#মহুয়া
#শারমিন_আক্তার_সাথী
পর্ব:১৫
প্রিয়তির চোখ দুটো জ্বালা করছে। কিন্তু মনে মনে নিজেকে যথাসম্ভব শক্ত করল। রিদুর দিকে না তাকালো না। রিদুর চোখ মুখের দিকে তাকানোর শক্তি নেই ওর। তাই রিদুর দিকে না তাকিয়েই বলল,
” তারপর?”
” প্রেমার খোঁজ করছিলাম পাগলের মতো। দিনে কতবার যে ওর ফোন নাম্বারে কল করতার তার ইয়াত্তা ছিলো না। বার বার অনলাইনে ঢুকে ওর ফেইসবুক আইডি চেক করতাম কিন্তু তা ডিএকটিভ ছিলো। নিরুপায় হয়ে তোমার খালার বাসায় গেলাম। তোমার খালার সাথে আমার মোটামুটি ভালো সম্পর্ক ছিলো। সে হিসাবে কখনো কখনো তার বাসায় যেতাম। কিন্তু তোমার খালার কাছে কিছু জিজ্ঞেস করার সাহস হলো না। তোমার খালাতো বোন রুমকি যে কিনা প্রেমারই বয়সী।
একদিন রুমকিকে একা পেয়ে তার কাছে প্রেমার কথা জানতে চাইলাম। কিন্তু সে বলতে চায়নি। এক রকম পায়ে ধরার মত করে অনুরোধ করলাম। পরে সে বলল, প্রেমা বাড়ি চলে গেছে। আমার সাথে যোগাযোগ রাখতে চায় না। আমি তাকে বললাম প্রেমার সাথে একবার কথা বলিয়ে দিতে তারপর আর তাকে বিরক্ত করব না। সে প্রেমা ফোন বন্ধ পেয়ে প্রেমার বড় বোনের নাম্বারে কল করল। তখন তো জানতাম না তুমি প্রেমার বড় বোন। প্রেমার বড় বোন মানে তোমার মাধ্যমে জানলাম প্রেমা খুব অসুস্থ। আমি প্রচন্ড ভয় পেলাম। রুমকিকে হাত জোড় করে বললাম, যেভাবে হোক প্রেমার সাথে একবার কথা বলিয়ে দিতে। রুমকির মাধ্যমে সেদিন প্রেমার সাথে কথা বলতে পারলাম। কিন্তু প্রেমা আমার কন্ঠ শুনেই বলল, দেখো ফোনে কথা বলতে পারছি না। কয়েকদিন পর যেনো আমি এ শহরে এসে ওর সাথে দেখা করি। তখন সবটা খুলে বলবে। প্রেমা দেখা করবে শুনে প্রাণে যেনো প্রাণ ফিরে পেলাম।
প্রায় সতেরো দিন পর প্রেমা একটা রেস্তরাঁয় দেখা করল। আমি প্রেমাকে দেখেই বললাম, কী হয়েছে প্রেমা? কেন এড়িয়ে যাচ্ছো আমায়? আমার কী কোনো ভুল হয়েছে? প্রেমা খানিক সময় চুপ থেকে বলল, দেখো হৃদয় ভুল আমাদের দুজনেরই হয়েছে। তোমার সাথে বেশ কয়েকবার অবাধ মেলামেশার কারণে আমি প্রেগনেন্ট হয়ে যাই। আমি বিস্ময়ে বললাম, কী বলছো? এটা কী সত্যি? প্রেমা বলল, হ্যাঁ। আমি বললাম তাহলে তুমি আমার থেকে পালিয়ে কেন বেড়াচ্ছো? আমাকে তোমার বলা উচিত ছিলো। তুমি চিন্তা করো না আমি যত দ্রুত সম্ভব আমার পরিবারকে তোমার বাড়িতে পাঠাবো। আমরা দ্রুত বিয়ে করে নিবো। প্রেমা বলল, দেখো হৃদয় আমি এখন বিয়ে করতে আগ্রহী নই। বিয়ে জীবনের একটা ঝামেলাময় অধ্যায়। এত দ্রুত আমি সাংসারিক ঝামেলায় জড়াতে চাই না।
আমি বললাম, তাহলে আমাদের সন্তানের কী হবে? প্রেমা বলল, তুমি চিন্তা করো না আমি অলরেডি এবরশন করে ফেলেছি। ভ্রুন যত বড় হবে এবরশনে তত ঝামেলা প্লাস কষ্টদায়ক। আমি প্রথম মাসে পিরিয়ড মিস করার পর টেস্ট করে পজেটিভ জানার পরই বাচ্চা নষ্ট করার ঔষধ খেয়ে বাচ্চা এবরশন করে ফেলেছি। ঝামেলা ছাড়াই সমস্যার সমাধান হয়েছে। যদিও অতি মাত্রায় ব্লাড লস হবার কারণে কদিন খুব অসুস্থ ছিলাম সে কারণেই খুলনা থেকে চলে এসেছি। আমি প্রেমার কথা শুনে কী বলবো ভেবে পাচ্ছিলাম না। শুধু বললাম, তুমি চাইলে বাচ্চাটা পৃথিবীতে আসতে পারতো। হয়তো পরিবারে একটু ঝামেলা হতো কিন্তু তারা মেনে নিতো। আমরা বিয়ে করে নিলেই সমস্যার সমাধান নীরবে হতো। আমার সন্তানকে খুন করার প্রয়োজন হতো না তোমার।
প্রেমা বলল, ক্ষ্যাত মার্কা কথা বলো না। আমার জীবনে কিছু স্বপ্ন আছে। এত দ্রুত বিয়ে করে বা বাচ্চা নিয়ে তা নষ্ট করতে পারব না। তাছাড়া আমার বড় বোনের, বড় ভাইয়ের বিয়ে হয়নি আমি সবার ছোট হয়ে বিয়ের পিঁড়িতে বসে পড়বো? আর বিয়ের কয়মাসের মাথায় বাচ্চা হলে লোকে কী বুঝতো না। আর সবচেয়ে বড় কথা হচ্ছে, আমি বর্তমানে সংসার নামক খাঁচায় বন্দী হতে চাই না।
তোমার সাথে সম্পর্ক হবার পরই বুঝতে পারি তুমি বিয়ে করতে চাইবে এমন টাইপ ছেলে। তাই বাচ্চার কথা জানাইনি। চুপচাপ চলে এসেছি। আমার পক্ষে সম্পর্ক কন্টিনিউ করা সম্ভব না। এখন থেকে আমি নিজেকে নিয়ে থাকতে চাই। প্রেম ভালোবাসা আমার কাছে জাস্ট টাইম পাস। নিজের টাইম পাস করার চক্করে যখন ঝামেলায় পড়ে যাই তখন নিজের উপরই রাগ হয়। আমার সাথে যোগাযোগ করার চেষ্টা করো না হৃদয়। এসব বিয়ের ইমোশনে তুমি আমায় বাঁধতে পারবে না।
প্রেমার কথাগুলো শুনে কিছুক্ষণ বাকরুদ্ধ হয়ে বসে ছিলাম। প্রচন্ড অপমানবোধ হচ্ছিলো। নিজের ভিতরে জমা হওয়া প্রচন্ড রাগ চেপে রাখতে পারিনি। সেটা আগুনের ফোয়ার মত বাইরে বের হয়ে আসল। প্রেমাকে পর পর তিন চারটা চড় মেরে বসলাম। আমরা বেস্তরাঁয় কর্ণারের একটা টেবিলে বসেছিলাম। কিন্তু চড়ের শব্দে পুরো রেস্তরাঁর লোক আমাদের দিবে বিস্ময়ে তাকিয়েছিলো। আমি বেশ জোরেই বললাম, তুই যে একটা এক নাম্বারের বেশ্যা তা কিছুদিন আগেই জেনেছিলাম। ছেলের সাথে টাইম পাস করাই তোর ধান্ধা। আমার ফ্ল্যাটের আরো একটা ছেলের সাথে তোর সম্পর্ক হয়েছিলো সেটাও আমি জেনেছি। তাও তোকে ভালোবেসে অন্ধ বিশ্বাস করে এ পর্যন্ত এসেছি। কিন্তু তুই নিজেই প্রমাণ দিলি তুই কী? শোন তোর গর্ভের বাচ্চাটা যে আমার ছিলো তারও কোনো প্রমাণ নেই। হতে পারে অন্যের জিনিস তুই আমার নামে গছাচ্ছিস। তারপর প্রেমাকে কোনো কথা বলার সুযোগ না দিয়ে আমি ওখান থেকে চলে আসলাম। যেহেতু প্রেমা আমাকে ওর বাড়ির ঠিকানা কখনো দেয়নি তাই তোমাদের বাড়ি চেনা সম্ভব ছিলো না বা তোমার পরিবারকে প্রেমার বিষয়ে জানানো সম্ভব হয়নি। তাও তোমার খালাকে বলতে চেয়েছিলাম কিন্তু তোমার খালাতো বোন রুমকির অনুরোধে তা করিনি। সম্পর্ক চলাকালীন যতবার প্রেমার কাছে বাড়ির ঠিকানা চেয়েছিলাম ও কৌশলে বিষয়টা এড়িয়ে যেতো।
এ ঘটনার পর বেশ কিছুদিন খুব ভেঙে পড়েছিলাম। স্বাভাবিক হতে মোটামুটি সময় লাগল। তারপর তোমার সাথে পরিবার বিয়ে ঠিক করল। আমার জীবনে নতুন করে বসন্ত আসল। তোমায় প্রচন্ড ভালোবেসে ফেললাম। এখানেও নিয়তি আমার সাথে ভালো লুকোচুরি খেলল। যখন তোমাকে দেখতে গিয়েছিলাম তখন প্রেমা ছিলো না, এনগেজমেন্ট এর সময়ও ছিলো না। তোমার বাবা বলেছিলেন, কী একটা জরুরি কাজে তোমার বোন ঢাকায় আটকে গেছে। বিয়েতে আসবে। তোমার খালা, তিনি তো এমনি বিয়ের দিন এসেছিলেন। যেহেতু বিয়ের আগে সবকিছু সম্পূর্ণ ঘরোয়া ছিলো তাই তেমন লোক ছিলো না, দুই পরিবারেরই।
বিয়ের আগেও তোমার সাথে যতবার কথা বলেছি বা দেখা করেছি একবারও প্রেমার সাথে কথা হয়নি, দেখা হয়নি। তোমার বোনের নাম প্রেমা শুনে প্রথমে খানিক খটকা লেগেছিলো। পরোক্ষণে ভাবলাম পৃথিবীতে বা এই শহরে একই নামের লোকের তো অভাব নেই। তাছাড়া তোমার চারিত্রিক গুন, স্বভাব, চেহারা দেখে কখনো মনে হয়নি তোমার ছোট বোন প্রেমার মত মেয়ে হতে পারে। তোমাদের চেহারায়ও সামান্যতম মিল নেই। প্রেমাকে প্রথম দেখলাম আমাদের বিয়ের দিন।
কিন্তু বিয়ের দিন প্রেমাকে দেখেও কোনো পদক্ষেপ নেয়ার মত পথ ছিলো না। ভরা মজলিসে কী করতাম আমি। আমার সবচেয়ে বেশি খটকা লাগতো এটা ভেবে যে, আমি নাহয় প্রেমার কথা জানতাম না কিন্তু প্রেমাও কী আমার কথা জানতো না? প্রেমা কী আমার নাম শোনেনি বিয়ের আগে? ছবি দেখেনি? বিয়ের কার্ডে আমার নাম এবং ছবি ছিলো তাও কি একবার দেখেনি ও। আমি প্রেমার বিষয়ে সঠিকভাবে কিছু না জানলেও প্রেমা তো আমার বিষয়ে বিস্তারিত সব জানতো। ওর কাছ থেকে তো আমি আমার বিষয়ে কোনো কথা লুকাইনি।
এসব প্রশ্নের উত্তর পেলাম বিয়ের মাসখানিক পর। কিন্তু ততদিনে আমি তোমার সাথে বিয়ে হবার পর আমার জীবনে আমি স্বর্গসুখ অনুভব করতে লাগলাম। জীবনের আসল মানে পেলাম, ভালোবাসা, সুখ, স্বাচ্ছন্দ্য পেলাম। বিয়ের একমাস পর প্রেমার সাথে একাকি কথা হয়েছিলো আমার। তখনই ওকে আমি জিজ্ঞেস করেছিলাম কেন সব জেনেও ও চুপ ছিলো। তখন প্রেমা বলেছিলো আমার সাথে ওর কিছু হিসাব করা বাকি আছে। সে হিসাবের জন্যই ও সব জেনেও চুপ ছিলো এবং বিয়ের আগে আমার সামনে আসেনি। ও হিসেবটা সুদে আসলে উসু্ল করার জন্য চুপ ছিলো বিয়ের আগে।
হৃদিতার এনগেজমেন্ট এর দিন প্রেমার টার্গেট বাবা নয় বরং আমি ছিলাম। প্রেমা গোপনে আমাকে ডেকেছিলো একাকি রুমে। ওর প্ল্যান এমন ছিলো যে, ও ভরা মজলিসে এটা প্রমাণ করবে, আমি ওকে রেপ করতে চেয়েছি। কিন্তু আমার কপাল ভালো ছিলো আর বাবার খারাপ। কিছু কাজে বাবা ঐ রুমে যায়। অন্ধকার রুমে প্রেমা আমাকে মনে করে বাবার উপর হামলা করে। ঘটনা সম্পূর্ণ বিপরীত হয়ে যায়। প্রেমা নিজেও এতে হতাশ হয়েছিলো কিন্তু নিজেকে বাঁচানোর জন্য তখন দোষ আমার বাবার উপর চাপিয়ে দিয়েছিলো। প্রেমা এখন পর্যন্ত যা করেছে সবটা আমার উপর শোধ তুলতে। কিন্তু আমি বুঝতে পারছি না কিসের শোধ তুলছে ও? দুই বছর আগে আমার ভালোবাসাকে প্রত্যাখান ও করেছিলো, আমার সন্তানকে ও মেরেছিলো, আমাকে ছেড়ে ও চলে গিয়েছিলো! প্রতিশোধ তো আমার নেয়ার কথা তাহলে ও কিসের শোধ তুলছে?”
প্রিয়তি রিদুর দিকে একবার তাকিয়ে আবার মাথা নিচু করে শুয়ে পড়ল। রিদু প্রিয়তির কাঁধে হাত দিয়ে বলল,
” জান প্লিজ আমায় ভুল বুঝো না। আমি মানছি আমি যা করেছি তা অন্যায়। তুমি চাইলে আমাকে শাস্তি দিতে পারো। তোমার কাছ থেকে বিষয়টা লুকানো আমার একদমই উচিত হয়নি। আমার তোমাকে অন্ধকারে না রেখে পুরোটা বলে দেয়া উচিত ছিলো। কিন্তু তোমার সাথে বিয়ে ঠিক হবার পর, কয়েকদিন কথা বলার মনে হয়েছিলো আমি সারা জীবন তোমার মত কাউকে খুঁজছিলাম। এমন একজন বন্ধু যে আমাকে আমার চেয়ে ভালো বুঝবে। এ কারণে তোমাকে হারানোর ভয়ে রিয়ার কথা বললেও প্রেমার কথা বলতে পারিনি। প্লিজ প্রিয়তি তুমি আমাকে শাস্তি দাও। তাও এমন নীরব থেকো না।
প্রিয়তি চোখ বন্ধ করেই রইল। ওর নিশ্বাস ঘন হয়ে আসছিলো। রিদু বেশ অবাক হলো প্রিয়তি ঘুমিয়ে গেছে দেখে। রিদু আর কিছু বলল না, চুপচাপ শুয়ে পড়ল প্রিয়তির পাশে।
২১!!
রাত তিনটা,
বাইরে ঝড়ের তান্ডবে সব কিছু মনে হয় লন্ডভন্ড হয়ে যাবে। প্রবল বাতাসে কয়েকটা গাছ ভেঙে পড়ার আভাস পেয়েছে প্রিয়তি। প্রকৃতি বোধ হয় আর প্রিয়তির মনের তান্ডব বুঝতে পেরেছে। তাই তো প্রবল ঝড়ের পাশাপাশি হচ্ছে মুষলধারে বৃষ্টি। প্রিয়তির রুমের সাথে লাগোয়া ব্যালকনি বৃষ্টির পাানিতে ভরে গেছে। ব্যালকনি থেকে কিছু পানি দরজার ফাঁক দিয়ে রুমে আসছে। প্রিয়তি একমনে সেদিনে তাকিয়ে আছে। কতক্ষণ পর পর বিদ্যুৎ চমকাচ্ছে। পুরো রুম আলোয় আলোকিত হয়ে যাচ্ছে তখন। সেই আলোয় প্রিয়তি দেখছে নিজের জীবনের সবচেয়ে বিপর্যস্ত রাতটাকে।
ঝড় শুরু হবার পর রিদু ঘুম থেকে উঠে রুমের দরজা, জানালা ভালোভাবে বন্ধ করে দিয়েছে। প্রিয়তি তখন ঘুমের ভান ধরে পড়ে ছিলো। রিদু লাইট নিভিয়ে শুতেই প্রিয়তি আবার চোখ মেলে তাকালো। চোখের কোন বেয়ে জল পড়ছে। প্রিয়তি কোনো শব্দ করছে না। কিছু কান্নায় কোনো শব্দ হয় না। কিন্তু হৃদয় পোড়ায়, প্রচন্ডভাবে দাহ্য করে হৃদয়ের পুরোটা। বাইরের ঝড় সবাই দেখে কিন্তু ভিতরের ঝড়? সম্পর্কগুলো কেমন যেনো হুট হাট ঝড় এসে লন্ডভন্ড করে দিয়ে যায়। দেখলে মনে হয় সুন্দর ফুলের মালায় গাঁধা। কিন্তু মানুষ ভুলে যায় সম্পর্কের মালা গাঁথতে যে সুতা ব্যবহার করা হয় তা খুব নাজুক হয়। একটু টোকা লাগলেই সুতাটা ছিড়ে সম্পর্কটা বিখরে এলোমেলো হয়ে যায়।
প্রিয়তি ভাবছে আজকের মত এক ঝড়ের রাতেই রিদু আর ওর বাসর হয়েছিলো। বৃষ্টিভেজা বাসর। ওদের বিয়ের দিন সকাল থেকে ঝরঝরা রূপালী রোদ থাকলেও বিয়ের কিছুক্ষণ আগে মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। প্রিয়তি তখন সবাইকে বলতে শুনেছে বিয়ের দিন বৃষ্টি হওয়া খুবই শুভ। এতে নাকি সংসার বরকতময় হয়। লোকের কথায় প্রিয়তি যা লজ্জা পেয়েছিলো সেদিন। কনে বিদায়ের সময়ও গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি হয়েছে। গুড়ি গুড়ি বৃষ্টি অনবরত পড়ছিলো নিজ আনন্দে। প্রিয়তির মনে হচ্ছিলো এগুলো বৃষ্টি নয়, বিয়ের খুশিতে আনন্দ ঝড়ছে আকাশ থেকে।
রাত বাড়ার সাথে সাথে বৃষ্টির মাত্রাও বাড়ছিলো। ওদের দুজনকে বাসরঘরে একসাথে দেয়ার আধাঘন্টা পর শুরু হলো মুষলধারে বৃষ্টি। দুজন হাত ধরে ব্যালকনিতে গিয়ে গল্প করছিলো, বৃষ্টির অল্প অল্প ঝাপটায় গল্পের মহল ভালোবাসার রাজ্যে রূপ নিলো। সে কি আবেগময় মোহময়ী ভালোবাসা। প্রিয়তির চোখে, মুখে, শরীরে বৃষ্টির যতগুলো ফোটা স্পর্শ করেছিলো রিদু সবগুলো ঠোঁট দিয়ে শুষে নিয়েছিলো। স্পর্শময় শিহরিতো সে ভালোবাসা। আজও মনে পড়লে প্রিয়তির সারা শরীর অবশ হয়ে যায়। সেরাতে ঝড়ে হয়েছিলো মধুর মিলন আর আজ রাতের ঝড়ে প্রিয়তি বিচ্ছেদের গন্ধ পাচ্ছে। তীব্র গন্ধ পাচ্ছে হৃদয় পোড়ার।
হৃদয় পুড়লেও রিদুর সাথে চোখে চোখ রেখে কথা বলার মতো সাহস হচ্ছিলো না ওর। কী বলবে প্রিয়তি? কী জিজ্ঞেস করবে রিদুকে তেমন কিছুই ভেবে পাচ্ছিলো না। তাই চুপ করে ঘুমের ভান ধরে পড়ে ছিলো। প্রিয়তি মনে মনে বলছে,
” এক মুহূর্তে জীবনটা কেমন এলোমেলো হয়ে গেলো। এমন জীবন তো আমি চাইনি। আমি যেমন সাধারণ তেমন সাধারণ একটা জীবন চেয়েছিলাম কিন্তু——।” একটা চাপা দীর্ঘশ্বাস গোপন করে প্রিয়তি চোখ বন্ধ করল। চিন্তা যতই থাক ক্লান্ত শরীর জেগে থাকার পারমিশন দিচ্ছে না।
সকাল আটটা।
রিদু ফোনের দিকে তাকিয়ে ধরফরিয়ে ঘুম থেকে উঠে বসলো। এত বেলা পর্যন্ত ঘুমিয়েছে ও। আজ অফিসে জলদি যেতে হবে। এতদিন ছুটি নিয়েছে। এটা ভেবে হালকা অভিমান হলো প্রিয়তি আজ ওকে নামাজ পড়তেও উঠালো না? প্রতিদিন সকালে প্রিয়তিই ঘরের সবাইকে ফজরের নামাজ পড়তে জাগায়। তারপর নাস্তা বানিয়ে রিদুকে খাইয়ে অফিসে পাঠায়। আর আজ প্রিয়তি। রিদু পাশে তাকাতেই দেখলো প্রিয়তি এখনো ঘুমিয়ে আছে। রিদুর বিষয়টা বেশ অবাক লাগল। ছয় মাসের বেশি সময় হলো ওদের বিয়ের। বিয়ের পর প্রিয়তিকে কখনো ফজরের নামাজের পর ঘুমাতে দেখেনি। কিন্তু আজ?
রিদু প্রিয়তির গায়ে হাত দিতেই আৎকে উঠলো। গা বরফের মত ঠান্ডা হয়ে আছে। রিদু প্রিয়তিকে ডাকল কিন্তু——–
চলবে__________