বাতাসা ❣️ পর্ব -১৮

বাতাসা (১৮)
ঈশানূর তাসমিয়া মীরা
_____________________

ভোর সকাল। বিছানায় এখনো পরে পরে ঘুমাচ্ছে দিশা। কাল অনেক দেড়ি করে ঘুমিয়ে ছিল সে। যার দরুণ কিছুতেই ঘুম ছুটছে না আঁখিজোড়া থেকে। দিশার রুমমেট সিয়ারা বেশ কয়েকবার ডেকে গেছে দিশাকে। দিশা হা,হু জবাব দিয়েছে মাত্র। কিছুক্ষণ পর সিয়ারা আবারো আসলো। দিশার নাম ধরে কয়েকবার ডাকতেই দিশা অস্পষ্ট স্বরে বললো, ‘হু?’

সিরায়া এবার একটু জোড় গলায় বললো, ‘দিইছা? উঠো জলদি। আর কতক্ষণ ঘুমাবে?’
দিশা এক পাশ থেকে অন্য পাশে ফিরে আরাম করে শুলো। আগের ন্যায়ই বললো, ‘আর পাঁচ মিনিট। উঠছি!’
‘দিইছা, তোমার সাথে জেন দেখা করতে এসেছে। হোস্টেলের নিচে গাড়ি নিয়ে দাঁড়িয়ে আছে সে।’

ঘুমের মাঝেই ভ্রু কুঁচকে ফেলল দিশা। চোখ বন্ধ অবস্থায়ই সন্দিহান কণ্ঠে জিজ্ঞেস করল, ‘তোমাকে কে বললো?’
‘মিস এনা। জেন নাকি অনেক্ষণ ধরে অপেক্ষা করছে তোমার জন্য। দ্রুত যাও।’
দিশা কিছুক্ষণ থম মেরে শুয়ে রইল। পরক্ষণেই ‘জেন এসেছে’ কথাটা মস্তিষ্কে সক্রিয় ভাবে প্রবেশ করতেই তড়িৎ গতিতে উঠে বসল। বললো, ‘জেন সত্যি এসেছে?’
‘তাহলে এতক্ষণ তোমাকে কি বললাম? ফোনেও হয়তো কল করেছিল। আমি তোমার ফোন বাজার শব্দ পেয়েছিলাম।’

সিয়ারা থেকে নজর সরিয়ে দ্রুত ছোট টেবিলটা থেকে ফোনটা হাতে নিলো দিশা। হ্যাঁ! সত্যিই কল করেছিল জেন। একবার নয় পাঁচ-ছয় বার! দিশার এখনো বিশ্বাস হচ্ছে না। জেন সত্যিই তার সঙ্গে দেখা করতে হোস্টেলে এসেছে? দিশার মনে হচ্ছে সে স্বপ্ন দেখছে। কাঁপা কাঁপা হাতে জেনের নম্বরে ডায়াল করলো দিশা। দু’বার রিং হতেই ওপাশ থেকে কল রিভিস হলো। তবে কিছু বলল না। দিশাও জেনের কণ্ঠ শোনার অপেক্ষায় চুপ করে আছে। দু’জনের নিশ্বাসের শব্দ তীব্র ভাবে শুনছে দু’জন। বুক ধুকধুক করছে। দিশা হালকা ঢোক গিলে ক্ষীণ স্বরে ডাকলো, ‘জেন?’
সঙ্গে সঙ্গে জেনের গম্ভীর কণ্ঠ, ‘অপেক্ষা করছি। আসো।’

পরপরই ফোনের ওপাশ থেকে ‘টুটটুট’ শব্দ শোনা গেল। কল কেটে দিয়েছে জেন। দিশা তপ্ত নিশ্বাস ফেলল। বিছানা থেকে ওড়না নিয়ে গায়ে জড়িয়ে নিলো। তারপর বেড়িয়ে পরল সেখান থেকে।

————————————–

জেন আর দিশা পাশাপাশি বেঞ্চে বসে আছে। সামনেই প্রশস্ত লেক। রোদের আলোয় স্বচ্ছ পানিগুলো চকচক করছে। অনেকটা দিনের আকাশে তারা জ্বলজ্বল করার মতো। জেন একদৃষ্টি সেদিকে তাকিয়ে। দিশা মাথা নিচু করে আছে। প্রায় অনেক্ষণ নীরবতা পালন করার পর কণ্ঠে রুক্ষতার স্পর্শ এঁটে জেন বললো, ‘কালকে মমের সঙ্গে তোমার ব্যাপারে কথা বলেছি আমি।’
দিশা তার মাথা আরো নুইয়ে নিলো। মৃদু স্বরে প্রশ্ন করলো, ‘তো.. উনি কি বললেন?’
‘কিছু না।’ একটু থেমে জেন আবার বলে, ‘আমি মমকে সরাসরি বলে দিয়েছি আমি তোমাকে বিয়ে করতে চাই।’

শুনে দিশা ভীষণ চমকালো। চোখ বড় বড় করে তাকালো। খানিকটা চেঁচিয়ে বললো, ‘কি? ত-তুমি এভাবে.. কিভাবে.. মানে! উনি তো পছন্দ করেন না আমাকে। তাহলে?’
বিরক্তিতে কপালে সূক্ষ্ণ ভাঁজ পরলো জেনের। নির্লিপ্ত ভাবে বললো, ‘সো ওয়াট? আমার মম বিয়ে করছে না। আমি করছি! তাই তার পছন্দ-অপছন্দে কিছু যায় আসে না।’
‘উনি তোমার মা হয় জেন। উনার পছন্দ-অপছন্দকেও তোমার গুরুত্ব দেওয়া উচিত।’

জেন এবার রেগে গেল। চেঁচিয়ে বললো, ‘মম তোমাকে পছন্দ করে না। এখন কি তোমাকে ছেড়ে চলে যাওয়ার কথা বলছো? হাঁ?’
দিশা খানিকটা কেঁপে উঠলো। দ্রুত মাথা ডানে-বামে নাড়িয়ে সামান্য তোতলিয়ে বললো, ‘ন-না, না! আ-মি সেটা বলি নি।’
‘তোমার কথা দ্বারা তো তাই বুঝিয়েছো।’
দিশা কয়েক সেকেন্ড চুপ রইলো। জিভ দিয়ে ঠোঁট ভিঁজিয়ে বললো, ‘আমি তোমার আর আন্টির মাঝে কোনোরুপ দ্বন্দ্ব সৃষ্টি করতে চাই না জেন। আমি শুধু বলতে চাইছি, তুমি আন্টিকে মানানোর চেষ্টা করো। আমার বিশ্বাস উনি আমাদের মেনে নেবেন।’

জেন কঠিন গলায় জবাব দিলো, ‘আমি আমার মমকে খুব ভালো ভাবে চিনি। মম এত সহজে আমাদের মেনে নেবে না। কিংবা কখনো মেনেই নেবে না। সুতরাং আমি দেড়ি করতে চাইছি না।’
‘কিন্তু জেন…’
‘চুপ থাকো দিইইশা। আমার রাগ বাড়ছে!’

বাধ্য মেয়ের মতো দিশা চুপ হয়ে গেল। জেন রাগে ফুঁসছে। ফোঁসফোঁস শব্দ পাচ্ছে দিশা। হঠাৎ দিশার দিকে ফিরে দিশাকে জড়িয়ে ধরতে চাইলো জেন। সঙ্গে সঙ্গে আঁতকে উঠে সরে বসল দিশা। জেন তীক্ষ্ণ চোখে তাকাতেই মিনমিনিয়ে বললো, ‘এখানে অনেক মানুষ জেন।’
জেন শুনলো না। দিশার বাহু টেনে নিজের কাছে নিয়ে এলো। শক্ত করে জড়িয়ে ধরে বললো, ‘এটা বাংলাদেশ না দিশা। ফরেনে এটা স্বাভাবিক ব্যাপার। টেক ইট ইজি!’
বলেই দিশার কানে গভীর ভাবে উষ্ণ স্পর্শ ছোঁয়ালো জেন।

________________________

চলবে…
~কপি করা নিষিদ্ধ।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here