#প্রণয়ে_তুমি
#পর্ব_৬
#writer_Nahida_islam
ইফাজ সুমিকে অতসীর সাথে দেখে কিছুটা ভয় পেয়ে যায়।
অতসী খুব স্বাভাবিক ভাবে বললো,
-নিজে আমার সাথে পারেন না তাই কি গার্লফ্রেন্ড লেলিয়ে দিয়েছেন।
অতসী কথাটা বলে ই রুহিকে নিয়ে ক্লাসরুমের দিকে চলে যায়। ক্লাসে গিয়ে বসতে ই রুহি বলে উঠলো,
-তুই যে কেনো এই জামেলায় জড়াস আল্লাহ জানে, কলেজের বাহিরে ইফাজ আর ভেতরে সুমি কুমিটা এখন তোকে জ্বালাবে।
সুমি ইফাজের হাত ধরতে ই ইফাজ দূরে সরে যায়।
-তোমার সমস্যা কী?
-ইফাজ তুমি এভাবে কথা বলছো কেনো?
-এই মেয়ে তোমার সমস্যা কী? আমি কী কোনো দিন তোমাকে বলেছি আমি তোমাকে ভালোবাসি।
-ইফাজ তুমি এতো রিয়েক্ট কেনো করতেছো। কালকে সারাদিন কল দিলাম ধরলা না এখন যা ই সামনে পেলাম এতে ও রাগ দেখানো শুরু করছো।
ইফাজ সুমির কথার কোনো উওর না দিয়ে ই চলে যায়। এতে সুমি আরো বেশি রেগে যায়। কিছু বলতে যেয়ে ও থেমে যায় সুমি শুধু ইফাজের যাওয়ার দিকে তাকিয়ে আছে।
_________________________
কলেজ ছুটি হবার পর, অতসী ক্যাম্পাস থেকে বের হতে ই ইফাজকে দেখলো বাইক নিয়ে দাড়িয়ে আছে। সাথে আরো অনেকগুলো ছেলে। ইফাজকে দেখে ও না দেখার একটা ভাব নিয়ে অতসী হাটতে শুরু করলো, বেশ কিছুদূর যাওয়ার পর ইফাজ বাইক নিয়ে অতসীর সামনে গিয়ে দাড়ালো। অতসী ইফাজকে কোনো পাত্তা না দিয়ে পাশ কাটিয়ে আবার হাটতে শুরু করলো। ইফাজ আবার বাইক নিয়ে গিয়ে সামনে দাড়ালো,
-সমস্যা কী?
-তুমি ই আমার সমস্যা।
-তাহলে আমার থেকে দূরে থাকুন কোনো সমস্যা হবে না।
-সেসব বাদ দাও, সরি।
-রাস্তা থেকে সরে দাড়ান তো, মানুষ দেখছে।
-দেখুক আমি এসব কেয়ার করি না।
-আমাকে কেনো ডিস্টার্ব করতে আসলেন, আপনার গার্লফ্রেন্ডের কাছে যান।
-বাইকে উঠো। তুমি প্রতিদিন হেটে যাও কেনো এতোটা রাস্তা।
-আপনার এতো দরদ উতলাতে হবে না। সামনে থেকে যান নয়তো সাইড দেন।
-এই জন্য ই মানুষের ভালো করতে হয় না।
-আপনাকে ডেকে আনছি আমার ভালো করার জন্য।
ইফাজ আর পথ আটকালো না। অতসী চুপটি করে চলে গেলো।
অনিতা চৌধুরী জমিয়ে রান্না করছে , কারণ আজকে অন্তুর হাসবেন্ড আসতেছে।
-অন্তু
-হুম বলো মা।
-ইফাজ কোথায় রে।
-বাসায় আসেনি এখনো।
-আমার রান্না শেষ হলে অতসী জন্য খাবার পাঠিয়ে দেস তো। মেয়েটার মা নেই, আমি চাই এটা যেনো তার কখনো মনে না হয়।
-তোমার ছেলে যে অবস্থা যাবে কী খাবার নিয়ে।
-ইফাজ না গেলে আমি যাবো।
ইফাজ বাসায় ডুকে ই অন্তু ডেকে আনে। ইফাজ এসে ভ্রু কুঁচকে জিজ্ঞেস করলো,
-কী হইছে,
– চল রাতে রেস্টুরেন্টে যাই, এতে অতসীর সাথে রুপমের আলাপটা ও হয়ে যাবে।
-যাবো না আমি তোমরা যাও
-যাবি না তো
-আচ্ছা দেখি,, এভাবে তাকাও কেনো
-অতসীকে কল দিয়ে বলিস তুই
-তুমি কল দিয়ে বলতে পারো না। আমি পারবো না।
-তুই কল দিয়ে বলবি নয়তো আমি তোর বিয়েতে ই থাকবো না।
অন্তুকে অনিতা বেগম ডাকতে ই অন্তু চলে যায়। ইফাজ একটা দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলে এই মেয়ে আমার কল ধরতে ই চায় না কী করে বুঝাই।
কলিং বেলের শব্দ অতসী দরজা খুলতে ই দেখলো ইফাজের মা।
-আসসালামু আলাইকুম আন্টি।
সালাম দিয়ে ই হাতে থাকা ব্যাকগুলো অতসী নিয়ে নিলো। ভেতরে ডুকে বসতে ই অনিতা বেগম বললো,
-অতসী আমি কিন্তু তোমার উপর রাগ করেছি।
অতসী থমকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো,
-কেনো আন্টি?
অনিতা বেগম উঠে অতসীর হাত থেকে ব্যাগগুলো নিয়ে ডাইনিং এ ব্যাগগুলো রেখে খাবার বের করলো,
-আন্টি এসবের কী দরকার ছিলো।
অতসীকে একটা চেয়ারে বসিয়ে অনিতা বেগম প্লেটে খাবার নিয়ে, অতসীর মুখে খাবার তুলে দিলো।
-রাগ করলাম এজন্য আমি যে এখন ও তোমার মা হতে পারিনি তাই। আমাকে কি মা বলা যায় না।
অতসী না চাইতে ও দুচোখ দিয়ে পানি পড়ছে। অনিতা বেগম এক হাত দিয়ে চোখগুলো মুছে দিয়ে বললো,
-আরে বাবা কাঁদছো কেনো, মা বলতে আপত্তি থাকলে বলতে হবে না।
-এজন্য কাদছি না মা, আমার মা মারা যাবার পর কেউ এমন ভাবে মুখে তুলে খাইয়ে দেয়নি।
-আমি তো ইফাজকে প্রায় ই খাইয়ে দেই তোমাকে ও না হয় এখন থেকে নয় বিয়ের পর থেকে খাইয়ে দিবো।এখন একটু হাসো।
_________________________
ইফাজ বেশ কিছুক্ষণ ধরে অতসী ফোনে কল দিচ্ছে এই মেয়েটাকে কল দিলে কখনো পাওয়া ই যায় না, কথাটা বলতে ই কল রিসিভ হয়ে গেলো,
-কথা বলছো না কেনো? কল রিসিভ করার পর তো মানুষ হ্যালো ও বলে তুমি কি বোবা হয়ে গেছো।
-আমি বোবা হই বা অন্য কিছু ঐটা আপনার জানতে হবে না। কল দিয়েছেন কেনো ঐটা বলেন।
-এই শুনো কোনো কাজ ছাড়া এমনি আমি তোমাকে কল দেই না।
-কাজের কথা বললে বলুন নয়তো বায়।
-এতো তারা কিসের তোমার, বয়ফ্রেন্ড কল দিচ্ছে নাকি।
-ঐ কৈফিয়ত আপনাকে দিবো না।
-এতে তো ভালো হইছে পালিয়ে যাও প্লিজ।
-আমার যদি কোনো বয়ফ্রেন্ড থাকতো তাহলে ঠিক পালিয়ে যেতাম। আপনার তো গার্লফ্রেন্ড আছে আপনি এখন ও পালিয়ে যাচ্ছেন না কেনো।
-সন্ধ্যায় রেডি হয়ে থেকো?
-কোনো ইচ্ছে নেই আপনার সাথে কোথাও যাওয়ার।
-আমাকে কি পাগলে পাইছে নাকি আপু বলেছে।
-ওহ্ তাহলে ঠিক আছে।
ইফাজকে আর কিছু বলতে না দিয়ে অতসী কল কেটে দেয়।
সন্ধ্যা হতে ই অন্তু একটা শাড়ি নিয়ে ইফাজে রুমে ডুকে।
-এই ব্যাগে শাড়ি জুয়েলারি আছে, অতসীকে এগুলো পড়িয়ে তোর সঙ্গে করে নিয়ে ক্যাফেতে চলে আসিস। লেইট করিস না এখন ই বের হয়ে যা।
-আমি পারবো না আপু।
-তাহলে আমি রুপমকে নিয়ে এক্ষুনে এই বাসা থেকে চলে যাবো।
ইফাজ একরাশ বিরক্তি নিয়ে বললো,
-হইছে যাচ্ছি।
_________________
ইফাজ অতসীর বাসার সামনে এসে অতসীকে কল দিয়ে আসতে বলে।
-কী হলো আপনি এখানে,
-জন্মের ওর নির্গাত কোনো ক্ষমার অযোগ্য কোনো পাপ করেছি তার শাস্তি পাচ্ছি। এই ব্যাগে নাকি শাড়ি আছি দ্রুত পড়ে পাঁচ মিনিটের ভেতরে এসো।
-আপনি ও চলুন ভেতরে।
-যাবো না আমি,
-কী ভেবেছেন আপনি যাবেন না বললে ই আমি তেল মাখবো নাকি। একটু ফর্মালিটি মেইনটেইন করলাম আরকি
-বদ মাইয়া
-কী বললেন,
-যাও প্লিজ আপু আমাদের জন্য ক্যাফেতে ওয়েট করতেছে।
অতসী রুমে এসে, কতক্ষণ বাবার সাথে কথা বললো তারপর শাড়ি পড়ে রেডি হয়ে নিলো পাক্কা একঘন্টা লাগালো। ইফাজ বসে থাকতে থাকতে বিরক্ত হয়ে বার বার অতসীকে কল দিচ্ছে কিন্তু অতসী ইচ্ছে করে ফোন সাইলেন্ট করে রেখে দিয়েছে। ইফাজ বাধ্য হয়ে দরজায় গিয়ে কলিং বেল বাজায়। অতসী দরজা খুলে বললো,
-হয়ে গেছে চলুন,
-এতোক্ষণ লাগছে তোমার শাড়িটা পড়তে।
-আপনার সমস্যা কী?
-এতোক্ষণ বাহিরে দাড়িয়ে থাকলে বুঝতে সমস্যা কী?
-যখন রুমে আসতে বলছিলাম তখন তো আসেননি তাই এই শাস্তি টা আমার প্রযোজ্য ছিলো।
-বেশি কথা না বলে চলো।
বাইকে বসতে ই অতসীর খুলা চুলগুলো বার বার ইফাজের মুখে এসে পড়তেছে, ইফাজ বাইক থামিয়ে বললো,
-এক্সিডেন্ট করানোর কোনো শখ আছে?
-মানে,
-চুল বাঁধো বার বার আমার মুখে এসে পড়তেছে।
অতসী আস্তে করে সরি বলে চুলগুলো হাতখোপা করে নিলো।
ক্যাফেতে যাওয়ার পর অতসী, তুষার রুপম আর অন্তুর সাথে কথা বললো। সবাই বসে গল্প করতেছিলো হঠাৎ রুপম বলে উঠলো,
-শালাবাবু বিয়ের আগে বউকে একবার প্রপোজ করে ফেলো দেখি…
চলবে,
[ভুলক্রুটি ক্ষমা সুন্দর দৃষ্টিতে দেখবেন, গঠনমূলক কমেন্ট করুন নেক্সট না লিখে, এখন এটা লিখে দেওয়ার পর ও অনেক লিখবে নেক্সট 🙂]