সমাপ্তিতে তুমি পর্ব -০৫

#সমাপ্তিতে_তুমি
পর্ব-০৫
লেখিকা-#খেয়া

মামনির কথায় খুব অবাক হলাম।
মামনি বলল আমি নাকি অনাথ।মামনিরা নাকি আমাকে রাস্তা থেকে এনেছে।মামনির কথাটা যে নিতাম্তই ফালতু তা বুঝতে কষ্ট হলোনা।কোনো বাচ্চার কাছেও একথা গ্রাহ্য হবেনা।

আমি আর কথা না বাড়িয়ে চলে এলাম।খুব ভালোই বুঝেছি মামনি এব্যাপারে কিছুই বলবেনা।যা করার আমাকেই করতে হবে।এরজন্য আমার রুদ্ধ স্যারের সাথে কথা বলতে হবে।

রাতে খাবার খেয়ে বেলকনিতে দাঁড়িয়ে ছিলাম।তখনই ঘাড়ে কারো হাতের স্পর্শ পেলাম।পিছনে তাকিয়ে দেখি আরিশ।প্রচন্ড বিরক্ত হলাম।

—-আপনি এখানে এতরাতে।

—- আসতে পারিনা বুঝি। এমনিতেও কিছুদিন পর তোমার সাথেই থাকা লাগবে,তাইনা সুইটহার্ট।

উনার মুখে এমন কথাশুনে মেজাজটা বিগরে গেলো।প্রচন্ড ম্যানারলেস একটা লোক।আমি আর কিছুনা বলে ঘুরে দাঁড়ালাম।

হঠাতই আরিশ আমাকে পেছন থেকে জড়িয়ে ধরল।মেজাজটা খুব বিগড়ে গেলো। উনাকে ছাড়িয়ে ঠাস করে একটা চড় মেরে দিলাম।উনি প্রচন্ড রেগে গেলাম।
উনি চিৎকার করে বললো

—- তোকে কাছে পাওয়ার জন্য কম কষ্টতো করিনি।আর আজ একটু টাচ করায় এমন করলি।এরফল তোমাকে ভোগ করতে হবে।

কথাগুলো বলে উনি চলে গেলেন।উনি এমন কী কষ্ট করেছেন আমাকে পেতে।
বেশি কিছু না ভেবে ঘুমাতে গেলাম।ঠিক করেছি কাল সকাল সকাল ভার্সিটি গিয়ে রুদ্ধ স্যারের সাথে কথা বলব।

—————–

সকালে একটু তাড়াতাড়ি ভার্সিটিতে গেলাম কিন্তু রুদ্ধ স্যারকে পেলাম না। উনি এখনো আসেনি।খানিকক্ষণ পর দেখলাম রুদ্ধ স্যারের গাড়িটা ক্যাম্পাসে ঢুকল।স্যার যখন গাড়ি পার্ক করে আসছিলেন তখনই আমি স্যারের কাছে গিয়ে বললাম

—- স্যার,আপনার সাথে আমার খুব জরুরি কিছু কথা আছে।না করবেন না প্লিজ।

—- ওকে,তুমি ছুটির পর আমার সাথে দেখা করো।

এতটুকু বলেই স্যার চলে গেলেন।কেন জানি মনে হলো স্যার আমাকে ইগনোর করছে।

আমিও কিছুনা বলে ক্লাসে চলে গেলাম।

ক্লাস শেষ করে রুদ্ধ স্যারকে খুঁজছিলাম কিন্তু উনাকে পেলাম না।আজ উনি ক্লাসও নিতে আসেননি।এক পিয়নের থেকে জানলাম উনার বাসা থেকে ইমার্জেন্সি কল আসায় নাকি উনি বাসায় চলে গেছেন।আমিও হথাশ হয়ে বাসায় চলে আসছিলাম।

গেটের সামনে এসে দেখি আরিশ দাঁড়িয়ে আছে। আমি উনাকে দেখেও পাশ কাটিয়ে চলো আসতে নিলে উনি আমার হাত ধরে ফেলেন আর বলেন

—- চুপচাপ গাড়িতে উঠে বসো।

—-এটা পাবলিক প্লেস। এখানে কোনো সিন ক্রিয়েট করবেন না।আমি চায়না কাল রাতের ঘটনার পুনরাবৃত্তি আবার হোক।

উনিও আর কিছু না বলে আমার হাতটা ছেড়ে দিলেন।আমিও একটা রিক্সা নিয়ে বাসায় চলে গেলাম।খুব ভালোমতোই জানি বাসায় গেলে এটা নিয়ে মামনি কথা বলবে।তাই বাসায় ঢুকে সরাসরি নিজের রুমে চলে গেলাম।আপাতত কারো কোনো কথার সম্মুখীন হতে চাই না।

দুপুরের খাবার টেবিলে আরহা ছিল না।কোথায় গেছে কে জানে?আজ তো আমার সাথে ভার্সিটিও যায়নি। আমিও আর কাউকে জিঙ্গেস করলাম না কোথায় গেছে।এই পরিবারের মানুষগুলোর ওপর অনেকটাই অবিশ্বাস জন্মেছে।

আমি চুপচাপ খাবার খেয়ে উঠে এলাম।মামনি বা বাবাই কেউই কোনো কথা বলল না।আরিশের রুম পেরিয়ে আমার রুমে যেতে হয়।আমি যখন রুমে যাচ্ছিলাম তখন আরিশের কিছু কথা আমার কানে এলো।উনি কাউকে বলছিলেন

“যতটাকা লাগবে আমি দেবো। আপনি শুধু নিজের মুখ বন্ধ রাখুন।মনে রাখবেন আমার কাঙ্খিত জিনিসটা আমি পেয়ে গেলে আপনাকে মেরে ফেলতেও দুবার ভাবব না।সো বি কেয়ারফুল।”

আমি আর কিছু না শুনে রুমে চলে এলাম।উনি এগুলো কাকে বললেন?আর যতটাকা লাগবে উনি দিবেন মানে? আমি যতদূর জানি এই ফ্যামিলিটা নিতান্তই মধ্যবিত্ত।আরিশ কী করে তা আমার জানা নেই।কিন্তু বাবাই একটা জব করে।তাহলে আরিশ এতটাকা কোথায় থেকে পায়।তবে কী উনি খারাপ কিছু,,,,না আর ভাবতে পারছিনা।যত ভাবছি মাথার মধ্যে সব তালগোল পাকিয়ে যাচ্ছে।এত রহস্য কেন এই মানুষগুলোর মাঝে?

বিকেলে কিছু কেনাকাটা করার জন্য আমি আর মামনি শপিংমলে গেলাম।অল্পকিছু জিনিস কেনার পর মামনির একটা কল আসায় মামনি বাইরে চলে গেলো।আমি এদিক ওদিক দেখছিলাম তখনই আমার নজর পড়ল একটা দোকানে।ওখানে আরিশ আর রুদ্ধ স্যারের ওয়াইফ ছিলেন।উনাদের দেখে যে কেউ বলে দিবে যে উনাদের মাঝে কতটা ক্লোজ রিলেশন।তবে কী রুদ্ধ স্যারের ওয়াইফের বয়ফ্রেন্ড আরিশ।আর যদি তাই হয় তবে উনি কেন আমাকে বিয়ে করতে রাজি হলেন?

সেখানে থেকে চলে যাওয়ার জন্য পিছনে ঘুরতেই কারো সাথে ধাক্কা খেলাম।সামনে মধ্যবয়স্ক একজন লোক ছিল।উনার হাতের জিনিসগুলো পড়ে গিয়েছে।আমি দ্রুত সেগুলো তুলে উনার দিকে বাড়িয়ে দিতেই দেখি উনি আমার দিকে একধ্যানে তাকিয়ে আছেন।আমি জিনিসগুলো উনার দিকে বাড়িয়ে দিতেই উনি বললেন

—- তুমি তানহা না?

— জ্বী আংকেল। কিন্তু আমি আপনাকে ঠিক,,,

—-চিনলে না তো।অবশ্য চিনবেই কেমনে।আমি আরাফ সরকার।একজন নিউরোলজিস্ট।চারবছর আগে যখন তোমার মাথায় আঘাত লেগেছিল তখন তোমার ট্রিটমেন্ট তো আমি করেছিলাম।বাট কিছুদিন পরেই তো তোমরা এখানে শিফট করলে।তা এখন বুঝি ভালো আছো?

—-জ্বী আংকেল।আর সরি,আমি আসলে খেয়াল করিনি তাই ধাক্কা,,,

—- ইট’স ওকে ডিয়ার।আচ্ছা আমি এখন আসি।টেক কেয়ার।

—- আচ্ছা আংকেল।

আংকেল চলে গেলেন।আমি অবাক হলাম যে আমার মাথায় আঘাত লেগেছিল আর আমার মনে নেই।আংকেল তো বলল চারবছর আগে আঘাত লেগেছিল আবার রাত ও চারবছর আগেই,,,,তার মানে কী,,,,

—-এই তানহা,,, এদিকে আয়।

মামনির ডাক শুনে ওদিকে চলে গেলাম।তারপর টুকটাক আরো কিছু কেনাকাটা করে বাসায় চলে এলাম।

——————

বাসায় এসে দেখি আরহা আমার রুমে।আমি ওকে দেখে বললাম

—- তুই কই থেকে আসলি।

—-উড়ে উড়ে আসিনি, হেঁটে হেঁটেই এসেছি।আচ্ছা শোম তোর আর এখন চেন্জ করার দরকার নেই।

—- কেন?

—- তোকে একটা জায়গায় নিয়ে যাবো।কোথায় নিয়ে যাবো? কেন যাবো? এত প্রশ্ন করিস না প্লিজ।শুধু আমার সাথে চল।

—- আচ্ছা চল।

আরহা আমাকে বেশ শান্ত একটা জায়গায় নিয়ে গেলো।আমি বেশ অবাক হলাম।আমি ওকে প্রশ্ন করলাম

—- আমাকে এইসময় এখানে আনার মানে কী, আরহা?

—- আমাকে ভুল বুঝিসনা তানহা।তোকে আমার কিছু বলালার আছে।যা ঐ বাড়িতে বলা যাবেনা।

দেখ তানহা,,,,তুই রাত কিনা আমি জানিনা।তবে তানহা তোর আসল পরিচয় নয়।চারবছর আগে মা-বাবা তোকে নিয়ে এসেছিল।তোর অবস্থা তখন অনেক খারাপ ছিল।তোর শরীরের বেশ কিছু জায়গা পুড়ে গিয়েছিল।
আমি জানিনা তোর কিছু কেন মনে নেই বাট এটা জানি যে তুই আমাদের আপন কেউ না।বাট বাবা- মা এভাবে কেন তোকে রেখে দিয়েছি জনিনা।বাট এই সবকিছুর পিছনে কোন না কোন ভাবে ভাইয়া জড়িত।

—-আরিশ?

—- হুম।তুই প্লিজ ভাইয়াকে বিয়ে করতে রাজি হসনা।আমার বাবা- মা, ভাইয়া মোটেও ভালোমানুষ না।তবে ভাইয়া নিজে থেকে তোকে বিয়ে করতে চেয়েছো তখন অবশ্যই কোনো কারণ আছে।তুই যদি বিয়েটা না করিস তাহলেও তোর প্রবলেম।করলেও তোর লাইফটা শেষ।
আমি তো তোর ভালো চাই তাই কথাগুলো তোকে বললাম।
বাকি আর কিছুই আমার হাতে নেই।এখন যা করার তোকেই করতে হবে।

আরহার কথায় খুব একটা অবাক হলাম না।আমি এমন কিছুই আশা করছিলাম।তবে আরহা যে বলল আমার শরীরের বেশ কিছু অংশ পুড়ে গিয়েছিল।তবে কী এটা সেই ব্লাস্টের জন্য।তবে আমি কী রাত।নাহ আমাকে সবটা ক্লিয়ারলি জানতে হবে।
আমি আরহার দিকে তাকিয়ে বললাম

—- তুই এসব আগে কেন বলিসনি আমায়।

—- সাহস পায়নিরে,,, তোকে এসব বলার।তুই আমাকে ভুল বুঝিসনা প্লিজ।আমি তোকে অবশ্যই এখান থেকে বেড়োতে হেল্প করব।তোর যা সাহায্য দরকার আমি করব।ভাইয়া বা বা- মায়ের ব্যাপারে যেকোনো তথ্য আমি তোকে দিবো।

—————–

আরহাকে নিয়ে বাসায় চলে এলাম।বাসায় এসে দেখি বেশ কয়েকজন লোক। একজন পাঞ্জাবী পরিহিত বৃদ্ধ লোক ও আছে।আমি মামনিকে কিছু বলার আগেই সে বলল

—- উনি কাজী সাহেব।তোর আর আরিশের বিয়েটা আমরা আজই দিবো। তুই ওপরে গিয়ে তৈরি হয়ে নে।

মামনির কথায় যেন আমার মাথায় আকাশ ভেঙে পড়ল।এখন কী করব।বিয়েটা কীভাবে ভাঙব।নাকি বিয়েটা করে নিবো?

(চলবে)

LEAVE A REPLY

Please enter your comment!
Please enter your name here