#হবে-কি-আমার(২)💞
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_6
অরিন্দমের এমন কণ্ঠ শুনে অনুর সারা শরীরে বিদ্যুৎ খেলে গেল।বুকের বাপাশে যে ছোট্ট হৃদপিণ্ড আছে সেটার দ্রিম দ্রিম করা শব্দ সে যেন নিজের কানে শুনতে লাগলো, জোমে ফ্রিজড হয়ে বসে রইল অনু ক্ষনিকের জন্য।অরিন্দমের বলা প্রতিটি কথাই তার কানে যেন বারংবার ধাক্কা দিতে লাগল। সে ক্ষনিক সময় নিয়ে কথাগুলোর মনে করতে লাগলো।আর কথা গুলোর অর্থ বোধগম্য হতেই তার মনে ভালোলাগার প্রশান্তি বয়ে গেল। এই মুহূর্তে তার যে কতটা খুশি হচ্ছে সে কাউকে বলে বোঝাতে পারবে না। তবুও তা মুখে প্রকাশ করলো না। অরিন্দমের এইটুকু মশরায় তার রাগ কমালে চলবে না।তার রাগে যদি অরিন্দম এতটা তার প্রতি দুর্বল হয়ে যায় তাহলে সে আরও রাগ করে তাকে তার জন্য পাগল করে ছাড়বে! এইসব ভেবে অনু মনে মনে শয়তানি হাসি দিয়ে বন্ধ আঁখিযুগল খুললো। অরিন্দম তখন ও ওর দিকে অপরাধী ভাবে তাকিয়ে আছে!আর অনু কি বলে তা শোনার জন্য অধীর আগ্রহে আছে। সে হয়তো ভাবছে অনু তাকে খুশি হয়ে আগের মতোই ভালোবাসার কথা বলবে,আর সে তাকে আর ফেরাবে না। তাকে নিজের মনের কথা বলে দেবে। কিন্তু না সেটা হলো না।অনু বিরক্ত মাখা মুখ কুঁচকে গম্ভীর গলায় বলল,
__’আপনি কি নেশা ভান করেছেন নাকি এসব আবোল-তাবোল কি বকছেন?ওপস এক মিনিট এক মিনিট বাই এনি চান্স আপনি আমাকে আপনার ওই ন্যাকি ফুলকলি ভাবছেন না তো? তাই এত পিরিত আসছে আমার প্রতি!’
অরিন্দম ভ্যাবাচ্যাকা খেয়ে গেলো এতগুলো কথা বলল এই মেয়েটাকে আর সে কিনা বুজেও না বোঝার ভান করছে তাকে অ্যাটিটিউড দেখাচ্ছে বারবার।তাকে বারবার ইনসাল্ট করছে। কিন্তু মেয়েটাকে স্যরি বলতেই হবে তাই অরিন্দম বলল,
_ সেদিনের কথা গুলো জন্য…
অনু তাকে থামিয়ে দিয়ে আবার বলল,
_’এবার প্লিজ গাড়ি স্টার্ট করুন সারাদিন কি আমাকে গাড়িতে বসিয়ে রাখবেন? প্লিজ চলুন। আমি আর একটা কথা শুনতে চাই না!’
অরিন্দমের মুখটা ছোট হয়ে গেল বেচারা কত ট্রাই করল মেয়েটাকে আগের মত করার জন্য কিন্তু মেয়েটা আরও বিগড়ে গেল। সে হতাশার শ্বাস ফেলে গাড়ি স্টার্ট করল।
গাড়ি এসে থামলো একটা বড়ো শপিং মলের সামনে!অনু একাই গেইট খুলে গটগট পায়ে বেড়িয়ে গেল!অরিন্দম হা করে তাকিয়ে আছে মেয়েটার এতটা রাগ সে জানত না, জানলে হয়তো রাগাত না!সে গাড়িতে কতো কথা বললো কিন্তু অনু একটু ও মুখ খুললো না! অগত্যা অরিন্দম চুপ করে গেল!সে আড়চোখে বারবার অনুকে দেখে চলেছিল কিন্তু মেয়েটা কোনোরকম রিয়েক্ট দিলনা তাকে!
অরিন্দম গাড়ি পার্কিং করে এসে অনুকে মলের বাইরে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে অনুর কাছে এগিয়ে গিয়ে বলল,
_কি হল দাঁড়িয়ে আছো যে ভিতরে চলো!
অনু ভাব দেখিয়ে বলল,
_আপনি যান আপনাকে কে আটকে রেখেছে!
অরিন্দম সরু চোখে তাকিয়ে থেকে বলল,
_আমি যাব মানে? তুমি কি এখানে দাঁড়িয়ে থাকার জন্য এসেছ?
অনু কিছু বলতে গিয়েও থেমে গেল।সে অরিন্দম কে ক্রস করে এগিয়ে গিয়ে বলল,
_তোদের জন্য কখন থেকে ওয়েট করছি!
তিশা বলল,
_অনুরাগের জন্য লেট হয়েছে! রাস্তায় বার হলেই পেট্রোল পাম্পে ওকে যেতেই হবে!
অনুরাগ চাবি ঘোড়াতে ঘোড়াতে বলল,
_তোদের যেমন রাস্তায় বার হলেই ফুচকা খেতেই হয়!আমার বাইক রাস্তায় বার করলে তাকে তেল খাওয়া তেই হয়!বল মুটি!
অনু গুম করে অনুরাগের পেটে ঘুঁষি দিয়ে বলল,
_তোর চোদ্দগুষ্ঠী মুটি!
অরিন্দম দূরে দাঁড়িয়ে তাদের এমন হাসাহাসি দেখে রাগে মাথায় আগুন হয়ে উঠলো কিন্তু সে তার রাগ সহজেই দমাতে পারে ধৈর্য্যশীল একজন পুরুষ সে,রাগ হলেও সেটা সহজে প্রকাশ করে না সে! অতঃপর নিজেকে বুঝিয়ে এগিয়ে গেল অনুর পাশে! গিয়েই খপ করে অনুর হাত ধরে টান দেয়!অনু সহ বাকি দুজন ও অবাক হয়ে গেল! অরিন্দম কাটকাট গলায় বলল,
_’ভিতরে চল!’
অনু আগের ন্যায় বলল,
_’বললাম না আপনি জান আমি আসছি!’
অরিন্দম তাকে টেনে নিয়ে যেতে যেতে বলল,
_’আমি যেহেতু তোমাকে এনেছি, আমিই তোমার পরিবারের কাছে তোমাকে ছাড়ব!’
অনু মনে মনে বেজার খুশি হয়ে গেল তবু মুখে প্রকাশ করলো না!সে ভালো করেই বুঝতে পারছে অরিন্দমের মতিগতি। সে পিছনে তাকিয়ে তিশাকে দাঁত বের করে বড় হাসি দিল!
অরিন্দম অনুকে নিয়ে শাড়ী সেন্টারের দিকে এগিয়ে গেল, পায়েল তাদের দেখে এগিয়ে এল! অরিন্দম তাকে দেখে এক গাল হেসে বলল,
_’কেমন আছিস দি?’
পায়েল ভ্রু কুঁচকে দুহাত ভাঁজ করে বলল,
_অরি আমি ভালো আছি কিন্তু তোর কি হয়েছে?
অরিন্দম কিছু বুঝতে না পেরে বলল,
__’আমার কি হবে?’
_’তুই ওর হাত কেন ধরে আছিস ও কি বাচ্চা যে হারিয়ে যাবে?’
অরিন্দম নিজের হাতের দিকে দেখল,সে অনুর হাত শক্তপোক্ত ভাবে এখনো ধরে আছে!সে লজ্জা পেয়ে তাড়াতাড়ি হাত ছেড়ে দিয়ে বলল,
__আব আব..
পায়েল চোখ ছোট ছোট করে বলল,
_কি আব আব?
অরিন্দম কথা খুঁজে না পেয়ে মৃন্ময়ের কাছে দৌড় দেয়! তা দেখে পায়েল আর অনু হেসে ওঠে! অনু হেসে পায়েল কে বলল,
_দি তোমার ভাই পাগল হয়ে গিয়েছে!
পায়েল চাটি মেরে বলল,
_তোর জন্যই তো হলো!
_________
অলকা দেবী তনুশ্রীর জন্য শাড়ী পছন্দ করে যাচ্ছেন।তিনি একটা লাল টুকটুকে বেনারসি নিয়েছেন তনুশ্রীর জন্য মৃন্ময়ের মাও একটা গোলাপি বেনারসি নিয়েছেন তনুশ্রী কে বৌভাতের দেওয়ার জন্য!তনুশ্রী মায়ের সাথে চুপচাপ বসে শাড়ী পছন্দ করছে, মৃন্ময় পাশে বসে তাকে এটাওটা দেখি যাচ্ছে,আর অনু শাড়ী ছোড়াছুড়ি করে যাচ্ছে হঠাৎ করে অনুর একটা কালো শাড়িতে চোখ আটকে গেল, শাড়ীটায় কালো স্টোন লাগানো চকচক করছে,অনু মুচকি হেসে শাড়ীটা হাতে তুলে নিয়ে সামনে রাখা বড় আয়নার দিকে তাকাল অতঃপর যে শাড়িটা নিজের গায়ের মেলে দেখল, ফর্সা গায়ের শাড়ীটা চকচক করছে,অনুর হাসি বিস্তর হলো, তার কালো রং বরাবরই পছন্দের,সে হাসি মুখে আবার আয়নার দিকে তাকাতেই চমকে গেল কারন অরিন্দম নিষ্পলক ভাবে চেয়ে আছে তার মুখপানে। অরিন্দমের এমন চাউনিতে অনু খানিকটা লজ্জা বোধ করলো! অরিন্দম চোখে চোখে ইশারায় তাকে কিছু একটা বলল,অনু তা বুঝতে পেরে মুচকি হেসে অলকা দেবীর দিকে তাকিয়ে বলল,
_মামি মামি এই শাড়ীটা নেবো!
অলকা দেবী অনুর হাতে কালো শাড়িটা দেখেই চোখ রাঙিয়ে বললেন,
__তোর সব সময় ফালতু জিনিস পছন্দ করা!শুভ কাজে কালো পড়তে নেই সেটা তোকে বুঝিয়ে বুঝিয়ে আমি আর পারিনা, আমি তোর জন্য নীল শাড়ী নিয়েছি নীল শাড়ী পরলে তোকে খুব সুন্দর মানায়!
অনু মুখ কালো করে বলল,
__’কিন্তু মামী আমার এই শাড়ীটা খুব পছন্দ হয়েছে!’
অলকা দেবী ধমক দিয়ে বললেন,
__বলেছি না!
অনু চুপ করলো না সে মুখ ফটকা কোনো কথা চেপে রাখতে পারে না তাই সে বলল,
__’আজ আমার মা থাকলে আমাকে নিশ্চয়ই এটা কিনে দিত!’
পরিবারের সকলে হঠাৎ করে হৃদয় কেঁপে উঠলো! সবাই তার দিকে তাকিয়ে থাকে।অনু মাথা নিচু করে শাড়ী গুলো দেখে চলেছে সে যে একটু আগে এত বড়ো একটা কথা বলল তার যেনো তা মনেই নেই! তনুশ্রী মায়ের দিকে অসহায় দৃষ্টিতে তাকালো, অলকা দেবীর দৃষ্টি এলোমেলো হলো! তিনি তাকে কষ্ট দিতে চান না তিনি চান দুটো মেয়েকেই সব সময় খুশি রাখতে কিন্তু তিনি খুব নিয়মকানুন মেনে চলে এসব বিষয়ে তিনি কোনরকমে গাফিলতি সহ্য করবেন না তা নিয়মে শুভ কাজে কালো কিছু পোষাক চলে না তাই তিনি অনু যত ই ইমোশনাল করুক তিনি কথা শুনবেন না। তিনি অনুরাগের দিকে তাকিয়ে ইশারা করলো। অনুরাগ মাথা দুলিয়ে অনুর পাশে বসে একটা অরেঞ্জ কালার শাড়ি নিয়ে অনু মাথায় ঘোমটা দিয়ে বলল,
__সব সময় তোর কালো রং কেন পছন্দ রে মা।সেটাআমি বুঝতে পারিনা। এই অরেঞ্জ কালার টা দেখ তোর উপর কত সুন্দর লাগছে একেবারে কমলালেবু লাগছে। কালো পড়লে তোকে একেবারে পেত্নী লাগে।অরেঞ্জ পড়লে ভালো লাগবে।
অনু তেলেবেগুনে রেগে বলল,
_তোর অরেঞ্জ তোর কাছে রাখ গাব্বার সিং।
অনুরাগ হেসে বলল,
__আর তুই বাসান্তি।এই নিয়ে তাদের দুজনের মধ্যে ঝগড়া আবার শুরু হয়ে গেল। অলকা দেবী একটা তপ্তশ্বাস ফেলে আবার নিজের কাজে মনোযোগ দিলেন মৃন্ময়ের মা তমাসা দেবী অলকা দেবীকে বললেন,
__মেয়েটা কালো শাড়ি নিতে চাইছে নিক না।বিয়ের সময় না পরলেও তারপরে তো পরতে পারে।
অলকা দেবী স্মিত হেসে বললেন,
__মেয়েটা একটু বেশি জেদি আমি যদি ওকে এখন এটা নিতে দিই তাহলে ও আরো অনেক কিছুই বায়না করবে তাই ওকে একটু শাসনে রেখে চলতে হয় দিদি।
তমাসা দেবী বললেন,
__এক মেয়ে তো এত দূরে চলে যাবে আর কদিন পরে!আর অনু ও না জানি আরো কত দূরে যায়। তাই এখন থেকে একটু নরম হন।
অলকা দেবী নিজের মুখে হাসি রেখেই বললেন, __এক মেয়েকে দূরে দিচ্ছি! তাও আমার দেওয়ার কোন ইচ্ছেই ছিলো না! কিন্তু তনুশ্রী যেখানে শহরের ভালো চাকরি পেয়েছে আর ও নিজে থেকেই মৃন্ময় কে পছন্দ করেছে আর মৃন্ময় কে আমার খুব পছন্দ এই জন্য মেয়েকে দূরে দিচ্ছি। না হলে বিশ্বাস করুন মেয়েকে আমি চোখের আড়াল করতাম না এতটা। কিন্তু অনুকে আমি এত দূরে দেবো না।ওকে আমি চোখের সীমানার মধ্যে রাখবো। মেয়েটা লাগাম ছাড়া!একা ছাড়তে ভয় করে। আজ ই কতটা বকা দিলাম তনুশ্রী কে অনুকে নিজেদের সাথে নিয়ে আসেনি বলে! মেয়েটাকে নিয়ে আমি ভয়ে ভয়ে থাকি,আর তাছাড়া ওর এখনো বিয়ের অনেক দেরি। আগে পড়াশোনা শেষ করুক একটু ভালোভাবে সবকিছু বুঝতে শিখুক জানেনই তো কেমন বাচ্চামি করে বেড়ায় সারা দিন।তাই ওর বিয়ের চিন্তা আমি এখন করছি না।কিন্তু এইটা বলে রাখি ওকে আমি দূরে পাঠাবো না।
তমাসা দেবী অবাক চোখে তাকিয়ে রইলেন তিনি এই মহিলাটিকে সব সময় গম্ভীর ভাবে দেখে এসেছেন, কথা খুব কম হয়েছে কিন্তু আজ কথা বলে মনে হল মহিলাটি দুই মেয়েকে সমান ভালোবাসেন!
#চলবে