#পর্ব৫
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানজিনা_মেহরিন_মিশু
–“রোজার কথা কেউই আমলে নিলো না যে সে কি বলেছে! কিন্তু এই কথা টুকুনিই শিলা বুঝেছে যে তার ভাবী ঠিক কি বোঝাতে চেয়েছে সবাই সবার মতন করে চলে গেলো, রোজাও চলে গেলো তার নিজ কর্মে। কিন্তু শিলা তার ভাবীর পিছন পিছন যেতে লাগলো। সে জানে এখন তার ভাবী যে সিদ্ধান্ত নিয়েছে এখন তার উচিত রোজার পাশে দাড়ানো”।
–“উপরের রুম থেকে মানে যে রুমে আদিল এর রোজা থাকতো আগে এখন সে রুমে আদিল এর সাথে রিনি রয়েছে। রোজা এখন সে রুমেই যাচ্ছে তার সমস্ত জামাকাপড় আর তার বাপের থেকে দেওয়া কিছু গহনা রয়েছে সে সবগুলো এখান থেকে নিয়ে যাওয়ার উদ্দেশ্য। কারন এ রুম তো দূরের থাক এ বাড়িতেই এখন আর তার কোনো জায়গা নেই! তাই সেখান থেকে সড়ে আসাই উচিত। রুমে গিয়ে দেখতে পেলো আদিল বসে বসে রিনির মাথায় হাত বুলিয়ে দিচ্ছে! হয়তো রিনিকে ঘুমানোর জন্য বলছে। এমন দৃশ্য দেখে রোজার বুকের ভিতর চিনচিনে ব্যথা অনুভব করলো, তারপরেও সে ও গুলো পাওা দিলো না। কারন এখন সবটাই পাল্টে গেছে। রোজা সেখানে দৃষ্টিপাত না করে সে তার প্রয়োজন মতন জিনিশ গুছাতে লাগলো। তার উদ্দেশ্য এখন এ বাড়ি থেকে চলে গিয়ে মেয়েদের উপযুক্ত করে গড়ে তোলা যাতে আদিলকে যোগ্য জবাব সে দিতে পারে। তার গন্তব্য স্থল এখনো নিজেরই অজানা”।
আদিলঃ” একি রোজা তুমি আলমারি থেকে সব জামাকাপড় বের করছো কেনো? ওহ্ বুঝেছি তুমি মেয়েদের রুমে গিয়ে থাকবে এখন থেকে! ঠিক আছে তাহলে তাই যাও । ওখানেই তোমার বেশি ভাল্লাগবে মেয়েদের সাথে “।
–“রোজা ভেবেছিলো আদিল হয়তো রোজাকে আটকাবে! এখন দেখছে আদিল এর কোনো ভাবান্তর নেই রোজাকে নিয়ে! এ বদল শুধু এ বাড়িতে রিনির আসার পর ঘটেনি, ঘটেছে অনেক আগে থেকেই যখন সে রিনিকে গোপনে বিয়ে করেছিলো। রোজার অভিমানে আঁখি জোড়া থেকে অশ্রু নির্গত হতে লাগলো! যতো যাই হউক রোজা আদিলকে ভালোবাসে, আদিলের সাথে সংসার করেছে তাই মায়া হবে এটাই স্বাভাবিক। আদিল এর সেই মায়াটুকুও হয়তো কেটে গেছে। তাই রোজা চলে গেলো বাচ্চাদের রুমে। এখন প্রায় সন্ধ্যা হয়ে গেছে। এখন চলে গেলেও অনেকটা দেরি হয়ে যাবে তাই সে সিদ্ধান্ত নিলো কাল ভোরবেলায়ই চলে যাবে”।
–“রোজার কর্মকান্ড এতোক্ষণ সব দেখছিলো শিলা। সাথে এও দেখছিলো তার ভাইয়ের কর্মকান্ড! ভেবেছিলো ভাই হয়তো আটকাবে ভাবীকে, কিন্তু সে তো আরো পাষানের মতন চলে যেতে বললো রোজাকে! তাই শিলাও অপেক্ষা না করে তার ভাবীর সাথে কথা বলতে চলে গেলো”।
শিলাঃ দেখো ভাবী কেউ বুঝুক আর না বুঝুক আমি অন্ততো বুঝেছি তুমি এ বাড়ি থেকে চলে যাবে। কিন্তু ভাবী মাথা ঠান্ডা করো, এখন তুমি কোথায় যাবে বলোতো? তাই বলছি এখন একটু অপেক্ষা করো আর এমনিতেও তুমি একটু অসুস্থ আছো। কয়দিন পরে না হয় যেও।
রোজাঃ তোমার কি মনে হয় শিলা আমি এখানে থাকলে সুস্থ হয়ে যাবো! না বরং আরো উল্টে অসুস্থ হয়ে পড়বো। এখন এই মুহুর্তে আমাকে শক্ত থাকতে হবে আমার মেয়েদের জন্য। আর তোমার ভাই যে রকম ব্যবহার করছে তাতে কি তোমার মনে হয় আমাদের আদৌ এখানে থাকা উচিত? তাই সব ভেবে চিন্তে বলছি আদিল ওর মতন থাকুক আমিও আমার মেয়েদের নিয়ে সেরকম-ই থাকবো। আদিল এর যখন কোনো চিন্তা বা কোনো ভালোবাসা নেই আমাদের জন্য তখন শুধু শুধু এখানে থাকার মানে নেই শিলা। তাই বলি আমাকে আর আটকিও না। আর তোমার মনে নেই শিলা যখন আমার উচ্চ মাধ্যমিক শেষ হওয়ার পর অর্নাস পড়ছিলাম তখনি বিয়ে হয়ে গেলো। তোমার ভাই মানে আদিলইতো আমাকে বিয়ের পর অর্নাস কমপ্লিট করিয়ে ছিলো! আমি ওকে বলেছিলাম যে আরো পড়বো! তারপর আর অর্নাস কমপ্লিট করার পর পড়িনি, কারন তখন আলো এসেছিলো আমার কোল জুড়ে। তোমার হয়তো মনে নেই তুমি তখন ছোটো ছিলে। চিন্তা করো না আমার জন্য আমি ঠিক ছোট খাটো কোনো চাকরি বা কাজ করে সুখে থাকবো আমার মেয়েদের নিয়ে।
শিলাঃতুমি ঠিকই বলেছো ভাবী তোমার এখান থেকে চলে যাওয়াই উচিত। আমি ই বা কোন মুখে তোমাকে এখানে থাকতে বলবো? ভাইয়া সে সব রাস্তা বন্ধ করে দিয়েছে। তুমি একটু দাড়াও আমি এখনি আসছি ভাবী।
–“কিছু সময় অতিবাহিত হওয়ার পর শিলা বেরিয়ে এলো তার রুম থেকে সাথে একটা ব্যাগের মতন কিছু একটা সাথে করে নিয়ে”।
–ভাবী চলে যখন যাবে তখন আমার এই সাহায্য টুকু গ্রুহন করো। এখানে পনেরো হাজার এর মতন টাকা আছে, এই এতোবছরে তুমিই আমাকে দিয়েছিলে একটু করে করে জমিয়ে পনেরো হাজার টাকা হয়েছে। বলতে পারো এগুলো তোমারই টাকা আমি খরচ করিনি কখনো। এখান থেকে বেরিয়ে গেলে তোমার এই টাকাগুলোর প্রয়োজোন আছে ভাবী। তাই বলছি এই টাকা টুকুনি নাও।
রোজাঃ কিন্তু শিলা এই টাকা আমি কি করে নেই বলোতো? এগুলো আমি তোমাকে দিয়েছি তুমিই রাখো।
–“ভাবী মনে করো আমি তোমাকে ধার হিসেবে দিচ্ছি। সময় হলে তুমি আবার ফেরত দিয়ে দিবে আমাকে। এখন তোমার প্রয়োজোনে এগুলো লাকবে তাই রাখো”
–শিলা বয়সে ছোটো হলেও যেনো পরিস্থিতি দেখে অনেকটাই বুঝে গেছে! দু-হাত ভরে দোয়া করলাম শিলার জন্য , অনন্ততো একজন আছে যে সত্যি ই আমাকে ভালোবাসে।
রোজাঃ তুমি ভালো থেকো শিলা, জিবনে অনেক বড়ো হও। আমার সারাজীবন তোমার এই সাহায্যর কথা মনে থাকবে। তোমার যেকোনো বিপদে আপদে আমাক সবসময়ই পাশে পাবে তুমি।
–“শিলার সাথে কথা বলা শেষ রুমে মেয়েদের কাছে গেলো রোজা, মেয়েরা তাকে পেয়ে যেনো আনন্দের স্বর্গ খুঁজে পেলো তৎক্ষনাৎ মায়ের কোলে মাথা রেখে গল্প করতে করতে ঘুমিয়ে পড়লো দুজনেই। আর মা ও যেনো পরম আবেশে নিজের সন্তানদের কাছে টেনে নিলো। জিবনের পরম পাওয়া তার মেয়েদুটো। সারাদিনের সমস্ত অশান্তি, ক্লান্তি দূর হয়ে যায় ওদের কাছে আসলে”।
রাএেবেলা শিলা ঘুম থেকে ওঠলো সবাইকে খেতে ডাকতে, আসলে বিকেলবেলা মেয়েদের সাথেও রোজার ও চোখ লেগে গেছিলো এখন ওঠলো ওঠে দেখে প্রায় নয়টা বেজে গেছে। সবাইকে খাওয়ার উদ্দেশ্য ডাকতে গেলো। নিচে গিয়ে দেখলো শিলা,ইদারা বেগম, বসে রয়েছে হয়তো আদিল আর রিনির জন্যই বসে রয়েছে। রোজা নিচে আসতে না আসতে ইদারা বেগম বললেন তাকে সে যেনো আদিল আর রিনিকে ডেকে নিয়ে খাওয়ার জন্য। সেই মোতাবেক রোজাও যাচ্ছিলো।
আদিলঃ রিনি তুমি রাগ করো না এই দেখো তোমার কথা মতোন আমি আরো মাস খানেক আগেই ডির্বোস পেপার রেডি করে রেখেছি। রোজা যদি কোনো উল্টা পাল্টা কিছু করে তৎক্ষনাৎ তাকে আমি ডির্বোস দিয়ে দিবো। সেই জন্যইতো ডির্বোস পেপার আনা। এখনো তেমন অশান্তি করে নি রোজা। আমি ওকে বলেছি যাতে মিলে-মিশে থাকে তোমার সাথে। রোজাকে এখনো রেখেছি শুধু যাতে তোমার, মায়ের দেখাশুনো করতে পারে আর বাড়ির সব কাজকর্ম করে এই কারনে। রোজার সাথে সংসার করে আমি সুখী হয়নি বলতে পারো, । আলো আর মিষ্টিতো ওদের মা বলতে অজ্ঞান তাইতো সবটা ভেবে চিন্তে আমি রোজাকে রেখেছি এখনো। এবার দেখো সবটা ঠিকঠাক হয়ে যাবে। আর যদি ঠিক না থাকেও তখন দেখো কি হয়!
এতোদুর পযর্ন্ত এগিয়ে গেছে আদিল! ভাবতেও পারেনি রোজা, রোজা হয়তো ভেবেছিলো যে আদিল তাকে একটু হলেও ভালোবাসে এখন দেখছে কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। হয়তো সেটা এই দেড় বছরে সবটা নিমিষেই পাল্টে দিয়েছে রিনি আদিল এর জিবনে এসে। তাই এখন আর রোজার কোনো জায়গাই নেই আদিল এর জিবনে, সবটা জুড়ে শুধু রিনি।
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। আর রোজার জন্য কি কেউ আসবে? নাকি রোজাকে সিংগেল মাদার হিসাবেই কন্টিনিউ করবো? সবার মতামত চাচ্ছি।
#চলবে?