#হয়ত
পর্ব:- ১৮
.
কারও ফোনের রিংটোন বাজছে। তবে সুরটা অপরিচিত। তাপৌষি মিটমিট করে চাইলো। চোখে তীব্র আলো এসে পড়ছে। সকাল হয়ে গেছে? চোখ কচলে মাথা উঠানোর চেষ্টা করলো। মাথা ভার হয়ে আছে ওর। তাপৌষিকে উঠতে দেখে দিশা ওকে ধরে আবার শুইয়ে দিলো।
-‘ জ্বর আসলো কীভাবে তাপৌষি? গতকালকে রাতে তোমার ঘরে এসে দেখি অজ্ঞান হয়ে পড়েছিলা। কী ভয়টাই পেয়েছিলাম জানো?’
তাপৌষি নিজেই নিজেকে মনে মনে প্রশ্ন করলো, জ্বর আসছে নাকি? হঠাৎ মনে পড়লো বৃষ্টিতে ভেজার কথা, বর্ষণের বকা, গতকাল দুপুরে খাবার টেবিলের আলোচনা।
তাপৌষির মৌনতা দেখে দিশা আবার প্রশ্ন করলো,
-‘ এখন কেমন লাগছে তোমার? উঠতে ইচ্ছা করছে? গায়ে জ্বর নেই। ফ্রেশ হবে?’
তাপৌষি উপর নিচে মাথা নাড়াল।
-‘ আচ্ছা চলো।’
.
ঘরে ফিরে তনয়া বেগম ও রৌদের দেখা পেলো তাপৌষি। তনয়া বেগম দিশাকে জিজ্ঞেস করলেন,
-‘ এখন জ্বর কমেছে?’
-‘ হ্যাঁ মা। তবে শরীর দুর্বল। রাতে কিছু খায়নি যে। খাবার এনেছ?’
-‘ টেবিলে রাখা। তাপৌষি তোমার মাথা ঘুরাচ্ছে?’
-‘ একটু একটু।’
-‘ দিশা ওকে বিছানায় শোয়া।’
দিশা তাপৌষিকে বিছানায় হেলান দিয়ে বসতে সাহায্য করলো। হাত ধুয়ে আসলো। ভাতের প্লেট হাতে নিয়ে লোকমা তাপৌষির মুখের দিকে ধরতেই তাপৌষি বললো,
-‘ থাক আপু আমি নিজে খেতে পারবো। আমাকে দাও।’
-‘ কী দাও? দুই আনা মেয়ে তার আবার বড় বড় চিন্তা।’
কথাগুলো বলতে বলতে তনয়া বেগম বারান্দায় যেয়ে গ্লাসের পানি দিয়ে হাত ধুয়ে প্লেট হাতে নিলেন। ভাত মাখিয়ে তাপৌষির মুখে লোকমা তুলে দিলেন। তাপৌষি আর না করতে পারলো না।
রৌদ অনেকক্ষণ ধরেই তাপৌষিকে পর্যবেক্ষণ করছে। এইটুকু একটা বাচ্চা মেয়ে অথচ ওর জীবনটা কত জটিল! সৃষ্টকর্তা এখন হয়তো মেয়েটার পরীক্ষা নিচ্ছে। একদিনের জ্বরে মুখ শুকিয়ে গেছে একদম।
.
ঘড়িতে সময় এখন বিকেল পাঁচটা। তাপৌষি ঘুমিয়েই ছিল। ঘুম ভাঙতেই ধীর পায়ে বারান্দায় এসে দাঁড়াল। আজকের আবহাওয়াটা চমৎকার বলা চলে।
Every night in my dreams
I see you, I feel you
That is how I know you go on
Far across the distance
And spaces between us
You have come to show you go on
Near, far, wherever you are
I believe that the heart does go on
.
দিশা তাপৌষির ঘরে এসেছে ওকে দেখতে। এর আগেও একবার এসেছিল ও। আরেকবার যখন এসেছিল মেয়েটা ঘুমিয়ে ছিল তখন। ঘরে ঢুকেই বারান্দা থেকে তাপৌষির গানের আওয়াজ পেলো। সামনে যেয়ে দাঁড়াতেই তাপৌষি গান বন্ধ করে দিল।
-‘ এমা গান বন্ধ করলে কেন? বেশ লাগছিল শুনতে।’
-‘ এমনি আপু। কিছু দরকার ছিল?’
-‘ না আপাতত দরকার নেই।’
তারপর কিছুক্ষণ তাপৌষির সাথে বাইরের দৃশ্য দেখলো দিশা। সন্ধ্যা হতে কিছু দেরী। পাখ-পাখালি সব নিজ নিজ বাসস্থানে ফিরে যাচ্ছে। অপরূপ বিকেল!
-‘ টাইটানিকের থিম সং। খুব প্রিয় গানটা। টাইটানিক দেখেছ তাপৌষি?’
-‘ জি আপু দেখেছি তো।’
-‘ কী করুণ ইতিহাস জাহাজটার! এক অনলাইন নিউজ পোর্টালে পড়েছিলাম জানো তো, ১৯১২ সালের ১০ এপ্রিল সাউদাম্পটন থেকে নিউইয়র্কের পথে যাত্রা করেছিল টাইটানিক। পানি রোধক ১৬ টা কামরা ছিল এতে। এই জাহাজকে অডুবনীয় জাহাজ বলা হতো। অথচ সংঘর্ষের সময় জাহাজের ১৬ কামরার মধ্যে ৫ টি কামরাই জলে মগ্ন ছিল। জাহাজটা যখন ডুবে যাচ্ছিল সেই সময় জাহাজে ১৩১৬ জন যাত্রী আর ৮৯১ জন নাবিক ছিল। সে সময় নির্মিত জাহাজগুলোর মাঝে এটিই ছিল সবচেয়ে বড় জাহাজ। কত মানুষ মারা গেছিল ভাবতে পারো? শত শত মানুষের বাঁচার আহাজারি, মৃত্যু মিছিল, হাহাকার নিমিষে অতল সমুদ্র গর্ভে স্থান পায়। খুব কম মানুষ বেঁচে ছিল। ‘
-‘ সিনেমাটাও খুব কষ্টের ছিল আপু। করুণ কাহিনী তুলে ধরা হয়েছিল।’
-‘ হুম। আচ্ছা ওসব বাদ দাও। তুমি কিন্তু দারুণ অপেরা সিঙ্গার। অসম্ভব ভালো গলা তোমার। গান নিয়ে কিছু ভেবেছ? ভবিষ্যতে গান নিয়ে আগানোর চিন্তা আছে?’
-‘ না আপু। মায়ের শখ ছিল আমি অনেক পড়বো। তাই গান হলো আমার জন্য এক্সট্রা কারিকুলাম একটিভিটিস।’
-‘ বাহ! তবে মাঝে মাঝে আমাদের গান শুনিয়ো কিন্তু।’
-‘ আচ্ছা আপু।’
দিশা হেসে তাপৌষির গাল টিপে দিল। মেয়েটাকে ওর খুব মিষ্টি লাগে। একদম রসগোল্লার মতো।
.
বর্ষণ এখন দাঁড়িয়ে আছে পুরানা পল্টনের পুলপাড়ে। এক বন্ধুর সাথে দেখা হওয়ার কথা এখানে। তবে বন্ধু আসতে দেরি করছে। পকেটের ফোনটা বের করে সময় দেখে নিল। তারপর বন্ধুর নম্বরে ডায়েল করলো।
-‘ কী রে আসবি না?’
-‘ আসলে আমি একটা কাজে আটকিয়ে গেছি রে। সরি রে।’
-‘ রাখ তোর সরি। শালা খবিস। ফোন দিবি না আর।’
ফোন পকেটে রেখে হাতের আঙুল দিয়ে মাথার চুল আছড়াল বর্ষণ। রাগ উঠছে ওর। আজ কাজটা ওর বলে বন্ধু নামক ভিজে বেড়ালটা আসে নি। নিজের কাজ হলে ঠিকই ফোন দিয়ে পাগল করে দিত। সামনের এক ফাস্টফুডের দোকান দেখতে পেয়ে দরজা টেনে ঢুকলো সেখানে। লাচ্ছি বা আইসক্রিম খেতে হবে এখন। তাহলে মাথা ঠাণ্ডা হবে। ঢাকায় তো এখনো ঠাণ্ডা পড়েনি। গরমকালই যায় নি মনে হয় এখনো।
.
.
চলবে…