বাতাসা❤
০৮.
পার্কের একপাশের একটা বেঞ্চে পাশাপাশি বসে আছে দিশা আর জেন। বারবার ফোন চেক করছে দিশা। প্রায় আধাঘন্টা হতে চলল, অথচ জেন সেই প্রথম থেকেই চুপ করে আছে। সামান্য কথাও বলছে না দিশার সাথে। ক্রমশই রেগে যাচ্ছে দিশা। অধৈর্য হয়ে ঝাঁঝালো কণ্ঠে বলল, ‘সমস্যা কি? সং হয়ে বসে থাকার জন্য আমাকে এখানে নিয়ে রেখেছেন? কিছু বলছেন না কেন?’
জিহ্বা দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে নিলো জেন। কাতর কণ্ঠে বলল, ‘তুমি আমাকে ইগনোর কেন করছো দিইইসা?’
দিশা ভ্রু কুঁচকে বলল, ‘আপনি জানেন না?’
এ কথার পিঠে আর কিছু বলল না জেন। অনেক্ষণ চুপ থেকে আবারো কাতর কণ্ঠে বলল, ‘আ..আমি তুমাকে পচন্দ করি, ভা..ভালুবাসি দিইইসা!’
এতটুকু বলে আবারো ইংরেজীতে বলল, ‘এতে আমার দোষ কোথায়? আমাকে মেনে নিলে কি এমন ক্ষতি হবে তোমার?’
দিশার শান্ত জবাব, ‘কিছুই হবে না। তবে আমার পরিবারের হবে। আমার পরিবারের কেউ আপনাকে মেনে নিবে না।’
জেন ব্যগ্র কণ্ঠে বলল, ‘তোমার ভাই তো আমাদের মেনে নিয়েছে দিইইসা। খুব জলদি তোমার বাবা-মাও মেনে নিবেন।’
দিশা বিস্ময় নিয়ে তাকালো জেনের দিকে। আটকে আসা কণ্ঠে বলল, ‘রাফসান ভাইয়া, মানে ভাইয়া জানে আমাদের কথা?’
~ ‘হ্যাঁ, শান(রাফসান) শুরু থেকেই আমার পক্ষে ছিল, থাকবে। আর আমাদের কথাও তোমার পরিবারকে বলবে। এমনটা ওয়াদা করেছে সে আমাকে।’
বিস্ময় কাটাতে অনেকটা সময় লেগে গেলো দিশার। কথাগুলো কেমন দলা পাকিয়ে যাচ্ছে। তার নিজের ভাই এসব জানতো! ভাবতেই চোখ কুঁচকে বন্ধ করে লম্বা নিশ্বাস নিলো দিশা। পরক্ষণেই শান্ত দৃষ্টিতে তাকালো জেনের দিকে। একরাশ আশা নিয়ে সেও তাকিয়ে আছে দিশার দিকে। দিশা একটু কেশে বলল, ‘শুধু ভাইয়া বা আমার পরিবারই মানলে হবে না। আপনার পরিবারকেও মানতে হবে।’
জেন দ্রুত বলে উঠল, ‘আমার পরিবারের চিন্তা করো না। তারা মেনে নিবে আমাদের।’
দিশা রুক্ষ কণ্ঠে বলল, ‘কিন্তু আমার আত্মীয় আর সমাজ? আপনি হয়তো জানেন না বাংলাদেশের কালচার কেমন। আপনার সাথে বিয়ে হলে প্রতিবেশিরা নানান কথা রটাবে, আমার পরিবারের ওপর আঙ্গুল তুলবে যা আমি চাই না।’
জেন খানিকটা রেগে গেল। চওড়া কণ্ঠে বলল, ‘এত নেগেটিভ চিন্তা করছো কেন তুমি? পসেটিভ থাকো। এমনটা তো নাও হতে পারে তাই না?’
দিশা চুপ হয়ে গেলো। জেন তো ঠিকই বলছে। এমনটা তো নাও হতে পারে। কিন্তু ভয় লাগছে দিশার। বিধর্মী একজন পুরুষের সাথে জীবনের বাকি পথ আগানোটা কি উচিত? চোখ তুলে জেনের দিলে তাকালো সে। জেনের নীলচে চোখে অবিরাম ভালোবাসা দেখতে পেলো সে। খানিকটা নরম হয়ে এলো দিশা। বলল, ‘আমার সময় দরকার।’
জেন দ্রুত কণ্ঠে বলল, ‘স..সমস্যা নেই। তুমি যত ইচ্ছে তত সময় নিতে পারো।’
দিশা মৃদু হাসার চেষ্টা করল। ঢোক গিলে বলল, ‘তবে আমার একটা শর্ত আছে।’
— ‘কি?’
দিশা হাত কঁচলাচ্ছে বারংবার।ভয় লাগছে। নিজেকে স্বাভাবিক করার চেষ্টা করে বলল, ‘তত দিনে আপনাকে সম্পূর্ণ রুপে ইসলাম গ্রহণ করতে হবে।’
জেন সাথে সাথে জবাব দিলো না।অনেকটা সময় লাগিয়ে দিশার হাতের মাঝে নিজের হাত নিয়ে বলল, ‘আই উইল ডু মাই বেস্ট দিইইসা।”
মুখে হাসি ফুটাতে গিয়েও ব্যর্থ হলো দিশা। জেনের হাতের বাঁধন থেকে নিজের হাত ছাড়িয়ে চলে যেতে নিলে জেন আবারো ধরে ফেললো তার হাত। অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে বলল, ‘ভা..ভালুবাসি দিইইসা।’
প্রতিবারের মতো লজ্জা পেলো দিশা। তবে এবার একটু বেশিই লজ্জা লাগছে। হয়তো তার হাত জেনের হাতের মাঝে থাকায় এমন অতিরিক্ত লজ্জা লাগছে তার। দিশার এমন লজ্জা দেখে জেন মুগ্ধ হয়ে তাকিয়ে রইলো দিশার দিকে। কি সুন্দর লাগছে তার স্ট্রবেরি রাণীকে। আর এই স্ট্রবেরি রাণীটা শুধু তারই। ভাবতেই ঠোঁট কামড়ে হাসলো জেন।
______________
চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
(রি-চেক করিনি। ভুল ক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন।)