ভাগ্য পর্ব-০১+২

#ভাগ্য

আজ আমার বিয়ে,,
কিভাবে এই বিয়ে ঠিক হলো জানিনা, কারণ এর আগে অনেকে আমার দেখে গেছে কিন্তু কেউ ছেলের বউ হিসেবে আমাকে পছন্দ করেনি।
আজ আমার যার সাথে বিয়ে হচ্ছে তার নাম আদিব, দেখতে অনেক সুন্দর, আমি জানি সে আমাকে পছন্দ করেনি, কিন্তু তার মা বাবা আমাকে পছন্দ করেছে।
আদিব আমাকে পছন্দ না করার পিছনে যুক্তি আছে, আমি দেখতে অতিব কালো, আদিবের মত স্মার্ট হ্যান্ডসাম ছেলের পক্ষে আমাকে পছন্দ না করাই যুক্তিযুক্ত।

আদিবের মা বাবা আমার রুপ দেখে না হয়তো আমার ভালো কিছু দিক দেখে ছেলের বউ বানাতে চেয়েছে, আমি কওমি মাদ্রাসায় লেখাপড়া করেছি, বড় হবার পর থেকে বাড়ির বাহিরে বের হলে বোরকা পড়ে বের হয়েছি, কোন বেগানা পুরুষ আমার চেহারা দর্শন করতে পারেনি।
ছোট থেকে নামায রোজা, ধর্মীয় আচার ব্যবহারে নিয়মকানুন মনোযোগ দিয়ে মেনে চলছি।
এই দিকগুলো বিবেচনা করেই হয়তো আদিবের মা বাবা ছেলের বউ করতে রাজী হলো।

আদিব আমাকে স্ত্রী হিসেবে কতটা ভালোবাসবে জানিনা, আমি চাইব আমার সমস্ত মন প্রাণ উজাড় করে তাকে ভালোবাসতে তার আদেশ নির্দেশ মেনে চলতে।
যে শ্বশুর শাশুড়ী আমাকে ছেলের বউ করে নিয়ে যাচ্ছে তাদের সেবাযত্ন করতে, তাদের মনমতো চলতে।

বাসর রাতে আমি স্ত্রী হিসেবে নয় রক্ষিতা হিসাবে স্বামীর কাছে গ্রহণযোগ্য হলাম।
আদিব আমাকে বলে দিল,

দেখো তোমার মতো মেয়ে আমার স্ত্রী হবার যোগ্য না, মা বাবার মুখের দিকে চেয়ে তোমাকে বিয়ে করতে বাধ্য হয়েছি।
তুমি আমার রক্ষিতা হয়ে থাকতে পারো, স্ত্রী হয়ে থাকতে পারবেনা, চাইলে কালই চলে যেতে পার।

আমি তাকে বলেছি, বিয়ে যখন হয়েছে তখন এই বাড়িই আমার বাড়ি, আপনি আমাকে রক্ষিতা ভাবেন আর যাই ভাবেন আপনি আমার স্বামী, কালিমা পড়ে আপনার সাথে আমার বিয়ে হয়েছে, আমি এই বাড়ি থেকে কোথাও যাচ্ছি না।

কথা শেষ না হতেই আদিব তার পুরুষত্ব জাহির করতে ঝাপিয়ে পড়ে আমার উপর।
অমানবিক জুলুম করে প্রমাণ করে দেয়, আমি তার রক্ষিতা। আমার চোখের জল তার নজরে আসেনি, কেন আসবে আমার কষ্ট তার কাছে কিছুই না, সে ব্যস্ত তার কামনার নেশায়।

সকালে বিছানা থেকে উঠতে গিয়ে বুঝতে পারছি, আমি আদিবের কাছে সত্যিই রক্ষিতা, না হলে কেউ স্ত্রীর সাথে এমন নিষ্ঠুর অত্যাচার করতে পারে না।
আমার মা বাবা খুব খুশি ভালো ঘরে আমাকে বিয়ে দিয়ে, বৌভাতে এসে আমাকে জিজ্ঞাস করেছিল, মা তুই কেমন আছিস।
মুখে একটু হাসি এনে বলেছি, আমি অনেক ভালো আছি।
আমার মলিন মুখ, চোখের নিচে ঘুম না হওয়া কালো দাগ দেখেও মা বাবা বুঝতে পারেনি আমি কতটা ভালো আছি।
তাদের ধারণা বড় ঘরে বিয়ে দিয়েছে মেয়ে তো সুখেই আছে।

বিয়ের পর বাবার বাসায় দুইবার গিয়েছি, বাবা এসে একবার নিয়ে গিয়েছে আমি একা যাই বাবার সাথে আদিব যায়নি, অনেক জোড়াজুড়ি করেছে বাবা। আদিব বাবার মুখের উপর বলে দিয়েছে,

আপনি আপনার মেয়েকে নিয়ে যান, আমাকে জোর করবেন না আমি আপনার মেয়েকে কখনো স্ত্রী মনে করি না, আর শ্বশুরবাড়ি যাবো প্রশ্নই আসেনা।

আদিবের কথা শুনে বাবার চোখে পানি চলে আসে, আমি একাই বাবার সাথে যাই, কয়েকদিন থাকার পর আমার শ্বশুর আমাকে নিয়ে আসেন।
শ্বশুরবাড়ি আসার সময় মা আমাকে ধরে খুব কান্না করে, বলে মা রে কি করবি তোর ভাগ্যে আছে এমন স্বামী, তাকে নিয়েই তোকে জীবন কাটাতে হবে, আল্লাহ আল্লাহ কর হয়তো আদিব একদিন তোকে ভালোবাসবে, কি আর করবি মেয়েদের ভাগ্যই এমন, শত জ্বালা যন্ত্রণা সহ্য করে স্বামীর সংসার করতে হয়।

প্রায় এক বছর হতে চলল আমাদের বিয়ের, এই এক বছরে আদিব আমাকে কখনো স্ত্রীর চোখে দেখেনি, তার সেই রক্ষিতা হয়েই আছি, রাত কিংবা দিন নয় যখন ইচ্ছা ললসা মিটাতে ঝাপিয়ে পড়ে আমার উপর আমার কষ্ট তার চোখে পড়ে না।
বাধা দিতে গেলে গায়ে হাত তুলে, একরাতে নেশা করে বাসায় এসে খুব অত্যাচার শুরু করে, আমি প্রতিবাদ করাতে খাট থেকে লাথি মেরে আমাকে ফ্লোরে ফেলে দেয়, আমার পায়ে আঘাত লাগে,আমি ব্যথায় চিৎকার করে উঠি।
আদিব বলে,

আমার চাহিদা পূরণ করতে না পারলে আমার খাটে তোর জায়গা হবেনা, থাক ফ্লোরে পড়ে, সারারাত সেখানেই থাক খাটে শুইতে আসবি না।

আমার কান্না তার মনকে নরম করতে পারেনি, একবারও জানতে চায়নি আমি কেন কান্না করছি সারারাত বসে ছিলাম খাটে মাথা দিয়ে পা ব্যথায় উঠতে পারিনি।
সকালে ঘুম ভেঙে আদিব বলল, চা এনে দিতে, আমি অনেক কষ্টে চা করে নিয়ে আসি।
শাশুড়ী মা আমার পায়ের দিকে চেয়ে জানতে চায় কি হয়েছে, আমি বলেছি বাথরুমে পড়ে গিয়েছিলাম।
শাশুড়ী মা শ্বশুরকে বলে ওষুধ এনে দিয়েছে।

আমি কয়েকদিন পা নিয়ে ঠিকমত হাটতে পারিনি, তা দেখেও আদিব একটি বার জিজ্ঞাস করেনি বা ওষুধ এনে দেয়নি, সেই অবস্থায় আমার উপর সে স্বামীত্ব দেখিয়েছে।
#ভাগ্য
#২_পর্ব

আদিব প্রতিরাতে আমাকে ধর্ষন করে।
কারণ আদিব আমার ইচ্ছার বিরুদ্ধে আমার সাথে শারীরিক সম্পর্ক করতো আমার ইচ্ছা না ইচ্ছার কোন মূল্য ছিল না আদিবের কাছে, জোর করে শারীরিক সম্পর্ক করা তো ধর্ষনের সামিল, আমি ধর্ষিত হতাম নিজ স্বামীর হাতে।

আমার উপর এতো অন্যায় অত্যাচার আমার শ্বশুর শাশুড়ী বুঝতে পারে কিন্তু নিজের ছেলেকে কিছু বলে না।
আমাকে বলে বউমা তুমি একটু সহ্য করে নাও দেখবে একদিন সব ঠিক হয়ে যাবে।
ঠিক হবে কি না জানিনা, কিন্তু আমি আমার ভাগ্য বলে মেনে নিয়েছি আদিবের অত্যাচার।

আদিবের অন্য মেয়েদের সাথে রিলেশন ছিল, অনেক রাত পর্যন্ত মেয়েদের সাথে ফোনে কথা বলতো।
মাঝেমাঝে কিছু মেয়েকে বাসায় নিয়ে আসতো, তার মা বাবা জানতে চাইলে বলতো বান্ধবী হয়, আমি বুঝতাম কেমন বান্ধবী হয় সেই মেয়ে গুলো।
মেয়েদের সাথে ছিল আদিবের দৈহিক সম্পর্ক, আমি কিছু বলতে গেলেই আদিব আমাকে বলতো, তুমি যেখানে আছো থাকো সীমা অতিক্রম করতে এসে না, তা হলে বাসা থেকে তাড়িয়ে দেবো।
চুপ করে যেতাম এমন কথা শুনে, চুপ না হয়ে উপায় কি মধ্যবিত্ত ঘরের মেয়ে আমি বাবা অনেক কষ্টে আমাকে বিয়ে দিয়েছে, ছোট দুই বোন আছে, আদিব আমাকে তাড়িয়ে দিলে বাবার বাড়ি গিয়ে বাবার উপর বোঝা হয়ে যাবো।

কয়েকদিন ধরে শুনছি আদিব ইংল্যান্ড চলে যাবে, সে যেই বিদেশি কোম্পানিতে চাকরি করে সেই কোম্পানি তাকে ইংল্যান্ডের লন্ডনে পোস্টিং করেছে।
আমার ধারণা আদিব আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেনা, যে মানুষটা আমাকে স্ত্রী হিসেবে মানে না সে আমার থেকে মুক্তি পেতেই চাইবে, সেটা আমি সিওর।
কিন্তু আদিবের কথায় আমি অবাক না হয়ে পারলাম না,

ইসরাত শুনো সামনের মাসে আমরা লন্ডন যাবো, তুমি চাইলে তোমার বাসা থেকে কয়েকদিনের জন্য ঘুরে আসতে পারো, লন্ডন চলে গেলে তো দুইবছরের আগে আসতে পারবেনা।

আপনি আমাকে সঙ্গে নিয়ে যাবেন, আমার তো বিশ্বাস হচ্ছেনা, আদিবকে বললাম।

অবিশ্বাসের কি আছে, সেখানে গেলে আমি কাজের মেয়ে কোথায় পাবো, কে আমার সব কাজ করে দিবে, আর সেই দেশে কাজের মেয়ে রাখতে গেলে অনেক টাকা খরচা করতে হবে।
তুমি যখন আছো তাহলে অযথা টাকা খরচা করার দরকার কি, আর সেখানে যেয়েও তো সাথে সাথে কাজের মেয়ে পাওয়া যাবে না তাই তোমাকেই সঙ্গে করে নিয়ে যাবো।

যখন আদিব বলেছিল ইংল্যান্ডে আমাকে সঙ্গে করে নিয়ে যাবে, কথাটা শুনে অনেক খুশী হয়েছিলাম, ভাবছিলাম এতদিন সংসার করে আমার প্রতি তার কিছুটা টান হয়েছে সেই জন্য সাথে নিয়ে যেতে চাইছে।
আমি তো ভুলেই গিয়েছিলাম আমি তার রক্ষিতা, আর এখন কাজের মেয়ে হয়ে তার সাথে ইংল্যান্ড যাবো।
আদিব তার প্রয়োজনে আমাকে তার সঙ্গে নিচ্ছে, ভালোবেসে বা স্ত্রী হিসেবে নয়।

খুব কষ্ট লাগছে আদিবের কথায়, চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছা করছে, তাই আদিবের সামনে থেকে চলে আসলাম, বাথরুমে গিয়ে অনেক্ক্ষণ পর্যন্ত কাঁদলাম।

পরেরদিন আদিব আমাকে বাবার বাড়ি রেখে আসল, গাড়ী থেকে নেমে আমি অনেকবার অনুরোধ করছি আমাদের বাড়িতে যেতে সে আসল না।
মা আর ছোট দুই বোন আমাকে দেখে জড়িয়ে ধরলো, মা বলল,

তুই অনেক শুকিয়ে গিয়েছিস মা, ঠিকমত কি খাবার খাস না, তোর তো চোখের নিচে কালো দাগ পড়ে গেছে, ঘুমাস না, অনেক কষ্টে আছিস তাইনা মা।

মায়ের কথার কি উত্তর দেবো, আমি যে কি জ্বালা যন্ত্রণায় আছি সেটা আমি জানি।
মাকে বললাম, না মা তোমাদের জামাই এখন আগের চেয়ে অনেকটা ভালো হয়ে গেছে, এখন আর অত্যাচার করেনা।
শুকিয়ে গিয়েছি কারণ আমি ঠিকমত খেতে পারিনা, মুখে রুচি নেই।
আমার কথা শুনে মা বলল, কাল তোকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে যাবো, ভিটামিন মিনারেল কিছু ওষুধ খেলেই মুখের রুচি ফিরে আসবে।

মা আমাকে ডাক্তারের কাছে নিয়ে গেল, ডাক্তার আমাকে দেখে বলল, এই মেয়ে তো একদম দুর্বল ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করে না প্রেসার খুবই কম, এইভাবে চলতে থাকলে বড় কোন প্রব্লেম হয়ে যাবে। ঠিকমত খাওয়া দাওয়া করতে হবে ঘুমাতে হবে, এবং চিন্তামুক্ত থাকতে হবে।
ডাক্তার আমাকে বললেন, আচ্ছা ইসরাত আপনি কি খুব টেনশন করেন।
আমি বললাম, একটু আকটু চিন্তা তো করিই।
আপনি টেনশন বাদ দেন, আপনার শরীর খুবই দুর্বল এই শরীর নিয়ে টেনশন করলে আপনার ক্ষতি হবে।

বাবার বাড়িতে নয়দিন ছিলাম, মা বাবার যত্নে এই নয়দিনে আমি অনেকটা ভালো, প্রেসারটাও ঠিক, এই নয়দিন ঠিকমত ঘুমাতে পেরেছি।
আদিব গাড়ি দিয়ে ড্রাইভারকে পাঠিয়েছে, আমি ড্রাইভারের সাথে আদিবের বাসায় যাই, আমাকে দেখে শাশুড়ী বললেন, বউমা তুমি বাবার বাড়ি গিয়ে কয়েকদিনে মোটা হয়ে গেছো, আমাদের বাসায় এতকিছু খেয়েও শুকনা ছিলে।

শাশুড়ীর কথা শুনে মনে মনে বললাম, আপনার ছেলে তো আমাকে অনেক শান্তিতে রাখে, তাই তো মোটা হতে পারি না।

রাতে আদিব বাসায় ফিরে আমাকে জড়িয়ে ধরে বলল,
তুমি তো মোটা হয়ে গেছো এই কয়দিনে, বাপের বাড়ি কি খেয়েছ।
আমি বললাম কিছুই না, চলেন রাতের খাবার দেই।
আরে খাবার খাবো না, নয়দিন তোমাকে ছাড়া ছিলাম, আজ সেই উসুলটা আগে পোষাবো।

সারারাত ঘুমাতে দেয়নি আদিব আমাকে,এখন সকাল সাতটা বাজে, আমাকে উঠতে হবে সকালের নাশতা বানাতে, আদিব ঘুমাচ্ছে, সে নয়টা পর্যন্ত ঘুমাবে।
আমি উঠতে গিয়ে মাথাটা কেমন চক্কর দিয়ে উঠল, হয়তো ঘুম না হবার জন্য। উঠতে ইচ্ছা করছে না খুব ঘুমাতে ইচ্ছা করছে, কি করব, নাশতা বানাতে হবে, না হলে আদিব কি খেয়ে অফিসে যাবে।
ওয়াশরুমে যেয়ে ফ্রেশ হয়ে কিচেনে গেলাম নাশতা বানাতে।

দিন যত যাচ্ছে ইংল্যান্ড যাবার সময় ঘনিয়ে আসছে, আমার বুকের ভিতর কেমন একটা ভয় এসে বাসা বাধছে। বারবার মনে হচ্ছে আদিব এখানেই আমার সাথে যে ব্যবহার করে বিদেশে নিয়ে গিয়ে কি না কি করে, সেখানে তো আমি কিছুই চিনবো না জানব না।
বাংলাদেশ ছেড়ে মা বাবা ছোট বোনদের ছেড়ে যাবো, কবে না কবে আসব জানিনা।
আদিব যদি আমাকে বাংলাদেশে আর কখনো না নিয়ে আসে, তাহলে আমি কিভাবে আসব, আমার মা বাবা বোনদের কিভাবে দেখব।
দুশ্চিন্তা আমাকে পাগল করে দিচ্ছে, একবার মনে হয় আদিবকে বলে দেই আমি তার সাথে ইংল্যান্ড যাবো না, কিন্তু পরক্ষণেই চিন্তা করি না করাটা কি ঠিক হবে।

চলবে,,,
সাদমান হাসিব সাদ
চলবে,,,

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here