#হবে-কি-আমার(২)
#writer_Ruhi-mondal
#পর্ব_7
বাহিরে তখন মুষুলধারে বৃষ্টি নেমেছে, আকাশে মেঘের গুড়ুম গুড়ুম করে শব্দ হচ্ছে,তা দেখে অলকা দেবী ব্যস্ততা দেখিয়ে তনুশ্রী কে বললেন,
__’তোর আর কিছু লাগবে?আমি তোর জন্য প্রয়োজনীয় সবকিছু নিয়েই নিয়েছি! তুই কি আর কিছু নিবি?
তনুশ্রী বলল,
__’আর কিছু লাগবে না মা!’
অলকা দেবী তাকে বললেন,
__তোরা চলে যা আরও দেরি হলে বৃষ্টি বেশি আসবে আমি একটু দেরি করে যাব আমার একটু কাজ আছে।
তনুশ্রী মাথা নেড়ে মায়ের কাছ থেকে চলে গেল। গিয়ে মৃন্ময়ের পাশে গিয়ে দাড়াতে, মৃন্ময় দুষ্টুমি করে হেসে বলল,
__তোমার হয়েছে তাহলে চলো! আমি তোমাকে ড্রপ করে দেব, আর এই বৃষ্টিতে আমাদের একটু প্রেম হয়ে যাবে।কি বলো?
তনুশ্রী লজ্জা পেয়ে বলল,
__’যা অসভ্য লোক একটা!’
মৃন্ময় হুহা করে হেসে উঠলো,সে হাতে থাকা ব্যাগ গুলো নিয়ে এগিয়ে যেতে লাগল!তারা যেমন ভাবে এসেছিল তেমন ভাবেই গেল! অরিন্দম এখনো মলের ভিতরে দাঁড়িয়ে আছে,একটু আগে অনুর সাথে কথা বলতে চেয়েছিল কিন্তু মেয়েটা তাকে ভেংচি কেটে চলে গিয়েছে!তারপর আবার সবার আড়ালে এসে তাকে একটা নীল রঙের পাঞ্জাবি দিয়ে গরম গলায় বলল,
__ “এটা বিয়ের দিন রাতে পরে আসবেন! না পড়লে মার একটাও মাটিতে পড়বে না।
অরিন্দম হা করে তার কথা শুনলো।মেয়েটার কি সাহস সে কিনা তাকে মারবে বলছে।
অনু তারপর মিষ্টি হাসি দিয়ে বলল,
__আমিও নীল পড়বো তাই আপনি ও পড়ে আসবেন কেমন! আসবেন তো পরে?
অরিন্দম অনুর অনুরোধী কন্ঠে স্মিত হেসে মাথা ঝাঁকালো।অনু খুশি হয়ে অরিন্দমের দুগালে নিজের দু’হাত চাপড়ে বলল,
___আমার সোনাটা বলে ভৌ দৌড় দিল।
অরিন্দম হা করে তাকিয়ে থাকে।
অরিন্দম অপেক্ষা করছে অনুর জন্য কিন্তু অনুর সেদিকে খেয়াল নেই সে একটা ওড়না নিয়ে দেখে যাচ্ছে। ওর পাশে অলকা দেবী গিয়ে বললেন,
___অনু একটা শার্ট কিনতে হবে অনুরাগের জন্য চল।
অনু মামীর দিকে তাকিয়ে বলল,
__কেন?
অলকা দেবী বললেন,
__কেনো পরে বলবো এখন চল অনুরাগের জন্য নিতে হবে কিছু কিনে নিয়ে চলে যাই এরপর আর বার হওয়ার সময় পাবো না আমি।
অনু কিছু না বুঝে হেসে দিল, কারন মামীকে কিছু জিজ্ঞেস করলে তিনি বলবেন না কিছু অগত্যা অনু মুচকি হেসে বলল, চলো।
শার্ট সেন্টারে গিয়ে একটা অ্যাস কালার শার্ট নিয়ে অনু অলকা দেবী কে দেখিয়ে বলল,
___এটা খুব সুন্দর লাগছে।
অলকা দেবী বললেন,
____অনুরাগের গায়ে ফেলে দেখ কেমন লাগে।
অনু পিছনের ঘুরে অনুরাগ বলে ডাকতে অনুরাগ তিশা দুজন এগিয়ে যাক। তিশা অনুর হাতে শার্ট দেখে বলল,
____ওয়াও কি দারুন লাগছে শার্টটা!কার জন্য? অনু অনুরাগের গায়ে ফেলে বলল,
__আমার এই পঁচা কুমড়োর জন্য।
অনুরাগ খুশি হয়ে তার দুগাল টেনে বলল,
___ থ্যাঙ্কু ঢেঁড়স!
অনুরাগের মা নেই।সে যখন ক্লাস টেনে পড়ত তখন ওর মা মারা যা!বাবা ও নিজের বিজনেস বেশি ভালোবাসেন, তিনি শহরে থাকেন। অনুরাগ যায়নি সে তিশা আর অনুকে ছেড়ে কোথাও যাবে না অগত্যা অনুরাগের বাবা তাকে এক পিসির কাছে রেখে নিজের কাজে চলে যান।অলকা দেবী বড়াবড় অনুরাগকে স্নেহ করেন ছেলেটাকে নানান কারনেই তার ভালো লাগে!অলকা দেবী এগিয়ে গিয়ে বললেন,
__কাল থেকে তাড়াতাড়ি বাড়িতে চলে এসো অনেক কাজ আছে।
অনুরাগ একগাল হেসে বলল,
__ওকে কাকিমা!
অরিন্দম দূরে দাঁড়িয়ে তাজ্জব বনে গেল তাদের এমন দেখে আর মামী ও কিছু বলছেন না কেন? তার কত রাগ হচ্ছে অন্য ছেলের সাথে মেয়েটাকে দেখে আর উনি তার মামী হয়ে কিছু বলছেন না কেন?কি সম্পর্ক ওদের?আচ্ছা তিনি তো একটু আগেই বললেন অনু’কে গ্ৰামেই রাগবেন তাহলে কি এই ছেলেকে তিনি পছন্দ করে রেখেছ? ভেবেই অরিন্দমের বুক ধ্বক করে উঠলো.সে এক মুহুর্ত দেরি না করে এগিয়ে গেল অনুর কাছে। গিয়ে নম্র ভাবে অলকা দেবীকে বলল,
__ “আন্টি আমি কি এবার যেতে পারি?”
অলকা দেবী অরিন্দমের দিকে তাকিয়ে বললেন,
_তোমাকে আর অপেক্ষা করতে হবে না তুমি বেরিয়ে পড়!
অরিন্দম অনু’র দিকে তাকিয়ে বলল,
__’চলো!’
অলকা দেবী বললেন,
__অনু তোমার সাথে যাবে না বাবা!
অরিন্দম অনু দু’জনেই আবাক হয়ে গেল, অরিন্দম বলল,
__’কিন্তু ও তো আমার সাথে..
অলকা দেবী তাকে থামিয়ে দিয়ে বললেন,
__’অনু এখন আমার সাথেই যাবে আমাদের একটু দেরি হবে!’
অরিন্দম হাসার চেষ্টা করে বলল,
__সমস্যা নেই আমি ওয়েট করছি!
___না আমাদের অনেকটা দেরি হবে কিছু ব্যাক্তিগত কাজ আছে তুমি বরং তিশাকে সাথে করে নিয়ে যাও ওকে নামিয়ে দিও,অনুরাগ আমাদের সাথে চলে যাবে!
অরিন্দম অবাক দৃষ্টিতে অলকা দেবীর দিকে তাকিয়ে আছে! তাদের এমনকি ব্যক্তিগত কাজ আছে যেখানে অনুরাগ থাকবে, তাকে সাথে নিয়ে যাবে! অনুরাগ এমন কে যে তাকে এত আদর দেখাছেন উনি, তাহলে কি ও যেটা ভাবছে সেটা….
অনুর মনটা খারাপ হয়ে গেল সে অরিন্দমের সাথে একটু থাকবে বলে রাগ দেখিয়ে তার সাথে কথা হয়নি ভালো করে কিন্তু কি আর করার মামী বলেছে মানে তাকে কথা শুনতে হবে।
অরিন্দম মুখ ছোট করে বেরিয়ে গেল বৃষ্টি মাথায় নিয়ে!সে দৌড়ে গাড়িতে গিয়ে বসলো।ড্রাইভ করে মলের সামনে চলে আসে।
তিশা অনুরাগের কাছে গিয়ে মুচকি হেসে বলল,
__”তুই তাহলে পরে আয় আমি আসছি।সাবধানে বাড়ি ফিরবি।আর গিয়ে কিছু খেয়ে নিবি!”
অনুরাগ তিশার গালে হাত রেখে বলল,
__’তুই ও সাবধানে যা,বাই!আর আমি রাতে না খাবার খেলে তোর বাড়ি গিয়ে তোকে জ্যান্ত চিবিয়ে খেয়ে আসবো বুড়ি!’
তিশা চোখ গরম করে বলল,
__তুই আর মানুষ হবি না কোনোদিন!
অনুরাগ হেসে বলল,
__তোর বাঁদর হয়ে থাকব বাধরি!
অনু মলের বাহিরে দাঁড়িয়ে আছে অরিন্দমের দিকে মুখ কালো করে তার মনটা ছটফট করছে অরিন্দমের সাথে একটু ভালো ভাবে কথা বলার জন্য কিন্তু আজ আর হলো না। অরিন্দম জানালার কাঁচ থেকে অনুর মুখপানে একদৃষ্টিতে তাকিয়ে রইল বেশকিছুক্ষণ তার কিছু ভালো লাগছে না সব অসহ্য লাগছে! অদ্ভুত বেদনা হচ্ছে তার হৃদয়ে। সাথে হারানোর ভয় ও হচ্ছে। তিশা তার পাশে বসে বলল,
____”চলুন দাভাই!”
অরিন্দম মাথা নেড়ে সায় দিয়ে গাড়ি স্টার্ট করল শেষ বারের মত অনুর দিকে তাকাল, তখনই অনুরাগ অনুর হাত ধরে দোকানের ঝাউনি দিয়ে তাকে নিয়ে এগিয়ে চলেছে।অরিন্দম তা দেখে আবার বুক মোচড় দিয়ে উঠলো, সে আর থাকতে না পেরে তিশাকে বলল,
__’তোমাকে একটা কথা জিজ্ঞেস করব কিছু মনে করবে না তো?’
তিশা শান্তশিষ্ট মিষ্টি মেয়ে কথায় কথায় হাসে। সে এবার ও মুচকি হেসে বলল,
___’বলুন কি বলবেন?’
___অনুরাগের সাথে অনু’দের কি সম্পর্ক?
তিশা অবাক চোখে তাকিয়ে থাকে অরিন্দমের দিকে। অরিন্দম অপ্রস্তুত হয়ে বলল,
__’না মানে মনে হলো ও ওদের আপন কেউ তাই বললাম!’
তিশা মুচকি হেসে বলল
__রক্তের সম্পর্ক ওদের নেই কিন্তু অনুরাগ মানুষটাই এমন যে তাকে সবাই আপন করে নেয়,আর আন্টি অনুরাগকে একটু বেশি ভালোবাসেন,অনুরাগ ই পারে একমাত্র অনু’র জেদ ভাঙাতে তাই আন্টি ওকে সব বিষয়ে জানান! আর তাছাড়া ওকে আন্টি কথা… শেষ হওয়ার আগেই তিশার ফোন বেজে উঠল সে ফোনটা হাতে নিয়ে দেখ তার মা ফোন করেছে,সে ফোনটা রিসিভ করে কথা বলতে লাগলো!
অরিন্দমের কথাটা শুনে ভয় মনে আরো জেকে বসল,সে যেটা ভাবছে সেটা যদি হয়, তাহলে? না সে আর বাঁচতে পারবে না ওই মেয়েটাকে না পেলে,সে দেখতে পারবে না অনুকে অন্য কারোর সাথে, অতঃপর সে আর বিলম্ব না করে গাড়ির স্পিড কমিয়ে মৃন্ময় কে ছোট্ট একটা ম্যাসেজ করে বলল,
___”আমি অনুকে বিয়ে করতে চাই,তুই প্লিজ কিছু একটা কর!”
#চলবে