বাতাসা❤
১০.
কেটে গেলো কয়েকটা দিন। দু’কাপ চায়ের সাথে বিকালের প্রথম প্রহরটা উপভোগ করছে দিশা এবং জেন। চায়ের কাপে আলতো চুমুক দিয়ে জেন বললো, ‘ভালুবাসি দিইইসা।’
হেসে ফেললো দিশা। দিনে কয়েক শতবার জেন এ কথাটি বলে দিশাকে। প্রতিবারের মতো দিশাও হাসছে। পরে খেয়াল করলো জেনের মুখ কেমন মলিন দেখাচ্ছে। কুঞ্চিত ভ্রু নিয়ে দিশা জিজ্ঞেস করলো, ‘কি হয়েছে? মন খারাপ কেন?’
জেন নাক কুঁচকে বললো, ‘তোমার নাম উচ্চারণ করতে পারি না আমি। তোমার নাম সুন্দর হলেও আমি উচ্চারণ করলে কেমন বাজে শোনায়।’
আরেক দফা হাসলো দিশা। তবে মুচকি হাসি। জেনের গাল টেনে বললো, ‘কে বলেছে? আপনি আমার নাম উচ্চারণ করলে ভীষণ সুন্দর শোনায়।’
জেন যেন বিশ্বাস করলো না। মলিন গলায় আবারো বললো, ‘আমি তোমার একটা নিক ন্যাম রাখি দিইইসা?’
– ‘ঠিক আছে।’
জেন কিছুক্ষণ ভাবলো মনে মনে। পরপরই হাসি-মুখে তাকালো দিশার দিকে। কণ্ঠে উত্তেজনা এনে বলল, ‘পেয়েছি। আমি তোমাকে ‘লাভ’ বলে ডাকবো মাই লাভ।’
দিশা এবারো মুচকি হাসলো। চায়ের কাপে চুমুক দিতে দিতে আকাশের পানে তাকালো। এদিকে জেন অপলক দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে দিশার দিকে। ধীর গলায় বলে, ‘তোমার কি নামটা পছন্দ হয় নি?’
– ‘তেমন কিছু না। হয়েছে।’
আকাশের দিকে তাকিয়ে থেকেই উত্তর দিলো দিশা। যা একটুও ভালো লাগেনি জেনের।
ভারী কণ্ঠে সে বললো, ‘তোমার নামটা পছন্দ হয় নি, বুঝেছি। আমি তোমাকে দিইইসা বলেই ডাকবো। আদর করে, মিষ্টি স্বরে। খুশি?’
দিশা তাকালো জেনের দিকে। বললো, ‘আমার ‘লাভ’ নামটা পছন্দ হয়েছে জেন।’
– ‘তুমি মিথ্যে বলছো। আমি দিইইসা বললে যেমন তুমি একফালি হেসে দাও তেমনি ‘লাভ’ বলে ডাকলে হাসো না। কেন?’
দিশা অপরাধীর নেয় বললো, ‘সত্যি বলতে আপনার মুখে দিইইসা নামটাই বেশি মানায়।’
জেন এমন ভাব করলো যেন ও মহাকিছু জেনে গেছে। উচ্ছ্বাসিত কণ্ঠে বললো, ‘দিইইসা, দেখেছো আমি তোমার মনের কথা বুঝতে পারি। এই যে, এখন কিভাবে যেন বুঝে ফেলেছি। হার্ড টু হার্ড কানেকশন, রাইট?’
বাধ্য মেয়ের মতো দিশা মাথা ঝাঁকিয়ে হ্যাঁ জানালো। উত্তর পেয়ে জেনও বিজয়ের হাসি দিলো। পরপরই বায়নার সুরে বললো, ‘দিইইসা! চলো পার্কে হাঁটতে যাবো। যাবে?’
দিশা কিছুক্ষণ ভেবে বললো, ‘ঠিকাছে। আপনি একটু ওয়েট করুন আমি রেডি হয়ে আসছি।’
কথাটা বলেই দিশা চলে যেতে নিলে তার হাত ধরে ফেলে জেন। ভ্রু কুঁচকে তাকায় দিশা। জেন মুচকি হেসে বলে, ‘আজকে শাড়ি পড়বে প্লীজ?’
– ‘কেন?’
– ‘ব্যাঙ্গলি মেয়েদের শাড়িতে ভীষণ সুন্দর লাগে শুনেছি। তোমাকে কেমন লাগবে তা দেখতে চাই আমি।’
দিশা একগাল হেসে বললো, ‘ঠিকাছে। তবে আপনাকেও পাঞ্চাবী পড়তে হবে। আমিও দেখতে চাই আমার রাজকুমারকে কেমন লাগে। রাজী?’
জেন নিচের ঠোঁট কামঁড়ে হাসলো। মৃদু লজ্জায় মাথা নিচু করে বললো, ‘অবশ্যই।’
জেনের লজ্জা দেখে হেসে দিলো দিশা।
অতঃপর পার্কের সরু রাস্তায় দেখা গেল একজন রমণী শাড়ি পড়ে অন্য একজন ভিনদেশি ছেলে, যার পরনে ছিল পাঞ্চাবী, তাকে নিয়ে হাতে হাত রেখে হেঁটে চলল পুরো পথ।
______________
চলবে…
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা