বাতাসা ❣️ পর্ব -১৯

বাতাসা (১৯)
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
_____________________
পড়ন্ত বিকাল। আকাশে কালো মেঘের ভেলা ভেসে বেড়াচ্ছে। দিশা গাড়ির কাঁচ হালকা নামিয়ে দিল। পাশে বসে থাকা জেনের দিকে আড়চোখে তাকালো একবার। গভীর মনোযোগে ড্রাইভিং করছে সে। পাশে যে দিশা বসে আছে; সে খেয়াল আছে কি? হয়তো! হয়তো না! দিশা গোপনে দীর্ঘশ্বাস ফেলল। বাহিরের দিকে তাকিয়ে কি মনে করে আবার জেনের দিকে তাকালো। গাঢ় গলায় প্রশ্ন করল, ‘তুমি কি আমাকে আর আগের মতো ভালোবাসো না জেন?’

জেন চমকালো। তবে বাহ্যিকভাবে প্রকাশ করল না। তীক্ষ্ণ দৃষ্টি ছুঁড়ে দিল দিশার মুখপানে। রোষপূর্ণ স্বরে বলল, ‘কেন মনে হলো?’
‘তুমি আগের মতো দুষ্টামি,ফাজলামি করো না কেন? কথাও কম বলো। আগের মতো চঞ্চলতাও হাড়িয়ে গেছে। কেমন গম্ভীর ভাব নিয়ে সব কাজ করো। কেন?’

জেনের দৃষ্টি আরো প্রখর হলো। রাস্তার সাইডে গাড়ি পার্ক করল সে। দিশার চোখে চোখ রেখে প্রশ্ন ছুঁড়লো, ‘এসব কি স্বাভাবিক না? তোমার কি মনে হয়, যে কষ্ট আমি পেয়েছি কিংবা এখনো পাচ্ছি, সে কষ্ট ভুলে গিয়ে তোমার সঙ্গে আবারো দুষ্টামি-ফাজলামিতে মেতে উঠব আমি? এতই সোজা?’
দিশার চোখ টলমল করে উঠলো। গলার স্বর খাদে নামিয়ে বলল, ‘আমি ভুল করেছি। মানছি! কিন্তু প্রত্যেকটা ভুলের জন্য সরিও তো বলেছি জেন।’
‘সরি? সরি দিয়ে কি হবে? যা হওয়ার তো হয়েই গেছে। তুমি কি তোমার এই সো ক্লড সরি দিয়ে আমার অতীতের কষ্টগুলো মুছে দিতে পারবে? আমার রাতের ঘুম আমাকে ফিরিয়ে দিতে পারবে? বলো?’

দিশা কান্না থামাতে পারলো না আর। কান্না ভেঁজা কণ্ঠে মৃদু চেঁচিয়ে উঠল, ‘আমি জানি না! আমি কিচ্ছু জানি না! আমি শুধু আমার আগের জেনকে চাই। আমার আগের জেনকে ফিরিয়ে দাও প্লিজ! আমার আর এসব ভালো লাগছে না।’

কাঁদতে কাঁদতে হেঁচকি উঠে গেল দিশার। জেন নিষ্পলক দিশাকে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখল শুধু। শ্যাম বর্ণের দিশার নাকটা কেমন লালচে হয়ে গেছে। চোখ আস্তে আস্তে ফুলে যাচ্ছে। সুন্দর লাগছে দেখতে। জেনের ইচ্ছে করছে দিশার গালটা একটু ছুঁয়ে দিতে। কিন্তু সে সেটা করল না। কিছু ইচ্ছে পরিস্থিতি উপর ভিত্তি করে পূরণ না করাটাই উত্তম!

গাড়ির সামনে থেকে টিস্যু নিল জেন। দিশার দিকে এগিয়ে দিল। দিশার যেন অভিমান হলো এতে। সে কাঁদছে; অথচ জেন তাকে একটুও সান্ত্বনা দিল না? চোখের পানিটুকুও মুছার প্রয়োজন বোধ করল না? তার বদলে কেমন নিষ্ঠুরদের মতো টিস্যু এগিয়ে দিল। জেনের দিকে ক্ষীপ্ত দৃষ্টিতে তাকাল দিশা। প্রায় পাঁচ-ছয় সেকেন্ড। এতেও জেনের ভাবান্তর ঘটলো না। সে টিস্যু ধরেই আছে। দিশা এবার রেগে গেল। জেনের হাত থেকে ছো মেরে টিস্যু দিয়ে চোখ মুছতে মুছতে একরাশ অভিমান সহিত বাহিরের দিকে তাকালো। কথা না বাড়িয়ে জেনও গাড়ি স্টার্ট দিল।

—————————————

ভার্সিটির ক্লাস করার পর সব বন্ধুদের নিয়ে ক্যান্টিনের উদ্দেশ্যে বেরুলো দিশা। কিছু স্ন্যাকস কিনে, মাঠের এককোণে গিয়ে বসল।
দিশার বন্ধুমহলে রিক হচ্ছে সবচেয়ে শান্ত-শিষ্ট। সারাক্ষণ বইয়ের মাঝে ডুবে থাকা আর বন্ধুদের সাথে টুকটাক আড্ডাই তার প্রধাণ কাজ। অন্যদিকে, লিও হচ্ছে তার বিপরীত। প্রচুর চঞ্চল আর পড়াশোনা তার জীবনের শত্রু! লিয়া আর দিশা হচ্ছে মাঝামাঝি। তারা চঞ্চলও, আবার শান্তও।

প্রতিদিনকার মতো রিক মাঠে বসে বইয়ের পাতায় মুখ গুঁজে ছিল। দিশা,লিও আর লিয়া, তারা তিনজনে গল্পে মশগুল। কথায় কথায় হঠাৎ লিও ডাকলো, ‘দিশা?’
দিশা বেখেয়ালি ভাবে জবাব দিল, ‘হু?’
‘কালকের ছেলেটা কে ছিল?’

দিশা অবাক হয়ে তাকাল এবার। ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করল, ‘কার কথা বলছো?’
‘ওইযে? কাল তোমার হাত ধরে একটা ছেলে জোর করে নিয়ে গেল? রুড বিহেভ করছিল?’ বোঝানোর ভঙ্গীতে বলল লিও।
দিশা একটু অপ্রস্তুত বোধ করল। লিও যে জেনের কথা বলছে; তা বুঝতে বাকি রইল না। ম্লান হেসে দিশা বলল, ‘সে আমাকে জোর করে নিয়ে যায় নি লিও। আমার ইচ্ছেতেই নিয়ে গেছে।’
‘কিন্তু ছেলেটা কে?’

দিশা কিছু বলতে যাবে, তার আগেই পেছন থেকে কেউ গম্ভীর গলায় বলে উঠল, ‘I’m her boyfriend!’

________________________
ঈশানুর তাসমিয়া মীরা
~ ছোট হওয়ার জন্য দুঃখীত। কপি করা নিষেধ। চাইলে সেয়ার করতে পারেন।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here