মতো সময় এখন নেই। ইয়াশ এ রুম ও রুম সব খুঁজে ফেলল। কোথাও পদ্মকে দেখতে পেল না। হঠাৎ মাঝের রুমটা থেকে বের হওয়ার সময় বলল, মনে হচ্ছে কেউ আছে রুমে।
ইয়াশ রুমটাতে আবার ফেরত গেল। এদিক ওদিক তাকাল। কেউ নেই। ফিরে আসার সময় মেঝেতে পড়ে থাকা গ্রাউনের টুকরোটা ওর নজরে পড়ল। হাতে তুলেই চিনতে পারল। তখনই ওয়াশরুম থেকে কান্নার আওয়াজ শুনতে পেল। ইয়াশ দ্রুত দরজায় নক করে বলল, পদ্ম, তুমি এখানে? এ যে দেখো আমি ইয়াশ। দরজা খোলো দেখো আমি এসেছি। পদ্ম……

দরজা খোলার শব্দে ইয়াশ সরে এল। পদ্ম দরজা খুলেই ইয়াশকে জড়িয়ে ধরে কাঁদতে লাগল। ইয়াশ ওর মাথায় হাত বুলিয়ে বলল, আমি এসে গেছি তো বোকা মেয়ে। কাঁদছ কেন? দেখি চোখ মুছো। আমি আছি তো। কি হয়েছে? আমাকে বলো।

পদ্ম কান্না করতে করতে সব খুলে বলল। ইয়াশ যা ভেবেছিল তাই হয়েছে। সব শুনে রাগে হাত গুটিয়ে নিয়ে বলল, ওর এত সাহস হয় কি করে? নিচে চলো। আমিও দেখি সবার সামনে কি করে। ইয়াশ যেতে লাগলে পদ্ম ওকে বাঁধা দিয়ে বলল, ওর জন্য আদনান ভাই আর নিলা আপুর অনুষ্ঠানটা নষ্ট করবেন না।

ইয়াশ- বেশ। তবে এখানে এক মুহূর্ত না। এখুনি বাড়ি ফিরব।

পদ্ম- কিন্তু……

ইয়াশ- কোনো কিন্তু না।

ইয়াশ নিজের কোর্ট খুলে পদ্মকে পরিয়ে দিল। তারপর ওর হাত ধরে নিচে নেমে ইরিনার কাছে এল। ইয়াশ ওর হাত শক্ত করে ধরে আছে। ব্যাপারটা দেখে ইরিনা মোটেই অবাক হল না। বরং হাসি মুখে বলল, পেলি তাহলে।

ইয়াশ- হুম। আমরা বাড়ি ফিরে যাচ্ছি।

ইরিনা- হঠাৎ!?

ইয়াশ- বাড়িতে গেলে বলব। তোমরা যাবে?

ইরিনা- খাবার খেয়ে যাবি না?

ইয়াশ- ইচ্ছে করছে না।

ইরিনা বুঝতে পারল কিছু একটা ঘটেছে। তাই আর জোর করল না। বলল, বেশ যা। আমরা আরেকটু পরে যাব।

ইয়াশ- তুমি আদনান আর নিলাকে একটু ম্যানেজ করে নিও। আব্বু আম্মুকেও বলে দিও।

ইরিনা- ওকে। যা। সাবধানে যাস।

ইয়াশ- হুম।

ইয়াশ পদ্মকে নিয়ে বেরিয়ে গেল। কারো নজরে না পড়লেও একজনের নজর ঠিকই ওদের দিকে ছিল।
.
.
.
.
গাড়িতে দুইজন চুপচাপ বসে ছিল। বাড়িতে ঢুকার পর ইয়াশ জিজ্ঞেস করল, এখন ঠিক আছো?

পদ্ম- হুম।

ইয়াশ- একলা রুমে যেতে পারবে?

পদ্ম- হুম।

ইয়াশ- কিছু খাবে না?

পদ্ম- খাবো। ফ্রিজে খাবার আছে। আগে ফ্রেশ হয়ে নেই।

ইয়াশ- আচ্ছা।

দুজনে নিজেদের রুমে ঢুকে দরজা মারল। গিয়ে নিজেদের বিছানায় বসল। ইয়াশ ভাবছে পদ্মের কথা আর পদ্ম ভাবছে ইয়াশের কথা। হঠাৎ করেই কেয়ারিং হয়ে গেছে ওর প্রতি ইয়াশ। কেন বুঝতে পারছে না। তবে একটা জিনিস ঠিকই বুঝতে পারছে, ইয়াশের কেয়ারিং ওকে মনের দিক থেকে দুর্বল করে দিচ্ছে। ওর কথা ভাবলেই অন্যরকম অনুভূতি কাজ করে। হৃদপিণ্ডটা হাতুড়ি পেটায়। পদ্ম নিজের মাথা থেকে এসব চিন্তা দূর করে ফ্রেশ হয়ে নিল। ফ্রেশ হয়ে রুম থেকে বের হতে দেখল ইয়াশও রুম থেকে বের হয়ে নিচে যাচ্ছে। পদ্মকে দেখে বলল, তুমি ঠিক আছো?

পদ্ম- হুম।

ইয়াশ- খাবে তো?

পদ্ম- হুম।

ইয়াশ- চলো নিচে যাই।

দুজনে নিচে নামতেই পদ্ম ফ্রিজের দিকে চলে গেল। খিচুড়ির বাটি বের করে গরম করে নিল। ইয়াশ করতে চেয়েছিলো কিন্তু পদ্ম করতে দেয়নি। বাটিটা ডাইনিং টেবিলে রেখে বলল, আসুন, খেয়ে নিন।

ইয়াশ- তুমি?

পদ্ম- খেতে ইচ্ছে করছে না।

ইয়াশ- চুপ করে বসো।

পদ্ম- কিন্তু……

ইয়াশ ওর পাশের চেয়ারটা টেনে ওকে জোর করে বসিয়ে দিল। এরপর একপ্লেট খিচুড়ি নিয়ে এক লোকঙা ওর দিকে বাড়িয়ে বলল, হা করো।

পদ্ম- কিন্তু……

ইয়াশ- তুমি এতো কিন্তু কিন্তু করো কেন? চুপচাপ খেয়ে নাও।

ইয়াশ পদ্মকে খাইয়ে দিয়ে নিজেও খেয়ে নিল। হঠাৎ ফোন এল বাড়ির ল্যান্ড লাইনে। ইয়াশ ফোন ধরে বলল, হ্যালো।

ইরিনা- কে ইয়াশ?

ইয়াশ- হ্যাঁ।

ইরিনা- কি রে, তোদের ফোন কোথায়? একটাও ফোন ধরিস না কেন?

ইয়াশ- ফোন রুমে। আমরা নিচে খেতে নেমেছি।

ইরিনা- ও, শোন না……

ইয়াশ অপর পাশের কথা শুনে হঠাৎ চুপ করে গেল। পদ্ম ডাইনিং টেবিলের চেয়ারে বসে অস্থিরভাবে পা নাড়াতে লাগল। ইয়াশ ফোন রেখে এসে বসতেই ও জিজ্ঞেস করল, কে?

ইয়াশ- আপু।
পদ্ম- কি বলল আপু?

ইয়াশ গলা পরিষ্কার করে বলল, বলল যে……

পদ্ম- কি?

ইয়াশ- বলল যে মানে…

পদ্ম- কি বলেছে বলবেন তো।

ইয়াশ- আজকে ওরা কেউই বাড়িতে আসতে পারবে না।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here