গল্পঃ ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ১৪
লেখাঃ Shakil
~
~
~
—- আমার আব্বু মানে তোমার নানা উনার সব সহায় সম্পত্তি তোমাকে ও তোমার আপুকে লিখে দিয়ে গেছেন এবং আমিও সব লিখে দিয়েছি।
—- আজ থেকে এই সব কিছু তোমাদের। এই সব কিছুর দলিল এটা বাবা নেও তুমি।
— আমার সৎ মার কথা শুনে আমি বুজছি নাহ আমি এসব স্বপ্ন দেখছি নাতো। নাকি আসলে বাস্তবেই। কাল রাতে যা দেখেছি আসলে তা সত্যিই।
—- আমি কেন এসব নিবো,,?? এগুলো তো আমার বাবার নই। মানুষের কোন কিছু তো আমি নিবো নাহ।
—- ভাই এগুলো কি বলিস,,??
মানুষের কেনও হবে এগুলো আমাদের মায়ের। উনি না হয় আমাদের পেটে ধারন করেন নি তাই বলে কী উনি আমাদের মা নন। শুধু পেটে ধরলেই কী মা হয়ে যাই ভাই,,??
—- আপুর কথার উত্তর আমার কাছে নেই তা ছাড়া আপুর মুখের ওপরও আমি কোনদিন কথা বলি নাই। তাই আপুর কথায়… আমি মাথাটা এবার নিচু করলাম। আব্বু কিছু বলছে নাহ কেননা আব্বুর বলার মত এখানে কিছুই নেই।
—- একটু পর মাথা তুলে সামনে তাকাতে দেখি আমার সৎ মা কান্না করছেন এবং শাড়ির আঁচলটা দিয়ে চোখটা মুছছেন।
—- বাবা আজ যদি আমি তোমাদের মা হয়ে এগুলো তোমাদের দিতাম তাহলে তো অবশ্যই নিতে তাই না। আসলে ডাক্তার আমায় বলেছিলো আমি নাকি কোনদিনও মা হতে পারবো নাহ। তাই যেদিন থেকে জানতে পারি তোমার আব্বুর ছেলে ও মেয়ে রয়েছে সেদিন থেকেই ভাবতাম আমি তাহলে তোমাদের পেটে না ধরেও মা হবো মা ডাকটা শুনতে পাবো।
— কিন্তু সেটা আমার ভাগ্য নেই।
কে বলেছে নেই মা। অবশ্যই আছে আজ থেকে আমি তোমায় মা ডাকবো। বিছানা হতে দলিলটি তুলে নিয়ে বললাম এটা তোমার কাছেই রাখো।
—- উনি এবার কিছুটা কান্না ভেজা কন্ঠে সুখের হাসি দিলেন।
এবার শুরু হলো.. নানার মৃত্যুর ৪র্থ দিনে আমরা কিভাবে খাওয়া-দাওয়ার সব আয়োজন করবো তা নিয়ে আলোচনা ও পরিকল্পনার ।
—- সব পরিকল্পনা মাফিক ই খাওয়া-দাওয়ার আয়োজন শেষ হয়ে গেলো এবার আমাদের বাসায় চলে আসার পালা।
— আমি আর আব্বু গাড়িতে উঠে বসে আছি আপু আসছে নাহ। কি ব্যাপার আপু আসছে না ক্যান??
আপু না আসায় আব্বু আমায় ভিতরে গিয়ে আপুকে নিয়ে আসার কথা বললো। আমি গাড়ি থেকে নেমে যেতেই আপু ও মা দেখলাম আসছেন।
— আপু গাড়িতে উঠে বসলো। মা বাহিরে গাড়ির জানালার সামনে দাঁড়িয়ে রইলেন। আব্বু গাড়ি স্টার্ট দিতে আপু আব্বুকে গাড়ি বন্ধ করতে বললেন ৷ ভাই একটা কথা বলি…
—- হুমমম বল আপু
মা কে আমাদের সাথে নিয়ে যাবি উনি তো এই বাসায় পুরো একা। একা একা কিভাবে থাকবেন,,,!!
— আমি আপুকে ইশারায় বললাম আমায় নই আব্বুকে বল।
আপু যদি আব্বুকে বলে আমি জানি আব্বু না করবে নাহ। এবার আপু আব্বুকে বললো। আব্বু সম্মতি দিলেন।
— আমি গিয়ে আব্বুর সাথে সামনে বসলাম আর আপু ও মা পিছনে বসলো।
— আমি ভাবছি জন্মের পর মায়ের আদর পাই নি । কিন্তু আমার ভাগ্য এসব লিখা থাকবে সত্যিই আমি বিশ্বাস করতে পারছি নাহ। এবার আমি সৎ মাকে নিজের মায়ের মত পেয়ে গেলাম।
— জানিনা মায়ের আদর কেমন হয় উনি আমায় সন্তানের আদর দিবেন কি না তা সময়ই বলে দিবে। তবে উনি যে নিশ্চিত আমাদের নিজের সন্তানই হিসেবে মেনে নিয়েছেন তা বুজা যাচ্ছে।
—- বাসায় চলে আসলাম। আমি আমার রুমে এসে একটু ফ্রেস হয়ে সুয়ে রয়েছি৷ ব্যস্ততায় অনু অনেকবার ফোন করেছিলো ধরাই হয় নি তাই অনুকে দিলাম ফোন।
— একবার দুইবার তিনবার ফোন দেওয়ার পর অনু এবার ফোন ধরলো।
হ্যালো অনু কেমন আছো?
তুই কেরে কুত্তা (অনেক জোরে চেঁচিয়ে)
—- কি ব্যাপার আমি রং নম্বরে ফোন দিয়েছি নাকি,, অনুতো আমায় কোনদিন কুত্তা বলে নাহ আবার তুই ও বলে নাহ। ফোনটা সামনে নিয়ে দেখি নাহ এটাতো অনুর নম্বর ই।
—- আবার ফোনটা কানে নিয়ে হ্যালো বলতে
এই তুই আমার সাথে কথা বলবি নাহ আর কোনদিন ফোন ও করবি নাহ ।
—- এবার বুজলাম এটা আসলে অনু ই। চরম রেগে গিয়েছে তাই এভাবে বলছে।
অনু আমার কথা তো শুনো আগে।
—- কিছু চোনার মত নাই বলে অনু এবার শুরু করে দিলো বাংলা মন্ত্র পড়া। আমি চুপ করে থাকলাম। কেননা আমার একবার হলেও উচিৎ ছিলো অনুকে এসব বলার।
—- ও টানা ৫ মিনিট আমায় মন্ত্র শুনালো বাংলা ভাষায়।
শেষ হয়েছে তোমার এবার আমি কিছু কথা বলতে পারি।
অনু চুপ করায় বুজলাম ওর মন্ত্র শোনানো শেষ।
—- আমার নানা মারা গিয়েছেন উনার বাসায় গিয়েছিলাম তাই ফোনটা ধরা হয়নি। অনু ওহ সরি বললো। আমি আসলে বুজি নাই আবির। আমায় মাফ করো আবির।
—-ইটস ওকে। মনে মনে বলছি গরু মেরে জুতাদান করছে তবে অনু তুমি থেকে তুই বলায় বেশ মজা পায়ছি ভালো লাগছিলো।
ওকে তুই করেই বলতে বললাম।
— অনু বললো আগামীকাল থেকে কলেজ খুলবে আর রেজাল্টও এই সপ্তাহে দিয়ে দিবে কলেজ যাবি ??
—- নাহ তুই যাহ আমি এক-দুই সপ্তাহের মত কলেজ যাবো নাহ কিছু কাজ আছে শেষ হলে তবে যাবো। অনুর সাথে অনেকক্ষণ কথা চললো এবং ঘুমিয়ে পড়লাম।
— এতদিন পর্যন্ত প্রতিদিন সকালে ঘুম ভাঙ্গতো হয় আপুর ডাকে নয় অনুর ফোনে কিন্তু আজ ঘুম ভাঙ্গলো আমার সৎ মায়ের ডাকে৷
—- উঠো অনেক বেলা হয়েছে। এই নাও কফি আর কিছু মনে করো না কফিটা ভালো না হলে। আমি উঠে কফির মগটি হাতে নিলাম উনি আমার বিছানাসহ পুরো ঘড়টা গুছাতে লাগলেন।
— কফির মগে চুমুক দিতেই আজ স্বাদটা অন্য রকম লাগছে। প্রতিদিন আপু নাহয় আব্বু কফি বানায় আজ মনে হয় মা বানিয়েছেন। তবে কফির স্বাদটা নিয়ে বুজলাম আব্বু কেন এত সুন্দর রান্না পারেন।
—- মা থাকনা এগুলো আমিই গুছিয়ে নিবো আপনি যান।
একটা কথা বলবো বাবা,,,?? আমাকে আপনি করে নয় হয় তুই না হয় তুমি করে বইলো।
— আচ্ছা তুমি করে বলবো কিন্তু….
কিন্তু কী বলো,,,??
আমাকেও যে একটু আগে তুমি করা বলা হলো তা বলা যাবে নাহ তুই করে বলতে হবে তুই।
— আচ্ছা আচ্ছা ঠীক আছে তাই বলবো। কিছুক্ষণ কথা হওয়ার পর উনি বাইরে গেলো
আসলে মায়ের আদরটা কি জিনিস তা আমি আজ একটু বুজলাম। সত্যিই নিজের মায়ের আদর না পেয়ে এমন একজন সৎ মায়ের কাছে এমন মায়ের আদর পাবো তা কোনদিনও ভাবি নাই।
—- আমি উঠে ফ্রেশ হয়ে সকালের নাস্তা খেতে টেবিলে গেলাম। মা সব পরিবেশন করছে। চেয়ারে বসে সামনে তাকাতে দেখি আপু একটা চিৎকার করলো। মা ও আমি দৌড়ে আপুর কাছে যেতে মা বললো তাড়াতাড়ি গাড়ি বার কর লাবণ্যকে হাসপাতালে নিতে হবে ও মা হতে চলেছে।
—- আব্বু চেঁচামেচি শুনে দৌঁড়ে আসলেন এবং গাড়ি বার করলেন। আপুকে নিয়ে হাসপাতালে চলে গেলাম।
ডাক্তার আপুকে অপারেশনের জন্য ভিতরে নিয়ে গেলো।
আমি আব্বু আর মা বাহিরে বসে রইলাম।
—- কিছুক্ষণ পর ডাক্তা বের হয়ে বললো অপারেশন সাকচেস ফলো মা ও ছেলে দুজনই ভালো আছেন। ভিতরে গিয়েই সবার আগে আমি ভাগ্নে কে কোলে তুলে নিলাম।
মাম্মাহ দেখি পুরাই রাজকুমার আর পুরাই মাসুদ ভাইয়ার কপি,, হাই ভাগ্নে
—- হাই ভাগ্নে বলাই আমার শরীরের সব কাপড় নষ্ট করে দিলো। আমার শার্টে দিলো প্রশ্রাব করে ।
— মা এসে ভাগ্নে কে নিয়ে বললো তুই যা জামাটা একটু ধুঁয়ে আই। জামাটি একটু ধুয়ে ফেলার জন্য ওয়াসরুমে যেতে অনু ফোন করলো৷
— একহাতে জামাটি ধুয়ে ফলছি অন্য হাতে কল টি রিসিভ করে অনুকে হ্যালো বললাম৷
— আবির তুমি কোথায় আছো,, ?? আমি এখনি তোমার সাথে দেখা করতে চাই।
—- এভাবে বলছো কি হয়েছে অনু,,,??
আব্বু মিতুর ভাই মাসুদ ভাইয়ার সাথে আমার বিয়ে ঠীক করে ফেলেছেন আবির। আমি এই বিয়ে করতে পারবো নাহ আমি হয় তোমায় বিয়ে করবো না হয় মরবো।
— অনুর কথা শুনে আমি যেন আকাশ থেকে পড়লাম। অনু এটা কী শোনালো আমায়। আমার এই আনন্দের দিনে এটা শুনবো কল্পনাও করি নাই।
—- মাসুদ ভাইয়া অনুকে,,,
..
..
..
চলবে??
..
..
( ভুলত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন
আর
গল্পটি যদি ভালোলাগে তাহলে ছোট্ট একটা
কমেন্ট করে জানিয়ে দিবেন)