অপূর্নতার সংসার পর্ব ৪

#পর্ব৪
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

–“ওনি কেউ নন আলো মামুনি ওনি হচ্ছে তোমার আব্বুর বন্ধু। ওনি এখন থেকে এখানেই থাকবে। এর চেয়ে আর বেশি কিছু তোমার জানার দরকার নেই। ডাইনিং টেবিলে খাবার ঢাকা দিয়ে রাখা আছে যাও তুমি গিয়ে খাবার খেয়ে পড়তে বসো। মিষ্টি না খেয়েই ঘুমিয়ে পড়েছে ওকে ডির্স্টাব করবে না। আর হ্যাঁ আমি এখন সুস্থ আছি তুমি এবার যেতে পারো মামুনি”।

–“তুমি যদি সুস্থই থাকো তাহলে কীভাবে এতোক্ষণ অজ্ঞান হয়ে রইলে, এতোবার ডাকার পরেও ওঠলে না”! একনাগাড়ে কথাগুলো বললেন ডাক্তার। ডাক্তার সাহেব অনেক আগে থেকেই রোজাকে চিনে তাই এ কথাগুলো বললেন। আদিল এর বাড়িতে যেকোনো সমস্যাই তিনি সবসময় আসেন। ওনি রোজার বাবার মতোন ব্যবহার করেন রোজার সাথে।

রোজাঃ ডাক্তার আংকেল ও কিছু নয়, আপনি শুধু শুধুই এতো তাড়াহুড়ো করে এখানে আসলেন। আমি ঠিক আছি বেশি কিছু হয়নি আমার। সবকিছুই ঠিকঠাক আছে।

ডাক্তার সাহেবঃ কিছু যদি ঠিক থাকেই তাহলে তুমি এতোক্ষণ অজ্ঞান হয়ে পড়ে থাকতো না মা । আমাকে চেক করতে দাও তোমার কি হয়েছে।

“রোজা মা তোমার শরীর খুবই দুর্বল তুমি খাওয়া দাওয়া করছো না ঠিকমতন। ঠিকঠাক মতন খাওয়া দাওয়া করলে তুমি অজ্ঞান হতে না। আমি কিছু মেডিসিন লিখে দিচ্ছি আদিলকে দিয়ে ওগুলো এনে ঠিকঠাক মতন খাবে। আর হ্যাঁ অবশ্যই ঠিকঠাক মতন খাওয়া দাওয়া করবে নিজের খেয়াল রাখবে, মনে রাখবে তোমার দু’টো মেয়ে আছে তাদের দেখবে কে? তাই বলছি নিজের প্রতি যত্ন নিও। আমি আসছি এখন, কোনো দরকার পড়লে আবার ডেকো”।

রোজাঃধন্যবাদ আংকেল।
–“আর সবাই একটু একটা কথা মনে রাখবেন, আমি চাই না আমার মেয়েরা জানুক তার আব্বু দিত্বীয় বিয়ে করেছে! এতে তাদের অবুঝ মনে প্রভাব ফেলবে, যা আমি কখনোই চাইবোনা। আমি চাই না তাদের আব্বু সম্পর্কে কোনো রকম বাজে ধারনা তাদের মনে সৃষ্টি হোক। তাই কেউই কিছু বলবে না”।

আদিলঃ”ঠিক আছে তুমি যখন বলছো তাহলে তাই হবে। আপাততো আমি ওষুধ গুলো এনে দিচ্ছি তুমি খাওয়া দাওয়া সেড়ে ওষুধগুলো খেয়ে নিও”।

–“হয়তো ওষুধ খেলে আমার শরীর সুস্থ হবে, কিন্তু আমার মনের যে ক্ষতটা সেটা তো তুমি কোনো ওষুধে সারাতে পারবে না! যতোই যাই হউক আমার পক্ষে সম্ভব না এখানে থাকা আর। শুধু সময়ের অপেক্ষা আমি আগে নিজে কিছু একটা ব্যবস্থা করে নিই। তারপরে আমি আমার মেয়েদের নিয়ে এখান থেকে চলে যাবো, সুন্দর ভবিষ্যত দিবো ওদের। হ্যাঁ চাইলে আমি অবশ্যই থাকতে পারতাম এখানে। কিন্তু আমি আমার মেয়েদেরকে একটা সুস্থ, সুন্দর, স্বাভাবিক পরিবেশে বড়ো করতে চাই”। যেটা এখানে থাকলে সম্ভব নয়। (মনেমনে)

রিনিঃ “সম্পর্কে আপনি আমার সতীন হন, বয়সে সম্পর্কে সব দিক দিয়েই বড়ো আমার থেকে। তাই আপনাকে আমি আপু বলেই সম্বোধন করবো। নিন এখানে খাবার রাখা আছে খেয়ে নিন আদিল আমায় বলে গেছিলো আমি যাতে আপনাকে খাবার গুলো খাইয়ে দিয়ে ওষুধ খেতে বলি। এবার তাড়াতাড়ি খেয়ে আমায় উদ্ধার করুন! আমার এভাবে বসে থাকতে ভাল্লাগছে না, আমি রুমে যাবো তাড়াতাড়ি খাবারগুলো খেয়ে নিন”।

রোজাঃ” দেখো রিনি তুমি তোমার মতো থাকো, আমার প্রতি এতো দরদ দেখাতে হবে না তোমার! আর হ্যাঁ তুমি আদিলকে বলে দিও আমি খেলাম কি খেলাম না সেটা নিয়ে যেনো সে মাথা না ঘামায়। তোমরা তোমাদের মতন থাকো। আমি আমার মতন থাকবো”।
রিনিঃ ভালো করতেই এসেছিলাম। ভালো না লাগলে নাই। বলেই সেখান থেকে প্রস্থান করলো রিনি!

–“রোজা খাবার খেয়ে দেয়ে একটু বসে ছিলো, আর ডাক্তার আংকেল এর বলা কিছু কথা নিয়ে ভাবছিলো। যা ডাক্তার আংকেল শুধু রোজাকেই বলেছিলো যে কথা রোজার নিষেধে আর কাউকে বলেনি ! তখনি আলো কাঁদতে কাঁদতে রোজার কাছ আসে! আলোর এভাবে কাঁদার কোনো সঠিক কারন খুঁজে পাচ্ছে না রোজা”। রোজা কিছু বলবে এর আগেই আলো বলতে লাগলো
–“মা আমি আব্বুর ঘরে গিয়েছিলাম একটু তখন দেখলাম যে নতুন আন্টিটা আব্বুর পাশে শুয়ে রয়েছে। তখন আমি বললাম নতুন আন্টি তুমি এখান থেকে যাও, আমি আব্বুর সাথে শুয়ে শুয়ে গল্প করবো আর আব্বু আমার মাথায় হাত বুলিয়ে দিবে। তখনি নতুন আন্টিটা আমাকে বললো যে আব্বু নাকি এখন ব্যস্ত আছে আমার কাছে আসতে পারবে না। আমি দেখলাম যে আব্বু তখন নতুন আন্টির সাথে কথা বলছে, আর আমাকে রুম থেকে বেরিয়ে যেতে বলে। আমি আব্বুকে বললাম যে তুমি তো নতুন আন্টির সাথেই গল্প করছো আমার কাছে আসলে একটু কি হতো তোমার! তারপর আমি নতুন আন্টিটাকে বললাম তুমি এখান থেকে চলে যাও, আর এটুকু বলাতেই ওনি আমাকে মেরেছে মা “।

–“এতোটুকু ছোটো বাচ্চার গায়ে হাত তুলতে পারলো রিনি! যার কিনা নিজেরই কয়দিন পরে বাচ্ছা হবে। আর আদিল এর সামনেই কি করে পারলে রিনি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলতে! আদিল হয়তো কিছুই বলেনি ! আমার মেয়েদের নিরাপওার কথা ভেবেই আমি এখানে রয়েছিলাম, এখন দেখছি ওদেরই গায়ে তুলছে রিনি আজ আসতে না আসতে! আর সহ্য করা যাচ্ছে না সহ্যের সীমা এবার পেড়িয়ে গেছে ! আমাকে এখনি কিছু একটা করতেই হবে”।

রোজাঃ” রিনি তুমি আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলতে পারলে কি করে? ও তো তোমার কাছে কিছু চায়নি, ও চেয়েছে ওর আব্বুর কাছে একটু থাকতে তাতে তোমার সমস্যা কি? তুমি তো সবটাই জানতে যে আদিল এর স্ত্রী, মেয়ে সব আছে তারপরেও যখন তোমার আদিল এর সাথে বিয়ে করে সংসার করতে বাধলো না! এখন এ বাড়িতে এসে ওঠেছো তাতেও আমি তোমার সাথে কোনো ঝগড়া করিনি, কোনো প্রকার কথাও বলিনি তোমার সাথে আর তুমি আসতে না আসতেই আমার মেয়ের গায়ে হাত তুলছো কোন সাহসে”?

রিনিঃ “দেখেন আপনার মেয়ে এসে আমাদের বিরক্ত করছিলো। আমি ওকে বারবার বলেছি, এমনকি আদিল ও বলেছে যে ও যেনো এখন চলে যায় পরে আসতে আপনার মেয়ে শুনছিলো না বারবার এখানে এসে বিরক্ত করছিলো তাই সহ্য করতে না পেরে ওকে একটা থাপ্পড় দিয়েছি। একটা থাপ্পড়ইতো দিয়েছি তাতে এমন করছেন কেনো? শুনেন এতো আহ্লাদ করে ছেলেমেয়ে পালন করা যায় না। একটু আধটু শাষন ও করতে হয়, আপনি ওকে শাষন করেননি বলেই তো আমি ওকে শাষন করেছি। আর আদিল আমাকে ভালোবেসে বিয়ে করেছে। নিশ্চয়ই আপনার কোনো অক্ষমতা ছিলো তাই আপনাকে ছেড়ে আমার কাছে এসেছে আদিল”!

রোজাঃ “এই সেই আদিল যে কিনা রিনির এতো কথা শুনেও একটা প্রতিউওর করলো না! এই সেই আদিল যে কিনা আমি মেয়েদের বকলে আমায় উল্টে বকতো! এই তো সেই আদিল যে কিনা মেয়েদের শাষন করা শুনছে! বাহ্ পাল্টে গিয়েছো খুব এক নিমিষেই! পাল্টে যখন গিয়েছো, আর আমার মেয়ের সাথে তোমার সময় কাটাতেও এখন বিরক্তি ধরছে! বেশ তুমি ভালো থাকো তবে, আমাদের আর সহ্য করতে হবে না”!

আদিলঃ হ্যাঁ এখন আর সত্যিই ভালো লাগছে না রোজা! তুমি তোমার মতন থাকো। এখন রিনির যত্ন প্রয়জোন তোমার এসব ঝগড়া ঝামেলা নয়। তুমি হয়তো চুপচাপ থাকো নয়তো তোমার মতো করে তুমি থাকবে।
“আদিল এর এতোটুক কথাই রোজার কাছে সবটা পরিষ্কার হয়ে গেলো! এবার সে আর কোনো পিছুটান রাখবে না, নিজের মতন সিদ্ধান্ত সে নিয়ে ফেলেছে আদিল এর কথা শুনে “।

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেনন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here