অপূর্নতার সংসার পর্ব ৭

#পর্ব৭
#অপূর্নতার_সংসার
#লেখিকাঃতানিজনা_মেহরিন_মিশু

–“আলো আর মিষ্টি মিলে পর পর ড্রাইভার কে চিমটি মেরেই যাচ্ছে। ড্রাইভার চেয়েও কিছু করতে পারছে না কারন সে গাড়ি চালাচ্ছে। তবুও সে মুখে বারবার আলো মিষ্টিকে বলছে যেনো চিমটি না দেয়, তাহলে ফল ভালে হবে না। এক্ষুনি তাদের গাড়ি থেকে নিচে ফেলে দিবে। কিন্তু আলো আর মিষ্টি যেনো কোনো কথাই কানে নিচ্ছে না তারা ড্রাইভারকে চিমটি দিয়েই যাচ্ছে, সাথে মিষ্টি দুষ্টামি করে তার মায়ের হিজাব থেকে আলপিন নিয়ে ড্রাইভার কে সমানে আলপিন দিয়ে গুঁতা দিচ্ছে। একদিকে চিমটি আর একদিকে আলপিন এর ভয়াবহ গুঁতা খেয়ে ড্রাইভার যেনো অস্থির হয়ে যাচ্ছে! সে সমানে আলো আর মিষ্টিকে বলছে থামতে কিন্তু তারা দু’জনের একজন ও থামছে না! ছোটো বাচ্চা গুলোও মায়ের কথা শুনে মাথায় গেথে নিয়েছে যে তাদের বিপদ আসছে ওই ড্রাইভার কাছ থেকে। তাইতো মা’কে বাঁচাতে ছোট্ট দুই মেয়ের এই কর্ম। রোজাও কিছু বলছে না আপাততো এই বিপদ থেকে উদ্ধার হতে পারলেই হয়!
অবশেষে মিষ্টি তার দু’হাত দিয়ে ড্রাইভার চোখে আঙুল দিয়ে জোরে সোড়ে গুঁতা মারলো। মিষ্টিকে দেখে আলোও একই কাজ করলো তৎক্ষনাৎ ড্রাইভার ব্যাথায় কুঁকড়ে গাড়ি থামিয়ে, চোখে পানি দিচ্ছে যাতে ব্যাথা লাঘব হয় একটু”।

“আর সেই সুযোগে ব্যাগ পএ যা আছে সব কিছু নিয়ে রোজা মেয়েদের কে সাথে নিয়ে দৌড়াচ্ছে। যাওয়ার আগে ড্রাইভারের চোখে ধুলো মেরে দিলো যাতে তাদের ধাওয়া করতে না পারে চোখের যন্ত্রণায়”।

–“রোজা তার মেয়েদের নিয়ে প্রানপন দৌড়াচ্ছে যাতে ওই বদ ড্রাইভার এর কাছে পৌঁছাতে না পারে ওদের কাছে। দৌড়াচ্ছে আর দৌড়াচ্ছে কিন্তু কোনো জনমানব এর দেখা রোজা পাচ্ছে না! যতোই সামনে যাচ্ছে ততই নির্জন পরিবেশ। তবুও সে আসন্ন বিপদ থেকে বাঁচতে মেয়েদের নিয়ে দৌড়াচ্ছে। কিন্তু হঠাৎই একটি গাড়ি সামনে এসে পড়ায় গাড়িটির সামনে মুখ থুবরে পড়ে রোজা! রোজা কোলে তার ছোটো মেয়ে আলো ছিলো বিধায় সেও রোজার সাথে অজ্ঞান হয়ে পড়ে গাড়িতে ধাক্কা খাওয়ার ফলে। আলো চোট লাগলেও সে অজ্ঞান হয়নি, এখনো তার জ্ঞান আছে”।

অফিসে যেতে দেরি হওয়াও এই শর্টকাট রাস্তা দিয়ে গাড়ি যাচ্ছিলো রওশন। হঠাৎই এক ভদ্রমহিলা ও তার মেয়ে গাড়ির সামনে এসে পড়ায় রওশন ব্রেক কষেও কুলোয় নি! যার ফলে রোজা ও তার কোলে থাকা মেয়ে গাড়ির ধাক্কা খেয়ে অজ্ঞান হয়ে যায়। রওশন এগিয়ে যায় সামনে দেখতে। রওশনকে দেখেই আলো অস্পষ্ট ভাবে বলতে লাগলো
” আমাদের খুব বিপদ দয়া করে একটু সাহায্য করুন”
একথাটুকু বলেই আলো ও অজ্ঞান হয়ে গেলো
রওশন আর সাত পাঁচ না ভেবে রোজাদের গাড়ি করে নিয়ে চললো তাদের বাড়িতে।

ওখানে বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার পর…..

ডাক্তারঃ রওশন এটা কি করে হলো? তুমিতো ভালো করেই ড্রাইভিং করো তাহলে আজকে কি করে তোমার গাড়িতে ওদের অ্যাক্সিডেন্ট হলো?

রওশনঃ বুঝতে পারিনি আংকেল! হঠাৎই ওনারা গাড়ির সামনে এসে পড়ায় ব্রেক কষে কুলোয় নি । তবে কোনো ভয়ের কিছু নেই তো?

ডাক্তারঃ না ভয়ের কিছু নেই। যেখানে যেখানে চোট পেয়েছিলো আমি সেখানে ব্যান্ডেজ করে দিয়েছি। ওনাদের জ্ঞান ফিরবে আর একটু পর। ততক্ষনে তুমি ওনাদের একটু তোমার বাড়িতেই রাখো আপাততো। আর তোমাদের বাড়িতে রাখলেও কোনো প্রবলেম হবে না যতোটুকু আমি জানি। আমার এখন একটা অপারেশন আছে। জ্ঞান ফিরলে কিছু খাইয়ে এই মেডিসিন গুলো দিয়ে দিও। আর তোমার আব্বু কবে ফিরবে?

রওশনঃঠিকআছে আংকেল ওনারা আপাপততো আমার বাড়িতেই থাকুক কিছুক্ষন। আর আপনাকেও অনেক ধন্যবাদ। আব্বু তো আর দুদিনের ভিতরেই ফিরে আসবে আংকেল।

–“রওশন অফেসের কাজে চলে গেলো যাওয়ার সময় রহিমা খালাকে বলে গেলো ওদের খেয়াল রাখতে। জ্ঞান ফিরলে যেনো কিছু খেতে দেয়”।

ঘন্টা দু’য়েক পর পিটপিট করে চোখ খুলে তাকালো রোজা। তার এখনো বোধগম্য হচ্ছে না সে কোথায় এসেছে। পাশে তাকাতেই দেখতে পেলো এক বৃদ্ধ মহিলা ফল কাটছে অতি মনোযোগ সহকারে। আর পান খেয়ে তার ঠোঁট দুটো লাল করে ফেলেছে।

রোজাঃ আপনি কে? আর আমাদের এখানে নিয়ে আসলেন কেনো? কি করেছি আমরা? কখন এসেছি এখানে।

রহিমা খালাঃ আরে তুমি এতো উতলা হইতাছো কেনো? আমার কথাডা হুনো আমি এইহানে কাম করতাছি ধরো বিশ বছর হইয়া যাইবো। আমারে তুমি রহিমা খালা কইবার পারো। তোমারে তো আমাগো ছোডো সাহেব আনছে এইহানে তুমি নাকি গাড়ির সামনে পইড়া গেছিলা?

রোজাঃহ্যাঁ খালা এক সয়তান ড্রাইভার হাত থেকে বাঁচতে মেয়েদের নিয়ে দৌড়াচ্ছিলাম হঠাৎই গাড়ি সামনে আসায় পড়ে যাই। তারপরেই হয়তো তোমাদের ছোটো সাহেব এখানে নিয়ে আসছে। তা এই বাড়িতে বুঝি তুমি একলাই রয়েছো আর কেউ নেই?

রহিমা খালাঃ না গো মাইয়্যা আছে গো আছে আমাগো বড়ো সাহেব আছে বাড়িতে তয় হেয় হইলো গিয়া মস্ত বড়ো ডাক্তার। ওনি সারাদিন ব্যাস্ত থাকেই বুঝবার পারছো! আর আছে আমাগো ছোডো সাহেব তিনিও বড়ো সাহেবের মতনই ব্যস্ত মানুষ। আর এই বাড়িতে আমি আর একজন ড্রাইভার আছে। আমরা এই চারজনই থাহি এই মস্ত বড়ো বাড়িটায়।

রোজাঃ তোমাদের ছোটো সাহেব ও কি বড়ো সাহেব এর মতন ডাক্তার?

রহিমা খালাঃ না গো তিনি ডাক্তার না। ওনার নিজেরই একটা ব্যবসা আছে। ওনি হেইডা নিয়াই বিজি থাকে তয় হেইডা কি ব্যবসা আমি ওতো- সতো বুজবার পারিনা।

রোজাঃ ওহ্। তাহলে খালা আমি এখন আসি। আপনার সাথে কথা বলে খুব ভাল্লাগলো।

রহিমা খালাঃ নাগো মাইয়্যা তুমি অহণো যাইবার পারবা না। আমারে ছোডো সাহেব কইয়া দিছে হেয় না আওন পযন্ত তুমি এইহানেই থাকবা। আমাগো বড়ো সাহেব কাজের কারনে বাইরে গেছে, তিনিও কালকা আসবো মনে হয়। অহন তুমি এইহানেই থাকবা ছোডো সাহেব না আওন পযন্ত।

–“রোজা ও আর কথা বাড়ালো না। কারন তার ও জানতে ইচ্ছে করছে কে সেই মানুষ যে রোজাকে নির্ধিধায় এভাবে সাহায্য করলো। তবে খালার সাথে কথা বলে রোজার ভালোই লাগছে কেমন সহজ সরল মানুষ। যেনো কোনো প্যাচ নেই মানুষটার মনে”।

রিনিঃ আদিল তুমি এখনো ঘুমোচ্ছো? আর আমি সেই কখন ওঠলাম এখনো পর্যন্ত খাবার পেলাম না বলে নিচে গিয়ে দেখলাম তোমার মা শুয়ে রয়েছে আর শিলা হয়তো পড়তে গেছে। কিন্তু রোজাকে তো দেখতে পেলাম না কোথাও! আর তোমার মেয়েদের ও দেখতে পেলাম না কোথায় গেলো তারা?

আদিলঃ দেখতে পাচ্ছো না মানে কি? দাড়াও আমি ফোন করছি। ফোন তো বন্ধ বলছে, তুমি চুপ করোতো রিনি হয়তো কোথাও গেছে মেয়েদের নিয়ে ফিরে আসবে একটু পরেই।

রিনিঃ ওদের কথা বাদ দাও। আদিল দুপুর হয়ে যাচ্ছে এখনো আমি কিছু খাইনি! আমার ক্ষিদে পেয়েছে খুব।

আদিলঃ তো ক্ষিদে পেয়েছে খাবার বানিয়ে খেযে ফেলো। বাড়িতে বাজার করা সবকিছু, নিজের ইচ্ছে মতে বানিয়ে খেয়ে নাও।

রিনিঃ কি বলছো কি তুমি! আমি খাবার বানিয়ে খাবো মানে? এই অবস্থায় আমি খাবার বানিয়ে খেতে পারবো না । আমার শরীর খারাপ করবে আগুনের সামনে গেলে। তুমি একটু বানিয়ে দাও না।

আদিলঃ আমিতো রান্না পারি না রিনি। শিলাও তো বাড়িতে নেই ও থাকলে ও করে দিতো। দাড়াও আমি মাকে বলছি।

–“ও বাড়িতে রহিমা খালা রোজার সাথে কথা বলার সময় দেখতে পেলো বড়ো সাহেব চলে এসেছে”।

রহিমা খালাঃ বড়ো সাহেব আপনে এতো তাড়াতাড়ি চইলা আইলেন যে?

বড়ো সাহেবঃ কাজ শেষ হয়ে গেছে রে রহিমা তাই চলে এসেছি।

রহিমার পিছনে রোজাকে দেখে বড়ো সাহেব যেনো বিশ্বাসই করতে পারছে না এখানে রোজা বসে আছে!
রোজাও যেনো অবাকের সপ্তম পর্যায় বড়ো সাহেবকে দেখে।

#চলবে?
বিঃদ্রঃ ভুল এুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। ব্যস্ততার কারনে রি-চেক করা হয়নি

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here