প্রণয়ের আসক্তি পর্ব -১৭

#প্রণয়ের_আসক্তি
১৭.
#WriterঃMousumi_Akter

হসপিটালের কেবিনে বসে নিজের স্ত্রী এর হাত ধরে চোখের পানি ফেলছে নিরব।প্রার্থনা করছে যেনো সুস্থ হয়ে ওঠে খুব দ্রুত।জীবনে এতটা প্রার্থনা কারো জন্য করে নি সে।মৃথিলার নিষ্পাপ মুখের দিকে তাকিয়ে মনে মনে ভাবছে জানিনা কোনদিন তোমার পরিবার ফিরিয়ে দেওয়ার মতো আনন্দ দিতে পারবো কিনা তবে আমি তোমার জীবনে প্রতিটা জিনিসের প্রতিটি মুহুর্তের খুশি হয়ে থাকবো।বিষাক্ত অতীত মুছে দিবো তোমার।নিজের হাতে গড়ে দিবো তোমার নিজস্ব একটা পরিবার।যেখানে তুমি আমি সুখের সংসার করবো।

কিছুক্ষণের মাঝেই জ্ঞাণ ফিরে আসে মৃথিলার।দু ‘চোখের পাতা মেলে তাকিয়ে দেখে নিরবের ক্লান্তিমাখা মুখ।চোখ দিয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে পানি।বেশ কিছুক্ষণ চুপ আছে মৃথিলা কিন্তু অঝরে কেঁদে চলেছে সে।ভেতরে অসহনীয় যন্ত্রণা হচ্ছে মৃথিলার।নিরবের দিকে এক নজরে তাকিয়ে আছে মৃথিলা।নিরব চোখের পানি মুছিয়ে দিয়ে বললো কি হয়েছে পাগলি টা।আমাকে খুব ভয় পাইয়ে দিয়েছিলে তুমি।এইভাবে সেন্সলেস হয়ে গেলে না তুমি আমাকে কি ভীষণ টেনশ টা না দিলে তুমি।

কেঁদেই যাচ্ছে মৃথিলা।মুখে কোনো কথা আসছে না।

নিরব চোখের পানি মুছে দিয়ে বললো তোমার চোখের পানি আমি সহ্য করতে পারি না প্লিজ কেঁদো না।আমি পৃথিবীর সব কষ্ট সহ্য করতে পারবো কিন্তু তোমার চোখের পানি পারবো না।

“ক্যানো কেউ আমাকে ভালবাসলো না বলতে পারেন।আমি কি এতই খারাপ যে পরিবার আমার কপালে জুটলো না।ক্যানো এত বড় পৃথিবীতে আমি ভীষণ একা।আমাকে ভালবাসার মতো কেউ নেই কেনো?”

“কেউ ভালবাসে নি বলছো। আমাকে কি কিছুই মনে হয় না তোমার।কে বলেছে তুমি একা।আমার আম্মুর মেয়ে হয়ে তুমি থাকবে।আমার পৃথিবী হয়ে থাকবে তুমি।আমি তোমাকে ভালবাসি।”

“আপনিও দুই দিন পর বলবেন আমাদের সব মিথ্যা।দুইদিন পর কোন না কোনো ভাবে আপনিও পর হয়ে যাবেন।আমি এখন সব সম্পর্ক ভয় পাই।”

“আচ্ছা আমি কি তাহলে মারা গিয়ে প্রুভ দেখাবো যে আই লাভ ইউ।না মানে আমি মারা গেলে কি তুমি খুশি হবে আর মেনে নিবে যে আমি রিয়েলি ভালবাসি তোমাকে।”

“ভুলেও মরার কথা বলবেন না।আমার বুক কেঁপে ওঠে এসব শুনলে।আমার আয়ু আপনার হোক তবুও আপনি বেঁচে থাকুন।”

“কেনো।আমি মরলে তোমার সমস্যা টা কি?তোমার তো কিছুই যায় আসে না।”

“আই লাভ ইউ।”

“কি বললে?”

“আই লাভ ইউ নিরব।আমি ভালবাসি আপনাকে।কথাটা বলেই কেঁদে দিলো মৃথিলা।”

পৃথিবীর সব থেকে সুন্দর কথা বোধহয় এটাই ছিলো নিরবের কাছে।মৃথিলার মুখে ভালবাসি কথাটা শুনেই নিরবের মুখে ফুটে উঠলো আনন্দের হাসি।যে আনন্দে নিরব পাগল হওয়ার উপক্রম।

মৃথিলার হাত শক্ত করে চেপে করে চেপে ধরে বললো, ভালবাসি জানপাখি,ভীষণ ভালবাসি তোমায়।অনেক অনেক ধন্যবাদ আমার জীবনে আসার জন্য।আমাকে জীবনের সব থেকে বেষ্ট গিফট তোমাকে উপহার দেওয়ার জন্য।

নিরব কে মন থেকে এক্সেপ্ট করে নিয়ে মৃথিলার মনের ভেতর থাকা কষ্ট অনেক টায় হালকা হয়ে গেলো।আসলেই যদি নিজের একটা মানুষ থাকে তাহলে সব কষ্ট তার কাছে মন থেকে প্রকাশ করে কিছুটা হালকা হওয়া যায়।ভালবাসার মানুষ টা যদি খারাপ সিসুয়েশন পাশে থাকে কোনো কষ্ট কাউকে স্পর্শ করতে পারে না।

এর ই মাঝে মুনতাহা আর দাদী এসছিলো মৃথিলাকে দেখে গিয়েছে।

মেধা একটা মেসেজ করেছে,আমি চলে যাচ্ছি নিরব।মিথুর সামনে মুখ দেখাতে পারবো না আর।আমাদের মিথুকে তোমার কাছে রেখে গেলাম।তুমি ওর খেয়াল রেখো।বাবা জানলে অনেক কষ্ট পাবেন যে মিথু এই সত্য টা জেনে গিয়েছে।আমি তোমাকে মিথুর করে দিয়ে চলে গেলাম।আমার বোন কে তুমি ভাল রেখো নিরব।মিথুকে বলো ও আমাদের যেনো ভুল না বোঝে।

রাত বারোটা বাজে ঘড়িতে।মৃথিলার স্যালাইন অনেক আগেই খুলে রাখা হয়েছে।মৃথিলা এখন সম্পূর্ণ সুস্থ। নিরব কেবিনের বাইরে দাঁড়িয়ে একজন ডাক্তারের সাথে কথা বলছে।বাইরে হাওয়া দিচ্ছে খুব।মৃথিলা জানালা খুলে দাঁড়িয়ে আছে।বাইরের হাওয়ায় চুল উড়ছে মৃথিলার।আকাশে সাদা মেঘ সরে ক্রমশ কালো মেঘে আকাশ ছেয়ে যাচ্ছে।কালো মেঘে চাঁদ টাও ছেয়ে গিয়েছে।হঠাত অন্ধকারে ছেয়ে গিয়েছে চারদিক।অন্ধকার ভীষণ ভয় লাগে মৃথিলার।এই অন্ধকারেই অনেক বার তার সাথে ঘটেছে অনেক ঘটনা।এক পশলা বৃষ্টি এসে জানালার সাদা পর্দা ভিজিয়ে দিয়ে গেলো।বাইরে হাত দিয়ে বৃষ্টি ছুতে সাহস পাচ্ছে না মৃথিলা।যদি আবার সেই দূর্ঘটনা ঘটে যায়।

কিন্তু আজকের দিন টা ভীষণ স্পেশাল মৃথিলার কাছে।জীবনের নতুন কিছুর স্বাদ পেয়েছে আজ সে।

দরজার দিকে মুখ করে বললো এইযে শুনছেন।আপনি কি ওখানে আছেন।একটু ভেতরে আসুন না।ঝড় বৃষ্টি খুব ভয় করে আমার।

মৃথিলার ডাকে নিরব আওয়াজ তুললো হ্যাঁ আসছি।

নিরব ভেতরে ঢুকতেই মৃথিলা বললো দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে দিন।

নিরব বেশ অবাক হলো মৃথিলার কথা শুনে।নিরব দরজার ছিটকিনি লাগিয়ে মৃথিলার পাশে গিয়ে দাঁড়ালো।দুজনের গায়েই বাইরের হাওয়া দিচ্ছে।হাওয়া টা বেশ ঠান্ডা।ক্ষনিকের মধ্যই বাইরের উথাল পাথাল বেগে ভীষণ ঝড় বৃষ্টি শুরু হলো।জানালা দিয়ে বৃষ্টির পানি এসে ভিজিয়ে দিচ্ছে নিরব মৃথিলাকে।দুজনে প্রায় আধভেজা হয়ে গেলো।নিরব ঝাড়ি দিয়ে গায়ের পানি ঝেড়ে ফেলছে।সেই সাথে মৃথিলার গায়ের পানি ও ঝেড়ে দিচ্ছে।নিরব জানালা গুলো বন্ধ করে দিলো।

‘মৃথিলা নিরব কে বললো,আমার হাত টা ধরবেন খুব ভয় লাগছে।’

‘নিরব মৃথিলার হাত টা ধরে বললো কিসের ভয় মৃথিলা তোমার।’

‘জানিনা কিসের ভয়, কিন্তু অতীতের ভয় গুলো থেকে গিয়েছে মনে।’

‘আজ থেকে ভয়েরা তোমার থেকে দূরে থাকবে।নিরব আছে তোমার পাশে।’

‘আপনি আমার পাশে সারাজীবন থাকবেন তো।’

‘উপরওয়ালা আমাদের এক করে দিয়েছেন মৃথিলা। হারাবার হলে কি তোমাকে এভাবে চাইতাম।’

‘আপনি এত ভালো কেনো নিরব।পৃথিবীতে ভাল মানুষের বড্ড অভাব।সবাই আপনার মতো হয় না কেনো?’

‘নিরবের মুখে কোনো কথা নেই।কোনো উত্তর দিলো না।’

‘কিছুক্ষণ পর আবার মৃথিলা বললো,আমার খুব ঠান্ডা লাগছে।এখন কি পৌষ মাস বলুন তো।আমার এত ঠান্ডা লাগছে কেনো?’

‘আজকের ওয়েদার ই এমন। সবার ই ঠান্ডা ঠান্ডা লাগছে।’

‘আমার একটু বেশী শীত শীত লাগছে।’

‘নিরব নিজের গায়ের লং শার্ট টা মৃথিলার গায়ে পরিয়ে দিয়ে বললো ঠান্ডা কি একটু কম লাগছে।’

নিরব এর কাপড় নিজের গায়ে জড়িয়ে ভীষণ ভাল লাগছে মৃথিলার।প্রিয়জনের জিনিস ছুতে পারার মাঝেও আনন্দ আছে ভীষণ।

‘ঘুম পাচ্ছে এখন আমার খুব।’

‘সুয়ে পড়ো।’

‘আর আপনি।’

‘তুমি ঘুমোও আমি তোমাকে পাহারা দেই।যদি কেউ এই হসপিটাল থেকে আমার বউ টা চুরি করে নিয়ে যায়।’

‘যদি আপনাকে কেউ চুরি করে নিয়ে যায়।’

‘হাহা তুমি আসলেই পিচ্চি বুঝলে।আমি কি তোমার মতো পরী যে আমাকে কেউ চুরি করতে চাইবে।’

পরীর চেয়ে কম কিছু না আপনি।’

বউ এর চোখে আমি সুন্দর তার মানে আমি নিঃসন্দেহে সুন্দর। একমাত্র আমার বউ আমার প্রশংসা করলেই আমি খুশি।পর নারীর চোখে যতটা কুৎসিত হবো ততোই ভালো।তাহলে আমার বউ এর মনে আমাকে নিয়ে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হবে না।

‘এবার আসুন তো আপনি।’

‘কোথায়?’

‘আমার কাছে, মানে বিছানায়।আমার ভয় করছে আমি আপনার কাছেই ঘুমোবো।।’

চলবে,,

(

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here