#প্রথম_প্রেম
৬ষ্ট পর্ব।
আজ শুক্রবার, শাওন সকাল বেলা ঘুম থেকে উঠেছে, ফযর নামায পড়ে কোয়ার্টারের নিচেই হাঁটছে, মন খুব অস্থির লাগছে। রাতেও একদম ঘুম হয়নি। কেন সে উর্মি নামক মেয়েটিকে এতো ভালবেসলো! আজ সেই মেয়েটি না জানি কত কষ্টে আছে! তার ও ভবিষ্যত কি হবে সে জানেনা। আজ ভাইজান ঘরে, কি হবে? কে জানে!
আজ অজানা গন্তব্যে হাঁটতেই ইচ্ছে করছে, শাওন রাজীবকে ফোন দিল, যেন সে রমনায় চলে আসে। আজ বাসায় যেতে ইচ্ছে করছেনা।
সকাল দশটার দিকে তোফায়েল সাহেব আর রুনা খানম আসলেন সজিব সাহেবের বাসায়।
সজিব সাহেব বেশ অবাক হয়ে ড্রয়িং রুমে নিয়ে গেলেন দুজন কে। কারণ এই প্রথম তোফায়েল সাহেব তার বাসায় এসেছেন। সজিব সাহেব বলছেন তোফায়েল ভাই আপনি এসেছেন খুব খুশি হয়েছি। পাশাপাশি থাকি অথচ যাওয়া আসা সেভাবে হয়না, যদি ও আমার ছেলের উদয় বাবার সাথে খুব খাতির।
– ভাই, মেয়ের বাবাদের কত হিসাব করে চলতে হয়। ভাবী কোথায়?
– ও, রান্নাঘরে।এই মুন্নি এদিকে আসো।
দেখুন সজিব সাহেব আপনি খুবই ভদ্র, আর আমরাও নিরিবিলি পরিবারের মানুষ। যদিও আপনার ভাবীর বড় ভাই এস.পি, আমার ছোট বোনের জামাই মেজর। এই সব পরিচয় আমরা দেই না কারণ আমরা চুপচাপ থাকতেই পছন্দ করি।
– আমরাও ভাই।
– আসলে কি ভাবে বলি, ভাবী নিশ্চয়ই কোন ব্যাপারে আলাপ করেছেন আপনার সাথে?
– না। কি ব্যাপারে?
মুন্নি বললেন জি না ভাই, আমি এসব ওকে বলিনি, জামাইরা সব সময় মনে করে তাদের ভাই বোন কে বউ দেখতে পারেনা। তাই আমি ওকে বলিনি।
শাওন কিছু করেছে?
– আসলে বলি কি ভাবে? তবুও বলতে যখন এসেছি বলতেই হবে। আমার মেয়েটা আপনাদের সামনেই বড় হচ্ছে মাত্র ক্লাস টেনে পড়ে। কি বুঝে বলুন? টিন এইজ একটা বাচ্চা মেয়ে! তার কি এখন ভালো মন্দ বোঝার বয়স হয়েছে।
– আরে কি বলেন ভাই, উর্মি তিন বছর আগেও উদয়ের সাথে আমাদের বাসায় খেলতে এসেছে।
,- ঠিক তাই। অথচ আপনার ছোট ভাই ওকে পছন্দ করে, রাস্তায় দাঁড়িয়ে থাকে, চিঠি লিখে, কাল মুন্নি ভাবী দুজন কে ছাদে এক সাথে দেখেছেন।
– শাওন?
– জি।
মুন্নি তুমি তো আমাকে বলনি এসব?
– বিশ্বাস করতেনা, কারণ তুমি তো ওদের পীর সাহেব মনে কর।
দেখুন সজিব ভাই, আপনার ভাই মেয়েকে অধিক স্নেহ করে, তাই সে আপনার ভাইয়ের দোষ বলে যাচ্ছে। কিন্তু আমি মনে করি আমার মেয়ের ও দোষ আছে। এক হাতে তালি বাজেনা। এখন শাওন ম্যাচুউর একটা ছেলে ফাইনাল ইয়ারে উঠবে! ও প্রেম -ভালবাসা বুঝবে এটা খুব স্বাভাবিক। কিন্তু আমার টেনে পড়া মেয়ের চোখে রঙিণ চশমা। না হয় যাকে আংকেল ডাকে, তার সাথে কি এরকম সম্পর্কে যায়।
এখন ভাই, আমি মেয়ের মা, আমার তো চিন্তায় ঘুম হারাম। মেয়ের পুরো ভবিষ্যত সামনে! আমার মেয়ের মাথায় এখন যদি এসব ঢুকে, পড়াশোনা শেষ। তাছাড়া কোয়ার্টারে কত ফ্যামিলি। এসব জানাজানি হোক আমি চাইনা। তাই একটাই আরজি, আপনি তার অভিভাবক দয়া করে তাকে বলবেন, আমার মেয়ের পথ থেকে যেন সরে যায়। কারণ আমার বাচ্চা মেয়েটা বুঝতে পারছেনা৷ এখন আমি আমার ভাই এস.পি দেখে তাকে ভয় দেখাবো কিংবা আমার খালু এম.পি দেখে শাসিয়ে যাবো, এসব আমি পছন্দ করিনা। কারন মেয়েটা আমার, তাই ভাই দয়া করে শাওন কে বুঝাবেন প্লিজ।
– ভাবী, এভাবে বলবেন না। আমার ভাই এরকম করবে আমি কল্পনা করি নাই। আমি আপনাকে কথা দিলাম আপনি নিশ্চিন্তে থাকুন। ও আর উর্মি দিকে কখনো তাকাবেই না।
– আজ আমরা উঠি।
– প্লিজ চা খেয়ে যান।
– আরেকদিন। আজ মন ভালো নেই। আপনারা আসবেন বাসায়।
– জি অবশ্যই। ভাই-ভাবী আমি দুজনের কাছেই লজ্জিত। তবে, আপনারা নিশ্চিন্তে থাকুন ও আর কিছুই করবেনা।
– ধন্যবাদ
মুন্নি তাদের যাওয়ার পরই বললেন বিশ্বাস হয়েছে এখন?
– আসুক আজ বাসায়, প্রেম করে? কত্ত বড় সাহস? তোফায়েল সাহেবের পরিবার সমন্ধে জানে? বেয়াদব! আর তুমি কেন আমাকে জানালেনা?
– বিশ্বাস করতে?
– তুমি এতো ভদ্র সাজবেনা, সারাদিনই তো বদনাম করতে থাকো।
– করি, না করছি না তো। তবুও তো থাকতে দিয়েছ বাসায়?
– মার জন্য। আমি ওকে ভালবেসে জায়গা দেইনি।
– এখন বিদায় দাও, না হয় রুনা ভাবীর খালুকে দিয়ে তোমাকে খাগড়াছড়ি ট্রান্সফার করাবে, কত বড় প্রেমিক। জানাও মাকে!
– হ্যা, তাতো জানাবোই। এই বেয়াদব কোথায়?
– কি জানি! প্রেমিক পুরুষ হয়তো উদাস হয়ে কোথাও বসে আছে।
– চাল নেই, চুলা নেই, প্রেমিক হইছে।
সজিব সাহেব প্রচন্ড বিরক্ত হয়ে মাকে কল দিলেন।
হ্যালো।
– বাবা, কেমন আছ তুমি? আজ কত দিন পরে ফোন দিলে।
– মা, ব্যস্ত থাকি। প্রতিদিন ফোন দিলে কি হয় বলো?
– আজ পনেরো দিন পরে দিলা, যাই হউক বাবা, আমার বউ, নাতিরা কেমন আছে?
,- এদের কথা বাদ দাও, তোমার ছোট ছেলের খবর নাও?
– হ্যা, বাবা।
– তোমার ছেলের জন্য আমি তো চাকরি হারাবো৷ বউ বাচ্চা নিয়ে পথে বসবো।
-কি করেছে বাবা?
– প্রেম করে, কত বড় প্রেমিক হইছে৷ তাও একজন এতো বড় অফিসারের মেয়ের সাথে। যার পরিবারে ডাক্তার ইঞ্জিনিয়ার পুলিশ আর্মির অভাব নাই। সাহস দেখে আমি আৎকে উঠি।
– কি বলো বাবা তুমি।
– মা, তুমি কান্না কাটি করেছিলে, আমি খাওয়া থাকার সুবিধা দিয়েছিলাম। এখন দেখি আমার খাইয়া আমার থালা ফুটো করছে। তুমি তাকে আমার বাসা ছাড়তে বলবা।
– বাবা, তুমি এমন নিষ্ঠুর হইও না। আমি তার বিচার করবো।
– আমার বিচারের দরকার নেই, এই বেয়াদবের চেহারা দেখার ও রুচি নাই। আমাকে কোন রিকুয়েষ্ট করবা না মা।
– আমি দেখতেছি, তুমি রাগ কইরো না।
– আমার যা বলার আমি বলেছি। তুমি ভালো আছ?
– আছি বাবা, তুমি আমারে একটু সময় দিও।
– এখন রাখি তুমি তাকে জানিয়ে দিও, আমি কি বলেছি।
এখনো রাজিব আসেনি, শাওন পার্কের বেঞ্চিতে বসে আছে। তার কিছুই ভালো লাগছেনা, মন খুব অস্থির লাগছে। ভাবী নিশ্চয়ই আজ সব বলে দিবেন। ভাইজান কি করবেন তাই ভেবেই দম বন্ধ লাগছে…..
চলবে….
আন্নামা চৌধুরী।
১৩.০৭.২০২১