বাতাসা ❣️ পর্ব -০৯

বাতাসা❤

০৯.
ডাইনিং টেবিলে বসে সবাই রাতের খাবার খাচ্ছে। অথচ দিশা অস্বস্থিতে একটা দানাও মুখে দিতে পারছে না। সবার অগোচড়ে জেন নামক ব্যক্তিটি বেহায়ার মতো তাকিয়ে আছে তার দিকে। মাঝে মাঝে চোখ টিপ মারছে। অস্বস্তি আর লজ্জায় মুখ লাল হয়ে গেছে দিশার। হঠাৎ দিশার বাবা বলে উঠেন,
— “দিশা মা, খাচ্ছিস না কেন?”
— “খা.. খাচ্ছি।”

জেনের দিকে একবার তাকিয়ে চোখ ফিরিয়ে নিলো দিশা। পুরোদমে খাবার খাওয়ায় মনোযোগ দিলো সে। জেন বিভিন্ন ভাবে দিশার মনোযোগ পাওয়ার চেষ্টা করছে। একবার চামচ শব্দ করে রেখে, নয়তো ‘খু-খু’ করে কেশে উঠছে কয়েকবার। তাও দিশার তাকানোর নাম নেই। বিরক্ত হয়ে পা দিয়ে দিশার পা খোঁচাতে শুরু করে জেন। দিশা সূক্ষ্ণ দৃষ্টিতে তাকায় এবার। জেন বিশ্বজয়ের হাসি দেয়। সঙ্গে সঙ্গে একটা তীব্র ব্যথা অনুভব করে নিজের পায়ে। চিৎকার দিতে গিয়েও থেমে যায় জেন। দাঁতে দাঁত চেপে সহ্য করে ব্যথা। বুঝতে পারছে, দিশা তার পায়ে পা দিয়ে আঘাত করেছে। নাহলে জেনকে দেখে এভাবে হাসছে কেন?

খাওয়া শেষে জেন ইশারায় বলে দিশাকে ছাদে আসতে। দিশা কিছু বলে না। তবে কিছুক্ষণ পর ঠিকই চলে আসে ছাদে। তখন রেলিংয়ের ওপর বসে ছিল জেন। দিশা ধীরে ধীরে জেনের পাশে গিয়ে দাঁড়ায়। শাসনের সুরে বলে উঠে, ‘এভাবে রেলিংয়ের ওপর বসে আছেন কেন? নিচে নামুন। পড়ে গেলে?’

জেন হেসে বলল, ‘তোমাকে বউ বউ লাগছে দিইইসা। চলো বিয়ে করে ফেলি।’

একথায় লজ্জা পেলো দিশা। লজ্জায় মাথা নিচু করে ফেললো। জেন এবার ঠোঁট কামড়ে হাসলো। পরক্ষণেই কিছু একটা মনে পড়ে যায় তার। করুণ কণ্ঠে বলে, ‘আচ্ছা, আমি তো এখানে বেশিদিন থাকবো না। শান আর আমি চলে যাবো ক্যানাডা। তখন কি হবে আমাদের? ছেড়ে চলে যাবে না তো? ঠিকমতো যোগাযোগ করবে তো?”

দিশা নিষ্পলক তাকালো জেনের দিকে। সে তো ভুলেই গিয়েছিল জেন এদেশের মেহমান। কয়েকদিন পর চলে যাবে নিজ দেশে। সত্যিই, তখন কি হবে তাদের? জেনের চিন্তা ভরা চেহারা দেখে মুচকি হেসে দিশা বলল, ‘নিচে নামুন। তারপর বলছি।’

জেন মাথা নাড়িয়ে সায় দিলো। এক লাফে নিচে নেমে দিশার পাশে এসে দাঁড়ালো। দিশার দিকে ব্যগ্রভাবে তাকিয়ে রইল উত্তর শোনার জন্য। দিশা আবারো মুচকি হেসে বলল, ‘আপনি কি আমাকে ভালোবাসেন?’

একটুও সময় নষ্ট করল না জেন। সঙ্গে সঙ্গে বলল, ‘অবশ্যই।’
– ‘সত্যি করে বলুন।’
– ‘আম..মি টুমাকে ভালুবাসি দিইইসা। অ.. অনেক ভালুবাসি টমায় পিয়.. পিয়.. পিয়..! ওয়াট ওয়াস দ্যা ওয়ার্ড?’

দিশা শব্দ করে হেসে উঠল এবার। শব্দটা উচ্চারণ করতে না পেরে জেন কেমন ভ্রু কুঁচকে তাকিয়ে আছে। পূর্ণ দৃষ্টিতে তাকিয়ে দিশা বলল, ‘প্রিয়তমা।’
– ‘ইয়েস, ইয়েস! আ.. আমি টুমাকে অন.. অনেক ভালুবাসি পিয়টমা।’

আহ্লাদে জেনের নাক টেনে ধরল দিশা। আদুরে গলায় বলল, ‘আমাকে বিশ্বাস করেন?’
– ‘অবশ্যই।’
– ‘তাহলে ভয় পাচ্ছেন কেন? আমাদের ভালোবাসা যদি সত্যি হয় তাহলে আমরা কখনো একে অপরকে ছেড়ে যাবো না। নির্ভয়ে থাকুন।’

জেনের যেন কি হলো।কিছুক্ষণ দিশার দিকে চুপ করে তাকিয়ে থেকে হঠাৎ জড়িয়ে ধরল তাকে। খুব শক্ত করে ধরল। দিশা বরফ হয়ে জমে গেল যেন।

____________

চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here