ভাগ্যর_লিখন
পর্বঃ ২৫ ও শেষ
লিখাঃ Shakil
..
..
..
—- মিতুকে নাস্তার ব্যবস্থা করার জন্য আপু ইশারা করলো। কিন্তু মিতু আপুর কথা না শুনে দাঁড়িয়েই রইলো।
তাই আপু আমাদের বসতে দিয়ে নাস্তার ব্যবস্থা করতে চলে গেলেন । আমি ও অনু বসলাম।
—- মিতুকে অনু বসতে বললো কিন্তু মিতু অনুকে ডেকে নিয়ে একটু সাইডে গেলো৷
একটুপর অনু আসলে আমি জানতে চাইলাম মিতু ওকে কি বললো,,,,??
—– অনু একটু মুচকি হাসি দিয়ে বললো… মিতু ভেবেছে তোমার সাথে আমার বিয়ে হয়ে গিয়েছে। তাই আমাকে ডেকে বললো যে আমরা কবে বিয়ে করেছি।
ওহ,, তা তুমি কী বললে অনু ??
আমি বলেছি,, বিয়ে করিনি তবে খুব তাড়াতাড়ি আমরা বিয়ে করবো৷
— ওহ। শুনো অনু
মিতু হয়তো আমার কথা নাও বিশ্বাস করতে পারে তাই তুমি মিতুকে সব খুলে বলবা ৷ তোমার আমার ভালোবাসার কথা বলবা। আশা করি ও একজন মেয়ে হয়ে তোমার সব কথা ও বুজবে।
আর অপুর বিষয়টাও মিতুকে বলবা।
—– হুমম আবির সব বলবো আমি। আজকেই মিতুকপ সব বললে কেমন হয় আবির…??
হুমমম আজকেই তো বলতে হবে কেননা আমরা তো সন্ধ্যার দিকে বাসায় চলে যাবো ।
—- আবির আমার মনে হয় তোমার আপুকেও আমাদের সব জানানো উচিৎ।
হুমম অনু। আপু নাস্তা নিয়ে আসলে আমি আপুকে সব বলবো আর তুমি নাস্তা শেষ হলে মিতুকে বলবা৷
আচ্ছা আবির।
—- একটুপর আপু নাস্তা নিয়ে আসলো।
আমি নাস্তা খেতে খেতে আপুকে সব কথা খুলে বললাম । আপু সব কথা শুনে আপু বললো ভাই মিতু সব মেনে নিলেও তোর দুলাভাই কী আবার অপুকে মেনে নিবেন,,,?? মেনে নিবেন অপুর আর মিতুর সম্পর্কটাকে আবার,,,??
—-আপু আমি কিছু জানিনা। দুলাভাইকে কীভাবে রাজি করাবি সেটা তোর দায়িত্ব ।
আচ্ছা ভাই তোর দুলাভাই বাসায় ফিরলে আমি সব কথা খুলে বলবো।
—- নাস্তা খাওয়া শেষ হয়ে গেলে। আপু একটু গল্প করে রান্না করতে চলে গেলো।
আমি ভাগ্নে কে কোলে নিয়ে অনুকে বললাম… অনু এখন যাও মিতুর রুমে গিয়ে সব কথা ওকে বলো ।
আমার কথা মত অনু মিতুর রুমে চলে গেলো।
—- আমি বসে বসে ভাবতে লাগলাম…
একবার যদি মিতু রাজি হয়ে যেতো তাহলে অনেক খুশী হতাম।
প্রায় এক ঘন্টা পর অনু মিতুর রুম থেকে বার হলো।
—মিতু কী বললো অনু ,,??
ও কী রাজি হয়েছে অনু??
আবির মিতু তোমাকে ওর রুমে ডাকলো ৷
ওহ আচ্ছা। ভাগ্নে কে অনুর কাছে দিয়ে আমি মিতুর রুমে গেলাম। উহুম উহুম করে গলা ঝাড়া দিতে মিতু আমার দিকে তাকালো।
মিতু আমাকে ডেকেছো তুমি ….??
—- হুমমম ডেকেছি আবির ৷ দেখো আবির একবার আমার ভাইয়ার সংসার ভেঙ্গে আমি যে পাপ করেছি তার সাজা আমি ঠীকই পেয়েছি । এখন আবার আমি তোমার আর অনুর মাঝে কাঁটা হয়ে দাঁড়াতে চাইনা। তোমাকে ভালোবেসে হয়তো আমি তোমাকে নিজের করে পেলাম নাহ তবে তুমি তোমার ভালোবাসার মানুষটাকে নিয়ে সুখে থাকো আমি এটাই চাই৷
—- ওহ ধন্যবাদ মিতু।
হুমম। কিন্তু আবির যে মানুষটা আমাকে একটুও ভালোবাসে নাহ তার সাথে আমি কিভাবে সংসার করবো বলতে পারো তুমি ,,,??
—- আগের অপু আর এখনার অপু এক নয় মিতু । অপু এখন অনেক পরিবর্তন হয়ে গিয়েছে । অপু সত্যিই তোমাকে এখন মন থেকে চাই। বিশ্বাস না করলে তুমি একবার অপুর সাথে যোগাযোগ করে দেখো।
—- আচ্ছা। ঠীক আছে আমি অপুর সাথে কথা বলে দেখবো তাহলে ৷
ধন্যবাদ মিতু। এখন তাহলে চলো বাইরে যাওয়া যাক তিনজন একটু গল্প করি৷
আচ্ছা চলো৷
আমরা গল্প করছি। কিন্তু আমার মনে একটা আশংকা লেগে রয়েছে…. মাসুদ ভাইয়া আবার যদি অপুকে মেনে না নেন তাহলে কী হবে,,,??
— একটুপর আপু এসে বললো রান্না শেষ । খাবে চলো সবাই ৷
খাওয়া-দাওয়া শেষ করলাম। আপু অনেকবার থাকার জন্য বললেও আমি আর অনু না থেকে চলে আসলাম। আসার সময় আপুকে মাসুদ ভাইয়ার কাছে সব কথাগুলো বলার জন্য আবার মনে করিয়ে দিলাম।
—- অনুকে ওর বাসায় নামিয়ে দিয়ে আমি বাসায় চলে আসলাম।
আজ সারারাত আমার ঠীকমতো ঘুম আসলো নাহ। শুধু একটাই টেনশন মাসুদ ভাইয়া মানবেন তো,,,??
সকালের দিকে মাসুদ ভাইয়া ফোন দিলেন,,,,
—– হুমম ভাইয়া কেমন আছেন,,,??
ভালো। তা আবির তোমার আপু বললো অপু নাকি এখন ভালো হয়ে গিয়েছে মিতুকে নাকী আবার ও বউ করে নিতে চাই,,,??
—— হুমম ভাইয়া। আমি অপুর সাথে কথা বলেছি অপু এখন সত্যিই ভালো হয়ে গিয়েছে।
আপনি চাইলে ওর সাথে কথা বলে দেখতে পারেন।
আচ্ছা আবির ,,
উনি ফোনটা কেটে দিলেন। আমি অনেক খুশী হয়ে গেলাম কেননা মাসুদ ভাইয়া নিশ্চিত রাজি হয়ে যাবে।
—-দুইদিনপর আপু ফোন করে জানালো ভাই সব ঠীকঠাক হয়ে গিয়েছে।
অপুর পরিবার আজকেই মিতুকে নিতে আসছে।
আপুর কথা শুনে আমি এত খুশী হয়ে গেলাম তা বলে হয়তো বোঝাতে পারবো নাহ।
—- অনুকে ফোন করে জানালাম অনুও অনেক খুশী হলো৷
আব্বু আম্মুকে জানালে উনারাও খুব খুশী হয়ে গেলো।
আব্বু বললো বাবা আমরা এখন তাহলে অনুর বাসায় বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে যাই ,,,??
আমি কিছুটা লজ্জা পেয়ে গিয়ে মাথা নাড়িয়ে হুম জানালাম ।
—– রুমে এসে অনুকে আবার ফোন দিতে যাবো কী এক রং নম্বর হতে ফোন আসলো….
হ্যালো কে,,,??
আমি অপু…. আবির। তোমাকে কী বলে যে ধন্যবাদ জানাবো তার ভাষা আমরা জানা নেই আবির। তোমার জন্য আবার আমি মিতুকে ফিরে পেলাম।
আজকে আসো আমার বাবা-মা যাচ্ছে মিতুকে নিয়ে আসতে।
ওহ ভালো। অপু আমি যেতে পারছি না। আর হুম ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করো না।
আচ্ছা আবির।
—– অপুর সাথে কথা বলা হয়ে গেলে এবার আবার অনুকে ফোন দিলাম।
অনু বিয়ের প্রস্তাব নিয়ে কালকে আব্বু-আম্মু তোমাদের বাসায় যাবেন ।
কি বলো সত্যিই আবির,,,??
হুমম অনু আর তোমার আব্বুর ফোন নম্বরটা দাও অনু উনাকে ফোন করে জানিয়ে দেই আমি।
—-আবির ফোন করতে হবে নাহ । আমি আব্বুকে তোমার আমার বিষয়ে সব বলে দিয়েছি। উনি রাজি আছেন।
কিহ বলো তুমি এসব??
হুমম সত্যি। আর শুনো আব্বু বাসায় ফিরলে উনাকে বলবো যে তোমরা কালকে আমাকে দেখতে আসবা ।
এই অনু তুমি মেয়ে হয়ে তোমার আব্বুকে এসব কথা বলবা হাহাহা ,,??
ঐ হাসছো কেন হুমম। আব্বু আমার বেস্টফেন্ড। তাই উনার কাছে আমি কিছু লুকাইনা বুজেছো,,,??
—-ওহ আচ্ছা ভালোতো।
আপচুস এই আনরোমান্টিক টাই আমার বর হবে।
আনরোমান্টিক কী রোমান্টিক দাড়াও না বিয়ে টা হোক খালি তারপর বুঝিয়ে দিবো।
একটু কথা বলে ফোনটা রেখে দিলাম।
—- আপুকে ফোন করে আসতে বললাম । পরেরদিন সকালেই আপু আসলেন। আপুকে নিয়ে আমরা অনুর বাসায় চলে গেলাম অনুকে দেখতে ও বিয়ের তারিখ টা ঠীক করতে।
—— সব ঠীকঠাক হয়ে গেলো। একসপ্তাহ পর অনুর সাথে আমার বিয়ের তারিখ ঠীক হয়ে গেলো।
খুব ভালোভাবে বিয়ের আয়োজনটা শেষ হয়ে গেলো।
বাসর রাতে ঢুকে দেখি অনু লাল বেনারসি পড়ে মুখে ঘোমটা দিয়ে বসে আছে।
—— আমি গিয়ে অনুর ঘোমটা সরালাম।
মহারানী এতো লজ্জা কিসের হা। এতদিন ভালোই তো আমাকে আনরোমান্টিক আনরোমান্টিক বলে চিল্লাইতা। চলো আজ বুজিয়ে দেই আমি আনরোমান্টিক নাকি রোমান্টিক।
—- আচ্ছা আমিও দেখবো তোমার বাহাদুরি,,,
অনু ও আমি নতুন জীবনে পা দিয়ে দিলাম।
—–পরেরদিন সকালে ঘুম থেকে উঠে দেখি অনু আইনার সামনে চুল বাঁধছে।
অনুকে এলোমেলো চুলে দেখে আমি গিয়ে পিছন থেকে ওকে জরিয়ে ধরলাম।
এই কি করছো তুমি ছাড়ো,,,??
কেন ছাড়বো হুমম বলে অনুকে কোলে তুলে নিয়ে ওকে একটা চুমু দিয়ে বেডে শুইয়ে দিলাম।
—- ঐ এখনি আবার ,,,,, ??
হুমম মহারানী আমি আনরোমান্টিক তাই না,,,?? রাতে তো বুঝিয়েছি এখন আবার একটু বুঝায় দেই কেমন ।
আচ্ছা বাবু।
কিহ আজ আবার বাবু বলে ডাকলে। অনুকে হাত তুলে চড় মারতে যাবো কী ও ওর মুখটি ভয়ে লুকিয়ে নিলো।
—- আমি চড় না মেরে ওর কপালে একটা চুমু একে দিলাম।
#সমাপ্ত
..
( যারা গল্পটি প্রথম থেকে পড়ে এসেছেন তাদের জানাচ্ছি আন্তরিকভাবে শুভেচ্ছা আর গল্পটিতে হয়ে যাওয়া ভুলত্রুটির জন্য জানাচ্ছি সরি )
Comment: strong determination and inspiration can make a man successful.