#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৫
“আচমকা দরজায় নক পড়তেই হুস আসলো রিয়াদ তানজুর দুজনের!’ তাড়াতাড়ি একে অপরকে ছেড়ে দিলো তাঁরা!’তানজু ঘাবড়ানো ফেস নিয়ে বললোঃ
—“স্যার ভয় পাবেন না আমি আছি তো…
“উওরে রিয়াদ কিছু বললো না!’নিশ্চুপে দাঁড়িয়ে রইলো সে!’এরই মাঝে আবারো দরজায় নক করলো হিয়ামিনি!’তানজু নিজেকে স্বাভাবিক করে দরজা খুলে দিয়ে বললোঃ
—“হুম বল…
—“লোডশেডিং হয়ে গেছে তাই খালামনি বললো রিয়াদ ভাইয়ার রুমে এই মোমবাতি দিতে…
—“ওহ কিন্তু লাগবে না আর, আমি মোমবাতি দিয়ে দিয়েছি….
—“ওহ ঠিক আছে!’
“এতটুকু বলে হিয়ামিনি চলে যায়!’
“হিয়ামিনি যেতেই সস্থির নিশ্বাস ফেললো তানজু!’তানজু তাড়াতাড়ি রিয়াদের সামনে গিয়ে বললোঃ
—“আপনার কোনো ভয় নেই স্যার আমি আছি…
“এদিকে রিয়াদ ভাবছে অন্যকিছু..
“হুট করে কি হলো তার সে তানজুকে জড়িয়ে ধরল কেন!’এমনটা নয় রিয়াদের অস্থিরতা ফিল হচ্ছিল!’সে তো চারদিকের আলো দেখে অন্ধকার নামটাই ভুলে গিয়েছিল প্রায়!”তাহলে কি হলো তার?’
“রিয়াদের ভাবনার মাঝখানে তানজু রিয়াদের হাত ধরে বিছানায় বসিয়ে দিল!’তারপর বলতে লাগলোঃ
—“দেখুন স্যার আমি চাই না আপনি আবার সেদিনের মতো অসুস্থ হয়ে পড়ুন!”তাই আমার কথা শুনোন এখানে কোনো অন্ধকার নেই স্যার, দেখছেন কত সুন্দর করে আপনার রুমটা ক্যান্ডেল লাইট দিয়ে সাজিয়ে দিয়েছি,,আপনি অন্ধকার নামে কিছু আছে এটা ভুলে যান,আর আমার কথা শুনোন….
“বলেই রিয়াদের পাশে বসে পড়ে তানজু,এক কথায় তানজু দিশেহারা হয়ে গেছে বিষয়টা নিয়ে, সে মটেও চায় না রিয়াদ সেদিনের মতো আবার অসুস্থ হয়ে পড়ুক!’
“এদিকে…
“রিয়াদ সে এখনো বুঝে উঠতে পারছে না কিছুক্ষন আগে কি হলো তার!’কথাগুলো ভাবছে আর রুমের ক্যান্ডেল গুলোর দিকে তাকিয়ে আছে সে!’রিয়াদের ভাবনার মাঝে আবারো বলে উঠল তানজুঃ
—“আমার কথা শুনতে পারছেন স্যার…
“উওরে রিয়াদ তাকায় তানজুর দিকে!’রিয়াদের চাহনি দেখে বলে উঠল তানজুঃ
—“একদম ভয় পাবেন না স্যার,close your eyes & just feel my story…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদও আর বেশি কিছু না ভেবে তার চোখ বন্ধ করে নিলো!’রিয়াদ চোখ বন্ধ করতেই তানজু রিয়াদের কানের কাছে তার মুখ নিয়ে বলতে লাগলোঃ
—“just feel sir, আপনি ধবধবে সাদা আকাশের নীচে সুন্দর এক বিশাল কাঠগোলাপ ফুলের গাছের নিচে বসে আছেন!’গাছ থেকে সাদা রঙের কাঠগোলাপের পাপড়ি পড়ছে,আপনি গাছের নিচে বসে জিনিসটা ফিল করছেন এমন সময় একটা মেয়ে দৌড়ে এসে আপনার মুখে এক বালতি পানি ঢেলে দিলো সাথে সাথে আপনার ঘুম ভেঙে গেল…
“তানজুর কথা শুনে রিয়াদ চোখ খুলে বলে উঠলঃ
—“লাইক সিরিয়াসলি তানজু এইটা ফিল করবো…
—“না মানে ওই আর কি….(মাথা চুলকিয়ে)
—“আর কিছু পেলে না..
—“দেখুন স্যার আমি কোনো রাইটার নই যে আপনাকে এর থেকে ভালো স্টোরি শুনাতে পারবো…
—“তাই বলে, বলা নেই কওয়া নেই প্রথম দেখায় সোজা মুখে পানি ঢেলে দিলো….
—“কেন স্যার প্রথম দেখাটা এভাবে হলে প্রবলেম কি?’
—“প্রবলেম কি মানে…
“এই নিয়ে দুজনের মাঝে কথা কাটাকাটি শুরু হয়ে গেল!’এরই মাঝে কারেন্ট চলে আসলো,সাথে সাথে তানজু ঝগড়া বন্ধ করে দিয়ে খুশিতে বলে উঠলঃ
—“থ্যাংক গড আপনার কিছু হয় নি আর আপনাকেও ধন্যবাদ এতক্ষণ আমার সাথে ঝগড়া করার জন্য….
“এতটুকু বলে তানজু নাচতে নাচতে রুম থেকে বেরিয়ে গেল!’এদিকে রিয়াদ তানজুর কান্ড কাহিনি বুঝতে না পেরে হাবলার মতো শুধু তাকিয়ে রইলো!’যেন কি হলো সব তার মাথার উপর দিয়ে গেল….
____
“রাত_১১ঃ০০টা…..
“ডিনার সেরে বিছানায় শুয়ে আছে রিয়াদ!’আজ একটু অদ্ভুত লাগছে নিজেকে!’বার বার শুধু তানজুকে জড়িয়ে ধরার মুহূর্তটা মনে পড়ছে তাঁর!’কিছু একটা ফিল হচ্ছে রিয়াদের কিন্তু কি ফিল হচ্ছে সেটাই বুঝতে পারছে না রিয়াদ!’বেশি কিছু না ভেবে মুচকি হেঁসে নিমিষেই চোখ বন্ধ করে নিলো সে!’
“পরেরদিন…..
“সকাল_৬ঃ০০টা….
“আচমকায় রিয়াদের ঘুম ভেঙে যায়!’আধমরা হয়ে কিছুক্ষন নড়ে চড়ে উঠে বসলো রিয়াদ!’তারপর বালিশের পাশ থেকে নিজের মোবাইলটা হাতে নিলো সে জাস্ট ৬টা বাজে দেখে আরো চমকে উঠলো রিয়াদ এত তাড়াতাড়ি কি করে উঠলো সে!’বেশি কিছু না ভেবে রিয়াদ বিছানা ছেড়ে চলে যায় জানালার দিকে!’জানালা খুলে দিতেই ভোরের মুক্ত বাতাস এসে বারি মারলো রিয়াদের মুখে!’বাতাসের সংস্পর্শে আসতেই রিয়াদ হাল্কা হেঁসে চোখ বন্ধ করে ফেললো,তারপর মুক্ত বাতাসে গভীর নিশ্বাস ফেললো সে!’লাস্ট কবে রিয়াদ এত তাড়াতাড়ি ঘুম থেকে উঠেছিল মনে নেই তার!’
“হঠাৎই রিয়াদের চোখ গেল পুকুর পাড়ের দিকে!’তানজু গায়ে ওড়না জড়িয়ে পুকুর পাড়ে দাঁড়িয়ে আছে!’হয়তো মুখ ধুচ্ছে সে!’রিয়াদ কিছু একটা ভেবে রুম থেকে বেরিয়ে গেল!”
___
“পুকুরের পানির দিকে তাকিয়ে থেকে দাঁত ব্রাশ করছে তানজু!’এক অন্যরকম কিছু ফিল হচ্ছে তার,এই দু’বছর এই সকালে মসামটা খুব মিস করতো তানজু!’ঠান্ডা শিরশিরে বাতাস বইছে চারদিকে,বাতাসে চারদিকের গাছের পাতা গুলো নড়ছে বেশ,সকালের এই বাতাস খুবই রিলেক্স ফিল করায় মনকে!’তানজু কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে পুকুর পাড়ে নেমে মুখ ধুতে লাগলো!”মুখ ধুয়ে উপরে উঠতেই সামনেই রিয়াদকে দেখে অবাক হয়ে বললো সেঃ
—“আপনি…
—“হুম আমি গুডমর্নিং..
—“মর্নিং স্যার কিন্তু আপনি এত সকালে ঘুম থেকে উঠলেন…
—“তোমার মতো আমিও অবাক হয়েছি তবে এটাই সত্যি…
—“ওহ!’
—“হুম, তুমি একাই ঘুম থেকে উঠেছো নাকি…
—“না মাও উঠেছে…
—“ওহ
—“হুম স্যার,আচ্ছা আপনি ফ্রেশ হয়ে আসুন আমি যাচ্ছি…
—“ঠিক আছে…
“উওরে তানজু আর কিছু না বলে চলে যায়!’রিয়াদ কিছুক্ষন তানজুর যাওয়ার পানে তাকিয়ে থেকে সকালের পরিবেশটা অনুভব করতে লাগলো,
“একদম নিরিবিলি আর শান্ত পরিবেশ,রিয়াদের অসম্ভবভাবে পছন্দ হয়েছে জায়গাটা….
___
“রান্না ঘরে দাঁড়িয়ে ব্রেকফাস্ট তৈরি করছে তানজুর মা পাশেই তানজু তাকে হেল্প করছে!’গরম গরম পরাটা আর আলু ভাজি তৈরি করবে তারা সাথে দুধ চা!’আলু আঠা সবকিছুই প্রায় জোগাড় করে চুলায় চাপিয়ে দিয়েছে তাঁরা!’হঠাৎই তানজুর মায়ের মনে পড়লো ঘরে চা পাতা নেই!’কিছুটা বিস্মিত কন্ঠে বলে উঠলেন উনিঃ
—“ইস আমি তো ভুলেই গেছি…
“হুট করে মায়ের মুখে এমন কথা শুনে বিস্ময় নিয়ে বলে উঠল তানজুঃ
—“কি ভুলে গেছো মা..
—“ঘরে চা পাতা নেই..
—“ওহ এই ব্যাপার তুমি চিন্তা করো না আমি এক্ষুনি সামনে টংয়ের দোকান থেকে চা পাতা নিয়ে আসছি…
—“তুই পারবি..
—“পারবো না মানে ১০০ বার পারবো…
“এতটুকু বলে রান্নাঘর থেকে বেরিয়ে যায় তানজু!’তানজু যেতেই তানজুর মা রান্নার কাজে মন দেয়…
__
“সোফা উপর বসে আছে রিয়াদ,কিছুক্ষন আগেই ফ্রেশ হয়ে এখানে বসেছে সে!’এমন সময় তানজুকে বের হতে দেখে বলে উঠল রিয়াদঃ
—“কোথায় যাচ্ছো…
—“এই তো স্যার একটু বাহিরে..
—“ওহ!’
“তানজু কিছুক্ষন ভেবে বলে উঠলঃ
—“আপনি যাবেন স্যার আমার সাথে…
.
.
.
“গ্রামীণ রাস্তা পেরিয়ে হেঁটে এগিয়ে যাচ্ছে রিয়াদ তানজু!’সকালের সূর্যের আলো চলছে তাদের সাথে,একদম নিরিবিলি আর শান্ত পরিবেশ আশেপাশে তেমন কেউ নেই বললেই চলে,মাঝে সাজে দু’একজন দেখা যায়!’তবে তাঁরা যে যার কাজে ব্যস্ত…
“মাটির রাস্তায় হাঁটতে খুব ভালো লাগছে রিয়াদের!’তাদের হাতের ডান দিকেই রয়েছে ছোট্ট খাল,খালের ওপারের রয়েছে খোলা মাঠ,যার দূর সীমানা থেকে সূর্যের আলো এসে লাগছে তাদের গায়ে!’রাস্তার দু’দিকে গাছ থাকায় তার বাতাসে আরো বেশি বেশি ভালো লাগছে!’
“সময়টা সকাল হওয়ায় অনেক বেশি সুন্দর আর মনোমুগ্ধকর লাগছে জায়গাটাকে!’রিয়াদ আশেপাশের পরিবেশ দেখছে আর হেঁটে চলছে পাশেই তানজু বক বক করছে!’পুরো বিষয়টাই বেশ লাগছে রিয়াদের কাছে..
“কিছুক্ষনের মধ্যেই রিয়াদ তানজু হেঁটে চলে আসলো একটা ছোট্ট টং দোকানে!’দোকানের সামনেই দু’দিকে দুটো টুল!’একটা টুলে রিয়াদকে বসতে বলে তানজু চলে যায় দোকানদারের কাছে!’তারপর দু’টো রং চায়ের অর্ডার করে সে!’
“কিছুক্ষনের মধ্যেই দোকানদার দু’কাপ রং চা দেয় তানজুর দিকে!’তানজুও রং চা হাতে নিয়ে চলে আসে রিয়াদের কাছে!’
“রিয়াদ আশেপাশের পরিবেশ দেখতে ব্যস্ত তখন!’সেই সময় তানজু রিয়াদের দিকে এক কাপ চা এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“স্যার চা…
“রিয়াদ তানজুর হাতের চায়ের কাপের দিকে তাকিয়ে রইলো কিছুক্ষন!’রিয়াদকে তাকিয়ে থাকতে দেখে বলে উঠল তানজুঃ
—“কি ভাবছেন স্যার…
–“না মানে তুমি শিউর এটা আমি খাবো…
—“হুম খাবেন স্যার এতদূর হেঁটে আসলেন এমনি এমনি চলে যাবেন নাকি তাই আমার তরফ থেকে ছোট্ট ট্রিট…
—“কিন্তু তানজু…
—“আরে স্যার অনেক তো শহরের চা খেলেন এখন একটু গ্রামের চা খেয়ে দেখেন, দেখবেন ভালো লাগবে…
“উওরে রিয়াদ আর কিছু বললো না!’তানজুর হাত থেকে চায়ের কাপ টা হাতে নিয়ে নিলো!’চায়ের কাপটা গরম থাকায় বলে উঠল তানজুঃ
—“স্যার ফু দিয়ে আস্তে আস্তে খাবেন অনেক গরম কিন্তু…!’
“উওরে হাল্কা হেঁসে বললো রিয়াদঃ
—“ঠিক আছে…
“তারপর ফু দিয়ে এক চুমুক দিলো রিয়াদ!’রিয়াদ চায়ে চুমুক দিতেই তানজু বলে উঠলঃ
—“কেমন স্যার…
“উওরে হেঁসে বললো রিয়াদঃ
—“খুব ভালো বললে ভুল হবে জাস্ট অসাধারণ…
—“জানতাম আপনার ভালো লাগবে দাঁড়ান স্যার আপনার জন্য পাঁচ টাকা দামের টোস্ট নিয়ে আসি..
“উওরে রিয়াদকে কিছু বলার সুযোগ না দিয়েই চলে যায় তানজু!’
“তানজু দোকানদারের কাছ থেকে দু’টো টোস্ট কিনে একটা দেয় রিয়াদের হাতে তারপর রিয়াদ অপজিট টুলে বসে বলে সেঃ
—“খান স্যার দেখবেন ভালো লাগবে…
“এবার আর রিয়াদ কিছু বললো না চুপচাপ তানজুর কথা মতো টোস্ট আর রং চা খেতে লাগলো সে!’জীবনে ফাস্ট টাইম এইভাবে খোলা আকাশের নিচে বসে রং চা আর টোস্ট খাচ্ছে রিয়াদ!’বিষয়টা মন্দ না বেশ লাগছে রিয়াদের….
“১০ মিনিট পর….
“তানজু দোকানদারের বিল মিটিয়ে আর এক প্যাকেট চা-পাতা কিনে চলে যায় বাড়ির ফেরার উদ্দেশ্যে….
_
“হাসি,আনন্দ হুল্লোড় আর গ্রামের পরিবেশের মুগ্ধতায় কেটে গেল পুরো চার দিন…
“এই চারদিন খুব সুন্দর ভাবেই কেটেছে রিয়াদের বেশ লেগেছে তার গ্রামের পরিবেশ আর তানজুর ফেমিলিকে!’
.
“আজ থেকে তাসলিমার বিয়ের কাজকর্ম শুরু হবে!’গায়ের হলুদের অনুষ্ঠান থেকে শুরু করে বিয়ের সব তোরজোর আজ থেকেই শুরু…
“বাড়ির দরজায় নক করতেই তানজু দৌড়ে এসে দরজা খুলে দিলো সাথে সাথে তানজু কিছু বুঝে ওঠার আগেই একটা ছেলে এসে হুট করেই তাকে জড়িয়ে ধরে বলে উঠলঃ
—“কেমন আছিস পেত্নী…?’
!
!#রোদ্দুরে_মেঘের_বর্ষন❤️
#লেখিকা:#তানজিল_মীম❤️
— পর্বঃ১৬
“বাড়ির দরজার সামনে কান ধরে উঠবস করছে আদি!’আর ওর সামনে রাগী লুক নিয়ে কোমড়ে হাত দিয়ে দাঁড়িয়ে আছে তানজু!’প্রচন্ড রেগে গেছে সে!’
“এদিকে…
“আদি তানজুর রাগান্বিত ফেস দেখে বলে উঠলঃ
—“আরে সরি বললাম তো,আসলে এতদিন পর তোকে দেখে এক্সাইটেমেন্টটা ধরে রাখতে পারি নি,তাই তোকে জড়িয়ে ধরে ফেলেছি,
—“তোর সরির গুষ্টি তুষ্টি তোর কাজের জন্য কতটা ঘাবড়ে গেছি আমি জানিস…
—“আশ্চর্য!এতে ঘাবড়ে যাওয়ার কি আছে?’
—“কি আছে মানে বলা নেই কওয়া নেই ঠাস করে জড়িয়ে ধরে কেউ, আমার তো হার্ডএর্টাক হয়ে যেতো এক্ষুনি…
—“সরি পেত্নী…
—“তুই আবার আমায় পেত্নী ডাকছিস তোকে তো আমি….
“এই বলে তানজু এগিয়ে যেতে লাগলো আদির দিকে!’তানজুকে এগিয়ে যেতে দেখে আদিও ঘাবড়ে গিয়ে পিছনে দৌড় দিল!’এমন সময় সেখানে হাজির হলো আদির বাবা মা!’আদি হলো তানজুর কাজিন আর হিয়ামিনির বড় ভাই!’তানজু আর হিয়ামিনির বয়স সেইম আর আদি ওদের চেয়ে একবছরের বড় কিন্তু ছোট বেলা থেকেই তানজু আর আদি একে অপরকে নাম ধরে ডাকে!’
“তানজু আর আদিকে ছুটতে দেখে বলে উঠল আদির মাঃ
—“আরে কি হলো ঢুকতে না ঢুকতেই দুটোতে মারামারি শুরু করে দিলি…
—“তুমি জানো খালামনি তোমার বান্দর ছেলে কি করছে….?’
—“কি করছে?’
—“ওহ আমায়…
“আর কিছু বলার আগেই আদি দৌড়ে গিয়ে তানজুর মুখ চেপে ধরলো!’তারপর বললো তার মাকেঃ
—“তুমিও না মা কার কথা কানে নিচ্ছো ও তো একটা পাগল…
“আদির কথা শুনে তানজু শুধু চোখ বড় বড় করে উম উম করছে!’এদের কান্ড দেখে আদির মা হেঁসে বলে উঠলেনঃ
—“আসলেই তোরা দুটোই পাগল…
“এই বলে আদির মা আর বাবা দুজনেই ওদের থেকে সরে আসলো সামনে!’ওনারা সামনে আসতেই তানজুর মা বাবা বোন সহ আরো অনেকেই হাজির সেখানে, হিয়ামিনি দৌড়ে এসে জড়িয়ে ধরল তার মাকে!’তারপর বললোঃ
—“কেমন আছো মা?’
—“হুম ভালো তুই…
—“হুম ভালো!’
“হিয়ামিনির মা সবার সাথে কথা বলে চলে যায় তাসলিমার সামনে তারপর ওর গাল ধরে বললোঃ
—“কেমন আছিস বিয়ের কনে…?’
“খালামনির কথা শুনে মুচকি হাসলো তাসলিমা!’মুচকি হেঁসেই বললো সেঃ
—“হুম ভালো খালামনি তুমি…
—“হুম ভালো…
“তারপর সবাই মিলে একসাথে সোফায় বসে কথা বলতে শুরু করলো!’সবাই বসতেই আদি তানজুর মুখ ছেড়ে দিয়ে ওর মাথায় একটা চাটি মেরে বললোঃ
—“পাগল তুই কি বলতে চাচ্ছিলি…
—“না মানে সরি মিস্টেক হয়ে যাচ্ছিল,থ্যাংকু…
—“হইছে…
.
“এসবের মাঝে সিঁড়ি ওপর থেকে রিয়াদ, তানজু আর আদির কান্ড দেখে ভিতরে ভিতরে প্রচন্ড রেগে গেছে সে!’আর মটেও তানজুর পাশে আদিকে সহ্য হচ্ছে না!’রিয়াদ আদির মুখ চেপে ধরার মুহূর্ত থেকেই দেখছে, সাথে তানজুর হেঁসে হেঁসে আদির সাথে কথা বলা মটেও সহ্য হচ্ছে না তার!’রিয়াদ কিছুক্ষন দাঁড়িয়ে থেকে রাগ নিয়েই চলে যায় তার রুমের দিকে…
___
“সোফার সামনেই আদি আর তানজু দাঁড়িয়ে আছে!’হঠাৎই আদি বলে উঠলঃ
—“তারপর বল কেমন আছিস তুই?’
—“হুম ভালো…
—“আহ্! আমায় জিজ্ঞেস করবি না আমি কেমন আছি…?”
—“না করমু না….
—“ওমা কেন…
“তানজু পাল্টা কিছু বলবে তার আগেই ফোনটা বেজে উঠল তার!’উপরে রিয়াদের নাম দেখে কিছুটা অবাক হয়ে ফোনটা তুলে বললো তানজুঃ
—“হ্যালো….
“তানজুর হ্যালো শুনে অপর পাশে রিয়াদ কর্কশ কন্ঠে বলে উঠলঃ
—“২ মিনিটের মধ্যে তোমায় আমার রুমে দেখতে চাই তানজু,কাম ফাস্ট….
“বলেই তানজুকে বলার কিছু সুযোগ না দিয়েই ফোন কেটে দেয় রিয়াদ!’রিয়াদের কাজে চমকে উঠলো তানজু,সে বুঝে গেছে কোনো কারনে রিয়াদ খুব রেগে আছে কিন্তু কেনো?’
“ভেবেই কুইকলি তানজু চলে যেতে নেয় রিয়াদের রুমের দিকে!’আদি তানজুকে যেতে দেখে বলে উঠলঃ
—“কই যাচ্ছিস?’
—“আসছি একটু…
_____
“ল্যাপটপে একটা মুভি ছেড়ে রাগী মুড নিয়ে বিছানার উপর বসে আছে রিয়াদ!’রাগে গা জ্বলে যাচ্ছে তার,সে বুঝতে পারছে না এত রাগ কেন হচ্ছে?’কিন্তু অসম্ভবভাবে রেগে গেছে রিয়াদ বার বার শুধু আদি আর তানজুর হাসাহাসির দৃশ্যের কথা মনে পড়ছে তাঁর!’এক্ষুনি তানজুকে সামনে পেলে সে যে কি করবে নিজেও বুঝতে পারছে না,,এমন সময় হতভম্ব হয়ে তানজু দৌড়ে এসে ঢুকে পরলো রিয়াদের রুমে!’তারপর জোরে জোরে শ্বাস ফেলে বললো সেঃ
—“কি হয়েছে স্যার, এনি প্রবলেম?’
“উওরে রিয়াদ কিছু বললো না চুপচাপ তাকিয়ে রইলো সে ল্যাপটপের দিকে!’রিয়াদকে চুপ থাকতে দেখে তানজু রিয়াদের আর একটু কাছে দাঁড়িয়ে বলে উঠলঃ
—“কি হলো স্যার কথা বলছেন না কেন?’
“রিয়াদ চুপ!’
—“কিছু যখন বলবেনই না তাহলে ডাকলেন কেন স্যার,..
“রিয়াদ চুপ!’
“এবার তানজুর একটু বিরক্তিতা ফিল হচ্ছে!’কিন্তু তারপরও নিজের বিরক্তিতা দূরে সরিয়ে রেখে স্বাভাবিক কন্ঠেই বলে উঠল তানজুঃ
—“ঠিক আছে স্যার আপনি মুভি দেখুন আমি যাচ্ছি….
“এতটুকু বলে রুম থেকে বের হতে নেয় তানজু!’তানজু চলে যাচ্ছে এটা বুঝতে পেরে রিয়াদ ল্যাপটপের দিকে তাকিয়ে থেকেই গম্ভীর কণ্ঠে বলে উঠলঃ
—“নিচের ছেলেটা কে তানজু..?’
“হুট করে রিয়াদের মুখের এমন কথা শুনে তানজু অবাক হয়ে দাঁড়িয়ে পরল!’তারপর রিয়াদের দিকে ঘুরে বললো সেঃ
—“কোন ছেলে স্যার?’
“তানজুর উওর শুনে রিয়াদ ল্যাপটপের মুভি অফ করে তানজুর দিকে তাকিয়ে থেকে বলে উঠলঃ
—“তুমি বুঝতে পারছো না..
—“ওহ আপনি আদির কথা বলছেন,ওহ হলো আমার কাজিন স্যার আর হিয়ামিনির বড় ভাই,আমরা তিনজন একসাথেই বড় হয়েছি,কেন স্যার কি হয়েছে…?’
—“না কিছু হয় নি আমার জন্য কফি নিয়ে আসো…
—“ওহ আপনি কফি খাবেন এটা বলতে এত সময় লাগে স্যার,আমি এক্ষুনি নিয়ে আসছি…
“এতটুকু বলে চলে যায় তানজু!’
“এদিকে….
রিয়াদ প্রচন্ড রেগে আছে ভিতর থেকে,নিজের রাগকে বাহিরে বের করতে পারছে না এতে আরো বেশি রাগ হচ্ছে তার,কিছুতেই বুঝে উঠতে পারছে না রিয়াদ তানজুর পাশে আদিকে সহ্য কেন করতে পারছে না!’একরাশ বিরক্ত নিয়ে ল্যাপটপটা বন্ধ করে ফেললো রিয়াদ!’তারপর নিজেই নিজেকে বলে উঠলঃ
—“Are you jealous Riyad…?’
.
“কিছুক্ষনের মধ্যেই তানজু রিয়াদের জন্য কফি বানিয়ে নিয়ে এসে দেয় রিয়াদের দিকে!’রিয়াদ তানজুর হাত থেকে কফিটা নিয়ে তানজুর দিকে তাকিয়ে থেকেই একচুমুক দেয়!’কফি গরম থাকায় মুখে কফি লাগতেই বিষম খায় রিয়াদ!’রিয়াদের কান্ডে তানজু এগিয়ে গিয়ে বললোঃ
—“আরে স্যার এসব কি করছেন আস্তে খান গরম তো?’
“উওরে রিয়াদ কিছু বললো না!”
সে কিছুতেই নিজের রাগকে কন্ট্রোল করতে পারছে না!’তানজু রিয়াদের হাত থেকে কফিটা নিয়ে টেবিলের উপর রেখে বললোঃ
—“কিছু কি হয়েছে স্যার?’
—“না কি হবে কিছু হয়নি…
—“না মানে তখন ফোনে..
“আর কিছু বলবে তানজু তার আগেই ওদের রুমে নক করলো আদি!’দরজা খুলে বললো সেঃ
—“ভিতরে আসতে পারি কি….
—“হুম…(রিয়াদ)
—“থ্যাংক ইউ…
“বলে ভিতরে ঢুকে পড়ে আদি!’সামনেই রিয়াদকে দেখে কিছুটা শকট হয় সে বিশ্বাসই হচ্ছে না তার বিখ্যাত সেলিব্রেটি তার সামনে দাঁড়িয়ে!’আদি রিয়াদের সামনে গিয়ে খুশি মনে তার হাত এগিয়ে দিয়ে বললোঃ
—“হ্যালো ব্রো,হাউ আর ইউ আমি আদি আর তানজুর কাজিন…
“আদির হাসি দেখে রিয়াদ না চাইতেও তার হাত এগিয়ে দিয়ে হাল্কা হেঁসে বললোঃ
—“হ্যালো, ফাইন ইউ…
—“আমি তো বিন্দাস আছি ব্রো,ট্রাস্ট মি বিশ্বাসই হচ্ছে আমার, আমি আপনার সামনে দাঁড়িয়ে আছি,আই এম ইউর বিগ ফ্যান ব্রো…
“উওরে হাল্কা হাসলো রিয়াদ!’রিয়াদের হাসি দেখে বলে উঠল আদিঃ
—“ওয়ান অটোগ্রাফ প্লিজ…
“রিয়াদ না চাইতেও মানা করতে পারলো না!’আদির দিকে তাকিয়েই বললো সেঃ
—“শিউর…
“রিয়াদের কথা শুনে খুশি হয়ে যায় আদি!’এক্সাইটেড হয়ে বলে সেঃ
—“আমি এক্ষুনি আসছি….
“বলেই রুম থেকে বেরিয়ে যায় আদি!’আদি যেতেই রিয়াদ কিছুক্ষণ চুপ থেকে টেবিলের উপর থেকে কফির মগটা হাতে নেয়!’তানজু রিয়াদের দিকে তাকিয়ে বলে উঠলঃ
—“আপনি কিছু মনে করবেন না স্যার ও একটু ওই রকমই, কিন্তু এমনিতে খুব ভালো মুহূর্তের মধ্যেই আপনার মতো সবার সাথে মিশে যেতে পারে…
“তানজুর মুখে আদির প্রশংসা শুনতে মটেও ভালো লাগছে না রিয়াদের!’তাই তানজুর কথার মাঝখানে বলে উঠল সেঃ
—“কফিতে চিনি হয় নি তানজু…
“রিয়াদের কথা শুনে তানজু নিজের কথা বন্ধ করে অবাক হয়ে বলে উঠলঃ
—“কি বলেন স্যার আমি তো রোজকারের মতো তিন-চামচ চিনি দিয়েছি…
—“বিশ্বাস না হলে খেয়ে দেখো…
—“না,ঠিক আছে আমি এক্ষুনি চিনি নিয়ে আসছি…
—“তার আর প্রয়োজন নেই,পরের বার থেকে দেখে নিও…
—“ঠিক আছে স্যার…
“এরই মাঝে একটা ডাইরি আর কলম নিয়ে হাজির আদি!’তারপর রিয়াদের দিকে ডাইরি আর কলম এগিয়ে দিল সে!’রিয়াদও বেশি কিছু না ভেবে অটোগ্রাফ দিয়ে দিলো!’এমনটা নয় আদিকে তার ভালো লাগে নি বরং আদির কথা বলার ধরন বেশ লেগেছে তার!’কিন্তু সে কিছুতেই তানজুর পাশে আদিকে মানতে পারছে না…
“অন্যদিকে…
“রিয়াদকে অটোগ্রাফ দিতে দেখে মনে পরে গেল তানজুর আজ থেকে ঠিক দু’দিন আগের ঘটনার কথা….
“সেদিন বিকেলে..
“নিজের রুমে শুয়ে আছে তানজু,এমন সময় হাজির হিয়ামিনি আর তার বন্ধুরা!’এরা সবাই রিয়াদের সাথে দেখা করতে এসেছে!’অবশ্য হিয়ামিনি তো আগেই বলেছিল ওর কিছু বান্ধবীরা আসবে রিয়াদের অটোগ্রাফ আর ছবি তোলার জন্য!”তানজু সবাইকে দেখে শোয়া থেকে উঠে বসলো!’তানজুকে বসতে দেখে হিয়ামিনির বান্ধবীরা তানজুর সামনে এসে বললোঃ
—“কেমন আছো?’
—“হুম ভালো তোমরা…?’
—“হুম ভালো!’
“হিয়ামিনি তানজুর কানের কাছে মুখ নিয়ে বললো তানজু ওরা কিন্তু?’
—“জানি আর বলতে হবে না চল আমার সাথে….
“তানজুর কথা শুনে খুশি হয়ে যায় সবাই!’
তারপর সবাই একসাথে চলে যায় রিয়াদের রুমের দিকে!’
!
!
!
!
!
!
!
!
!
!
#চলবে………
[