পদ্মপাতার জল পর্ব ১৫

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১৫
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

পদ্ম- কি বলেছে বলবেন তো।

ইয়াশ- আজকে ওরা কেউই বাড়িতে আসতে পারবে না।
.
.
.
.
শুনেই পদ্ম চুপ করে গেল। পুরো বাড়িতে শুধু ওরা দুজন। কাজের লোকরা আউট হাউজে চলে গেছে ওরা বেরোনো সময়। ভেবেই পদ্ম উসখুস করতে লাগল। ইয়াশও চুপ করে ওর প্লেটে থাকা খিচুড়ি গিলতে লাগল। খাওয়া শেষে মাত্র হাতটা ধুয়ে ইয়াশ বলল, এগুলো থাক। পরে ধুয়ে নেব।

পদ্ম- আচ্ছা।

দুজনেই দশ হাত দূরে দাঁড়িয়ে আছে। কেউ কিছু বলছে না। এরকম বেশ কিছুক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকার পর ইয়াশ জিজ্ঞেস করল, কিছু বলবে?

পদ্ম- উঁহু।

ইয়াশ- তাহলে রুমে যাওয়া যাক।

পদ্ম- হু? হ্যাঁ। চলুন।

ওরা রুমের দিকে মাত্র পা বাড়াল, সাথে সাথে কারেন্ট চলে গেল। ইয়াশ, পদ্ম দুজনেই যেখানে ছিল ওখানেই আবার দাঁড়িয়ে গেল। পদ্ম ভয় পাওয়া গলায় বলল, কি হল?

ইয়াশ- দাঁড়াও আমি দেখছি।

ইয়াশ হাতিয়ে ল্যান্ড লাইনের কাছে যাওয়ার চেষ্টা করতেই একবার হোঁচট খেল। শব্দ শুনে পদ্ম উদ্বিগ্ন গলায় বলল, আপনি ঠিক আছেন?

ইয়াশ- হ্যাঁ হ্যাঁ। ঠিক আছি।

ইয়াশ ল্যান্ড লাইনের কাছে গিয়ে দারোয়ানকে ফোন করে বলল, কদম চাচা, বাড়ির কারেন্ট চলে গেছে কেন?

কদম চাচা- বাবা, তার পুইড়া গেছে। একটু টাইম লাগবো। এখুনি ঠিক কইরা দিতেসি।

ইয়াশ- আচ্ছা।

ইয়াশ ফোন নামিয়ে রেখে বলল, তার পুড়ে গেছে। একটু পরে ঠিক হয়ে যাবে।

পদ্ম- ও। আমি রুমে যাব।

ইয়াশ- যেতে পারবে অন্ধকারে?

পদ্ম- হুম, পারব।

পদ্ম অনুমান করে সিঁড়ির রেলিং ধরে উপরে চলে গেল। ইয়াশও ওর পেছন পেছন উপরে গেল। রুমে ঢোকার সময় শব্দ শুনে বুঝল পদ্ম দরজার ছিটকিনি বন্ধ করে দিয়েছে। ইয়াশও নিজের রুমের দরজা আটকে দিল। বাইরে এক ফালি চাঁদ উঠেছে। তার আলোয় রুমের সব আবছা বোঝা যাচ্ছে। তাই ফোনের লাইট জ্বালিয়ে দুজনেই বিছানায় শুয়ে পড়ল। কারো চোখে ঘুম নেই। ইয়াশ কয়েকবার এপাশ ওপাশ করে একটা বই নিয়ে বসল। একটু পর বই রেখে ফোনে গেইম খেলল। কিন্তু সময় কিছুতেই যাচ্ছে না।
.
.
.
.
হঠাৎ নিঃশব্দ পরিবেশে দরজা খোলার শব্দে বুঝতে পারল ওর মতো পদ্মও জেগে আছে। উঁকি মেরে দেখল বারান্দার দরজা খুলে বসেছে ওখানে। কি ভেবে ইয়াশ নিজের গিটারটা নিয়ে বসল বারান্দার দরজার চোকাঠে। প্রথমে হালকা সুর তুলল। তারপর চাঁদের হালকা আলোয় গলা ছেড়ে দিল।

♪কেউ কথা রাখেনি ভালোবাসেনি
কেউ চুপি চুপি পায় কাছে আসেনি
কেউ গোধূলি বেলায় দুহাত বাড়িয়ে
খুব আদর মেখে আর ডাকেনি।

ঘর ছাড়া বাতাস হয়ে তোমায় ভাসাতে চাই
পালতোলা নৌকা আবার হারাবো
ঘুম ভাঙা সকাল হয়ে তোমায় হাসাতে চাই
চোখ জোড়া স্বপ্নে উড়ে বেড়াবো।

কেউ দূর আকাশে জোছনা মাখে
কেউ জোনাকির আলোয় গল্প লেখে
কেউ ধূসর রঙে রঙ্গিন ছবি আঁকে
ভুতানতিমালা আবারো হাসে

ঘর ছাড়া বাতাস হয়ে তোমায় ভাসাতে চাই
পালতোলা নৌকা আবার হারাবো
ঘুম ভাঙা সকাল হয়ে তোমায় হাসাতে চাই
চোখ জোড়া স্বপ্নে উড়ে বেড়াবো।

চেনা পথগুলো আজ দূরে দূরে
ধুলো ধুলো হয়ে তোমাকে ঘিরে হারায়
সেই পুরানো ঘর পুরানো চাদর
সব স্মৃতি হয়ে দক্ষিণ হাওয়ায় ভাসে

কেউ কথা রাখেনি ভালোবাসেনি
কেউ চুপি চুপি পায় কাছে আসেনি
কেউ গোধূলি বেলায় দুহাত বাড়িয়ে
খুব আদর মেখে আর ডাকেনি।

ঘর ছাড়া বাতাস হয়ে তোমায় ভাসাতে চাই
পালতোলা নৌকা আবার হারাবো
ঘুম ভাঙা সকাল হয়ে তোমায় হাসাতে চাই
চোখ জোড়া স্বপ্নে উড়ে বেড়াবো।♪

গান শেষ হতেই রুমের বাতি জ্বলে উঠল। ইয়াশ আবার উঁকি দিল। পদ্ম এখনও বসে আছে। কি ভেবে গিটারটা রেখে ঐ বারান্দায় টপকে গেল। পদ্মের কাছে গিয়ে দেখল ও ঘুমিয়ে গেছে। চাঁদের আলোয় ওকে দেখতে ভালো লাগল ওর। মায়া ভরা মুখটা দেখলে সারাদিন তাকিয়ে থাকতে ইচ্ছা করে। ইয়াশ ওকে কোলে নিয়ে বিছানায় শুইয়ে দিল। বাতি নেভাতে গিয়ে কি মনে করে আবার ওর কাছে ফিরে এল। চুলগুলো মুখের উপর এলোমেলো ভাবে পড়ে আছে। ইয়াশ হাত দিয়ে চুলগুলো একপাশে সরিয়ে রেখে কপালে আলতো করে একটা চুমু এঁকে দিয়ে ফিসফিস করে বলল, তুমি যদি জানতে আমি কবে থেকে তোমাকে কাছে পাওয়ার জন্য উদ্বগ্রিব হয়ে আছি! তারপর লাইট নিভিয়ে বারান্দার দরজা টেনে দিয়ে চলে এল নিজের রুমে।
.
.
.
.
সকালে ঘুম ভাঙতেই পদ্ম নিজেকে বিছানায় আবিষ্কার করল। দেখে লাফ দিয়ে উঠে বসল বিছানায়। ওর স্পষ্ট মনে আছে, রাতে চাঁদের আলোয় ইয়াশের গান শুনতে শুনতে ঘুমিয়ে পড়েছিল। তারপর বিছানায় এল কিভাবে! ভেবেই ও ভয় পেয়ে গেল। খারাপ চিন্তাগুলো মাথা থেকে ঝেড়ে ফেলে বিছানা থেকে নেমে এল। ফ্রেশ হয়ে আস্তে করে বারান্দার দরজা ঠেলে ইয়াশের বারান্দায় উঁকি দিল। ইয়াশ ওর অপেক্ষায় বসে ছিল চেয়ারে। দরজা খুলে উঁকি দেওয়ার সাথে সাথে মাত্র বলতে গেল, গুড মর্নিং। সেটা শোনার আগেই ইয়াশকে দেখে দ্রুত ভেতরে ঢুকে দরজা মেরে দিল। ইয়াশ ব্যাপারটাতে একটু ভ্যাবাচেকা খেয়ে গেল। পদ্ম দরজার পাশে বুকে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে। নিজেকে নিজে বকে বলল, কেন করলাম এটা? আর এত লজ্জাই বা পাচ্ছি কেন? কিন্তু কাল আমি বিছানায় কি করে গেলাম? ভেবেই লজ্জায় মুখ ঢেকে বসে পড়ল দরজার চৌকাঠে।

তারপর আবার বলল, ধুর, যত সব আউফাউ চিন্তা করছি। আর এত লজ্জা পাওয়ার কি আছে? আমি তো কিছু করিনি তাহলে পালাচ্ছি কেন? কিন্তু ……সামনে যেতেও তো সাহস পাচ্ছি না। বুকের ভেতরে হৃদপিণ্ডটা এত জোরে বিট করছে। মনে হয় এখনই বেরিয়ে আসবে। ধ্যাত, এবার কি করি! এই আজকে কয় তারিখ! এ বাবা, আজকে তো এডমিশন। একেবারে ভুলে গেছি। এখনই রেডি হয়ে বের হতে হবে না হলে তো খবর আছে আমার। পদ্ম দ্রুত একটা থ্রি পিস পরে নিয়ে রেডি হয়ে এল। তারপর দরজা খুলে উঁকি মেরে দেখল ইয়াশ আশে পাশে আছে কি না। তারপর আস্তে করে মাত্র বের হবে তখনই ইয়াশ ওর রুম থেকে বেরিয়ে এল। ওকে দেখেই পদ্ম আবার তাড়াহুড়ো করে রুমে ঢুকে যাচ্ছিল তার আগেই ইয়াশ ওকে ডেকে বসল।

ইয়াশ- পদ্ম।

পদ্ম থমকে গেল। ইয়াশ জিজ্ঞেস করল, কি হয়েছে?

পদ্ম- কিছু না তো।

ইয়াশ- তাহলে আমার দিকে তাকাচ্ছো না কেন? আমার কেন যেনো মনে হচ্ছে তুমি আমার থেকে পালাচ্ছো।

পদ্ম- পালাতে যাব কেন?

ইয়াশ ওর কাছে গিয়ে নিজের দিকে ফেরাল। পদ্মর কেন যেন ইয়াশের চোখের দিকে তাকাতে ভয় করছে। তাই নিচের দিকে তাকিয়ে আছে। ইয়াশ হালকা ধমকের সুরে বলল, নিচে কি দেখছো? আমার চোখের দিকে তাকাও। ধমক খেয়ে পদ্ম সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকাল। পদ্মের চোখের হালকা কাজলের ছোঁয়ায় ইয়াশ কোন অজানায় হারিয়ে গেল।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here