প্রিয় প্রহর ২ পর্ব -১০

#প্রিয়_প্রহর২
লেখনীতে: #নুরুন্নাহার_তিথি
#পর্ব-১০
এরপর আরোহী সেই কথা মোতাবেক সারা ও আরিশদের বাড়িতে যায়। সত্য বলতে আরোহীর ওই সময় প্রচন্ড ভয়, উৎকণ্ঠাতে প্রেশার ফল করছিলো। কি করবে তার মাথা কাজ করছিলো না। শিলা যেভাবে বলছিল তাই তখন করছিলো।
শিলাই আরোহীকে বলছিলো তার বাবার বাসায় চলে যেতে কারন হোটেল থেকে বেরোনোর পর দেওয়া মেসেজটাতে এটা বুঝা যায় যে আরোহীর উপর নজর রাখা হবে। আর এখনো শিলা ও আরোহী জানে না যে ছেলে গুলা কারা!

দিন যাচ্ছে কিন্তু ওই হোটেল থেকে ভিডিও বের করতে পারছে না। এদিকে শিলা জেসিকাদের আরেকবার সাক্ষাতের সময় সেটা রেকর্ড করতে পেরেছে তবে সেটাতে অতো কিছু বুঝা যায় না। ওরা কেউ শুভ্র বা আরোহী কারো নাম মেনশন করছেই না।

এভাবেই আরোহীর উপর থ্রেট আসতে লাগে আর আরোহীর জার্মানিতে যাওয়ার সময় গড়িয়ে আসে। চলে যায় আরোহী। হয়ে যায় নিরুদ্দেশ। জেসিকারা বুঝতেই পারে না যে আরোহী কোথায় গেছে।
যেদিন আরোহী চলে যায় তার পরেরদিন জেসিকারা যখর দেখা করে পরিকল্পনার বাস্তবায়নে উল্লাস করে তখন শিলা মুক্ষম সুযোগ পায়। সব রেকর্ড করে ভিডিও সহ। এরপর সেই ভিডিও ওই হোটেল ম্যানেজারকে দেখায়। ম্যানেজার প্রথমে ভয় পায়। ম্যানেজার সাদাদদের জানিয়ে দিতে চায় তবে শিলা ও তার স্বামী উল্টে তাদের রেপুটেশন নষ্ট করার হুমকি দেয়। কারন রেকর্ডিংয়ে সাদাদের বন্ধু পলক ভুল ক্রমে হোটেলের নাম বলে ফেলেছিলো।

কয়েকদিন পর ভিডিও কালেক্ট করে আর আরোহীকে পাঠায়। আরোহী সময়ের অপেক্ষা করতে থাকে সব সামনে আনার।
আর ফাইনালি সব সামনে আনে প্রমান সহ।
___________★★★

ভাবতে ভাবতে হুট করে আরোহীর আইসক্রিম খাবার ইচ্ছা জাগে। এই মাত্রই কফি খেলো আর এখন আইসক্রিম! প্রেগনেন্সিতে যে আরোহীর মুড কতো সুয়িং করছে তা বলার অপেক্ষা রাখে না। শুভ্র সাথে থাকলে হয়তো আরোহীকে এগুলো নিজে থেকে করতে হতো না। শুভ্রই করতো।
আরোহী শুভ্রর জলদি জার্মানিতে আসার ব্যাবস্থা করে ফেলেছে।

কেটে যায় আরো তিন সপ্তাহ,,
ধ্রুব তার দ্বিতীয় কেমো আজকে দিবে। প্রথম কেমো দেওয়ার পর কোনো খারাপ লাগা বুঝেনি। শরীর ঠিক ছিলো তাই। দ্বিতীয় কেমো দেওয়ার পর থেকে বমি বমি লাগছে তবে বমি আসছে না। একা এক অচেনা শহরে যেনো সে নিজেকে নিঃসঙ্গ ভাবছে। সবার থেকে দূরে পৃথিবীর অন্য প্রান্তে যেখানে রাত-দিনের পার্থক্য সেখানে একাকি এক দুরারোগ্য ব্যাধির সাথে প্রতিনিয়ত একা লড়াই করছে।

আস্তে আস্তে কেমোর ডোজ বাড়বে আর অনেক কিছু পরিবর্তন হবে। চুল পড়া সহ নখ বিবর্ণ অনেক কিছু হবে। শরীর সায় দিবে না তখন।

একলা নিকষ কালো অম্বরের দিকে নির্নিমেষ তাকিয়ে ধ্রুব তার ধ্রুবতারাকে কল্পনায় ব্যাস্ত। তার অবাধ্য মনে লুকুচুরি খেলছে, কেমন আছে তার ধ্রুবতারা? তাকে ছাড়া কি ভালো আছে? গুছিয়ে নিয়েছে কি নিজেকে? কি করছে ও? কিভাবে একটা মাস আমাকে না দেখে থাকছে? কিভাবে একটুও কথা না বলে থাকছে?

এসব প্রশ্নরা মনেন কোনে উঁকিঝুঁকি মারছে বারংবার। পরক্ষনেই তার মন তাচ্ছিল্য হাসে। সে যাকে প্রবল যন্ত্রনায় ফেলে এসেছে আর আজকে তার চিন্তায় অস্থির হচ্ছে! কিইবা করবে সে! ভালোবাসে যে অনেক। হুট করে অসময়ে মধ্যরাতে বৃষ্টি শুরু হলো। ধ্রুবর অশান্ত মন শান্ত হয়। মোবাইল থেকে একটা গান চালু করে কফি মেকার থেকে কফি বানিয়ে বৃষ্টি উপভোগ করছে।

” তেরে বারিশে, ভিগায়ে মুঝে।
তেরে হাওয়ায়ে, বাহায়ে মুঝে।
পাও তালে মেরে, জমিন চল পারি,
এ্যাসা তো কাভি হুয়া হি নেহি!
এ মেরি দিল মোবারক হো, এহি তো পেয়ার হে! (২)”

(বাকিটা নিজ দায়িত্বে শুনে নিবেন)

________
জার্মানিতে সময় সকাল ৬টা। ভোর সকাল। শীত শীত ভাব। সময়টা তো নভেম্বরের মাঝামাঝিতে। ডিসেম্বর থেকে তুষার পরবে। এখন হালকা শীত। বাংলাদেশ থেকে জার্মানিতে সময়ের ব্যাবধান ৫ ঘন্টা। বাংলাদেশ সময় রাত ১২ টায় ফ্লাইটে উঠে ১০ ঘন্টার কিছু বেশি সময় প্লেইন জার্নি করে এখন ল্যান্ড করেছে। মৃদু রোদ গায়ে লাগছে। সব মিলিয়ে সময়টা উপভোগ্য।
ভিসা জটিলতার কারনে তিন সপ্তাহ লেগে গেছে।

আরোহী আজকে স্কার্ফ দিয়ে মাথা পেঁচিয়ে, মুখে মাস্ক লাগিয়, চোখে সানগ্লাস পরে হসপিটালে যাবে। আর এক সপ্তাহ পর ছয় মাস হবে প্রেগনেন্সির। শুভ্র আপাততো হোটেলে উঠবে।
আরোহী তার ফিলিপ আংকেলকে বলে রেখেছে যাতে শুভ্রকে তার পাশের বাড়িতে রেন্টে পেইড গেস্ট রাখার জন্য রিকুয়েস্ট করে। ডাক্তার ফিলিপের পাশের বাড়িতে এক বুড়ো দম্পতি তার দুই নাতি-নাতনী নিয়ে থাকে। নাতির বয়স ১০ বছর আর নাতনীর ৭ বছর। ওদের বাবা-মায়ের ডিভোর্স হয়ে গেছে। তারা দুজনেই অন্য দুই শহরে নতুন সঙ্গী নিয়ে থাকে। মাসে একবার করে দেখে যায় আর দুজনেই বাচ্চাদের খরচ বহন করে। বাচ্চাদের বাবা তার বাবা-মায়ের খরচও দেয়।

প্রথমদিন শুভ্র হসপিটলে গিয়ে ফর্মালিটি পূরণ করে হোটেলে ফিরে যায়। আরোহী দূর থেকে দেখেছে শুভ্রকে। আরোহীর কাছে লুকিয়ে লুকিয়ে নিজের স্বামীকে দেখাটা অনেকটা উপভোগ্য মনে হচ্ছে। মনে হচ্ছে সে টিনএজে ফিরে গেছে। প্রথম শুভ্রর প্রতি যখন কিছু অনুভব করতো ঠিক তেমনি। আরোহীর একবার ইচ্ছা করে শুভ্রর কাছে দৌড়ে চলে যেতে তো আরেকবার ভাব। কিছুটা সিনেমাটিক ভাবে যাবে। তার মনে যে এখন কতো ইচ্ছা ঘুরপাক খাচ্ছে তা সে নিজেও ঠাওর করতে পারে না।

________
আয়ানা ধ্রুবের বাবা-মায়ের সাথে দেখা করেছিল সেদিনের পরেরদিন। আয়ানার কান্না ও সব কিছু জেনে যাওয়াতে তারাও স্বিকার করে সব। আয়ানা তাদের মানা করে দেয় যাতে ধ্রুবকে না জানায়। ওকে ছোড়ে দূরে গেছে না! তো আরো কিছুদিন কষ্ট করুক। কোনো রকম যোগাযোগ করবে না আয়ানা আমেরিকায় যাওয়ার আগ পর্যন্ত। একেবারে আমেরিকায় যেয়ে চমকে দিবে।

আয়ানারা এদিকে আরোহীকে নিয়ে চিন্তায় আছে। শুভ্রর জার্মানিতে যাওয়ার খবরে সবাই স্বস্তি পায়। যদি আরোহীর খোঁজ পাওযা যায় তো!

ইদানিং সাদিয়া নীড়কে বিন্দু পরিমানও ভয় পাচ্ছে না। ইচ্ছামত বাহিরের খাবার যেমন, ফাস্টফুড এগুলো খায়। নীড়কে ফোন করে বলে আইসক্রিম আনতে। নীড় কতো করে বুঝায় শীতকাল চলে এসেছে তো এখন আইসক্রিম খেলে ঠান্ডা লাগবে। কিন্তু সাদিয়া নীড়কে ধমকে এগুলাই আনায়। এক বক্স আইসক্রিম এক ঘন্টায় সাবাড় করে ফেলে।

আর সাবিলা হয়েছে চকলেট পাগলি। সাবিলার জন্য মেঘকে প্রায় এক বক্স করে চকলেট আনতে হয়। আর কথায় কথায় কান্না করে।

এদের দুই জনের যন্ত্রনায় দুই ভাই পাগল অবস্থা। দুইজনের বউ কি সুন্দর ওদেরকে ভয় পেতো। কথা শুনতো। কিন্তু এখন দুজনেই ব্ল্যাকমেইল করা শিখে গেছে। সাবিলা মেঘকে সব সময় সম্মান করতো কিন্তু সাদিয়া মেঘকে ক্ষেপানোর জন্য যা লাগে তাই করতো তবে নীড়কে সাদিয়া ভয় পেতো।
সাদিয়া ও সাবিলা কেউই এখন ভাত, মাছ খেতে চায় না। মিসেস নূর অনেক কষ্ট করে একটু খাওয়াতে পারে। বিকেল বেলা দুই ছেলে চকলেট ও আইসক্রিম নিয়ে ফিরলে মিসেস নূর দুই ছেলের হাতে দুই বাটি ফ্রুট, ডিম, দুধ ধরিয়ে দেয় যাতে চকলেট ও আইসক্রিম দিবেনা এগুলো বলে জোর করে খাওয়াতে পারে এগুলো।

মিসেস নূর সাদিয়া, সাবিলাকে মানা করে ঘরের কাজ করতে তবে তারা শুনেনা। টুকটাক কাজ করে। রান্নাটাও দুই বউ ও শাশুড়ি মিলে হেসে খেলে করে ফেলে। আর কয়েকদিন পর তিন মাস শেষ হবে ওদের। এরপর কিছুদিন পর আমেরিকায় যাবে স্বপরিবারে। আমেরিকায় বছর দুয়েক থাকবে। নীড় ও মেঘ দুজনেই অনেক আগে পিএইচডির এপ্লাই করেছিল তবে কিছুদিন আগে আবারো মেইল করেছে।

নীড় ও মেঘের জন্ম তো আমেরিকায় তাই সমস্যা হবেনা। ওরা চাইছে ধ্রুবের বাবা-মাকে নিয়ে যাবে তবে ধ্রুবের বাবা-মায়ের পাসপোর্ট নেই। পাসপোর্ট হয়ে গেলে কয়ো মাসের ভিতর নেওয়ার চেষ্টা করবে তবে পারমানেন্ট থাকতে পারবে না ধ্রুবের বাবা-মা। টুরিস্ট ভিসাতে যেতে পারবে। মিসেস নূর ও মিস্টার মুনতাসির তার চার ছেলে মেয়েকে নিয়ে আমেরিকায় ১২ বছর আগেও গিয়েছিল তার দুই ছেলের নাগরিকত্ব রিনিও করতে।

আর আরোহী ও আয়ানাকে ৭ বছর আগে জার্মানিতে নিয়ে নাগরিকত্ব রিনিও করে এনেছে তখনো স্ব পরিবারে গিয়েছিল। আরোহীদের দাদা-দাদী জীবিত থাকা অবস্থায় আর ভিনদেশ থেকে ফেরার পর যাওয়া হয়ে উঠেনি। ছেলে-মেয়েদের আঠারো বছর হবার পর যাওয়া হয়েছে।
———
আজ শুভ্র ডাক্তার ফিলিপের ঠিক করা বাড়িতে পেইড গেস্ট হিসেবে এসেছে। আরোহী নিজের রুমের ব্যালকনির থেকে সব দেখছে লুকিয়ে। ওই বাড়ির দুই পিচ্চি শুভ্রকে তাদের গার্ডেন দেখাচ্ছে।

চলবে ইনশাআল্লাহ,

ভুল ত্রুটি ক্ষমার দৃষ্টিতে দেখবেন। কার্টেসি ছাড়া দয়া করে কপি করবেন না। রিচেক করা হয়নি।

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here