পদ্মপাতার জল পর্ব ১৬

#পদ্ম_পাতার_জল
#পর্ব_১৬
#সাহেদা_আক্তার
#গল্প_কথার_ঝুঁড়ি

ইয়াশ হালকা ধমকের সুরে বলল, নিচে কি দেখছো? আমার চোখের দিকে তাকাও। ধমক খেয়ে পদ্ম সরাসরি ওর চোখের দিকে তাকাল। পদ্মের চোখের হালকা কাজলের ছোঁয়ায় ইয়াশ কোন অজানায় হারিয়ে গেল।
.
.
.
.
পদ্ম- হ্যালো।

ইয়াশ- হু!!!!

পদ্ম- আমাকে যেতে হবে।

ইয়াশ- খেয়েছ?

পদ্ম- না।

ইয়াশ- তুমি নিচে গিয়ে বসো।

পদ্ম- আমার দেরি হয়ে যাবে।

ইয়াশ- এত কথা না বলে যা বলছি তাই করো।

পদ্ম মুখ গোমড়া করে নিচে গিয়ে সোফায় বসল। ইয়াশ দুইটা ব্রেড টোস্ট করে আনল। সাথে বাটার। নাইফ দিয়ে টোস্টে বাটার মাখিয়ে নিয়ে ওর হাতে ধরিয়ে দিয়ে বলল, চটপট খেয়ে নাও দেখি।

পদ্ম- আপনি?

ইয়াশ- আমি কি তোমার মতো এত লেট করে উঠেছি নাকি? সেই সকালে উঠে ব্রেকফার্স্ট খেয়েছি।

পদ্ম- ও……। আপনার ফোন এসেছিল।

ইয়াশ- কে ফোন করেছিল?

ইয়াশ লক খুলে দেখল মনিকা নাম্বার। দেখে ফোনটা রেখে দিল। পদ্ম একটা টোস্ট খেয়ে আরেকটা নিতে নিতে জিজ্ঞেস করল, ফোন করবেন না?

ইয়াশ- না।

পদ্ম- কেন?

ইয়াশ- তুমি বড্ড বেশি কথা বলো। এখন দেরি হচ্ছে না?
পদ্ম কোনমতে দুটো টোস্ট শেষ করে পানি খেয়ে নিল। শুধু দৌঁড় দেওয়ার অপেক্ষা। সব কাগজপত্র নিয়ে দরজার দিকে ফিরতেই ইয়াশ ওর হাত ধরে বলল, কোথায় যাচ্ছো?

পদ্ম- ভার্সিটি।

ইয়াশ- বাইরে দাঁড়াও। আমি আসছি।

পদ্ম- আপনি কোথায় যাবেন?

ইয়াশ কোনো উত্তর না দিয়ে প্লেটগুলো রান্নাঘরে রাখতে গেল। পদ্ম মনে মনে বলল, এর কি হলটা কি? কালকে থেকে সবকিছু যেন উল্টো পথে চলছে। ইয়াশ এসে বলল, চলো।

পদ্ম ওর পেছন পেছন বাড়ি থেকে বেরিয়ে এল। ইয়াশ গাড়ি বের করে বলল, ওঠো গাড়িতে। বলে নিজে গাড়িতে উঠে বসল। পদ্ম গাড়ির সামনে দাঁড়িয়ে রইল। ওকে দেখে বলল, কি হল? উঠছ না কেন?

পদ্ম- আমি গাড়িতে যাব না।

ইয়াশ- কেন?

পদ্ম- আমি গাড়ির দরজা খুলতে পারি না।

ইয়াশ- তাই বলে তুমি গাড়িতে যাবে না! তুমি আর কি কি পারো না?

পদ্ম রাগ করে অন্যদিকে হেঁটে চলে যেতে লাগলে ইয়াশ নিজে গাড়ি থেকে নেমে ওকে থামাল। গাড়ির দরজা খুলে দিয়ে বলল, আর রাগ করতে হবে না। এখন ওঠো তাড়াতাড়ি। দেরি হয়ে যাচ্ছে। তারপর নিজের সিটে এসে ওর সিটবেল্ট বেঁধে দিল।

পদ্ম- আন্টিরা আসবে কখন?

ইয়াশ- দুপুরে খেয়ে।

পদ্ম- ও।
.
.
.
.
আধা ঘন্টায় ওরা ভার্সিটি পৌঁছে গেল। চারদিকে ছাত্র ছাত্রীর ছড়াছড়ি। বিশাল বড়ো চত্বর। ভর্তি হতে প্রায় তিন চার ঘন্টা লেগে গেল। পদ্ম জেনেটিক্সে ভর্তি হল। ভেবে ইয়াশ মনে মনে যে খুব খুশি হয়েছে তা ওকে দেখেই বোঝা গেল।

দুপুরের দিকে ওকে নিয়ে যখন বাড়ি ফিরল বাড়ি তখন গম গম করছে। ইনু রিনির হাক ডাক। আয়েশা আমানের রান্নার ব্যস্ততা। ইরিনাকে দেখা গেল না। পদ্ম সোজা রুমে চলে গেল। দেখল ইরিনা সবেমাত্র গোছল করে বের হয়েছে। পদ্মের দিকে হেসে বলল, কি রে, কেমন আছিস?

পদ্ম- আলহামদুলিল্লাহ। তোমরা কালকে এলে না কেন?

ইরিনা- আদনান জোর করে রেখে দিয়েছিল। মিস করছিলি নাকি?

পদ্ম মুখ গোমড়া করে বলল, নাহ্। মিস করার কি আছে? বরং আমি তো বিছানায় একলা অনেক আরামে ঘুমিয়েছি। ইরিনা পদ্মের নাকটা টেনে দিয়ে বলল, হয়েছে, আর অভিমান করতে হবে না। ভর্তি কেমন হল?

পদ্ম- ভালো।

ইরিনা- কিসে ভর্তি হয়েছিস?

পদ্ম- জেনেটিক্স।

ইরিনা মুচকি হেসে বলল, নিজে থেকে ভর্তি হয়েছিস?

পদ্ম- হুম।

ইরিনা- ভালোই। পড়ায় কোনো সমস্যা হলে ভাইকে বলিস। ও সাহায্য করবে।

পদ্ম- কেন?

ইরিনা- কারন ইয়াশ জেনেটিক্স থেকে অনার্স মাস্টার্স কমপ্লিট করেছে।

পদ্ম বিড়বিড় করে বলল, এজন্যই মিস্টার নেংটি ইঁদুরকে এত খুশি খুশি লাগছিল।

ইরিনা- কিছু বললি?

পদ্ম- না তো।

ইরিনা- যা, ফ্রেশ হয়ে আয়।

পদ্ম- হুম।

পদ্ম ফ্রেশ হয়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। ইয়াশ ওর রুমের বারান্দায় চেয়ারেই বসে ছিল। পদ্ম খেয়াল করেনি। মাথার টাওয়ালটা খুলে চুল একপাশে নিয়ে মুছতে লাগল। তখন ইয়াশ দেখল পদ্মের জামার চেইন অর্ধেক খোলা। সেখান দিয়ে ওর পিঠে একটা পোড়াটা দাগ দেখা যাচ্ছে। পোড়া দাগটা দেখেই ইয়াশের মন খারাপ হয়ে গেল। ইয়াশ ইরিনার রুমের বারান্দায় এসে পদ্মের পেছনে দাঁড়াল। পদ্ম হঠাৎ পিঠে কারো স্পর্শ অনুভব করল। কে সেটা দেখার জন্য পিছন ফিরতে গিয়ে পড়েই যাচ্ছিল। ইয়াশ তখন জড়িয়ে ধরল ওকে।

পদ্ম- আপনি?

ইয়াশ- পোড়া দাগটা দেখা যাচ্ছিল। তাই চেইনটা মেরে দিলাম।

পদ্ম ইয়াশের হাতের বাঁধন থেকে নিজেকে ছাড়িয়ে বলল, আমার শরীরে তো ছোট থাকতেই দাগ ফেলে দিয়েছিলেন।

ইয়াশ- খুব ব্যাথা লেগেছিল তাই না?

পদ্ম- একদিন গায়ে গরম পানি ঢেকে দেখবেন কেমন লাগে।

ইয়াশ- রাগ করছো?

পদ্ম কিছু না বলে রুমে ঢুকে দরজা বন্ধ করে দিল। ইয়াশও বাঁধা দিল না। ছোটবেলায় একবার চড়ুইবাতি করতে গিয়ে পদ্মের গায়ে ইয়াশের হাত থেকে গরম পানি পড়ে গিয়েছিল। আজ সেই দাগ পুরোনো দিনগুলোকে আবার মনে করিয়ে দিল।
.
.
.
.
বিকাল বেলা আকাশ কালো হয়ে এল। অন্ধকার হয়ে গেল চারপাশ। বাতাসও পাগলের মতো ছুটতে লাগল। ঝড়ের লক্ষণ। পদ্ম দ্রুত ছাদে চলে গেল। ওর কাপড় ছাদে। গিয়ে কাপড়গুলো নিয়ে এল। কাপড়গুলো রেখে ও আবার ছাদে গেল। বাতাসটা বেশ ভালো লাগছে। কতদিন যেন এই বাতাসটা গায়ে লাগেনি। পদ্ম রেলিং ধরে বাতাসটা উপভোগ করতে লাগল। হঠাৎ ওর ওড়নাটা উড়ে গিয়ে পড়ল বাড়ির নিচে বাগানে। পদ্মও ছুটে গেল ওটার পেছনে কিন্তু তার আগেই ওটা ছাদ থেকে নিচে পড়ে গেল। ও নিচে তাকিয়ে ছিল। এর মধ্যে এক ফোঁটা পানি পড়ল ওর হাতের উল্টো পিঠে। তারপর একফোঁটা দুইফোঁটা করে পড়তে পড়তে তুমুল বৃষ্টি নামল। ভিজিয়ে দিল পদ্মকে।

ভারি বৃষ্টির কারনে তাকাতে পারছে ও। একটু পরেই বৃষ্টি কমে গেল। নাতো বৃষ্টি কমে নিয়ে বরং কিছু একটা ঢাল হয়ে ওকে বৃষ্টি থেকে রক্ষা করছে। পদ্ম উপরের দিকে তাকিয়ে দেখতে পেল ইয়াশের মুখ। বৃষ্টি পড়ছে ইয়াশের মাথায়, আর ওর চুল বেয়ে পানি পড়ছে পদ্মের মুখে।

ইয়াশ- এখনও রাগ করে আছো?

পদ্ম- ……

ইয়াশ- কি হল কথা বলবে না?

পদ্ম এখন কথা বলার অবস্থায় নেই। ইয়াশ ওর এত কাছে দাঁড়িয়ে আছে যে পদ্মের বুকের বামপাশটা ছিঁড়ে হার্টটা বেরিয়ে আসতে চাইছে। পদ্ম লজ্জায় মুখ নামিয়ে ফেলল।

ইয়াশ- পদ্ম, একটা কথা জিজ্ঞেস করব?

পদ্ম ওর দিকে তাকাল। ইয়াশ বলল, তুমি কখনো কাউকে ভালোবেসেছ?

পদ্ম একটু চুপ করে থেকে বলল, হুম।
চলবে……

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here