অপূর্নতার সংসার পর্ব ৩

#পর্ব_৩
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু

–“মা তুমি এতোক্ষণ ধরে ঘুমুচ্ছিলে আর বাড়িতে ভাইয়া কি করেছে সেটা জানো কি? মা ভাইয়া আরো একটা বিয়ে করেছে ভাবী থাকা অবস্থায়! শুধু তাই নয় ভাইয়া তার মেয়ে আলো আর মিষ্টির কথাও ভুলে গেলো! কি করতে পারলো ভাইয়া এটা? আমার তো ভাবলেই ভাইয়ার প্রতি ঘৃনাই আসছে শুধু। তারপর ও ভাইয়ার কোনো লজ্জা নেই, কি রকম বুক ফুলিয়ে দাড়িয়ে আছে দেখো। আমি হলে তো এরকম কাজ করবো তো দূ্রের থাক করার কথা চিন্তাও করতাম না ”

–ঠাস ঠাস করে পরপর দু’টো চড় দিয়ে দিলেন ইদারা বেগম তার নিজের মেয়ে শিলার গালে! শিলা চড় খেয়ে হতভম্ব হয়ে তাকিয়ে আছে নিজের মায়ের দিকে, শিলা বুজতেই পারছে না যে সে কি এমন ভূল কথা বললো যে তার মা তাকে চড় মারলেন! তার চক্ষুজোড়া এখন তার মায়ের দিকে নিবদ্ধ রেখেছে উওর জানায় চেষ্টায়। তবে শিলা দেখতে পাচ্ছে তার মায়ের চক্ষুজোরা লাল হয়ে আছে, মানে তিনি প্রচন্ড রেগে আছেন। তবুও শিলা তার তার মায়ের দিকে তাকিয়ে কিছু বলতে যাবে তখনি ইদারা বেগম চেঁচিয়ে বলতে লাগলেন

–অসভ্য মেয়ে এই শিক্ষা দিয়েছি তোকে আমি? বড়ো ভাইয়ের সাথে এভাবে উঁচু গলায় কথা বলবি তুই? তোর বাবা মারা যাবার পর এই এতোটা বছর তো তোর এই ভাইই সংসার টা দেখে রেখেছে। সে যদি না থাকতো তাহলে পারতিস তুই এভাবে স্কুলে যেতে? পারতিস এভাবে ঘুরে ফেরে বেড়াতে? যাই করুক না কেনো সে মনে রাখবি আদিল তোর বড়ো ভাই হয়।

ইদারা বেগমঃআদিল বাবা তুই আমাকে সবটা বলতো কি হয়েছে? শিলা এসব কি বলছে? সবটা খুলে বল আমায়?

আদিলঃ” মা তুমি অন্ততো আমায় ভুল বুঝো না। আমি জানি কেউ আমায় না বুঝলেও তুমি আমায় বুঝবে। মা আমি রিনিকে বিয়ে করেছি প্রায় দেড় বছর হলো, ও এখন সাত মাসের গর্ভবতী। আমি ওকে বিয়ে করতাম না, তুমি তো জানোই রোজা একটু সমস্যা আছে বাচ্ছা নিতে আর যদিও নেয় একবারই পারবে, আর তখনো যদি মেয়ে হয় ছেলে না হয়ে, তারপরে তো আর রোজা বাচ্ছাই জন্ম দিতে পারবে না। তারপর আমার কি হবে? আমারতো একজন ছেলে দরকার না বলো ভবিষ্যতে যাতে আমাদের দেখে রাখতে পারে। তাই আমি বলতে পারো একপ্রকার বাধ্য হয়েই রিনিকে বিয়ে করেছি”।

ইদারা বেগমঃ”আমিতো তোকে আগেই বলেছিলাম বাবা তুই তো আমার কথা শুনিস নি বল! এখন সেইতো বিয়েটা করলি। আমি অনেক খুশি হয়েছি। তা নতুন বউমা কোথায় বাবা? তোর রুমে”?

হ্যাঁ মা ও রুমে শুয়ে বিশ্রাম নিচ্ছে তুমি যাও, গিয়ে কথা বলো।

শিলাঃ “আশ্চর্য মা তুমি সবটা মেনে নিচ্ছো! ভাইয়াকে কিছু বলার নেই তোমার? তুমি জানো না বউ বাচ্চা রেখে দিত্বীয় বিয়ে করা আইনত দন্ডনীয় অপরাধ? ভাইয়াকে ওই মহিলাকে ডিবোর্স দিয়ে উচিত ভাবীর কাছে ক্ষমা চেয়ে আগের মতো থাকা। আর ভাইয়া যদি না বুঝে আমি যাচ্ছি ওই মহিলার ঘরে, ওনি কি করে অন্য একটা মেয়ের সংসার ভাঙলো নিলর্জ্জ মহিলা”।

ইদারা বেগমঃ শিলা তোকে আমার কসম রইলো তুই বউমাকে কিছু বলবি না। ওর এখন বিশ্রাম নেওয়ার সময়। তুই যা তোর ঘরে যা, ঘরে গিয়ে পড়াশোনা কর।

শিলাঃতুমি বুঝতে পারছো না কেনো মা ?

ইদারা বেগমঃ”তোকে চুপ করতে বলেছি আমি মানে চুপ আর কোনো কথা নয়। এরকম করলে তোর বিয়েও আমি কিছুদিনের ভিতরেই দিয়ে দিবো”।

–“এতটুকুই ছিলো তাদের মা, ছেলের কথোপকথন। পর্দার আড়াল থেকে দাড়িয়ে এতোক্ষণ সবকিছু শুনছিলো রোজা। তার মনের আকাশে একটু রং উকি দিয়েছিলো যখন ভেবেছিলো তার শাশুড়ি মা হয়তো তার ছেলের ভুলগুলো ধরিয়ে দিবে। কিন্তু তার আকাশের রং গুলোকে পাল্টে দিয়ে মেঘ হতে একটুও সময় নিলো না। তারই হয়তো ধারনা ভুল ছিলো। তার দু’জোড়া আঁখি যুগল যেনো অশ্রুসিক্ত হয়ে পড়ছে। কান্নারা দলা পাকিয়ে আসছে ভেতর থেকে। কিন্তু সে কার জন্য কাঁদবে? তার স্বামীর নামক প্রতারকটার জন্য? এই কান্নার কোনো মানেই হয় না। তাকে যে এখন শক্ত হতে হবে। কোনো প্রতারকের জন্য কষ্ট পেলে হবে না”।

ভাবী আমি জানি ভাইয়া যা করেছে সেটা ভুল। তুমি প্লিজ কষ্ট পেয়ো না। যদি তোমার কোনো উপকারে আসি বলতে পারো ভাবি। আমি সবসময়ই তোমার পাশে থাকবো।

ইদারা বেগমঃ”রোজা শোনো মা হয়তো তোমার খারাপ লাকবে তবুও আমার কথাটা শুনো ঠান্ডা মাথায়। দেখো মেয়েদের তো স্বামীর ঘর করেই কাটাতে হয় তাই বলছি কি তুমি সবটা মেনে নাও কোনো অশান্তি করো না। আমি বলছি তোমার কোনো অভাব হবে না”।

–“শাশুড়ি মায়ের কথা শুনে রোজা নিঃশব্দে অশ্রুসিক্ত একজোড়া নয়ন নিয়ে চলে গেলো ছাদে। সে জানতো হয়তো তিনিই আদিল এর মতন এক কথাই বলবে। যতোই অভাব না থাকুক সংসারে কিন্তু নিজের স্বামীকে ভাগ করা এটারযে কতোটা কষ্টের এটা শুধু যার সাথে ঘটে সেই বোঝে”।

–“এসব কি রোজা! বেলা চারটা বেজে গেলো এখনো তুমি রান্নাই করলে না। তোমাকে না বললাম রিনির খেয়াল রাখতে , সেই কখন কিছু ফল দিয়ে গেলে আর কোনো কিছুই তো খেলো না রিনি। ও যদি এখন আমাকে না বলতো আমিতো কিছুই জানতাম না! আর আমার এই ময়লা শার্ট গুলো এখনো এখানে! তোমাকে না বলেছিলাম সকালে এগুলো ধুয়ে রাখতে, সেটার কি হলো”?

কথাগুলো বলতেও সময় দিলো না আদিল রোজাকে অমনি তার ময়লা শার্টগুলো রোজার মুখের দিকে ছুড়ে মারলো! যেনো এটাই রোজার প্রাপ্য কেনো সে তার কথা মতো কাজ করলো না। এতে রোজা বিন্দুমাএ অবাক হলো না! সে জানে আদিল পাল্টে গেছে তাই এসব ব্যবহার নিছকই প্রতিদিন হবে তার সঙ্গে। তাই সে কথা না বাড়িয়ে চলে গেলো রান্নাঘরে।

আলোঃ মা তুমি কোথায়? সেই কখন স্কুল থেকে এসে বসে রয়েছি ক্ষিদে পেয়েছে খেতে দাও তো তাড়াতাড়ি। একটু পরেই প্রাইভেটে যেতে হবে। আর আমাদের রুম থেকে বেরোতে বারন করেছো কেনো? কি হয়েছে আজকে তোমার?

এই বলে রোজার বড়ো মেয়ে আলো সিঁড়ি দিয়ে নামতে লাগলো তার মায়ের খোঁজে । কিন্তু রোজা কি আদৌ রান্নাঘরে আছে? সকালবেলা মেয়েদের স্কুলে দিয়ে নাস্তাও করেনি রোজা। দুপুরেও কিছু খায়নি, খাবেই বা কি করে যা হয়েছে আজকে তার সাথে তাতে আর খাওয়ার কথা নেই। সারাদিন না খেয়ে রান্না বান্না সেড়ে আদিল এর ময়লা শার্ট পরিষ্কার করতে করতে ওখানেই অজ্ঞান হয়ে পড়েছে সারাদিন না খাওয়া আর কাজ করার ফলে।

আলোঃ মা তুমি এখানে এভাবে পড়ে রয়েছো! পাশ ফিরাতেই দেখে রোজা অজ্ঞান হয়ে রয়েছে! তখনি কাল বিলম্ব না করে আলো চিৎকার করে তার বাবাকে ডাকতে লাগলো,
মেয়ের চিৎকার শুনে সবাই এসেছে। বাদ পড়েনি রিনি,ও সে ও দেখতে এসেছে কি হয়েছে এখানে।

বাড়িতে নতুন মুখ দেখে সবারই মতন কৌতুহল জাগলো আলোর মনে যে এই নতুন মুখটি কে? সে কাল বিলম্ব না করে প্রশ্ন করে ফেললো সবাইকে এই নতুন মুখটি কে?
আব্বু বলো না এই নতুন আন্টিটা কে? কখন এসেছে আমাদের বাড়িতে? কতোদিন থাকবে সে?
আলোঃকি হলো বাবা? চুপ করে না থেকে উওর দাও? আচ্ছা উওর পরে দিও আগে মাকে ঘরে নাও।

আদিল রোজাকে বাচ্চাদের রুমে নিয়ে শুইয়ে দিলো। আর আলোর পীড়াপীড়িতে ডাক্তারকে ফোন করে বাড়িতে আসতে বললো। কিন্তু আলো সে এক প্রশ্ন করেই যাচ্ছে এই মহিলাটা কে?
#চলবে?

বিঃদ্রঃ আগেই বলেছি গল্প পড়ে কেউ হাইপার হবেন না। রোজা অবশ্যই সঠিক সিদ্ধান্তই নিবে । আমি অবশ্যই গল্পটি সুন্দর করে শেষ করবো। সামনে দেখুন কি হতে চলেছে। আপনাদের কি মনে হয় আদিল কি বলবে আলোকে?

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here