#আড়ালে_অনুভবে
#সাদিয়া_আফরিন_প্রতিভা
#পর্বঃ৭
অঙ্কিত এর সামনে দাঁড়িয়ে আছে সোহা।তবে সে একা নয়।তার পাশেই দাঁড়িয়ে আছে একটি ছোট্ট মেয়ে।দু বছর এর মতো হবে হয়তো।মেয়েটি তার ছোট্ট হাত দিয়ে সোহার আঙুল ধরে রেখেছে।
কিছুটা পাশেই দাঁড়িয়ে আছে সুপ্তি।অঙ্কিত দীর্ঘ দশ মিনিট যাবত শুধু সোহা কেই দেখে চলেছে। যেনো হাজার বছর না দেখার তৃষ্ণা মেটাচ্ছে।সোহাও একইভাবে তাকিয়ে আছে অঙ্কিত এর পানে।
ফ্লাসব্যাক—-
সময় কারোর জন্য থেমে থাকে না,সে নিজের কাজ চালিয়েই যায়।চোখের পলকেই যেনো বছরের পর বছর কেটে যায়।ঠিক তেমনি কেটে গেছে দু দুটো মাস।তবে এই দুটো মাস খুব ছোট ছিলো না।এই দু মাসে বদলে গেছে অনেক কিছু। নিরব ইদানিং প্রভার পিছনেই লেগে থাকে ওকে জালাতন করার জন্য,প্রভা প্রথমে শুধু রাগে তেলে বেগুণে জলতো।কিন্তু এখন কেনো জানিনা তার ও ভালো লাগে।হুটহাট নিরব এর সামনে এসে যাওয়া,নানান ভাবে তাকে রাগানো,ইনসাল্ট করা সবকিছুই এখন সে ইনজয় করে।এসব কিছুর মধ্যেই যেনো এক আলাদা ভালোলাগা কাজ করে তার,তবে সেটা কোনোমতেই বাহিরে প্রকাশ করে না।
রোদেলা এই দু মাস ধরেই রোদ্দুর এর পিছনে পরে আছে কিন্তু বিন্দুমাত্র এটেনশন পাচ্ছে না। শুধু পাচ্ছে অবহেলা,অপমান।তবুও রোদেলা হার মানেনি,সে নাছোড়বান্দা হয়ে পিছু পড়েই আছে।
কলেজ ক্যাম্পাসে কিছুটা মোনমরা হয়েই বসে ছিলো সুপ্তি,ঠিক তখনি সেখানে আগমন হয় প্রভার।অনেকদিন ধরেই সুপ্তি কে একটা কথা বলতে চাইছে কিন্তু কিছুতেই বলতে পারছে না।তবে আজ বলেই ছাড়বে।
প্রভা:এভাবে বসে আছিস কেনো?কিছু ভাবছিস?
সুপ্তি:সোহা আপু আসছে প্রভা।
প্রভা:কিহহহ? (বেশ বিষ্ময় নিয়ে বলে)
সুপ্তি:হুম,আমার সঙ্গেই দেখা করতে আসছে। আর..
প্রভা:আর?
সুপ্তি:অ অঙ্কিত ভাইয়ার সঙ্গে।
প্রভা:কিন্তু কেনো?আমি মানছি সবটাই এক্সিডেন্ট। আপুর কোনোরকম দোষ নেই কিন্তু তবুও,কেনো নিজের অতীত কে বর্তমান এ টানতে চাচ্ছে?সে তো সুখে আছে।অঙ্কিত ভাইয়াও নিজের জীবন গুছিয়ে নিয়েছে।তবে কেনো আবারো পুড়নো ক্ষত জাগিয়ে তুলতে চাইছে?
সুপ্তি:আমি জানিনা প্রভা,কিচ্ছু জানিনা আমি।আপু শুধু বলেছে শেষ বারের মতো জেনো অঙ্কিত ভাইয়ার সঙ্গে দেখা করিয়ে দেই।
প্রভা:তোর কষ্ট হচ্ছে না?
সুপ্তি:আ আমার কেনো কষ্ট হবে? (কাপা কাপা গলায় বললো)
প্রভা:আমার চোখের দিকে তাকিয়ে বল তো! অঙ্কিত ভাইয়া কে ভালোবাসিস না তুই?
সুপ্তি:ত তোর মাথা খারাপ হয়ে গেছে প্রভা?কিসব বলছিস তুই?
প্রভা:আমি উত্তর চেয়েছি সুপ্তি
সুপ্তি:সবার ভালোবাসা কি প্রকাশ করা যায়? অনেকের ভালোবাসাই তো এক তরফা থেকে যায়।
প্রভা:একবার প্রকাশ করেই দেখ না।হতেও তো পারে,তার মনেও তোর জন্য জায়গা আছে।
সুপ্তি অবাক দৃষ্টিতে প্রভার দিকে তাকালো, আজ পর্যন্ত হাজার বার ভেবেছে বলে দেবে নিজের মনের কথা কিন্তু পেরে ওঠেনি।তবে কি আজ সত্যি ই বলবে সে?
,,
কলেজ ক্যাম্পাসের ফাকা জায়গায় একটা গাছে নিচে দাঁড়িয়ে আছে অঙ্কিত। সুপ্তি তার পিছনে এসে দাঁড়িয়ে আছে প্রায় দু মিনিট ধরে।সুপ্তি এবার মনে সাহস জুগিয়ে গলা ঝেড়ে বললো,
–ভ ভাইয়া আপনাকে কিছু বলার ছিলো।
অঙ্কিত এবার সামনে ঘুড়ে সুপ্তির সম্মুখে দাঁড়িয়ে বললো,
–আমি জানি তুমি কি বলবে।
সুপ্তি অবাক হয়ে তাকালো অঙ্কিত এর পানে।
অঙ্কিত:দেখো সুপ্তি,আমাদের ভিতরে স্মৃষ্টি হওয়া অনুভুতি আমরা বদলাতে পারি না।তবে সেই অনুভুতি নিয়ে চলাও কিন্তু সম্ভব নয়।তুমি এখন এটাই বলবে তো যে,ইউ লাইক মি।এক কথায় বলতে গেলে,তুমি আমাকে ভালোবাসা।
(সুপ্তি এবার অবাকের চরম পর্যায় পৌঁছে গেলো)
সুপ্তি:ভ ভাইয়া আপনি..
অঙ্কিত:আমি তোমার থেকে কিছু শুনতে চাই নি সুপ্তি।আমি নিজের কথাটা বলতে চাই। তুমি সবটা জানো বিধায় তোমাকে নতুন করে বলতে চাই না কিছু।হ্যা,তুমি এখন বলতেই পারো।যে আমাকে ঠকিয়েছে তার জন্য কেনো আমি নিজের জীবনে মুভ অন করবো না।কথাটা অনেক সহজ,কিন্তু করাটা ততটা সহজ না।ভালোবেসেছি আমি সোহাকে।তার ভালো দিক,খারাপ দিক সব দিক দিয়ে ভালোবেসেছি আমি ওকে।আর আজও বাসি,ও আমায় ঠকিয়েছে তো কি হয়েছে?ওর ভালোবাসা মিথ্যে হতে পারে কিন্তু আমার টা তো মিথ্যে নয়।আমি তো ওকে সত্তিকারের ভালোবেসেছি।এত সহজে কি করে ভুলে যাই?
(কিছুটা থামলো অঙ্কিত) আমি আজও সোহাকেই ভালোবাসি সুপ্তি।ওর জায়গা আমি কখনো কাউকে দিতে পারবোনা,না দ্বিতীয়বার কাউকে ভালোবাসতে পারবো।আমি চাইনা আমার জীবনের সঙ্গে জড়িয়ে অন্যকারোর জীবন নষ্ট হয়ে যাক।তুমি সত্যি ই খুব ভালো একটা মেয়ে।ইউ ডিজার্ভ বেটার দেন মি।তাই বলছি আম…
“কেমন আছো অঙ্কিত?…..”
চিরচেনা কণ্ঠস্বর শুনেই বুকের মাঝে ঝড় বয়ে যায় অঙ্কিত এর।এই কণ্ঠ তার গভীর ভাবে চেনা।
ফ্লাসব্যাক ওভার—–
দীর্ঘসময় মা কে চুপ থাকতে দেখে ভ্রু কুচকায় বাচ্চা মমি।মায়ের দৃষ্টি অনুসরণ করে অঙ্কিত এর দিকে তাকায়।পরক্ষনেই সোহার আঙুল ধরে হালকা টান দিয়ে বলে,
মমি: মাম্মাম মাম্মাম,ঐ আনতেল তা কে?
মমির কথায় ধ্যান ভাঙলো সোহার।সাথে অঙ্কিত এর ও,তবে মমির মুখে মাম্মাম ডাক টা শুনে বুকের ভিতর মোচর দিয়ে ওঠে তার।
সুপ্তি পরিস্থিতি বুঝতে পেরে মমির কাছে গিয়ে বলে,
সুপ্তি:মমি,মাম্মাম একটু এই আঙ্কেল এর সাতগে কথা বলবে।তুমি আমার সাথে এসো।
কথাটা বলেই মমি কে কোলে নিয়ে একবার দুজনের দিকে তাকিয়ে কিছুটা দূড়ে সরে গেলো।
সোহা এবার অঙ্কিত এর সামনে এসে বললো,
সোহা:কি হলো?বললে না তো কেমন আছো?
অঙ্কিত:ও ওই ম মেয়েটা?
সোহা:(মুচকি হেসে বললো) আমার মেয়ে।উম্মে খায়ের মমি।
অঙ্কিত বিষ্ফরিত দৃষ্টিতে তাকালো সোহার দিকে।এই নামটা তো ঐ ঠিক করেছিলো।বলেছিলো ওদের মেয়ে হলে এই নাম রাখবে।
সোহা:আমি জানি অঙ্কিত।তোমার মনে অনেক প্রশ্ন।তবে আজ সব প্রশ্নের উত্তর দিতেই এসেছি আমি।বড্ড কষ্ট হয় গো,তোমার ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকতে।হয়তো তোমাকে কাছে পাবোনা।তবুও বাকি জীবনটা আর এই ঘৃণার পাত্র হয়ে থাকতে চাইনা।
অঙ্কিত:তুমি যা করেছো!তারপর ও বলছো তোমায় ঘৃণা করবোনা?
সোহা:তুমি অনেক কিছুই জানোনা অঙ্কিত।
অঙ্কিত:কি জানার বাকি আছে আমার হ্যা?কি জানার বাকি আছে?কেনো এসেছো আমার কাছে? ওহ,যার কাছে গিয়েছিলে তার কাছে বুঝি এখন পুড়োনো হয়ে গেছো?এখন আমাকে দরকার?
সোহা:ব্যাস অঙ্কিত,অনেক বলেছো তুমি আর না।এবার আমি বলবো আর তুমি শুনবে,
হ্যা আমি পুড়োনো হয়ে গেছি তার কাছে।তবে আজ নয় আরো দু বছর আগেই।জানতে চাও কেনো যেনেশুনে ঐ জানোয়ার এর কাছে গিয়েছিলাম আমি?তোমার জন্য,হ্যা হ্যা শুধু তোমার জন্য।
অঙ্কিত বিষ্ফরিত দৃষ্টিতে তাকিয়ে রইলো সোহার দিকে।এই কথার কিছুই যেনো ওর মাথায় ঢুকছে না।
অন্যদিকে—-
লাজুক হেসে পার্কে রোদ্দুর এর সামনে দাঁড়িয়ে রয়েছে রোদেলা।খুশিতে যেনো তার ডিসকো ড্যান্স করতে ইচ্ছে করছে।রোদ্দুর আজ নিজে তাকে এখানে ডেকেছে।রোদেলা তো সেজে গুজে আধা ঘণ্টা আগেই এসে পরেছে।
রোদেলার এমন লজ্জাভর্তি মূখশ্রী দেখে বিরক্তির নিশ্বাস ছাড়ে রোদ্দুর।
রোদ্দুর:লিসেন,এখন আমি তোমাকে যা বলবো কান খুলে মাথার মগজের বধ্যে ঢুকিয়ে রাখবে।
রোদেলা:আপনি বললে তো আমি হৃদয়ের মাঝেই ঢুকিয়ে রাখবো।এই এই বলুন না,প্রপোজ করবেন আমাকে তাই না?উইমা,,আমার তো লজ্জায় লুঙ্গি ড্যান্স করতে ইচ্ছে করছে।
রোদ্দুর:লজ্জায় কারোর লুঙ্গি ড্যান্স করতে ইচ্ছে করে?😵
রোদেলা:আমার তো করে..🙈
রোদ্দুর:এই মেয়ে তোমার কি একটুও জ্ঞান বুদ্ধি নেই?
রোদেলা:আছে তো,কিন্তু আপনাকে দেখলে এর কোনোটাই কাজ করে না।
রোদ্দুর:জাস্ট সাট আপ…
রোদেলার মুখটা এবার মলীন হয়ে যায়।মাথা নিচু করে নেয় সে।
রোদেলা:আসলেই তোমাদের মতো মেয়েদের না জ্ঞান বুদ্ধি থাকারো কথা না।কোনোমতে রাস্তায় ছেলে দেখলেই তার পিছে লেগে যেতে হবে! জাস্ট এতটুকু আত্মসম্মান থাকলে এমন কাজ কখনোই করতে পারতে না।আর কতোবার বলবো তোমায় আমার তোমার প্রতি কোনো ফিলিংস নেই নেই নেই।বিন্দুমাত্র আগ্রহ নেই আমার তোমার উপর। সো প্লিজ,লাস্ট বারের মতো বলছি আমার পিছে পরে থাকবেনা।এতটুকু আত্মসম্মান থাকলে আর কখনো আমার সামনে আসবে না তুমি।
রোদেলার চোখ থেকে দু ফোটা জল গড়িয়ে পরে।ভেজা চোখে তাকায় রোদ্দুর এর দিকে।এতদিনে যে রোদ্দুর তাকে কথা শোনায়নি তা নয় তবে আজ এতটা অপমান করবে তা ভাবতেও পারেনি রোদেলা।সে তো ভেবেছিলো ধিরেধিরে রোদ্দুর এর মনে জায়গা করে নিতে পারবে।তবে তার ধারণা মিথ্যে হয়ে গেলো।
রোদেলার চোখের জল কেনো জানিনা রোদ্দুর এর বুকে ধারালো ছুরির নেয় আঘাত করলো। রাগের মাথায় একটু বেশিই বলে ফেলেছে বোধ হয়।কিছু বলতে যাবে তার আগেই রোদেলা হাত দেখিয়ে থাকিয়ে দেয়।চোখ দুটো মুছে মুচকি হেসে বলে,
রোদেলা:জানেন তো রোদ্দুর?প্রতিটা মেয়ের একটা সপ্ন থাকে।একটা ছেলে পাগলের মতো তাকে ভালোবাসবে,তার পিছনে পরে থাকবে। এর ফলে একটা মেয়ের ইগো ঠিক কতোটা বাড়ে তা আপনারা বুঝবেন না।আর হ্যা,একটা মেয়ের তার আত্মসম্মান এর উপর যথেষ্ট দাম থাকে।আমারো আছে।তবে কি জানেন তো,আমি সেটা ভাবিই নি।
শুধুমাত্র একটা ছেলেকে ভালোলেগেছে বলে নিজের প্রেস্টিজ ধুলোয় মিশিয়ে তার পিছনে লেগে থাকবো সামান্য এটেনশন পাওয়ার জন্য এতটাই কি সস্তা ভাবের মেয়েদের?
রোদ্দুর:রোদেলা আ..
রোদেলা:উম হু,আপনি ঠিক ই বলেছেন।আমার কোনো আত্মসম্মান ই নেই।আসলে কি জানেন তো,বড্ড ভালোবেসে ফেলেছিলাম আপনাকে। তাই তো নির্লজ্জের মতো অবহেলা পেয়েও হাল ছাড়িনি।ভেবেছিলাম হয়তো সময় লাগলেও আমার ভালোবাসা দিয়ে কিছুটা জায়গা তৈরি করে নিতে পারবো আপনার মনে।কিন্তু আমি ভুল ছিলাম।
রোদ্দুর:রোদ..
রোদেলা:আই এম সরি রোদ্দুর।আম রিয়ালি সরি, তোমাকে এতোটা বিরক্ত করার জন্য।তবে আই প্রমিস ইউ, আর বিরক্ত করবোনা তোমায়।ইনফেক্ট,আর কখনো তোমার সামনেও আসবোনা।ভালো থেকো তুমি।পারলে এই নির্লজ্জ মেয়েটাকে ক্ষমা করে দিও।আসছি..
কথাটা বলেও চলে গেলো রোদেলা।রোদ্দুর হাত বাড়িয়ে বাধা দিতে গিয়েও পারলোনা,কিছু অপরাধবোধ আটকে দিচ্ছে তাকে।কিন্তু তার মন যে বারংবার বলছে, “আটকা রোদ্দুর।রোদপাখি কে বাধা দে।যেতে দিস না ওকে”
••তবে কি রোদেলার ভালোবাসা এখানেই শেষ হয়ে যাবে?একপাক্ষিক রয়ে যাবে তার ভালোবাসা?••
#চলবে
[]