গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন পর্বঃ ২

গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ২
লেখাঃ Shakil
..
..
..

—- এতোদিন জেলে ছিলি মানে,,, এসব কি বলিস ?? মজা নিতেচিস নাকি??
—- নাহ,,, সত্যি বলছি আমি এতদিন জেলে ছিলাম,, কিন্তুু জেলে কেনও?? কিসের জন্য??
— আমার ভাগ্যর লিখন,,, একদিন তোদেরকে সব বলবো ।
—– স্যার খাতা হাতে রুমে প্রবেশ করলেন।
—– যে যার জায়গায় গিয়ে বসলো,, আমি যেদিকে তাকায় সবাই দেখি আমাকে কেমন চোখে যেনো তাকিয়ে দেখছে ।
—– ওরা হয়তো ভাবছে জেল খেঁটেছে নিশ্চয়ই বড় ধরনের অপরাধী ছেলেটি । কিন্তু কেউ তো আর জানে নাহ আমার বেস্টফেন্ডকে খারাপ কারো কাছ থেকে বাঁচাতে গিয়ে রাগের বসে দুটো চড় মারার ফলেই জেল খেঁটেছি আমি ।
—- স্যার খাতা ও প্রশ্নপত্র দিলেন। পরীক্ষার প্রশ্নপত্র না পাওয়ার আগে যতটা দুশ্চিন্তায় ছিলাম প্রশ্নপত্র পেয়ে তা দুর হয়ে গেলো। শুরু করে দিলাম লিখা। সবার আগে আমি ওঠে দাঁড়িয়ে গিয়ে ,,, স্যার অতিরিক্ত পেজ লাগবে বলতে,, স্যার সহ পুরো রুমের ছাত্র-ছাত্রী আমার দিকে তাকালো।
—- এত তাড়াতাড়ি অতিরিক্ত পেজ নিবো শুনে এক স্যার এসে আমার খাতাটা উল্টেপাল্টে দেখলো,,
আমি ভাবছি স্যার এমন করছে কেনো,,!! পুরো খাতা দেখলেন,, পরে আমাকে খাতা দিলেন।
—– এই অতিরিক্ত পেজ নেওয়ার পর থেকেই আমার যত সমস্যা সৃষ্টি হয়ে গেলো।
স্যার তো নকল করছি ভেবে পাশে এসে পুরো ৫ মিনিট দাঁড়িয়ে থেকে লেখা দেখলেন আবার
হঠাৎ ঘাড়ে হাত রাখলেন,, আমিতো ভয় পেয়ে গিয়ে স্যারের দিকে তাকাতে উনি বললেন Good ☺carry on👍
—– স্যার চলে গেলেন। তারপরই পরপর তিনবার পিছন থেকে কেউ কলমের নিপ দিয়ে পিঠে খোঁচা মারলো । আমি হালকা ঘাড় ঘুড়িয়ে তাকাতে মিতু বললো দুইয়ের (ক) নম্বর প্রশ্নের উত্তরটা কী হবে??
এতিমের বাচ্চা
—- ঘাড় ঘুরিয়ে নিয়ে আবার লিখতে শুরু করলাম,,একটু পর ও আবার আমাকে খোঁচা মারলো,,৫ এর খ নম্বর উত্তরটা বলা যাবে ??? এতিমের বাচ্চা
—– এভাবেই প্রায় প্রতিটি পরীক্ষায় মিতু আমাকে ডিস্টার্ব করতো, আমি শুধু একটাই কথা ও উত্তর দিতাম ,,, এতিমের বাচ্চা
—- শেষ পরীক্ষার দিনে সব বন্ধুরা এসে বললো চল সবাই আজকে পরীক্ষা শেষে ঘুরতে যাবো। আমি কিভাবে ওদেরকে বলবো আমার কাছে ঘুরতে যাওয়ার মত টাকা নেই।
—- মিতুর ভাই আমাকে যে টাকা দিয়েছে তা আমার ভাগ্য লিখতে। বন্ধু-বান্ধবের সাথে ঘুরে আড্ডামাস্তি করতে নয়।
ওরা বলে যে যার জায়গায় গিয়ে বসলো। আমি পকেটে হাত দিয়ে দেখলাম মাত্র ২০ টাকা রয়েছে,, ২০ টাকা গাড়ি ভাড়া দিয়ে ১০ টাকা গাড়ি ভাড়ার রাস্তা হেঁটে বাড়ি যাবো বলে ২০ টাকা নিয়ে এসেছিলাম।
—- পরীক্ষা শেষে সবাই এসে ধরলো চল তোকে যেতেই হবে,, নাহ আমার কাজ আছে তোরা যা। ওরা সব চলে গেলো। আমারও ইচ্ছে হচ্ছিল ওদের সাথে যাই। কিন্তু সেটা তো আর আমার ভাগ্যে নেই।
—- মন খারাপ করে বাসায় গেলাম। হঠাৎ বালিশের নিচে আপুর ভাঙ্গা বাটন ফোনটি ধরতে আমার মন খারাপ মূহুুর্তের মধ্যেই ভালো হয়ে গেলো,, মনে হচ্ছে আজ আমি পৃথিবীর সব চাইতে খুশী
— মিতুর ভাই মাসুদঃ হ্যালো আবরি তুমি কোথায়??
—- আমিঃ বাসায় ভাইয়া ,, তাড়াতাড়ি হাসপাতালে চলে এসো,, তোমার আপু কমায় থেকে বের হয়ে এসেছেন এইমাত্র হাসপাতালের নার্স ফোন করে জানালেন আমায় আমি যাচ্ছি তুমি চলে এসো।
—– মাসুদ ভাইয়ার কথা শুনে আমার খুশীতেই চোখে পানি চলে আসলো,, দৌঁড়ে গিয়ে দেখি,, মাসুদ ভাইয়া আপুর পাশে বসে আছেন। আমি গিয়ে আপুর দিকে চেয়ে থাকলাম,, আপুর চোখ বেয়ে জল পড়ছে আমারো
—- ডাক্তার এসে জানালেন,, আপনার ভাগ্য অনেক ভালো। আপনার ভালো হওয়ার কোন সম্ভবনাই ছিলো নাহ। কিন্তু আল্লাহ পাকের দোয়ায় আর এই মানুষটার (মাসুদ) জন্য আজ আবার আপনি সুস্থ জীবনে ফিরে আসলেন।
—-আচ্ছা আমি তাহলে আসি,, মাসুদ ভাইয়া চলে যাবে কি আপু আমাকে উনাকে ডাকতে বললেন
আমি ডাকতে মাসুদ ভাইয়া আবার আসলো,,আপু উনার এক হাত ধরে কান্না ভেজা কণ্ঠে বললেন আপনার এই ঋণ আমি কোনোদিনও শোধ করতে পারবো নাহ
—- এভাবে বলছো কেন আমার জন্যই তুমি এমন অবস্থায় পতিত হয়েছিলে,, নিজের জীবন হতে কয়েকটা বছর হারিয়ে ফেলেছো,,আমিই ঋণী তোমার কাছে।
—– চলো আমার গাড়িতে করে তোমাদের বাসা অবদি এগিয়ে দিয়ে আসি,,,আপুকে নিয়ে আমি পিছনে বসে আছি আর ভাবছি,, মাসুদ ভাইয়া সত্যিই মানুষ নয় ফেরেশতা।
—- এমন একটা মানুষের হাতেই যদি আমার আপুটাকে তুলে দিতে পারতাম তাহলে ভাই হিসাবে আমার আপুটাকে শ্রেষ্ট উপহার দেওয়া হতো আমার।
—- বস্তির এক নোংরা জায়গায় গাড়ি থামাতে বলাই মাসুদ ভাইয়া অবাক হয়ে বললেন এখানে গাড়ি থামাতে বললে যে??
আমরা এই বস্তিতেই থাকি একটু ভিতরেই আমাদের বাসা বাসা অবদি আপনার গাড়ি যাবে নাহ
—– গাড়ির থেকে নেমে আমরা চলে আসতে উনি আমাদের ডেকে বললেন,,, কোন সমস্যা বা প্রয়োজন হলে জানাইও ইনশাআল্লাহ নিজের সর্বত্রটা দিয়ে পাশে থাকবো
—– আপু মাথা নাড়লো উনি চলে গেলেন আমি আর আপু আমাদের বাড়ি চলে আসলাম।
—- কয়েকদিন পর
আপু আর আমি বসে থেকে প্ল্যান করছি কিভাবে আমাদের এই পরিস্থিতিটা বদলানো যাই
আপু বললো,, আমরা আগে যেখানে থাকতাম ওখানে বাড়িভিটেটা বিক্রি করে দেই,,
যা হবে আর তোর কাছে যা আছে তা দিয়ে আমরা টাকাগুলো কাজে লাগিয়ে দেই ভাই,,,
— আপু ঐ জমিটা বিক্রি করে সর্বোচ্চ ৩০ হাজার টাকা পাওয়া যাবে,,, এই দিয়ে কিভাবে কি করবো আমরা??
—- ভাই আমার ঐ ৩০ আর তোর কাছে ৫০ এই দিয়েই আমরা একদিন ভাগ্যটা এমন ভাবে লিখবো যা হয়তো কেউ স্বপ্নেও ভাবতে পারবে নাহ।
—- কি করবো আমরা?? দীর্ঘ্য দীন আমার গার্মেন্টস এ কাজ করার অভিজ্ঞতা আর আমার সাথে কাজ করা কিছু চেনা যানা মানুষ নিয়ে ছোট্টো একটা ওয়ার্কশপ দিয়ে আমরা আমাদের যাত্রাটা শুরু করবো ভাই
—– আপু কি করতে চাইছে আমার মাথায় ঢুকলো নাহ,, আপু কিছু বুজলাম নাহ,,,?? আমরা প্রথমেে পুরনো কয়েকটি সেলাইমেশিন কিনবো তারপর কিছু গার্মেন্টস কর্মীদের পার্টটাইম এখানে কাজ করার জন্য সংগ্রহ করবো
— এরপর আমরা ছোট-খাটো কাজ ধরবো,, এবং খুব সুক্ষ ভাবে কাজ করবো।
—- আপু তাহলে মাসুদ ভাইয়াকে আমাদের জানাতো উচিৎ,,, উনার থেকেও কিছু পরামর্শ নেওয়া উচিৎ কি বলিস??
—– এমনিতেই আপু আশার পর থেকে আমি যখন মাসুদ ভাইয়ের সাথে কথা বলতাম তখন আপু শুধু উনার কথাই বলতো,,, উনি কেমন আছে জানতে চাইতো
—- আজ আবার উনার কথা বলাতে আপু অনেক খুশি হয়ে গেলো,, আচ্ছা তাহলে তুই ফোন করে উনাকে বল আমরা গিয়ে এক জায়গায় বসি
—– আমি ফোন দিলাম,, উনি আমাদের এক রেস্টুরেন্টে যাওয়ার কথা বললেন,,, আপু দেখছি সেই সাজুগুজু করছে
—- আমার কিছুটা শক হলো,, আপু আগে থেকেই মাসুদ ভাইয়ার সাথে পরিচয় নেই তো,,,?? উনাদের মাঝে কোন সম্পর্ক আছে মনে করে আমার শক হলো।
—- আপুকে গিয়ে বললাম,,আপু এত সাজুগুজু ব্যাপারকি,,?? উনার সামনে আমরা যাবো একটু তো সাজুগুজু করতেই হবে
—- আপু উনি যদি তোর প্রেমে পড়ে যাই,,, চুপপপ তুই অবেক দুষ্টু হয়ে গেচিস।
—– চল এখন,,, আপু তোদের মাঝে আমি গিয়ে কাজ কী??
তুই একাই যাহ 😉 দিবো একটা চড়,,,
চল বলছি,, আপু আমার হাত ধরে নিয়ে গেলো,, রেস্টুরেন্টে বসে আমি ওদের দুইজনের মাঝে বাঁধা হয়ে বসে থাকলাম।
—- মাসুদ ভাইয়ার দৃষ্টি বলছে আমি যেনো উঠে যাই,, উনার শুভ দৃষ্টিতে আমি যেনো বাঁধা হয়ে আছি,,, আমি একটা বাহানা দিয়ে উঠে যেতে আপু আমার হাত চেপে ধরলো আর ছাড়লোই নাহ
—- মাসুদ ভাইয়ার সাথে সব কথা শেষ,,
উনি আমাদের পুরনো সেলাইমেশিন কিনে কাজটা যত তাড়াতাড়ি পারি শুরু করে দিতে বললো,,
—- উনি হঠাৎ একটা কার্ড বের করে দিয়ে বললেন,, মিতুর বিয়েতে তোমরা দুজন অবশ্যই আসবা কিন্তু,, এই নাও কার্ড
—–কার্ড খুলে দেখলাম মিতুর বিয়ে অপুর সাথে
আমি পুরাই শক খেয়ে গেলাম,,এমন বাজে ছেলের সাথে মাসুদ ভাইয়া মিতুর বিয়ে কেন দিচ্ছে,,,??
—– আপু ছিলো তাই মুখ ফুটে কিছু বলতে পারলাম নাহ
বাসায় এসে কেমন যেনো আমার মনটা ছটফট করছে,,
মনে হচ্ছে,, একসময় যখন এতিম বলে কেউ আমার সাথে মিশতো নাহ,, তখন মিতুই আমার সাথে মিশেছে,,বন্ধুত্বের হাতটি বাড়িয়ে দিয়েছে
—- আর আজ মিতু তার জীবনটা একটা মানুষরুপী অমানুষের হাতে তুলে দিতে বসেছে,,, ওর বেস্টফেন্ড হিসাবে আমার কী কিছুই করার নেই,,, অবশ্যই আছে
ওর চোখ থেকে অন্ধের পটি তা তুলে ফেলতে হবে,, যেই করে হোক এই বিয়েটা ভাঙ্গতেই হবে
—– মাসুদ ভাইয়াকে দিলাম ফোন,,উনি ফোন ধরলেন নাহ,,, আমি উনার থানায় চলে গেলাম
গিয়ে সব বলে দিলাম,, এবং সত্যি কিনা তার প্রমান দিতে অপুর সাথে সম্পর্ক করা সব মেয়েদের সাথে উনার কথা বলিয়ে দিলাম
—- বাসায় চলে আসছি আর ভাবছি,,, তুই আমার বেস্টু আর এমন লুইচ্চারে বিয়া করবি,, তা তো হবে নাহ,, দিচি ঠীকমতো বম লাগাইয়া,,, এখন কেমন ফাটে তা দেখার বিষয়
—- বাসায় গেলাম একটু পর আপু বললো তোর ফোন,,, কে আপু??
কি জানি একটা মেয়ে তোকে চাইয়ে কথা বলবে নে,,,
—– ফোন ধরতেই এলোপাতাড়ি গাল শুরু করে দিলো,,, তোকে জেলের ভাত খাইয়েও কী শিক্ষা হয়নি,, আবারো আমাদের পিছনে লেগেচিস,, তোর জন্য ভাইয়া অপুর সাথে আমার বিয়েটা কান্সিল করেছে আর অপুকে জেলে পুড়ে দিবে বলছে
অপুর যদি কিছু হয়,,,আমি আস্তে করে ফোনটা কেটে দিয়ে বলছি
তাইরে নাইরে উরে
— ওমনি আপু আমার কানের উপরের চিপটা টেনে ধরে…
রেস্টুরেন্টে এমন কেন করছিলা আমার মিষ্টি ভাই,,,….?
আহ আপু…..
..
..
..
চলবে??
(ভালো লাগলে সাড়া দিবেন
তাহলে খুব তাড়াতাড়ি ৩য় পর্ব লিখবো)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here