আপনি বিবাহিত রুদ্ধ স্যার।
সো হোয়াট মিস আরাত্রি।
হোয়াট মানে কী স্যার।আপনি বিবাহিত হয়েও অন্য একটা মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব কীভাবে দেন।
কুল, রাত। ফাস্টলি আমি তোমার স্যার না।সেকেন্ডলি আমি মানিনা এই বিয়েটা।তোমাকে আমি তোমাকে ভালোবাসি।আর আমি তো তোমাকে উল্টোপাল্টা কোনো প্রস্তাব দেয়নি। সরাসরি বিয়ের প্রস্তাব দিছি।
স্টপ ইট,, স্যার। আপনি বাসায় যান।আপনার ওয়াইফ আপনার জন্য অপেক্ষা করছে।
রাত প্লিজ, আমার কথাটা একটু বোঝার চেষ্টা কর প্লিজ।বিয়েটা সত্যি এক্সিডেন্টলি হয়ে গেছে।
এক্সিডেন্টলি হোক আর যাইহোক বিয়েটা তো হয়েছে।আর আপনি বিবাহিত রুদ্ধ স্যার প্লিজ আমার পিছু ছেড়ে দেন।
রাত!
স্যার প্লিজ এখান থেকে যান, প্লিজ।
“আচমকা ঘুমটা ভেঙে গেলো কারো ডাকে।”
—-এই তানহা, তুই আজ আবার এই আজাইরা স্বপ্ন দেখছিস।
—- আজাইরা না রে,,,এই একই স্বপ্ন তো আমি প্রায়ই দেখি।কী জানি কী মানে এ স্বপ্নের।
—- আচ্ছা বাদ দে।তুই ফ্রেশ হয়ে নিচে আয়।
—- হুম।
” আমি তাজরিয়া তানহা।আমি একটা ভার্সিটিতে পড়ি। অনার্স থার্ড ইয়ার।আমার বাবা-মা নেই।আমি আমার ফুপুর বাসায় থাকি।প্রায়ই রাতে আমি এই স্বপ্ন দেখি।সেখানে আমি নিজেকে রাতের ভূমিকায় দেখি।কিন্তু কে এই রাত আর কে এই রুদ্ধ তা আমি জানিনা।”
—————–
কীরে তানহা তোর হলো।
—- হুম, আরহা। চল।
—-হুম চল।অলরেডি লেট হয়ে গেছে।
—- আরে যাবি মানে,,,খেয়ে যাবিনা।
—- না গো মামনি,,,,,এমনিতেই ঔ স্বপ্নের জন্য আজ উঠতে দেরি হয়ে গেছে।খেতে গেলে আরো দেরি হয়ে যাবে।আসছি গো মামনি।ক্যান্টিনে গিয়ে খেয়ে নিবো আমরা।
—- আচ্ছা,,সাবধানে যাস।
” আমি আর আমার ফুপাতো বোন আরহা বেড়িয়ে গেলাম ভার্সিটির জন্য।আজ এমনিতেই অনেক লেট হয়ে গেছে।তার ওপর একটা রিক্সাও পাচ্ছিনা।মধ্যবিত্তদের এই এক ঝামেলা।এরা রিক্সারর জন্য দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে জীবন পাড় করে দেয়।”
অনেকক্ষণ দাড়িয়ে থাকার পর একটা রিক্সা পেলাম।তবে ভার্সিটি পৌঁছাতে দেরি হয়ে গেলো।আমি আর আরহা দ্রুত ক্লাসরুমের দিকে ছুটলাম।তবে ভাগ্যভালো যে আজ এখনো কোনো টিচার ক্লাসে আসেনি।
খানিকক্ষণ পর বেশ সুদর্শন একজন ক্লাসে এলেন।তার গেটআপ দেখেই বুঝলাম নতুন কোনো টিচার হবে।
উনি নিজে থেকেই তার পরিচয় দিলেন।
—- হ্যালো স্টুডেন্টস। আমি হলাম তোমাদের সাইকোলজির নিউ টিচার।আমার নাম রুদ্ধ সরকার।
” স্যারের কথাটা কর্ণপাত হতেই বুকটা কেঁপে উঠল আমার।আবার রুদ্ধ। কে এই রুদ্ধ, আমার পিছনে কেন পড়ে আছে সে। ”
এই যে মিস,আপনি মাথা নিচু করে বসে আছেন কেন?এনি প্রবলেম।
“স্যারের কথা শুনে বুঝলাম যে প্রশ্নটা উনি আমাকেই করেছে।তাই বেশিকিছু না ভেবে দাঁড়িয়ে গেলাম।”
আমাকে দেখে রুদ্ধ স্যার যেন বেশ অবাক হলেন।কেমন অদ্ভুত দৃষ্টিতে তাকিয়ে ছিলেন।বেশ অস্বস্তি হচ্ছিলো আমার।তাই স্যারের দৃষ্টি আকর্ষন করতে বললাম
—- নো স্যার।আমার কোনো প্রবলেম হয়নি।
” স্যারও খানিকটা অপ্রস্তুত হয়ে বলল”
—- আপনার নামটা কী জানতে পারি?
—- জ্বী স্যার। আমি তাজরিয়া তানহা।
—- ওহ্।প্লিজ সিট ডাউন।
“এরপর রুদ্ধ স্যার নরমালি ক্লাস নিয়ে চলে গেলেন।নেক্সট দুটো ক্লাস ফাঁকা।তাই আমি আর আরহা ক্যান্টিনে চলে গেলাম।”
খাবারের অর্ডার দিয়ে বসে ছিলাম।তখনই আরহা বলল
—- কী বলব আর তানহা। একে তো তোর স্বপ্নে এসে তোর রুদ্ধ স্যার তোকে শান্তিতে ঘুমাতে দেননা।আর এখন এই রুদ্ধ স্যার আমার ঘুম কেঁড়ে নিলেন। ছেলেদের এত সুন্দর হওয়ার কী দরকার বলতো।
—- উফ!আরহা কী সব বলছিস।
—- আচ্ছা তানহা এমন যদি হয় যে তোর ঐ রুদ্ধ স্যার আর আমাদের এই রুদ্ধ স্যার যদি এক হয়।
—- ধুর,,, এসব তুই কর বলছিস।আমার স্বপ্নে যে আসে আমি তো তার মুখ দেখিনি।তাহলে কীভাবে বুঝব বল।
—- আচ্ছা বাদ দে এসব।আমি না একটু রাহাতের সাথে দেখা করতে যাবো। ছুটি হলে তুই চলে যাস কেমন।আর আম্মুকে একটু ম্যানেজ করে নিস।
—- হুম।
ভার্সিটি শেষে রিক্সার জন্য দাঁড়িয়ে ছিলাম।আরহা তার বয়ফ্রেন্ডের সাথে দেখা করতে গেছে।আমাকে আজ একাই ফিরতে হবে।
——————
বাসায় এসে চুপচাপ রুমে চলে গেলাম।মামনিকে কোথাও দেখলাম না।হয়ত কোথাও গেছে।আমিও চুপচাপ খেয়েদেয়ে রুমে চলে গেলাম।
কাল মামনির রুম থেকে একটা উপন্যাসের বই এনেছিলাম।মামনিকে কখনো উপন্যাস পড়তে দেখিনও তাই একটু অবাক হয়েছিলাম। আরো অবাক হয়েছিলাম যখন মামনি বলেছিল যে এই বইটা নাকি আমার জন্যই।
আমি আর বেশি কিছু না ভেবে বইটা খুললাম।বইয়ের প্রথম পাতায় খুব সুন্দর একটা কথা লেখা।লেখাটা এমন ছিল
“যে তুমিতে আমি নেই , সে তুমি আমার চাইনা।”
কথাটায় যেন হাজারো কষ্ট, রাগ, অভিমান মিশে ছিলো।কথাটা কে বলেছে, কার উদ্দেশ্যে লিখেছে জানিনা।তবে খুব অদ্ভুত একটা টান অনুভব হচ্ছে।
দুই পেজ পড়ে রেখে দিলাম।আর ভালোলাগছে না।কোনো এক অজানা আশঙ্কায় মনটা কুঁ গাইছে।জানিনা কেন।
———————-
প্রায় সন্ধ্যে হয়ে গেছে।আরহা অনেক আগেই বাসায় চলে এসেছে।মামনি এসেছে কিনা তা দেখতে মামনির রুমে যাচ্ছিলাম।
রুমের সামনে গিয়ে দরজায় নক করার আগেই মামনির কাঁপা কাঁপা গলা শুনতে পেলাম।মামিন কাউকে বলছিল
” সে এসে গেছে।আবার ফিরে এসেছে আমাদের জীবনে।”
আমি আর বেশি কিছু না শুনে চলে এলাম।মামনি কার কথা বলছিলো।কে ফিরে এসেছে।
——————–
পরদিন সকালে ভার্সিটি চলে গেলাম আমি আর আরহা।সামনেই ভার্সিটির নবীনবরণ অনুষ্ঠান।বেশকিছু দায়িত্ব পড়েছে আমার ওপর।
সেটারই প্রস্তুতি চলছে।আজ তেমন ক্লাস নেই।আমি আরহা আর বাকি ফ্রেন্ডরা সেটাই দেখছিলাম।
একটু পরে সবাই ক্যান্টিনে চলে গেলাম।সবাই মিলে আড্ডা দিচ্ছিলাম।।সবার কথার একই টপিক “রুদ্ধ স্যার।”
কিছুক্ষণ আড্ডা দেওয়ার পর একজন এসে বলল প্রিন্সিপাল স্যার নাকি আমাকে ডেকেছে।
আমি আর আমার এক ফ্রেন্ড অনু প্রিন্সিপালের রুমে যাচ্ছিলাম।উনি নাকি আমাদের ডেকেছেন।
আমরা স্যারের রুমেমে গেলে স্যার বলেন আমরা যেন রুদ্ধ স্যারকে অনুষ্টানের থিমটা একটু বুঝিয়ে দি।
আমরা এবং প্রিন্সিপাল স্যার কথা বলছিলাম তখনই
রুদ্ধ স্যার এর একটা ফোন এলো।উনি প্রিন্সিপাল স্যারের দিকে তাকিয়ে বললেন
—- আমার ওয়াইফের ফোন,,,,, আমি কী একটু,,,
—- হুম অবশ্যই।
প্রিন্সিপাল স্যারের অনুমতি পেয়ে রুদ্ধ স্যার বাইরে চলে গেলেন।
পরে আরে কিছু কথা বলে সেখান থেকে চলে এলাম।ক্লাসের দিকে যাচ্ছিলাম তখই কেউ বলল
—- তানহা।একটু শুনবে প্লিজ।
আমি পেছনে তাকিয়ে দেখি রুদ্ধ স্যার।আমি উনার দিকে এগিয়ে গেলে উনি বললেন
—- কালকে ক্লাস শেষে আমার সাথে লাইব্রেরিতে দেখা করবে।
আমি একটু অবাক হলেও হ্যাঁ বলে চলে এলাম।রুদ্ধ স্যার কেন আমার সাথে দেখা করতে চাইলেন?
আমিও বেশিকিছু না ভেবে বাসায় চলে গেলাম।বাসায় গিয়ে দেখি বাসার পরিবেশ বেশ শান্ত।
আমি বাসায় ঢুকতেই মামনি আমাকে ডেকে বলল
—– তানহা,তোকে আমার কিছু বলার আছে।
(চলবে)
#সমাপ্তিতে_তুমি
পর্ব-০১
লেখিকা-#খেয়া
(